ভূমি জরিপ চলাকালে । সহায়ক দলিলাদি
ভমি জরিপ চলাকালীন সময়ে নির্ভেজাল মালিকানার স্বপক্ষে একজন ভূমি মালিককে
নিম্নলিখিত প্রয়োজনীয় কাগজাদি সংরক্ষণ করা অতীব জরুরী।
০১. পরচা বা সর্বশেষ জরিপের
প্রমাণপত্র।
০২. জমির মূল দলিল ;
০৩. দাখিলা / খাজনার রশিদ।
০৪. মিউটেশনের কপি (ডিসিআর);
০৫. ক্রয়কৃত জমির দলিলের নকল কপি (দলিল না থাকলে);
০৬ উত্তরাধিকার সম্পত্তি হলে বাটোয়ারা দলিল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে);
০৭. মামলায় ডিক্রি প্রাপ্ত
হলে মামলার ডিক্রিনামা;
০৮, বায়নানামা দলিল (যদি বায়না করা হয়);
০৯. কবুলিয়ত দলিল;
১০. অর্পিত শত্রু সম্পত্তি
হলে সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসি’র নিকট থেকে রিলিজ অর্ডারের কপি।
১১. পিঠ/ভায়া দলিল।
ভূমি জরিপ চলাকালে ভূমি মালিকের করণীয়
০১. ভূমি জরিপে দখলের ভিত্তিতে নকশা তৈরি করা হয়। তাই ভূমি জরিপের
আগেই জমির আইল বা সীমানা নির্ধারণ করে রাখা;
০২. ভূমি জরিপের সময় মালিকানা
প্রমাণের জন্য সকল প্রকারের কাগজপত্র সংরক্ষণ করা;
০৩. জমি নিয়ে কোন মামলা থাকলে
মামলা সংশ্লিষ্ট কাগজ প্রমাণাদি সংরক্ষণ করা;
০৪, খানাপুরী ও খানাপুরী-কাম-বুঝারত
স্তরে মাঠ পর্যায়ে আমীনকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদর্শন করে সঠিকভাবে রেকর্ড করতে
আমিনকে সহযোগিতা করা;
০৫.প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নির্ধারিত
ফরম পূরণ করে যথাসময়ে ডিসপুট (Disput)/আপত্তি/আপীল
দায়ের করা; ০৬. তসদিককালে জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র (পূর্ববর্তী রেকর্ডের
পর্চা অথবা ক্রয়সূত্রে মালিকানা দলিলপত্র অথবা সিভিল কোর্টের
রায় ইত্যাদি) তসদিক অফিসারকে দেখিয়ে নিজ আনুকূল্যে তসদিক (Attestation) করিয়ে নেয়া;
০৭. জমির পরিমাণ কম/বেশী হলে
সঠিক পরিমাপের জন্য নির্দিষ্ট বদর ফি দিয়ে পুনরায় পরিমাপের
জন্য বদর দরখাস্ত দাখিল করা;
০৮. মাঠে প্রস্তুত রেকর্ডে কোন ভুল থাকলে (যেমন- কোন বৈধ মালিকের নাম
বাদ পড়া, অবৈধভাবে
কারো নাম কোন খতিয়ানে লেখা, অন্য কোন প্রকার ভুল হওয়া ইত্যাদি) তসদিক
অফিসারকে অবহিত করে সঠিক কাগজপত্র প্রদর্শন করে রেকর্ড করে নেওয়া;
০৯. খসড়া প্রকাশনা বা ডিপি
চলাকালে রেকর্ড পরিদর্শন করে যদি রেকর্ডে কোন ভুল থাকে তবে নিয়মানুযায়ী আপত্তি কেস
দাখিল করা।
১০. ডিপি-র সময় ভূমি মালিককে স্বয়ং সংশ্লিষ্ট ভূমি কার্যালয়ে উপস্থিত
থাকা;
১১. আপত্তি কেসের রায়ে সংক্ষুব্ধ হলে সময়মত সার্টিফাইড কপি
তুলে আপিল দায়ের করা;
১২. মুদ্রিত রেকর্ড চূড়ান্ত
প্রকাশনার সময় মালিক বা তার প্রতিনিধি পুনরায় রেকর্ড দেখার সুযোগ পাবেন। এই সময়
ভূমি মালিক মুদ্রিত খতিয়ানের কপি এবং নকশা নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করতে পারবেন। যদি
মুদ্রিত রেকর্ডে কোন জালিয়াতি, কারণিক, গাণিতিক মুদ্রণ ভুল থাকে তবে এসএস ম্যানুয়েলের
৫৩৩/৫৩৪ ধারায় তা সংশোধনের জন্য চূড়ান্ত প্রকাশনার সময় সেটেলমেন্ট। অফিসারের নিকট
দরখাস্ত দাখিল করা;
১৩. রেকর্ড সংক্রান্ত কোন ব্যাপারে
কোন সমস্যা বা অসুবিধা দেখা দিলে বিষয়টি দ্রুত সহকারি
সেটেলমেন্ট অফিসার, চার্জ অফিসার অথবা সেটেলমেন্ট অফিসারের দৃষ্টিগোচর
করা প্রয়োজন।আবশ্যক মতে অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেয়া;
১৪. পেশাদার দালাল, টাউট, বাটপার ও অসাধু লোক থেকে সতর্ক থাকা ।
জরিপকালে ভূমি মালিক মাঠে অনুপস্থিত থাকলে যে সকল
সমস্যা দেখা দেয়।
১, নিজ জমি অন্যের নামে রেকর্ড হতে পারে;
০২. ভূমি মালিকের চিহ্নিত সীমানা অনুসারে নকশা তৈরি না হওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে;
০৩. জমির মালিকানা নিয়ে,নিয়ে
প্রতিবেশী বা অন্য কারোর সাথে বিবাদ বা মামলা থাকলে জরিপকালীন সময়ে। নির্ধারিত
ফর্ম পূরণ সাপেক্ষে ডিসপুট দেয়া সম্ভব হয় না এবং প্রতিকার গ্রহণও সম্ভব হয় না;
০৪ মাঠে প্রস্তুতকৃত রেকর্ডে কোন প্রকার ভুল থাকলে তা তসদিক অফিসারকে
