শিশুর জন্মের আগে মায়ের যত্ন নেয়া

কি করে বোঝা যাবে যে মা গর্ভবতী হয়েছেন

১। মাসিক বন্ধ হয়ে যাবে। এই চিহ্নকে প্রাথমিক চিহ্ন হিসাবে ধরা যায়।।

 ২। সকালে বমি হতে পারে বা শরীর বমি বমি করতে পারে। বিশেষ করে  দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাসে বমি বেড়ে যেতে পারে।।

৩। প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাবে বা অনেকবার প্রস্রাব হবে।। ৪। পেট বেড়ে যাবে। ৫। স্তন বড় হবে।। ৬। মাঙ্ক অফ ‘প্রেগন্যান্‌সি’- (মুখে, স্তনে এবং পেটে কাল দাগ পড়বে)

৭। পাঁচ মাসের সময় বাচ্চা পেটের মধ্যে নড়তে শুরু করবে।

ন’ মানের শিশু স্বাভাবিক অবস্থায় শিশুর মাথা নিচের দিকে থাকবে ।

মাকে পরীক্ষা করিয়ে নেয়ার জন্য ক্লিনিকে আসতে উৎসাহিত করতে হবে। এতে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হবে এবং ভাল শিশু পেতে পারবে।

বাচ্চা জন্মের আগে এভাবে যত্ন নিতে হবে।

গর্ভাবস্থার প্রথম আট মাসে একবার এবং শেষের মাসে অর্থাৎ নয়। মাসের সময় সপ্তাহে একবার ক্লিনিকে যেতে হবে। ১। মাকে তার প্রয়োজন এবং সমস্যা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করতে হবে। তার কাছ। থেকে জানতে হবে তার কতবার বাচ্চা হয়েছে এবং বাচ্চা হওয়ার সময় কোন অসুবিধা হয়েছে কি না। তার সাথে আলাপ করে বলতে হবে সে নিজেকে কিভাবে সুস্থ রাখতে পারে এবং ভবিষ্যৎ সন্তানের স্বাস্থ্য কিভাবে ভাল থাকে।

নীচের এসব বিষয় মায়ের সাথে আলাপ করতে হবে।

 (ক) পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মানে খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতে। স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেমন হাত, পা, নখ ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে। পেটে অসুখ ও কৃমি প্রতিরােধক ঔষধ খেতে হবে। ভাল পায়খানার জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। ভাল কাপড় চোপড় পরতে হবে এবং খাবারে। যাতে মাছি বসতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। ধাইয়ের নিজেরও পরিষ্কার থাকা খুবই প্রযইয়োজন। তাকে ছোট ও পরিষ্কার নখ রাখতে হবে। যখন রোগীর কাছে যাবে তখন পরিষ্কার পোশাক পরতে হবে।

(খ) ঔষধ কম খেতে হবে।।  

গর্ভবতী মহিলাদের বেশী ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। যদিও বা আয়রণ (Iron) এবং ভিটামিন (Vitamin) ঔষধ খাওয়া বিপদজনক নয়।

(গ) গর্ভবতী মাকে অনেক বিশ্রাম নিতে হবে।

(ঘ) তিনি কখনও ধূমপান করবেন না বা কোন প্রকার মাদকদ্রব্য খাবেন না।

(ঙ) ধনুষ্টংকার রোগের ভেকসিন (vaccine) নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় ছয়, সাত ও আট মাসের সময় মাকে  ধনুষ্টংকার রোগের ভেকসিন দিতে হবে। এ ভেকসিন তিন মাসের মধ্যে তিনটা দিতে হবে। এ রকম ভেকসিন দিলে  মা ও বাচ্চা উভয়েরই ধনুষ্টংকারের হাত থেকে রক্ষা পাবে। মা যদি আগে। কখনও ক্লিনিকে গিয়ে ভেকসিন না নিয়ে থাকে, তা হলে, নয় মাসেও একটা ভেকসিন দেওয়া যেতে পারে। আগে ভেকসিন নিলে সাত মাসের সময়ও ভেকসিন নেওয়া যেতে পারে। (চ) পেটের মধ্যে বাচ্চা কোন জায়গায় আছে তা বুঝতে চেষ্টা করুন। শেষের। মাসে বাচ্চার মাথা নিচের দিকে না থাকলে, মাকে হাসপাতালে নিয়ে। ডাক্তার পরীক্ষা করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে অপারেশনও লাগতে। পারে।।

