এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যে, গর্ভে বাচ্চার অবস্থান স্বাভাবিকভাবে ঠিক মত আছে। এটা নিশ্চিত হবার জন্য নিচের পদ্ধতি অবলম্বন করুন ঃ মাকে শ্বাস ছাড়তে বলুন । মায়ের ডান পাশে দাঁড়ান। তারপর ডান হাতের বুড়া। আঙ্গুল ও অন্য দু’আঙ্গুল দিয়ে।  তলপেটে আস্তে আস্তে চাপ দিন। বাঁ হাত দিয়ে গর্ভের উপরের দিকে চাপ দিন। 

বাচ্চার মাথা গোঁলাকৃতি এবং শক্ত অনুভব করবেন। পিছনের দিকটা একটু বড় এবং নরম মনে হবে।

বাচ্চার মাথা উপরে অনুভব করবেন। তবে ফিটোসকোপ দিয়ে মায়ের নাভির উপরে বাচ্চার বুকের শব্দ পরিষ্কার শোনা গেলে এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে। যদি বাচ্চার মাথা নিচের দিকে থাকে তাহলে বাচ্চার জন্ম স্বাভাবিক হবে বলে ধরে নেয়া যায়। যদি মাথা উপরের দিকে থাকে তাহলে বাচ্চার জন্ম স্বাভাবিক নাও হতে পারে। যেমন—ব্রিচ। এ অবস্থায় বাচ্চা হাসপাতালে। হওয়াই ভাল।।

যদি বাচ্চা কাত হয়ে থাকে ট্রান্সভার্স) তাহলে বাচ্চা হতে মাকে হাসপাতালে যেতে হবে। হাসপাতালে না গেলে বাচ্চা এবং মা উভয়ই বিপদগ্রস্ত হতে পারে।

ধাইদের ব্যাগে যা যা থাকবে।

নিচের জিনিসগুলো ধাইদের ব্যাগে থাকা দরকার : ১। হাত ধোয়ার জন্যে একটা ব্রাশ থাকবে। ২।  সাবান ৩। এক টুকরা পরিষ্কার কাপড়। নাভি কাটার পরে এটা দিয়ে নাভি ঢেকে  দিতে হবে।। ৪। মোটা চারগাছ পরিষ্কার নতুন সুতা রাখতে হবে। কারণ ঐ সুতা দিয়ে।  নাভি কেটে রাখতে হবে। এগুলো পরিষ্কার কাগজের মধ্যে রাখতে হবে। আগে পরিষ্কারভাবে সিদ্ধ করে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে নিতে হবে।

৫। এটা নতুন ব্লেড রাখতে হবে। নাভি কাটবার পূর্ব পর্যন্ত ব্লেডটি প্যাকেটের মধ্যেই রাখতে হবে। এক বোতল জেনসানভায়োলেট রাখতে হবে।

কারণ নাভি কাটার পরে ঐ জেনসানভায়োলেট নাভিতে মাখতে হবে।। ৬। দু’টো পাত্র রাখতে হবে। একটাতে হাত ধোবে। অন্যটাতে গর্ভফুল রাখতে হবে যাতে পরে ঐ গর্ভফুল পরীক্ষা করে দেখতে পারবে যে সবটুকুই এসেছে কি না।  ৭। অনেক ছেড়া কিন্তু খুবই পরিষ্কার কাপড় রাখতে হবে।।


৮। একটা সিরিঞ্জ, দু’একটা নিডেল এবং কয়েকটা আগ্রামেট্রিন

ইনজেকশন (ergonmetrine) থাকবে।

এগুলো একটা পরিষ্কার ব্যাগে রাখতে হবে। ঐ ব্যাগের তলায় যেন পরিষ্কার কাপড় লাগানো থাকে। ব্যাগ বা বাক্স না  থাকলে কাপড়ের ব্যাগ তৈরী করতে হবে এবং ব্যাগের চারদিকে এমন লাইন থাকবে। যেন বাঁধা যায়।।  ব্যাগই হোক বা বাক্সই হোক তা ভাল করে আটকিয়ে রাখতে হবেযেন কোন প্রকারে ময়লা ধূলাবালি অথবা পোকা-মাকড় যেতে না পারে।। যে কোন জিনিসই ব্যবহারের পর পরই সাবান ও জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে।  সব কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে ব্যবহারের উপযোগী করে রাখাই হল ধাইয়ের কর্তব্য। ঐ জিনিস  ব্যবহারের পূর্বে আপনার হাত ভাল করে ধুইয়ে। নিতে হবে। সম্ভব হলে ডেলিভারী বা বাচ্চা হওয়ার আগে আপনাকে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে যে, ঘরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আছে কি না। ধাই গর্ভবতী মাকে বলবেন যেন সাত মাস গর্ভ অবস্থার সময় ঘরে পরিষ্কার ছেড়া কাপড়, একটা নতুন ব্লেড, সাবান এবং কিছু পরিষ্কার ভাল সুতা রাখেন।। মাকে যে সব হাস্কা ব্যায়াম শেখাতে হবে ব্যথা আরম্ভ হলে কেমন করে শ্বাস করতে হবে তা শেখাতে হবে। কি। ধরনের ব্যায়াম করবে তা আগে-ভাগেই মাকে নিচের পদ্ধতি বুঝিয়ে দেবেন। মা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে নিজের পেটের উপর হাত রাখবে। তারপর। আস্তে আস্তে শ্বাস করতে শুরু করবে। এতে তার পেট যে একটু বেড়ে যাচ্ছে। তা বুঝতে পারবে। তারপর নাক দিয়ে শ্বাস ছেড়ে দেবে। মাকে এভাবে। অন্ততঃ ৬ (ছয়) বার করতে হবে। এভাবে আস্তে আস্তে ব্যথার প্রথম পর্যায়। বেশ সহায়ক হতে পারে। এভাবে ব্যায়াম করলে পেটের মাংসপেশী আরো শক্ত হবে। এতে মায়ের বাচ্চা হবার সময় বিশেষ সুবিধা হয় অর্থাৎ মা আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠেন।  

