যখন একটি শুক্রকীট একটা স্ত্রী ডিমের মধ্যে যায়, তখন একটা নতুন। জীবন শুরু হয়। স্বামী-স্ত্রী সহবাসের পরে লক্ষ লক্ষ শুক্রকীট যোনির উপর। অংশে জন্মে। শুক্রকীটের, ডিম্বনালী দিয়ে ডিমের কাছে পৌছতে একটু অসুবিধা হয় এবং পথে অনেক শুক্রকীট মারাও যায়। এদের মধ্যে মাত্র। একটা শুক্রকীট ডিমের মধ্যে মিশতে পারে বলে ভূণ জন্মে। যখন শুক্রকীট ডিমের মধ্যে মিশতে পারে, তখন cell বা কোষ ভাগ হয়ে যায়। প্রথমে দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়।


এই দুটো কোষ আবার চার ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এবং জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে। কোষগুলো এইভাবে ক্রমান্বয়ে বেড়ে বেড়ে আলাদা হয়ে যায় এবং কোষগুলো, টিস্যু (মাংসপেশী) এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ (অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ) সৃষ্টি করে । কিছু কোষ শরীরের হাড়, মাংসপেশী, রক্ত এবং চোখ তৈরী করে। ভূণের, ডিম্বনালী থেকে জরায়ুতে যেতে দু’তিন দিন সময় লাগে। এরপর আরও তিন দিন পরে, ভূণ গর্ভের মধ্যে প্রস্তুত জায়গায় চলে যায়। এখানে আসার পরে, চূণ এবং গর্ভের ফুল সৃষ্টি হয়। গর্ভের ফুল গর্ভের এক পাশে থাকে। বাচ্চার চারদিকে জল থাকে (amniotic fluid) এবং বাইরে পর্দা দিয়ে ঘেরা থাকে। যে পর্দার মধ্যে। জল থাকে, তাকে amniotic sac বা জলের ব্যাগ বলা হয়। জলের ব্যাগের মধ্যে বাচ্চা স্বাধীনভাবে নড়াচড়া করতে পারে এবং মা পড়ে গেলেও বাচ্চার সাধারণতঃ ক্ষতি হয় না। বাচ্চা তার সমস্ত খাবার ও অক্সিজেন গর্ভের ফুল থেকে নাড়ের মধ্য দিয়ে পেয়ে থাকে।



জরায়ু

শিশু গর্ভের মধ্যে জল দ্বারা বেষ্টিত থাকে। এই জলকে amniotic fluid বলে। যখন ব্যথা শুরু হয়, তখন এই জলের থলে ভেঙ্গে যায়। এই জল। পর্দার মধ্যে থাকে এবং বাচ্চা হবার সময় এগুলো দেখা যায়। বাচ্চার নাভি থেকে একটা নাড় বেরিয়ে আসে। এটা গর্ভফুলের সঙ্গে যুক্ত। এই গর্ভফুল মাংসের মত। সাধারণতঃ বাচ্চা হবার পাঁচ মিনিট পরে। এটা বেরিয়ে আসে। বাচ্চা তার সব খাবারও অক্সিজেন এই গর্ভফুল থেকে গ্রহণ করে। অক্সিজেন ও খাবার বাচ্চার নাড়ের মধ্য দিয়ে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়।

গর্ভে শিশুর বাড়ন

ছ’সপ্তার গর্ভের শিশু

এ অবস্থায় জরায়ু একটু বেড়ে যায়, তাই ডাক্তারের পক্ষে পরীক্ষা করা। খুবই কঠিন। এ সময় ভুণ দেখতে একটা টিকটিকির মত থাকে এবং লম্বা মাত্র আধ ইঞ্চি থাকে। এ সময় মাত্র হাত ও পায়ের স্থানে একটু লম্বা মাংস। পিণ্ড গজায় এবং চোখের কোটরের স্থানে দু’টো ছোট গর্তের মত হয়। এ সময় গর্ভফুল ভুণের চেয়ে অনেক বড় এবং বেশী ভারী থাকে।।

