অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় মারা গেলেন বাপ্পি লাহিড়ি, এই রোগ নিয়ে সতর্ক করছেন ডাক্তারবাবুরা

সূত্র অনলাইন জার্নাল 

মঙ্গলবার মধ্যরাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন সুরের জাদুকর বাপ্পি লাহিড়ি। মুম্বইয়ের ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে গত এক মাস ধরে ভর্তি ছিলেন। ফুসফুসেও সংক্রমণ ছিল তাঁর। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। গতকাল মাঝরাতে তাঁর মৃত্যু হয়।

ডিসকো কিং’বাপ্পি লাহিড়ি 


দু’দিন আগেই পোস্ট করেছিলেন ছবি



বাপ্পি লাহিড়ির চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডাক্তার দীপক নামজোশি বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন সুরকার ও গায়ক বাপ্পি লাহিড়ি। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া ছিল তাঁর। তাছাড়া আরও নানারকম শারীরিক সমস্যাও ছিল।

স্লিপ অ্যাপনিয়া নিয়ে বার বার সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা। কী এই রোগ? 

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হল শ্বাস-প্রশ্বাসের একরকম ব্য়ধি। ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ হয়ে আসে। শ্বাসের গতি অনিয়মিত হয়ে যায়। কখনও আচমকা দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হতে পারে রোগীর। স্লিপিং ডিজঅর্ডার থাকলে শ্বাসপ্রক্রিয়া বাধা পায়। শ্বাস নিতে ও ছাড়তে সমস্যা হয়। আর ঘুমিয়ে পড়ার পর এমনিতেই ঘাড় ও গলার পেশি শিথিল থাকে, সুতরাং হঠাৎ করে যদি শ্বাস প্রক্রিয়া বাধা পেয়ে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায় তাহলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে। অথবা দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটা কিছুমাত্র আশ্চর্যের নয়।

স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ কী কী?  

‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ কথাটির সঙ্গে এখনও অনেকেই অপরিচিত। কিন্তু ডাক্তাররা এখন স্লিপ অ্যাপনিয়ার উৎস এবং তার প্রতিকারের নানা বিষয় নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন। বলা যায়, হৃদরোগের সঙ্গে স্লিপ অ্যাপনিয়ার একটা যোগসূত্র আছে। নাক ডাকা মানেই যে স্লিপ অ্যাপনিয়া, তেমনটা নয়। তবে এর কিছু লক্ষণ দেখে আগেভাগেই সতর্ক হওয়া ভাল। স্লিপ অ্যাপনিয়ার নানা ধরন আছে, তবে সবচেয়ে বেশি হয় অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া।

নাক ডাকতে ডাকতে শ্বাস আটকে যাওয়া, ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ হয়ে আসাকেই বলে স্লিপ অ্যাপনিয়া। অনেকে দেখবেন, একটানা নাক ডাকে না। এটা হয় থেমে থেমে। আর নাক ডাকার মাঝেই ঘুম ভেঙে যায় বারেবারে। মনে হয় শ্বাস আটকে গেছে। আসলে শরীরে মেদ বেড়ে গেলে এই রোগের আশঙ্কা বাড়ে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদেরও ভয়ের কারণ আছে। অনেকে জিজ্ঞাসা করেন, স্লিপ অ্যাপনিয়া কেন হয়? আমি বলব যাদের থাইরয়েডের সমস্যা আছে, স্থূলত্ব বেশি তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের ঝুঁকিও বেশি। কারণ, শরীরের ভেতরে জমে ওঠা মেদের বাধায় বাতাস ভাল ভাবে ঢুকতে পারে না। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। তাই ঘুমন্ত অবস্থায় দমবন্ধ হয়ে আসতে থাকে।

 

মেদবাহুল্য, শ্বাসযন্ত্রের রোগ, স্লিপ অ্যাপনিয়ার নানা কারণ

এবারে যে প্রশ্নটা আসে, মোটা লোকেরাই কি শুধু স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হন? তেমনটা সব সময় হয় না। মেদবাহুল্য স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণ বটে, আরও নানা কারণ আছে। যেমন, শ্বাসযন্ত্রের রোগ থাকলে স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে। নাকের ভেতরে শ্বাস চলাচল বাধা পায়। অনেক সময় জিভের নীচের অংশ বা টাং বেস থেকেও শব্দ হতে পারে। সাইনুসাইটিস বা পলিপ থাকলেও নাক ডাকার সমস্যা হয়, যার থেকে স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলেও রোগীর স্লিপ অ্যাপনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

শরীরের বাড়তি ওজনের সঙ্গে স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঘনিষ্ট যোগসূত্র রয়েছে। আমাদের নাক, গলা, আল জিভের পিছন দিয়ে অক্সিজেন ঢুকছে শ্বাসনালীতে। আগেই বলেছি, বাতাস চলার পথ যদি মেদ জমে সরু হয়ে যায়, তাহলে অক্সিজেন শরীরে ভালভাবে ঢুকতে পারে না। তখন নাক ডাকা, শ্বাস নেওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।

হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় স্লিপ অ্যাপনিয়া!

লক্ষণ চিনে নিন, রোগ নির্ণয়ের অনেক পদ্ধতি আছে

স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে কিনা তা কয়েকটা পরীক্ষা করে ধরা যায়। প্রথমেই আমরা রোগীকে জিজ্ঞাসা করি ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ হয়ে আসে কিনা, কতবার ঘুম ভেঙে যায়, প্রতিবার ঘুম ভাঙার পরে কী ধরনের শারীরিক অস্বস্তি হয়, শ্বাসকষ্ট শুরু হয় কিনা ইত্যাদি। দেখবেন, স্লিপিং ডিসঅর্ডার থাকলে এমনিতেও সুন্দর টানা ঘুম হবে না। শরীরের ক্লান্তি বাড়বে, ঝিমুনি আসবে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে। ঘুম ভেঙে উঠে বসে রোগী হাঁফাতে থাকবে, ঘাম হবে। এগুলো কিছু সাধারণ লক্ষণ যা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন নিছকই নাক ডাকার সমস্যা নয়, কোনও না কোনওভাবে স্লিপিং ডিসঅর্ডার হচ্ছে যার কারণ স্লিপ অ্যাপনিয়াও হতে পারে। তখন বিন্দুমাত্র দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তাছাড়া রোগীর আগে থেকেই থাইরয়েড, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস বা ওবেসিটি থাকলে, রোগের ঝুঁকি অনেকটাই বাড়ে।


Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post