বিশ্বের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় পানীয় এর নাম হল চা। এটি ক্যাফেইন যুক্ত এবং মাদক মুক্ত উদ্দিপক পানীয় । চা পাতায় ১৫-২০% ট্যানিন, ৪/৫% থেয়িন এবং অল্প পরিমানে উদ্বায়ী তেল থাকে। Theaceae
গোত্রভুক্ত এ উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম Camellia sinensis. সম্ভবত পঞ্চম শতাব্দীর সুচনা লগ থেকেই চীন দেশে সর্বপ্রথম চায়ের চাষ আরম্ভ হয় । ১৮৫৬ সালে ভারতবর্ষে এর ব্যাপক চাষাবাদ আরম্ভ হয়। এর আগে ১৮৩৭ সালে ভারতের আসামে চা এর আরেকটি প্রকরণ আবিষ্কৃত হয় । এর বৈজ্ঞানিক নাম Camellia assamica.
চা প্রদানকারী উদ্ভিদ (Tea Yielding Plant)
চাষাবাদ ও প্রক্রিয়াজত করণ কি করে করা হয় জেনে নিন কিছুটা হলেও আইডিয়াটা
পাবেন
চাষাবাদ ঃ সাধারণত গ্রীষ্ম প্রধান এলাকায় পাহাড়ের ঢালে এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের তুলনামুলক উষ্ণ এলাকায় চায়ের চায় করা হয়। টিলা ও সমতল ভূমিতেও চা চাষ করা যায় তবে কোন অবস্থাতেই গাছের গোড়ায় পানি জমা চলবেনা। দো আশ ও বেলে দোঁআশ মাটিতে চা চাষ ভাল হয়। CaC03; যুক্ত অম্লীয় মাটি চা চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী । মাটির PH (৪.৫-৫) থাকা প্রয়োজন।
চাষ পদ্ধতি: চা চাষের জন্য নির্বাচিত জমির আগাছ নির্মল করে চা চাষের উপযোগী করতে হয়। মাটিতে কোন আগাছা থাকা উচিত নয়। চা চাষ করার আগে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি নজর দিতে হয়। যেমন . পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা আছে কিনা, চারা গাছকে ছায়াপ্রদানের জন্য ছায়াপ্রদানকারী বৃক্ষ আছে কিনা। বহৎ আকারের এ বৃক্ষগুলি ১৫-১৭ মিটার দূরত্বে লাগান হয়। জমি ভালভাবে কর্ষন করে এতে নাইট্রোজেন ও। পটাশ জাতীয় সার প্রয়োগ করতে হয়।সাধারণত বীজ বপনের মাধ্যমে চারাগাছ তৈরি করতে হয়। তবে কলম বা মুকুলের মাধ্যমেও চারাগাছ। পাওয়া যেতে পারে। মার্চ এপ্রিল মাসে সারি করে বীজ বপন করতে হয়। অংকুরোদগমের পর গুদ্র চারা। গাছগুলিকে পলিথিন ব্যাগে ভরে নার্সারীতে পালন করা হয়। অতঃপর চারাগুলোর বয়স ১০/১২ মাস হলে মে। হতে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে জমিতে রোপন করা হয়। মাঝে মাঝে নিড়ানীর মাধ্যমে আগাছা দমন করতে হয়। প্রচুর পরিমানে শাখা প্রশাখা সৃষ্টি করার জন্য বর্ধনশীল গাছকে বার বার ছেটে ঝোপে পরিণত করা হয়। প্যতার সঠিক বৃদ্ধির জন্য জমিতে সবুজ সার, কম্পোষ্ট এবং নাইট্রোজেন জাতীয় সার প্রয়োগ করতে হয়।
ছায়াপ্রদানকারী উদ্ভিদঃ
প্রখর সূর্যালোকে চা গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ভাল হয় না। সেজন্য চা বাগানে। ছায়া প্রদানের জন্য বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ লাগানো হয়। চা বাগানে সাধারণত Caesalpiniaceae এবং | Mimosiaceae গোত্রভুক্ত কড়ই জাতীয় গাছ লাগান হয়। ছায়াপ্রদানকারী উদ্ভিদের মধ্যে Albizzia odoratissima, A. lebbeck. Derris robusta ইত্যাদি উল্লখযোগ্য ।
পাতা সংগ্রহ
হাত অথবা কাঁচি দ্বারা কেটে চা এর পাতা সংগ্রহ করা হয়। গাছের বয়স ৪/৫ বছর না। হলে পাতা সংগ্রহ করা হয় না। এপ্রিল হতে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চা পাতা সংগ্রহ করা হয়। শীর্ষস্থ মুকুল ও তার পাশের দুটি পাতাই সংগ্রহ করা হয়। কচি পাতা হতে উৎকৃষ্ট মানের চা পাওয়া যায়। পাতার বয়স বাড়ার। সাথে সাথে চায়ের গুনগত মান কমতে থাকে। সাধারণত ৭-১০ দিন পর পর পাতা সংগ্রহ করা হয় ।