আট সপ্তার শিশু

এ সময় জরায়ু বেড়ে গেলেও মায়ের পেট তত বড় দেখা যায় না। কিন্তু ডাক্তারের পরীক্ষা করে দেখতে আগের চেয়ে একটু সুবিধা হয়। মাঝে মাঝে সকালে মায়ের বমি হতে পারে, মায়ের স্তন এ সময় নরম হয়। পেটে ভূণটির। মাথা শরীরের চেয়ে বড় হবে এবং মানুষের আকৃতি নেবে, হাত পায়ে ছোট ছোট আঙ্গুল হবে। চোখ ঠিক মত গঠিত হবে কিন্তু চোখের পাতা ২৪ সপ্তা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। কানের বাইরের অংশ গঠিত হয়। এ ছাড়া শরীরের অন্যান্য প্রধান ইন্দ্রিয়সমূহ তৈরী হয়। হৃদৃপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালন কাজ এবং পেট ও কিডনির (মূত্রাশয়) কাজ এ সময় শুরু হয়।  এ সময় সব ইন্দ্রিয় গঠিত হয়, কিন্তু বাকি সময় (জন্মের পূর্ব পর্যন্ত) সেগুলো আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এবং স্বাভাবিক কাজ চলতে থাকে।  

বার সপ্তার শিশু

এ সময় জরায়ু ভগাস্থির (pubic bone) উপরে অনুভব করা যায়। ভূণের শরীর বড় হতে থাকে কিন্তু মাথাটা তুলনায় বড় থাকে। হাত ও পায়ের নখ হয়। যদিও জননেন্দ্রিয় এ সময় গঠিত হয়, তবুও ভূণ ছেলে কি মেয়ে তা বােঝা যায় না। মাংসপেশী ও স্নায়ুর কাজের মধ্যে সংযোগ। (যোগাযোগ) আরো বেড়ে যায়। এ সময় দ্রুণ কিছু গিলতে পারে এবং ভূণের চারপাশে যে জল থাকে তা একটু একটু খায়। এবং ঐ জল কিডনির মধ্য। দিয়ে এসে জননেন্দ্রিয়ের মধ্য দিয়ে ভূণের চার দিকের জলের মধ্যে এসে। আবার মিশে যায়। এ সময় গর্ভফুল ভূণের চেয়ে ছয়গুণ ওজনের হয়।

ষোল সপ্তার শিশু

| এ সময় জরায়ু বেড়ে যায় এবং তা পেটের উপর দিয়েও সহজে অনুভব করা যায়। এ সময় ভূণ বেড়ে গর্ভফুলের মত ওজন হয়। গর্ভফুলের কাজও। অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু এর বাড়নের হার বস্তুত কমে যায় এবং আকারে বড় হয়। ভূণের মাথা খুব বড় থাকে। কিন্তু হৃদপিণ্ডের শব্দ জোরে জোরে হতে থাকে। এবং মাংসপেশী বেশী কর্মক্ষম (active) হয়। ভুণের। জননেন্দ্রিয় দেখে বোঝা যায়, এটা ছেলে বা মেয়ে।

কুড়ি সপ্তার শিশু

এ সময় জরায়ু বেড়ে নাভির কাছে আসে। এ অবস্থায় এটা স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে যে, মা এখন গর্ভবতী। এ সময় মা পেটের বাচ্চার নড়াচড়া টের। পায়। দ্বিতীয়বার গর্ভধারণের সময় বাচ্চার বয়স কুড়ি সপ্তা হওয়ার আগেই বুঝতে পারে যে, বাচ্চা পেটের মধ্যে নড়ছে। কারণ তার এই অনুভূতি প্রথম। বাচ্চার সময়ই বুঝতে পেরেছে। চূণ এ সময় মানুষের আকৃতি ধরে এবং শরীরে চামড়ার উপরে পাতলা লোম (hair) ওঠে। এই লোমের নাম। “লানুগগা হেয়ার”   (Lanugo hair) চোখের ডু ও মাথার চুলও ওঠে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঠিক মত বাড়তে থাকে। কিন্তু জরায়ুর বাইরে। ভূণ বেঁচে থাকতে পারে; ফুসফুস তেমনভাবে গঠিত হয় না। গর্ভফুলের কাজ বেড়েই চলতে থাকে এবং বাচ্চা হবার পূর্ব পর্যন্ত এ ভাবে চলে। এরপর  গর্ভফুলের আকৃতির বাড়নের হার কমতে থাকে এবং জন্মের সময়। গর্ভফুলের চেয়ে বাচ্চার ওজন পাঁচগুণ হয়।।