গভধারণের পাচ মাসের পরে বাচ্চার হৃদস্পন্দন শোনা যায়। আপনি। (ধাই) মায়ের পেটের উপর কান পেতে বাচ্চার হৃদস্পন্দন হয়তো শুনতে পারেন। কিন্তু মাঝে মাঝে এভাবে শোনা কঠিন হয়। অর্থাৎ ভালভাবে শোনা যায় না। তবে পাতলা তক্তা বা মাটি দিয়ে একটা ছোট ফিটোস্কোপ বানিয়ে। মায়ের পেটের উপর রেখে কান পেতে ঐ ফিটোস্কোপের মধ্যে বাচ্চার হৃদস্পন্দন এবং পেটের মধ্যে তার নড়াচড়ার শব্দ শোনা যাবে।।     

ফিটোস্কোপ।

গর্ভাবস্থার শেষের মাসে বাচ্চার হৃদস্পন্দন নাভির নীচে শোনা যায়।  তাহলে বুঝতে হবে বাচ্চার মাথা নীচের দিকে এবং জন্মের সময় মাথাই। প্রথম আসবে। যদি বাচ্চার হৃদস্পন্দন শব্দ নাভির উপরে শোনা যায় তাহলে। বুঝতে হবে মাথা উপরের দিকে এটাকে ব্রিচ বলে। বাচ্চার বুকের শব্দ প্রতি মিনিটে ১২০ থেকে ১৬০ পর্যন্ত শোনলে স্বাভাবিক বুঝতে হবে। ১২০ বারের কম হলে বুঝতে হবে হয়ত কোন অসুবিধা আছে। হয়তো আপনি ভুল। শোনতেও পারেন। তখন মায়ের নাড়ী পরীক্ষা করতে হবে। বাচ্চার বুকের । শব্দ শোনতে পাওয়া মাঝে মাঝে কঠিনও হতে পারে। তাই এই রকম। শোনার অভ্যাস করতে হবে।।

গর্ভাবস্থায় খাবারের তালিকা।    

এ কথা আপনাকে (ধাইকে) ভাল করে বুঝিয়ে দিতে হবে যে গর্ভাবস্থায়। মায়ের ঠিক মত ভাল খাবার খেতে হবে। তাই আপনি খোঁজ নিন গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য কেমন যাচ্ছে। তার রক্তহীনতা হলে চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। তাকে শাক-সবজি এবং ফল যেমন-কলা, আম, চিনেবাদাম, ডিম, মাছ। ইত্যাদি খেতে বলতে হবে। ডালও ভাল খাবার যদি মাছ-মাংস কিনতে না পারেন তাহলে বাদাম, ডিম এবং মাছ খেতে হবে। তাহলে তার পেটের বাচ্চার স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।

তাকে প্রচুর দুধ ও জল খেতে হবে। যখন সে ক্লিনিকে যাবে তখন তাকে। আয়রন ও ভিটামিন ট্যাবলেট আনতে হবে। দুধে প্রচুর ক্যালসিয়াম আছে। শিশুর হাড় এবং দাঁত ভালভাবে গড়ে উঠতে ক্যালসিয়াম খাওয়া দরকার। গর্ভাবস্থায় মা যদি ভাল এবং সুষম খাবার না খান তা হলে পেটের বাচ্চার। বাড়নের কাজ ভাল হবে না এবং ভবিষ্যৎ বাচ্চার বুদ্ধি কম হতে পারে।।

রেকর্ডস

মা’র কখন বাচ্চা হবে তা কিভাবে জানা যাবে। শেষ ঋতুর (মিন্স)  প্রথম দিন, সে দিনের সংগে ন'মাস সাত দিন যোগ করতে হবে। যেমন ঋতুর প্রথম দিন ছিল ১০ই বৈশাখ।