চা প্রক্রিয়াকরণ (Tea processing) : চায়ের প্রকারভেদের উপর নির্ভর করে এর প্রক্রিয়ার পদ্ধতি আলাদ হয়। নিম্নে ব্লাক চা এর প্রক্রিয়াকরণ বর্ণনা করা হল :
(i) শুকরণ (Withering) : সংগ্ৰীহীত পাতাগুলোকে তাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে তারের জালক অথবা চটের উপর পাতলা করে বিছিয়ে ১৮-২০ ঘন্টা রাখা হয়। এর মাধ্যমে পাতায় পানির পরিমান অনেকাংশে কমে যায় ।
(ii) গুটানো (Rolling) ঃ উপরের প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত শুষ্ক পাতাগুলিকে রোলার যন্ত্রের সাহায্যে প্রায় ২৫৩০ মিনিট ধরে কয়েকবার গুটানো হয় । এর ফলে পাতার অবশিষ্ট জলীয় অংশ নির্গত হয়। এ সময় পাতাগুলি ভেঙ্গে যায়।
iii) জাগ দেওয়া (Fermenting) ঃ গুটানো পাতাগুলোকে ঘরের মেঝেতে ১-৩ cm পাতলা করে। বিছিয়ে ৩-৫ ঘন্টা রাখা হয়। এ সময় কক্ষের তাপমাত্রা ২৫-৩০°C এবং জলীয় বাষ্পপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন । এ তাপমাত্রায় পাতায় অবস্থিত ট্যানিনের উপর এনজাইমের কার্যকারীতা বৃদ্ধি পায় এবং পাতাগুলি ক্রমান্বয়ে তামাটে কাল বর্ণ ধারণ করে। এ প্রক্রিয়া চলাকালে পলিফেনল যুক্ত উদ্বায়ী তেল নিষ্কাশিত হয়ে চায়ের সংগে মিশ্রিত হয় ফলে চা সুগন্ধিযুক্ত হয়।
(iv) দহন (Firing) ও জাগ দেয়া পাতাগুলােকে যন্ত্রের সাহায্যে উত্তপ্ত বায়ু প্রবাহ দ্বারা যথাসম্ভব দ্রুত শুষ্ক করা হয়। এ সময় তাপমাত্রা প্রায় ৭০°C এ উন্নীত করা হয়। এর ফলে চা পাতার জলীয় অংশ আরো কমে যায় এবং গুনগত মান বৃদ্ধি পায়।
(v) বিভক্তি করণ (Grading) ও শুষ্ক পাতাগুলােকে বিভিন্ন প্রকার চালনা দ্বারা বিভিন্ন ভাগে ৪ করা হয়। এভাবে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রকারের চা গুলি আলাদা করে প্লাইউড বাক্সতে এলুমিনিয়ামের । মোড়কে ভরে বাজারজাত করণের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।
সবুজ চা (Green Tea) :
এ প্রকারের চা প্রক্রিয়াকরণের জন্য শুষ্ককরণ ও জাগ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। নিম্নলিখিত উপায়ে সবুজ চা প্রক্রিয়াকরণ করা হয়।
(i) পাত্রে উত্তপ্তকরণ (Panning) ঃ সংগৃহিত কচি পাতাগুলোকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লোহার পাত্রের ভেতর ১০-১৫ মিনিট উত্তপ্ত করা হয়। তাপের ফলে এনজাইমের ক্রিয়া নষ্ট হয়ে থাকে।
গুটানো (Rolling), দহন (Firing) বিভক্তিকরণ (Grading) প্রভৃতি Black Tea এর অনুরূপ। Green Tea এর ক্ষেত্রে শুষ্ককরণ (Withering) এবং জাগ দেওয়া (Fermenting) বাদ দেওয়া হয়। চা উৎপাদনকারী দেশ ?
পৃথিবীর প্রধান প্রধান চা উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে ভারত, চীন, জাপান, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ প্রভৃতি অন্যতম। চা উৎপাদনে বিশ্বে ভারত প্রথম এবং চীন দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী। আমাদের বাংলাদেশের সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার পাহাড়ী অঞ্চলে চা চাষ করা হয়। ব্যবহার :
গরম পানিতে চা ঢেলে তার সাথে চিনি, দুধ বা লেবুর রস মিশ্রিত করে খাওয়া হয়। চা পাতা বেশি গরম করলে ক্ষতিকর ট্যানিন নির্গত হয় এবং স্বাদ তিক্ত হয়ে পড়ে। এরূপ চা বর্জন করাই শ্রেয়। চা দেহ ও মনের অবসাদ দুর করে উদ্দীপনা ফিরিয়ে আনে।
Post a Comment
Please do not link comment any spam or drive spams content