হিমালয়ে লুকিয়ে বিশুদ্ধ আর্যদের গ্রাম! ইউরোপ থেকে আসেন রহস্যময়ী নারীরা!

‘লাদাখ’ নামটি শুনলেই পর্যটকদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে, ঘন নীল আকাশের নীচে শুয়ে থাকা ধূসর মালভূমি। তুষারমৌলি হিমালয় ছুঁয়ে আসা ঝোড়ো হাওয়া। দুধসাদা ফেনা তুলে, উন্মত্ত বেগে ছুটে চলা সবুজাভ নদী। সাদা দেওয়াল লাল ছাদের মনাস্ট্রি। মেরুন পোশাকের মুণ্ডিত মস্তক লামা। ধুলো উড়িয়ে ছুটে যাওয়া সেনাবাহিনীর ট্রাক। 

নিজের বুকে অনেক অজানা রহস্য লুকিয়ে রেখেছে লাদাখ (Ladakh)। তার মধ্যে একটি লুকিয়ে আছে লাদাখের দ্রাস ও বাটালিক এলাকায়। কারণ সেই এলাকাতেই বাস করে এক রহস্যময় উপজাতি। নাম ‘ব্রকপা'(Brokpa)। 

ব্রকপারা দাবি করেন, তাঁরাই আর্যদের শেষ ও বিশুদ্ধ বংশধর। বাতাসে ভাসে আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিশুদ্ধ আর্য বীর্যের আশায় নাকি ব্রকপা পুরুষদের কাছে ছুটে আসেন ভিনদেশি নীলনয়না সুন্দরীর দল।

ব্রকপা উপজাতি

কোথা থেকে এসেছিল ব্রকপারা! (Ladakh)

পাক অধিকৃত গিলগিট-বাল্টিস্তান ও ভারতের লাদাখের মধ্যে থাকা লাইন অফ কন্ট্রোলের পাশেই অবস্থিত ব্রকপাদের গ্রাম। দাহ, হানু, গানাওকস, দানানুসার, মোরোল, চুলিচান, ধা, বিয়েমা, বিমা লাটাং, বালডেজ, গারকোন, দারচিক, বাটালিক, শারচে নামের গ্রামগুলিতে বাস করেন প্রায় ১৮০০ ব্রকপা।

ব্রকপারা নিজেদের বলে ‘মিনারো’। শব্দটির অর্থ “গবাদিপশু নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মানুষ”। লাদাখের ব্রকপারা মূলত ‘বজ্রায়ণ’ শাখার বৌদ্ধ। ইসলাম ও সনাতন ধর্মকেও আপন করে নিয়েছেন কেউ কেউ।

কিছু গবেষক মনে করেন, ব্রকপারা লাদাখে এসেছিল গিলগিট বাল্টিস্থানের ‘চিলাস’ এলাকা থেকে। দু’হাজার বছর আগে। কারণ গিলগিট-বাল্টিস্তানের ‘হুনজা’ ও নুরিস্তানের কাফিরদের মতই, ব্রকপারাও নিজেদের মনে করে আলেকজান্ডারের সৈন্যদের বংশধর।



ব্রকপা নারী

তবে সম্পুর্ণ ভিন্ন কথা বলেন, দিল্লি ইউনিভার্সিটির নৃতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপিকা ডঃ বীণা ভাসিন। যিনি ব্রকপাদের নিয়ে বিশদভাবে গবেষণা চালিয়েছেন। ডঃ ভাসিনের মতে পাঁচ হাজার বছর আগে মধ্য এশিয়ার স্তেপ অঞ্চল থেকে লাদাখের এই এলাকায় সরাসরি চলে এসেছিল ব্রকপারা। সেই স্তেপ অঞ্চল, যেখান থেকে ভারতে এসেছিল আর্যরাও।

মনে প্রশ্ন জাগে। তাহলে কি আর্যরা ভারতে আসার এক হাজার বছর আগেই ভারতকে চিনেছিল ব্রকপা উপজাতি? ব্রকপারাই কি ভারতে আসা প্রথম আর্য গোষ্ঠী! হয়ত কোনওদিন কোনও গবেষকের গবেষণা দেবে এই দুটি প্রশ্নের উত্তর।

অবশ্য প্রশ্ন দুটির ভাসা ভাসা উত্তর দেয় ব্রকপাদের এক প্রাচীন লোকগাথা। হাজার হাজার বছর আগের কথা। উত্তরের তৃণভূমি থেকে ভেড়া চরাতে চরাতে, গালো, মেলো ও ধুলো নামের তিন যাযাবর ভাই চলে এসেছিল দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। 

