গিদিতা রেমা গারো নারী যাকে প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংসভাবে হত্যা করে 

মধুপুর গড়ে; ২০ মার্চ ২০০১ খ্রীষ্টাব্দে ।
সরজমিনে গিয়ে ঘটনা থেকে জানা যায়, ২০ মার্চ প্রকাশ্য দিবালোকে গিদিতা রেমাকে (২৫) একই গ্রামের সেটেলার ভূমি বেদখলকারী হাবিবুর রহমান ওরফে হবি, মফিজ উদ্দিন ওরফে মফিজ, জুরাণ আলী ওরফে জুরু গং নৃশংসভাবে হত্যা করে । হত্যাকান্ডের  ১০ দিন পরও পুলিশ আসামীদের একজনকেও গ্রেপ্তার করেনি বরং জলছত্র পুলিশ ফাঁড়ির কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার হেমায়েত হত্যাকারীদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন ।
দীর্ঘদিন থেকেই  হাবিবুর রহমান গংদের সঙ্গে গিদিতাদের পরিবারের জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল । গিদিতার পরিবার বিভিন্ন সময় হাবিবুর রহমানদের কাছে থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিল । চার বছর পর হাবিবুর রহমান গংরা এই ১০ হাজার টাকার সুদে আসলে ৪০ হাজার টাকা দাবি করে । গিদিতার পরিবার এত টাকা দিতে না পারায় গ্রামে এ নিয়ে সালিশ বসে । হাবিবুর রহমান গংরা গিদিতাদের ১০ একর জমি দখল করে নিতে চেষ্টা করে । অবশেষে গ্রাম্য সালিশে মীমাংসা হয় যে গিদিতার পরিবার এত টাকা দিতে না পারায় গ্রামে এ নিয়ে সালিশ বসে । গ্রাম্য সালিশে মীমাংসা হয় যে, গিদিতার পরিবার হাবিবুর রহমান গংদের সোয়া দুই একর জমি দিবে যার মূল্য প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা । গিদিতার পরিবার অসহায়ের মত এই সালিশে রাজী হয় । কিন্তু জমি পাবার পরও হাবিবুর রহমান গংরা গিদিতাদের পুরো ১০ একর জমিই দখল করে নিতে চায় । এই লোভের বসবর্তী হয়েই মাতৃসূত্রীয় গারো সমাজের মেয়ে গিদিতার ছোট বোন নম্রতা রেমাকে ৭ ফেব্রুয়ারী রাতে হবির ভাই মফিজ গং নম্রতা তাদের নিজ বাড়ি থেকে অপরহণের  করে । নম্রতা রেমাকে অপহরণের পর দীর্ঘদিন মফিজ লুকিয়ে রাখে এবং ঈসলাম ধর্ম গ্রহনে বাধ্য করে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে নারী খেকো/ নরপশুর মত । মফিজ দাবী করে যে , নম্রতা তাকে(মফিজকে) বিয়ে করেছে, কিন্তু এর আসল উদ্দেশ্য ছিল গিদিতার সম্পুর্ণ জমি দখল ও হস্তগত করা । ১৬ মার্চ নম্রতা রেমা তার দিদি গিদিতার কাছে গোপনে খবর পাঠাতে সক্ষম হয় যে, তাকে মফিজ জোর করে আটকে রেখেছে এবং সে দিদিকে অনুরোধ করে তাকে উদ্ধার করার জন্য । ১৬ মার্চ গিদিতা গ্রামের অনেকের সহায়তায় বোন নম্রতাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে মজিফদের বাড়ী থেকে এবং নিরাপত্তার জন্য অনত্র পাঠিয়ে দেয় । গিদিতার বোন নম্রতা মুক্তি পেয়ে এফিডেবিটের মাধ্যমে ঘোষণা করে যে, তাকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং জোরপূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহনে বাধ্য করা হয়েছিল এবং ধর্ষণ করা হয়েছিল । ১৬ মার্চ গিদিতা তার ছোট বোন নম্রতাকে উদ্ধারের পর থেকেই মফিজ গং তাদের  নানারকম হুমকি দিতে থাকে । এর প্রেক্ষিতে এলাকার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাকির হোসেন , যে আদিবাসী বিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িক বলে কুখ্যাত  শুধু নয় দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, সে ১৮ মার্চ মাগন্তীনগরে একটি সালিশ বসায় যে সালিশে গিদিতা ও তার বোন ছাড়া কোন গারো নেতা বা পুরুষকে ডাকা হয়নি ।ঐ সালিশে চেয়ারম্যান জাকির গিদিতাকে হুমকি দিয়ে বলে, ২৪ ঘন্টার মধ্যে নম্রতাকে মফিজের হাতে তুলে না দিলে পেট্রোল দিয়ে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হবে । এই ঘটনার ০১ দিন পরই ২০ মার্চ ২০০১ সালে হবিবুর, মফিজ, জুরু গং প্রকাশ্য দিবালোকে বাজারে যাওয়ার পথে গিদিতা রেমাকে হত্যা করে ।
বেদনাদয়াক ও নেক্কার জনক এমন হত্যা কান্ড আদিবাসী গিদিতা রেমার সত্যই দুঃখ জনক । যা আদিবাসী সমাজে ও সারা পৃথীবিতে ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দেয় ।

রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্ভাষণ প্রবন্ধে লিখেছেন “ ভোগের পথে নয়, ভিক্ষার পথে নয়, কর্মের পথে । সকালবেলা যদি ঘন কুয়াশা হয়ে থাকে তবে অধীর হয়ে ফল নেই এবং হতাশ হবার প্রয়োজন দেখিনা – সূর্য সে কুয়াশা ভেদ করবেই এবং করামাত্র সমস্ত পরিষ্কার হয়ে যাবেই । --এখন বাজাও তোমার শংখ, জ্বালাও তোমার প্রদীপ -- ।”

Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post