১০ই বৈশাখের সঙ্গে নয় মাস যোগ করলে ১০ই মাঘ হবে। ১০ই মাঘের সঙ্গে সাতদিন যোগ করলে ১৭ই মাঘ হবে। তাহলে ধরে নেবেন বাচ্চা। ১৭ই মাঘের মধ্যে হতে পারে। আপনাকে ছোট-খাট হিসাব রাখতে হবে, তাহলে প্রতি মাসে যে বিশেষ পরিবর্তন হয় তার একটা তুলনা করতে পারবেন।

রেকর্ড কার্ডের নমুনা।

অ্যান্টিনেটাল রেকর্ড কার্ডের

নমুনার পূর্ণ বিবরণ।

নাম---------G= গ্রাভিডা = কতবার বাচ্চা হয়েছে। এই বয়স।

বয়স-----------------বারে বাচ্চা সহ ক’টি বেঁচে আছে বা ঠিকানা  

ঠিকানা -----------------------ক’টি মারা গেছে । P = পারাটি = কত বাচ্চা হয়েছে।

অ্যাবোরশনের আলাদাহিসাব করতে হবে।Blood Group = রক্তের গ্রুপ।

 Obstetric History = আগের বাচ্চা হওয়ার হিসাব। L. M. P. = সব শেষ ঋতুর প্রথম দিন।। E. D. D. = বাচ্চা হওয়ার প্রত্যাশিত দিন।। ১। Gestation = গর্ভধারণের বয়স ক’সপ্তাহ হল।

২। Fundal height = পেটের উচ্চতা।প্রতি মাসে গর্ভবতী মায়ের জরায়ু দু’আঙ্গুল করে বাড়া উচিত এবং তা সাড়ে চার মাসের সময় নাভির কাছে পৌছার কথা। ৩। Presentation = জরায়ুর নীচের দিকে বাচ্চার কোন অংশ থাকে।

সাধারণতঃ বাচ্চার মাথা নিচের দিকে থাকে এবং আমরা তাকে ভার্টেক্স বলি। মাথা যদি উপর দিকে থাকে তাহলে তাকে ব্রিচ বলি।তাছাড়া ট্রান্সভার্স বা অবলিকও হতে পারে। ৪। Engaged = শেষের মাসে বাচ্চার মাথা নিচের দিকে থাকে। যদি বাচ্চার মাথা পরীক্ষার সময় না নড়ে তাহলে বলতে হবে "Engaged" ৫। F. H. = বাচ্চার বুকের শব্দ। | ৬। প্রস্রাব ও প্রস্রাবের sugar ও albumin এর পরীক্ষা করতে হবে।

৭। রক্তচাপ ঃ ১৩০/৯০ এর বেশী হওয়া মারাত্মক। ৮| ওজন।।

৯।Haemoglobin রক্ত পরীক্ষা ও শতকরা সত্তর ভাগ বা তার বেশী। হতে হবে।

১০| Odena হাত, পা বা মুখ ফোলা।

গর্ভাবস্থায় ছোটখাট অসুবিধা ।

নিম্নবর্ণিত অসুবিধাসমূহ গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েরই দেখা দেয়। আপনি। (ধাই) নিজের উপদেশগুলি মাকে দেবেন।।

(ক) বমি হওয়া

গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় বা তৃতীয় মাসে সকালে বমি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। গর্ভবতী মাকে বলতে হবে প্রত্যেক দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগে কিছু শুকনা খাবার, যেমন বিস্কুট ও শুকনা রুটি ইত্যাদি খেতে হবে। তার এক সময় অনেক খাবার খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু কয়েকবার একটু একটু করে খাওয়া উচিত। বেশী তেল ও মসল্লাযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। গর্ভাবস্থায়। বমি কমাবার জন্য বা অন্য কোন কারণে ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। কারণ। ওষুধ খেলে পেটের বাচ্চার গড়ন ব্যাহত হয়।

