এদেশের বেশিরভাগ মহিলারই অর্গাজম হয়নি কখনও! সেক্স নিয়ে ফ্রি হতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা 

জীবন বিজ্ঞানের জননতন্ত্রের চ্যাপটারের বাইরে যে যৌনতার (Sex) আস্ত একটা দুনিয়া আছে, ভারতবর্ষের একটা বড় অংশের মেয়েরা তার সঙ্গে পরিচিত হন বিয়ের পর। যৌনতা নিয়ে ছুঁৎমার্গে ছেয়ে আছে এদেশের অলিগলি। প্রকাশ্যে যৌনতা তো দূরের কথা, সবার সামনে সঙ্গীকে চুমু খেলেও এখানে গণধোলাই ভবিতব্য। দু’দিন আগেই তার সাক্ষী থেকেছে সরযূ নদীর স্রোত। আর তাই হয়তো ভারতের প্রায় ৭০ শতাংশ মহিলা এখনও জানেন না অর্গাজম (Orgasm) কাকে বলে! জেনারেশনের পর জেনারেশন বয়ে গেছে, একাধিক সন্তান এসেছে মেয়েদের কোলে, অথচ সেসব মায়েরা চূড়ান্ত সেই যৌন তৃপ্তির স্বাদই পাননি কখনও!

ছবি প্রতীকী অনলাইন থেকে নেওয়া 

সেক্স নিয়ে আরও খোলামেলা (Sexual Education) হতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে আজকাল অনেকেই এগিয়ে আসছেন, তথাকথিত ‘ভারতীয় নারী’দের যৌন শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে। এ ব্যাপারে তুলনায় এগিয়ে আছে ইনস্টাগ্রাম।

সেক্সুয়াল হেলথ এডুকেটর তথা ইনফ্লুয়েন্সার সীমা আনন্দ বলেন, যৌন মিলনের সময় মেয়েদের চুল সবসময় খুলে দেওয়া উচিত। তাতে আরও বেশি করে যৌনতা উপভোগ করা যায়। কামসূত্র (Kamasutra) ধরে তিনি বোঝান, খোলা চুল মানে হল নিজেকে উন্মুক্ত করে দেওয়া, নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া সুখের সাগরে। কিন্তু চুল বেঁধে মিলিত হওয়ার মধ্যে একরকম সীমাবদ্ধতা মিশে থাকে।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আরেক সেক্স এডুকেটর স্বাতী জগদীশ বলেন, আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত, আমাদের আগের জেনারেশনের বেশিরভাগ মহিলাই একটা গোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন অর্গাজম কী তা না বুঝেই। অর্গাজম বা যৌন সুখের সেই চূড়ান্ত মুহূর্ত অনুভব না করেই এই পৃথিবী থেকে পরলোকে পাড়িও দিয়েছেন তাঁরা। আমাদের মায়েরা যদি এসব জানতেন, হয়তো আমাদেরও বলে যেতেন।

আরও পড়ুন: ক্লিটোরিসে স্পর্শ করলেই জেগে ওঠে মস্তিষ্কের এই অংশ, সচল হয় স্নায়ু, নতুন খোঁজ বিজ্ঞানীদের

চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, মেয়েদের যোনিতে পুরুষাঙ্গের অনুপ্রবেশেই অর্গাজম হয় না। বরং বেশিরভাগ নারীর অর্গাজম হয় ক্লিটোরাল স্টিমুলেশনের মাধ্যমে। ফোর প্লে এই অর্গাজমের জন্য খুবই জরুরি। এখনও এদেশের মাটিতে হেসে-খেলে বড় হওয়া অনেক মেয়েই এই যৌন তৃপ্তির আসল স্বাদ পায়নি কখনও।



এর জন্য পুরুষ সঙ্গীকেও খানিক দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। পল্লবী বর্ণোয়াল নামের আরেক সেক্স এডুকেটর তথা ইনফ্লুয়েন্সার জানান ২৮ বছরের এক বিবাহিত মহিলার সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের কথা। অর্গাজমের কথা জিজ্ঞেস করায় তাঁর সাফ জবাব ছিল, “কোন ছেলে অতক্ষণ অপেক্ষা করে থাকবে?”