অবহিত করে সঠিক কাগজপত্র প্রদর্শন করে রেকর্ড সংশোধন করার সুযোগ নষ্ট হয়;
০৫ খসড়া প্রকাশনা বা ডিপি-র সময় রেকর্ডে কোন ভুল থাকলে ৩০ ধারায় আপত্তি
কেস দাখিল করা সম্ভব হয় না;
০৬ মাঠ-পড়চায় খতিয়ানভুক্ত মাঠে সম্পত্তির হিসাবে গড়মিল দেখা দিতে পারে এবং তার সংশোধনের সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে; এ সময়মতো মাঠে উপস্থিত না থাকলে পেশাদার দালাল,
টাউট, বাটপার ও অসাধু লোকের দ্বারা প্রতারিত
হবার সম্ভাবনা রয়েছে;
০৮. ক্রয়সূত্রে প্রাপ্ত জমির
ক্ষেত্রে পূর্বের মালিকের নামে (বিক্রেতার নামে) জমি রেকর্ড হয়ে যেতে পারে; ০৯. অসাধু
কোন প্রতিবেশী আমিনকে প্রভাবিত করে ভুল নামে জমি রেকর্ড করে নিতে পারে।
১০. ভূমি মালিকানা বা ভূমির অধিকার রায় দেওয়ানী আদালতে দীর্ঘস্থায়ী
মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
১১. জমির প্রকৃত অংশীদার বাদ
পড়তে পারে;
১২. জরিপকালীন সময়ে মাঠে উপস্থিত না থাকলে মাঠ পরচা পাওয়ার সম্ভাবনা
কম থাকে;
১৩. ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি, দেবোত্তর, ওয়াকফ, ভিপিও খাস সম্পত্তি
হিসেবে রেকর্ড হতে পারে।
জরিপ চলাকালীন সময় বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) ভূমিকা
ভূমি জরিপকালীন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর। সব দায়িত্ব পালন করে না।
একটি দেশের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাও। ভূমিকা পালন করে থাকে। ভূমি
জরিপ চলাকালে বেসরকারি সংস্থাসমূহ নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রসমুহে ভূমিকা রাখতে পারে।
০১. যে সকল মৌজাতে ভূমি জরিপ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে সেইসব মৌজার
তালিকা সংগ্রহ করে জরিপ শুরুর পূর্ব থেকেই জনগণকে তাদের করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে
সচেতন করা যেতে পারে।
০২. বেসরকারি সংস্থাসমূহ ভূমি জরিপ কার্যক্রম শুরু হবার পূর্বে প্রয়োজনে
মৌজাওয়ারি ভূমি মালিকদের।
নিয়ে ভূমি জরিপ কার্যক্রম ওয়াচ কমিটি গঠন করতে পারে এবং তাদেরকে ভূমি
জরিপে সাধারণ জনগণের পালনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়টির ওপরে ওরিয়েন্টেশন দিতে পারে।
০৩. ভূমি জরিপ কার্যক্রম শুরুর আগে ভূমি মালিকদের করণীয় বিষয়গুলোর
ওপরে পোষ্টার ও লিফলেট প্রকাশ করে প্রচার করতে পারে।
০৪. যেসব এলাকায় ভূমি জরিপ
কার্যক্রম পরিচালিত হবে সে সকল এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সাংবাদিক ও নাগরিক
সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে ভূমি জরিপ বিষয়ে একদিনের একটি ওরিয়েন্টেশন
কর্মসূচি / মতবিনিময় সভা করতে পারে।
০৫. ভূমি জরিপকে কেন্দ্র করে গণনাটক, পথ নাটক
বা ডকুমেন্টারী ফিল্ম তৈরি করে তার মাধ্যমে ভূমি জরিপ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ
করতে পারে।
০৬. ভূমি জরিপ বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে স্থানীয় গণমাধ্যমের কর্মীদের যথাযথ ভূমিকা পালনে সহায়তা করতে পারে।।
০৭. জমির বকেয়া কর পরিশোধের
ব্যাপারে এবং নিজানুকুলে মিউটেশন বা জমাখারিজ গ্রহণের ব্যাপারে ভূমি মালিকগণকে সচেতন
করতে পারে।
০৮. জরিপ এলাকায় অবস্থিত সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন মসজিদ, মাদ্রাসা,
মক্তব ও মন্দির ইত্যাদিতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আগে ও পরে ভূমি জরিপ বিষয়ক সচেতনতামূলক
আলোচনা করতে পারে।
০৯. ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণের উপস্থিতিতে ভূমি জরিপে
জনগণের করণীয় দিকগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হতে পারে;
১০. জনগণের উদ্দেশ্যে ভূমি জরিপ বিষয়ে এলাকায় মাইকিং করে জনগণের উদ্দেশ্যে
ভূমি জরিপ বিষয়ে প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে।
Post a Comment
Please do not link comment any spam or drive spams content