(খ) বদহজম

বদহজম হলে পেট ও বুক জ্বালা করবে। তাই মাকে প্রত্যেকবার অল্প | খাবার খেতে হবে। সম্ভব হলে মাকে দুধ খাওয়াতে হবে। কিন্তু বেশী। মসল্লাযুক্ত এবং তৈলাক্ত খাবার খাবে না। তাকে সব সময়ই উপদেশ দিতে হবে, যেন ঘুমাবার সময় মাথায় কম্বল বা বালিশ রেখে মাথা একটু উচুতে রেখে ঘুমায়।।বদহজম বেশী হলে তাকে এ্যান্টাসিড (Antacid) জাতীয় ওষুধ খেতে দেবেন-যেমন অ্যালমাসিল (Almasil) খেতে দেবেন। যদি সম্ভব হয় এটা। খাওয়ানাে বাদ দিতে চেষ্টা করবেন।।

(গ) অর্শরোগ

গুহ্যদ্বারে কতগুলো ছোট ছোট শিরা মাংসখণ্ডের মত বাঁকা হয়ে যায়। এ ভাবে অর্শরোগ হয় । এটা খুব ব্যথাপূর্ণ হতে পারে কিন্তু তেমন  মারাত্মক নয়। সাধারণতঃ গর্ভাবস্থার মহিলাদের এই রোগ হয়ে থাকে কিন্তু পরে। সেরে যায়। এ রোগ মাঝে মাঝে কষা পায়খানার জন্য হয়ে থাকে। গর্ভবতী মায়ের এ অসুখ হলে মাকে প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি, ফল এবং অনেক জল খেতে বলবেন। অর্শরোগ বেড়ে গেলে এবং রক্তক্ষরণ হলে বাচ্চা প্রসবের পরে অর্শ। হয়তো অপারেশন করিয়ে নিতে হতে পারে। ব্যথা বন্ধ করতে, মা তার হাঁটু গেড়ে পাছার বা নিতম্বের উপরের দিকে রাখবে। যতক্ষণ সম্ভব এ। ভাবে রাখতে হবে।

(ঘ) স্ফীত শিরা

গর্ভাবস্থার পায়ের শিরা স্ফীত হওয়া স্বাভাবিক। কারণ পেটের মধ্যের। বাচ্চার ওজন পায়ের শিরার উপর চাপ পড়ে। মাকে বলবেন যতটুকু সম্ভব প্রায় সব সময়েই পা দুটো একটু উচুতে তুলে রাখতে। এতেও যদি শিরা। স্ফীত থেকেই যায় তাহলে একটা ইলাষ্টিকের ব্যাণ্ডেজ দিয়ে স্ফীত শিরাগুলি আগাভাবে বেঁধে রাখবেন। কিন্তু রাতে ঘুমাবার সময় ঐ ইলাষ্টিকের ব্যাণ্ডেজটি খুলে রাখতে হবে।।

(ঙ) কোমরে ব্যথা।

কোমরে ব্যথা থাকা গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক ব্যাপার। মায়ের উচিত, বসা। এবং দাঁড়াবার সময় মেরুদণ্ড খাড়া রেখে বসা বা দাঁড়ান।

(চ) পা ফোলা।

পা ফোললে মাকে বলতে হবে দিনের যে সময় তিনি বিশ্রাম নেন তখন। যেন পা একটু উপরের দিকে তুলে রাখেন। খাবারে লবণ কম খেতে হবে। ভুট্টার মাথায় যে ঘাসের মত সাদা জিনিস থাকে তা সিদ্ধ করে তার জল খেলে পা ফোলা কমে যায়।।

১৪

এক মুঠো ভুট্টার দানার মাথার ঘাস সিদ্ধ করুন। ঐ সিদ্ধ জল দুই বা এক গ্লাস খাওয়াবেন। এই জল খাওয়া মারাত্মক নয়। গর্ভাবস্থায় শেষ মাসে। সাধারণতঃ এভাবে পা ফোলা থাকে। যে সব মহিলারা ভাল খাবার খান না, যাদের রক্তহীনতা আছে অথবা যারা লবণ বেশী খায়, তাদেরই পা ফোলা রোগ দেখা যায়।।