 মাকে প্রথমে বিছানায় শুইয়ে দিন। হাঁটু তুলে পায়ের পাতা এক জায়গায় । এনে বিছানার উপর রাখুন। তারপর নিচের পদ্ধতিতে বার বার ব্যায়াম করুন। ১। আস্তে আস্তে ভারী শ্বাস নিন।। ২। যখন শ্বাস করবেন তখন পেট খালী করে জোরে টান নেবেন। তখন তার পেটের দু'পাশে এবং পেটের মাংসপেশী শক্ত হয়ে যাবে। ৩। মাথা এবং ঘাড় বার কয়েক তুলবে। | ৪। শশায়া অবস্থায় ডান হাত বা হাঁটুতে এবং বা হাত ডান হাঁটুতে ছোঁয়াবে।

বাচ্চা হবার সময়। মাকে কিভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।

বাচ্চা হওয়া স্বাভাবিক। মায়ের স্বাস্থ্য যদি ভাল থাকে এবং গর্ভাবস্থায়। যদি কোন প্রকারের অসুবিধা না হয়, তাহলে বাচ্চা হতে কোন প্রকার অসুবিধা হওয়ার কথাই নয়। স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা হওয়ার সময় ধাইয়ের কিছু করণীয় থাকে না। কারণ প্রয়োজন ছাড়া কিছু করতে গেলে অনেক সময় ভাল না হয়ে খারাপও হতে পারে। গর্ভাবস্থার শেষের মাসে আপনাকে প্রত্যেক সপ্তাহে মাকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এর আগে যদি তার কোন বাচ্চা হয়ে থাকে তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে-পূর্বে বাচ্চা হবার সময় কোন সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কি না। তার সাথে আলাপ করে জানতে হবে কিভাবে বাচ্চা সহজে এবং বিনা কষ্টে হতে পারে। তাকে জোরে জোরে শ্বাস নিতে শেখাতে হবে। কারণ। ব্যথার সময় শ্বাস ওভাবে নেয়া দরকার হয়ে পড়বে। যখন প্রচণ্ড ব্যথা হতে। থাকবে, তখন তাকে নিচের এই নিয়ম মানতে হবে।।

যদি মায়ের বাচ্চা হবার পূর্বে কোন প্রকার বিপদ চিহ্ন দেখা দেয় তাহলে তাকে নিকটস্থ কোন হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।। মনে রাখবেন ব্যথা শুরু হলে মাকে হাসপাতালের কাছাকাছি থাকতে হবে।  শিশুর জন্মের সময় অসুবিধা হতে পারে এবং এতে মা বা বাচ্চার জীবনের উপরও বিপদ আসতে পারে। এ বিপদ চিহ্ন থাকলে অন্যদের সাহায্য নিতে হবে। ১| ব্যথা শুরুর আগে যদি রক্তক্ষরণ হতে শুরু করে। ২। প্রি-একলাম্পসিয়ার চিহ্ন থাকলে-রক্তের উচ্চ চাপ, শরীর ফোলা বা মাথা ব্যথা হলে। ৩। মা যদি কোন প্রকার রোগে ভোগে।। ৪। যদি মায়ের রক্তহীনতা থাকে। অথবা কোন প্রকারে তার শরীর কেটে গেলে যদি অনেক রক্তক্ষণ হতে থাকে। ৫। আগের বাচ্চা হবার সময় যদি রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে অথবা বাচ্চার কোন।

প্রকার অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে। ৬। যদি মনে হয় তার যমজ বাচ্চা হবে, তাহলে তার এই রকম চিহ্ন থাকতে পারে, যেমন, মায়ের পেট খুব বড় হবে এবং হয়তো আপনি তার পেটে তিনটা শক্ত জিনিস অনুভব করবেন (বাচ্চার মাথা এবং পিছন)। ৭। বাচ্চা যদি স্বাভাবিক অবস্থায় না থাকে। (যেমন, মাথা নিচে না থাকে)। ৮| জলের থলে ছিড়ে যাওয়ার পরেও যদি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ব্যথা শুরু না হয় এবং জ্বর হয়, তাহলে তাও খুবই খারাপ।। ৯। সাধারণতঃ প্রথম এবং পঞ্চম বাচ্চা হবার পরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ব্যথা শুরু হওয়ার পূর্ব লক্ষণ।