চবিশ সপ্তার শিশু

বাচ্চার শরীরের চামড়া পাতলা থাকে বলে কচকে যায় এবং সারা শরীর। ‘লানুগগা হেয়ারে’ বা ললামে (lanugo hair) ভর্তি থাকে। এরপর চামড়ার। নিচে চর্বি হতে থাকে। এ সময় শরীরের তুলনায় মাথা বড় থাকে। এবং চোখের পাতা খুলে যায়। এ সময়ও ফুসফুস ঠিকমত গঠিত হয় না। এ সময়। বাচ্চা (ভূণ) হলে শ্বাস করতে চেষ্টা করে কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই বেশীর ভাগ বাচ্চা মারা যায়।।

আটাশসপ্তার শিশু

এ সময়ও বাচ্চার শরীর খুব পাতলা থাকে। বাচ্চার গায়ে মােমর মত তৈলাক্ত পদার্থ থাকে। এটাকে ‘ভারনিক্স কেসিওসা’ (vermix caseosa) বলে। এ সময় বাচ্চার বুকের শব্দ বড় শােনা যায়। মাংসপেশী বেশী কর্মক্ষম (active) হয় এবং ভূণটি খুব নড়াচড়া করে। চোখ এ সময় সম্পূর্ণ খুলে যায়। কিন্তু ফুসফুস পূর্ণ (matured) হয় না। এ সময় বাচ্চা হলে এবং হাসপাতালে বিশেষ যত্ন পেলে হয়ত বাঁচে, কিন্তু জীবনের প্রথম অবস্থায় খুব শ্বাস কষ্ট হয়।



বত্রিশ সপ্তার শিশু

এ সময় বাচ্চার চর্বি গঠিত হলেও চামড়া কুচকান থাকে। মাথার হাড় নরম এবং নমনীয় (flexible) থাকে। ফুসফুস পূর্ণ হয় এবং এই অবস্থায়। বাচ্চা হলেও বিশেষ যত্ন করলে বাচ্চা বাঁচতে পারে।

ছত্রিশ সপ্তার শিশু

এ সময় জরায়ু বাচ্চাসহ পাঁজরের কাছে পৌছে, ফলে মায়ের খুব কষ্ট হয়। এর আগের চার সপ্তা ধরে ভূণের অনেক ওজন বাড়ে, কারণ চামড়ার নীচে অনেক চর্বি হয়। এ অবস্থায় ভ্রণ হাত পা নাড়ায়। কিন্তু তার অবস্থানের। কোন পরিবর্তন করতে পারে না।।

চল্লিশ সপ্তার শিশু

এ সময় গর্ভাবস্থার পূর্ণ সময়। বাচ্চার ওজন এ সময় পাচ থেকে সাত । পাউণ্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে। গর্ভফলের চেয়ে বাচ্চার ওজন পাঁচ গুণ বেশী থাকে। তবুও গর্ভফুলের কাজ বেড়ে যেতে থাকে। শরীরের সংগে তুলনামূলকভাবে বাচ্চার মাথা এ সময় স্বাভাবিক আকৃতি নেয়। মাথার খুলি (skull) বা করোটি এ সময় শক্ত হয় এবং মাথার হাড়গুলি আরো কাছাকাছি এসে যায়। কপালের একটু উপরে এবং মাথার পেছনের অংশ এ সময়ও নরম থাকে। চোখের পাতা খুলে  যায় কিন্তু চোখ অপরিষ্কার থাকে এবং চোখ বলয়ের কোন স্থায়ী রঙ থাকে না। শরীরের চামড়ার কিছু অংশ এ সময়ও ভারনিক্স। কেসিওসা (vernix Caseosa) দ্বারা আবৃত থাকে। মাথা চুলে ভরে যায়। এবং ‘লাগো হেয়ার’ (lanugo hair) কাঁধ ছাড়া শরীরের অন্য সব জায়গা থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।


Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post