(ছ) ক্লান্তি ও দুর্বলতা

বেশীর ভাগ মায়েরাই গর্ভাবস্থায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এ সময় মাঝে মাঝে মায়ের অনেক বিশ্রাম নেয়া দরকার এবং যতটা সম্ভব ভাল খাবার খেতে। হয়।।

(জ) প্রস্রাবের দোষ বা গোঁলমাল।

গর্ভাবস্থায় দুই বা তিন মাসের সময় অথবা গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে মায়ের বারে বারে প্রস্রাব হয়। এ রকম হওয়া স্বাভাবিক। কারণ এ সময়। বাচ্চা পেটের নিচের দিকে শোয়া থাকে এবং মায়ের প্রস্রাবের থলেতে চাপ দেয়। এটা যদি সামান্য সমস্যা হয়ে দেখা দেয়, তাহলে মাকে  বার বার প্রচুর জল খেতে বলবেন। প্রতি ঘন্টায় অন্ততঃ এক গ্লাস জল বা যে কোন পানীয়। খাবার খাবে। এ অবস্থায় তাকে মিষ্ট পট সিট মিকচার (Mist Pot Cit) খেতে দেবেন।।

(ঝ) কষা পায়খানা

পায়খানা কষা হলে প্রচুর জল খেতে হবে। মাকে অনেক ফল এবং শাক-সবজি খেতে বলতে হবে। রাতে দু’টো করে পর পর দু'রাত মোডেন। (Modane) ট্যাবলেট খেতে দেবেন।।

16

গর্ভাবস্থায় বিপদ চিহ্নসমূহ

১। রক্তক্ষরণ ।

যদি কোন মায়ের গর্ভাবস্থায় অল্প অল্প রক্তক্ষরণ হয় তাহলে তা বিপদজনক ভেবে নিতে হবে। এমন হলে হয়ত সে তার বাচ্চাকে হারাতে পারে (মারা যেতে পারে)। যে কোন কারণে রক্তক্ষরণ হলে, এমন কি অল্প অল্প রক্তক্ষরণ হলেও মাকে শুইয়ে থাকতে হবে এবং হাসপাতালে পাঠাতে হবে। ছয় মাস পরে রক্তক্ষরণ হলে বুঝতে হবে যে গর্ভের নিচের দিকে গর্ভফুল থাকতে পারে এবং বাচ্চা জরায়ু থেকে আসতে পারবে না (placenta praevia)। রক্তক্ষরণ হলে মা মারাও যেতে পারে। এই অবস্থায় মাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

২। রক্তহীনতা  রক্তহীনতা হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যদি নীচের চিহ্নগুলাে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে বিপদজনক কিছু ঘটছে।। চিহ্ন। (ক) চামড়া ফ্যাকাশে হবে।। (খ) চোখের কুটি সাদা দেখা যাবে। (গ) মাড়ী সাদা দেখাবে।।

(ঘ) আঙ্গুলের নখ সাদা হবে। (ঙ) মা ক্লান্ত এবং দুর্বল হবে।(চ) রক্তহীনতা যদি সত্যিই খুব বেশী হয়, তাহলে মুখমণ্ডল ও পা। ফলতে পারে এবং শ্বাস করতে কষ্ট হতে পারে। গর্ভাবস্থার সারা সময়টাকে মাকে আয়রণ ট্যাবলেট খেতে দিতে হবে এবং তার বাচ্চা। হবার সময় তাকে অবশ্যই হাসপাতালে থাকতে হবে।

৩৷ প্রি-একলাম্পসিয়া (Pre-eclampsia)

প্রি-একলাম্পসিয়া সাধারণতঃ গর্ভবতী মায়েদের হয়ে থাকে। মা প্রতিবার যখন ক্লিনিকে যায়, তখন প্রি-একলাম্পসিয়ার এই লক্ষণগুলাে আছে কি না লক্ষ্য করতে হবে।