১। ব্যথা শুরু হবার কয়েকদিন আগে, বাচ্চা জরায়ুর নিচের দিকে যাবে।

এ’তে মা’র শ্বাস করতে সুবিধা হবে কিন্তু সে বার বার প্রস্রাব করবে, কারণ তখন মূত্রাশয়ে চাপ পড়ে। (প্রথম বাচ্চা হবার সময় এই লক্ষণগুলাে দু’সপ্তা আগে হ’তেই দেখা দিতে পারে)।

২। বাচ্চা হবার কিছুক্ষণ আগে শ্লেষ্মর মত একটু আঠাল পদার্থ বা

মিউকাস “Show আসবে, অথবা মাঝে দু’তিন দিন আগেও মিউকাস পড়তে পারে। সময় সময় মিউকাসের সঙ্গে রক্তও পড়তে পারে। এইরকম হওয়া স্বাভাবিক।।

৩। বাচ্চা হবার কয়েক দিন আগেও ব্যথা হতে পারে। প্রথমে ব্যথা অনেকক্ষণ পরে উঠতে পারে। যখন ব্যথা জোরাল এবং কয়েক মিনিট পর হতে থাকে, তখন বোঝা যাবে বাচ্চা আসছে।।

৪। ব্যথা শুরু হবার কিছু পরে, বাচ্চা যে জলের থলেতে থাকে তা ভেঙ্গে যায়। ব্যথা শুরু হওয়ার আগে জলের থলে ভেঙ্গে গেলে বুঝতে হবে। বাচ্চা এক্ষুনি হবে। এই সময় মাকে খুব পরিষ্কার রাখতে হবে। ব্যথা। শুরু হবার পরে মা যদি হাঁটে, তাহলে বাচ্চা আরও তাড়াতাড়ি হতে পারে।।

ব্যথার বিভিন্ন পর্যায়। সাধারণতঃ ব্যথার তিনটি পর্যায় বা স্তর আছে।। ১। প্রথম স্তর হলো ব্যথা শুরু হওয়া থেকে জরায়ুর মুখে আসা পর্যন্ত। ২। দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় জরায়ুর মুখে আসা থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত। ৩। তৃতীয় পর্যায় হলো বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর গর্ভফুল পড়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।  

ব্যথার প্রথম পর্যায়

প্রথম বাচ্চা জন্মের সময় ব্যথার প্রথম পর্যায় ১০ থেকে ২০ ঘন্টা স্থায়ী। থাকে। পরবর্তীবার বাচ্চা জন্মের সময় ব্যথা ৭ ঘন্টা থেকে ১০ ঘন্টা স্থায়ী হতে পারে। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও হতে পারে।। ব্যথার প্রথম পর্যায় বাচ্চা তাড়াতাড়ি হওয়ার জন্য মায়ের পক্ষে কোন যুক্তি নেই। এটা আস্তে আস্তে ঘটে যাওয়াই স্বাভাবিক। মাকে সব সময়ই আশা দিতে হবে যে ব্যথা কমে আসছে এবং অল্প সময়ের মধ্যে বাচ্চা হচ্ছে।

যতক্ষণ পর্যন্ত বাচ্চা জরায়ুর মুখে না আসে তার পূর্ব পর্যন্ত মা যেন বাচ্চা। তাড়াতাড়ি হওয়ার জন্য কোন প্রকারে চাপ না দেয়।

মাকে তার পেট খালি রাখতে হবে। অর্থাৎ বাচ্চা হওয়ার আগে পায়খানা এবং প্রস্রাব করতে হবে। প্রস্রাব ও পায়খানা জমে থাকলে বাচ্চা প্রসবে। অসুবিধা হতে পারে। ব্যথার সময় মাকে বার বার প্রস্রাব করতে হবে। ব্যথার দিন সারা দিন। পায়খানা না হলে পায়খানা করার ডুস দিয়ে পায়খানা করাতে হবে। মায়ের বার বার জল অথবা অন্য কোন পানীয় খেতে দিতে হবে। না খাওয়ালে শরীরের জলীয় অংশ কমে গিয়ে ব্যথা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা কমে যেতে পারে। ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে তাকে হালকা খাবার দিতে হবে। এ রকম হালকা খাবার হলো দুধ, রুটি, ফল, মুড়ি, সুজি ও বিস্কুট। বমি করতে থাকলে তাকে ফলের রস খেতে দিতে হবে। অথবা নিচের | ঐ মিক্সারটি খেতে দেবেন।

এক গ্লাস সিদ্ধ জলে আঙ্গুলের মাথার চার টিপ চিনি তুলে মেশাতে হবে। সম্ভব হলে একটু লেবুর রস মিশিয়ে নেবেন। চিনি না থাকলে গুড় ব্যবহার। করাও যেতে পারে।।

ব্যথার সময় মাকে এপাশ ওপাশে ঘুরে ফিরে শুতে হবে এবং দরকার হলে মাঝে মাঝে একটু হাঁটতে হবে।

Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post