অর্থাৎ ছেলেদের তরফে সঙ্গিনীর অর্গাজমের জন্য প্রয়োজনীয় চেষ্টার অভাব এক্ষেত্রে অন্যতম বড় সমস্যা। বিছানার যৌন খেলায় সাফল্যের জন্য দুজনের চেষ্টাই অপরিহার্য। কোনও একদিকে চেষ্টা কম হলে অপরজনের যৌন সুখ অধরা থেকে যায়। হয়তো অজান্তেই।  

আরও পড়ুন: অ্যান্টি-এজিং ক্রিম নয়, তারুণ্যের চাবি কোলাজেন লুকিয়ে খাওয়ার টেবিলেই

ইনস্টাগ্রামে আজকাল বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন স্বাতী, সীমার মতো বর্ষীয়ান ইনফ্লুয়েন্সাররা। তাঁদের কথা মন দিয়ে শোনেন অনেকেই। ভারতীয় সমাজে ‘সংস্কৃতির বেড়াজাল’ টপকে মেয়েদের সেই চরম সুখের অনুভূতিতে পৌঁছে দিতে চান এঁরা। সেক্স নিয়ে ছুঁৎমার্গ দূর করতে চান। শুধু সেক্স নয়, মাস্টারবেশন, ঋতুস্রাব, যৌনতা সব কিছু নিয়েই প্রচলিত ছক ভাঙতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। বলেন, এগুলো খুব স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। যৌন মিলনের সময় অর্গাজমের সুখ পাওয়ার অধিকার নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের আছে।  

জেনারেশনের পর জেনারেশন ধরে ভারতে যৌনতা বিষয়ে বৈষম্য বিরাজ করছে। দিন দিন সে বৈষম্যের আবরণ আরও পুরু হয়েছে। মেয়েরা নিজেদের অজান্তেই তৃপ্তি থেকে বঞ্চিত থেকেছে। ভারতের এই ‘অর্গাজম ইনইকুয়ালিটি’ ভাঙতে প্রয়োজন কথা বলার। সেক্স নিয়ে প্রকাশ্যে যত বেশি করে আলোচনা হবে, যত বেশি করে সমাজের ভয় কাটিয়ে, অস্বস্তির কাঁটা উপড়ে ফেলে খোলামেলা আলোচনা হবে সেক্স, অর্গাজম, পিরিয়ড কিংবা মাস্টারবেশন নিয়ে, তত এ বিষয়ে জ্ঞান বাড়বে। না জেনে আর মরতে হবে না কাউকে।

প্রকাশ্যে কথোপকথনের অস্বস্তি পেরিয়ে যাওয়ার সেরা প্ল্যাটফর্ম সোশ্যাল মিডিয়া। সামনাসামনি চেনা মানুষকে যা বলা যায় না, ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অচেনা কাউকে অনায়াসে তা বলে দেওয়া যায়। অনায়াসে জানতে চাওয়া যায় তাঁর অভিজ্ঞতা, মতামত। মেয়েদের সেই পরামর্শই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন: হিমালয়ে লুকিয়ে বিশুদ্ধ আর্যদের গ্রাম! ইউরোপ থেকে আসেন রহস্যময়ী নারীরা!

সামাজিক পরিসরে নিজেদের যৌন চাহিদার কথা খোলামেলা বলতে মেয়েরা অনেকেই লজ্জা পায়। সেখানে সম্মানহানি, সমাজের চোখে ছোট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় মেয়েরা নিজেদের মতো আরও অনেককে দেখতে পায়। তখন আর নিজেকে একা মনে হয় না। মন খুলে নিজের মনের কথা, শারীরিক চাহিদার কথা সেখানেই বলা যায়। খুঁজে নেওয়া যায় সেক্সুয়াল প্লেজার।

সেক্স এবং সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ইন্টারনেটে অনেক ভুল তথ্যও ছড়িয়ে রয়েছে। অনেকেই গুগল সার্চের মাধ্যমে অজ্ঞতা কাটাতে চান। কিন্তু সে গুড়ে বালি। গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনের তথ্য সবসময় ঠিক হবে এমন মনে করার কারণ নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনেকেই গুগলে সার্চ করেন কীভাবে যোনির চামড়ার রঙ আরও ফর্সা করা যায়। সার্চ রেজাল্টে তার অজস্র ঘরোয়া উপায়ও বলে দেওয়া আছে। কেউ বলেন হলুদ আর অ্যালোভেরার মিশ্রণ মাখতে, কেউ আবার বলেন আলুর রসের সঙ্গে পেঁপে, দই ইত্যাদি প্রভৃতি আরও কত কী! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও উপায়েই শরীরের ওই অংশের চামড়ার রঙ বদলানো সম্ভব নয়। কারণ এটি একটি অভ্যন্তরীণ অঙ্গ। বাইরে প্রদর্শনের জন্য নয়। তাই তাকে কৃত্রিম উপায়ে সাজিয়ে তোলার প্রয়োজনও নেই।

সেক্স নিয়ে এই সমস্ত ছোটখাটো খুঁটিনাটি জানা দরকার। তা না হলে আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এদেশের মেয়েদের এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ছক ভাঙার সেই নেশাতেই মেতেছেন ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সাররা।

আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নীচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন ।   কোন সাজেশন থাকলে নির্ধিদায় আমাদের কে জানান, কমেন্টস করুন । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ  ।

 



Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post