লক্ষণ।

(ক) হাত, পা ও মুখ ফোলা।। (খ) রক্তের উচ্চ চাপ থাকবে। অর্থাৎ ১৩০/৯০ উপরে থাকবে।

মাথাধরা, মাথা ঘুরান এবং চোখে ঝাপসা দেখবে। (গ) প্রস্রাবে অ্যালবুমিন (albumin) থাকবে।

এই তিনটা লক্ষণের যে কোন দু’টো থাকলেই বুঝতে হবে, মায়ের প্রি-একলাম্পসিয়াহয়েছে।

চিকিৎসা (ক) দিন রাত সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। (খ) কোন প্রকার লবণ খাবেননা।। (গ) রোগী তাড়াতাড়ি ভাল হলে এবং একই অবস্থায় থাকলে যেমন মুখ, পা ও হাত ফোলা থাকলে তাড়াতাড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। না হলে মারা যেতে পারে।

৪৷ গর্ভপাত (Abortion) ঘটান।

কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু মা বাচ্চা না চাইলেও গর্ভবতী হয়ে যান। তখন এই অনাহুত বাচ্চাকে নষ্ট করতে গর্ভপাত ঘটিয়ে থাকেন। সরকারী বা বেসরকারী কোন হাসপাতালে ডাক্তারের সহযােগিতায় গর্ভপাত ঘটানো। তেমন বিপদজনক ব্যাপার নয়।  কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু কিছু মহিলারা। এই গর্ভপাত গোঁপনে ঘটাতে চান, এবং অদক্ষ লোকের দ্বারা নোংরা স্থানে বা  নোংরাভাবে এই গর্ভপাত ঘটিয়ে থাকেন। এটা সত্যিই মারাত্মক। এতে অনেকেই মারা যায়। এই অবস্থায় ধাই, মাকে জিজ্ঞেস করবেন এ ধরনের কিছু করছে কি না। এমতাবস্থায় মাকে তাড়াতাড়ি। হাসপাতালে পাঠাতে হবে। হয়তো মায়ের জ্বর হতে পারে এবং বাদামী। রংয়ের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হতে পারে।   

উপরের উল্লেখিত এই চারটির যে কোন একটা দেখা দিলে ধাইয়ের উচিত মাকে যত তাড়াতাড়ি পারে হাসপাতালে পাঠানো। যে পর্যন্ত। ডাক্তারের সাহায্য পাওয়া না যায়—ততক্ষণ আপনাকে (ধাইকে) এই রোগীর প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে।

বাচ্চা হবার সময় যে মা এবং বাচ্চার বেশী বিপদের সম্ভাবনা থাকে। কিছু কিছু মহিলা বাচ্চা হওয়ার সময় এবং পরে বিভিন্ন অসুবিধার মুখোমুখি হন। কোন কোন বাচ্চার ওজন খুবই কম হয় বা অসুস্থ হয়ে। থাকে। এরকম হলে আপনাকে নীচের ব্যবস্থা মানতে হবে ।

 ১। যে মহিলারা খুবই খাটে। 

৫। যাদের এর আগে বাচ্চা হবার সময় দারুণ কষ্ট বা ব্যথা হয়েছে।

যদি এই সব মায়েদের প্রতি বিশেষভাবে যত্ন নেওয়া হয় এবং ভাল। খাবার এবং সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে বাচ্চা, মায়ের। স্বাস্থ্য আরও ভাল থাকবে। মনে রাখবেন, মায়েদের আপনার (ধাই) কাছে আসার অপেক্ষা। করবেন না, বরং আপনি তাদের কাছে যাবেন।

গর্ভে শিশুর অবস্থান।

মা যখন ক্লিনিকে আসবে, প্রত্যেকবারই তার তলপেটে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সাধারণতঃ পেটের দু’আঙ্গুল পরিমাণ জায়গা গর্ভাবস্থার এক মাস ধরে নিতে হবে। সাধারণতঃ পাঁচ মাসের সময় বাচ্চা নাভির কাছে থাকে।




Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post