পেরিয়ে গিয়েছিল কয়েক হাজার মাইল। এক রুক্ষ পাহাড়ি এলাকায় বইতে থাকা নদীর (সিন্ধু) তীরে তারা খুঁজে পেয়েছিল সবুজ চারণভূমি। পরিবার ও পশুগুলি নিয়ে তিন ভাই পাকাপাকিভাবে থেকে গিয়েছিল উপত্যকায়। আজকের ব্রকপারা সেই গালো, মেলো ও ধুলোরই বংশধর।

অধ্যাপিকা ভাসিনের গবেষণা কিন্তু একই সঙ্গে নস্যাৎ করে দিচ্ছে, ব্রকপাদের আলেকজান্ডারের বংশধর হওয়ার তত্ত্বও। কারণ আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেছিলেন ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।

মধ্য এশিয়ার স্তেপ অঞ্চল থেকে লাদাখে এসেছিল ব্রকপারা!



মে মাসের এক লাদাখি সকাল (Ladakh)

লে থেকে ভোর পাঁচটায় ছাড়া ‘টেম্পো ট্রাভেলার’ এগিয়ে চলবে ১ নং জাতীয় সড়ক ধরে। লে থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে থাকা ‘দা-হনু’ উপত্যকার দিকে। হাড় কাঁপানো লাদাখি বাতাসের বীভৎস আদর সত্ত্বেও, উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটতে থাকবেন পর্যটকেরা। বেশিরভাগই বিদেশি। 

ঘণ্টা তিনেক পর গাড়ি এসে পৌঁছবে খালসিতে (খালৎসে)। প্রাচীন লোহার সেতুটির নীচে দিয়ে বয়ে চলবে ভুবনবিদিত সিন্ধু নদ। খালসিতে মিনিট কুড়ি বিশ্রাম নেবে ট্রাভেলার। তারপর লে-কার্গিল-শ্রীনগর হাইওয়ে ছেড়ে, আচমকা ডান দিকে ইউ টার্ন নিয়ে ঢুকে পড়বে খালসি থেকে ‘ডা’ চলে যাওয়া রাস্তাটিতে। 

গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটতে শুরু করবে সিন্ধু নদ। ঘণ্টা দুয়েক দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে চলার পর, এগিয়ে আসবে এক নয়নাভিরাম উপত্যকা। এটিই সেই ডাহানু উপত্যকা। 



উপত্যকাটির অপর নাম ‘এরিয়ান ভ্যালি বা ‘আর্যদের উপত্যকা’। কারণ এই উপত্যকায় থাকা দুটি গ্রামে নাকি বাস করে বিশ্বের শেষ বিশুদ্ধ আর্যরা। গ্রাম দুটির নাম ‘দা’ ও নাম ‘হনু’। তাই উপত্যকাটিরও নাম হয়েছে ‘দা-হনু’।


প্রাচীনতম গ্রাম ‘হনু’ (Ladakh)

ব্রকপা উপজাতির গ্রামগুলির মধ্যে সবথেকে প্রাচীন গ্রাম হল ‘হনু’। তিনটি পৃথক জনপদ নিয়ে গড়ে উঠেছে হনু গ্রামটি। প্রত্যেকটি জনপদের নামের সঙ্গে যুক্ত ‘হনু’ শব্দটি। 

খালসির দিক থেকে গেলে প্রথমে পড়বে ‘হনু থাং’। স্লেট পাথরের তৈরি খান দশেক বাড়ি পেরিয়ে, ট্রাভেলার এগিয়ে যাবে আরও দুই কিলোমিটার। চোখে পড়বে চেকপোস্ট। 

এলাকাটি লাইন অফ কন্ট্রোলের একেবারে কাছে হওয়ায়, এলাকার ওপর কড়া নজর রাখে মারাঠা রেজিমেন্ট। একই সঙ্গে এলাকার মানুষকে দিয়ে থাকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য,পানীয় জল ও বিদ্যুতের মত মৌলিক পরিষেবাগুলি। 

সাথে চলবে সিন্ধু নদ



চেকপোস্টে গাড়ি থামার পর, তন্ন তন্ন করে গাড়িতে তল্লাসি চালাবেন জওয়ানেরা। পরীক্ষা করবেন যাত্রীদের সচিত্র পরিচয়পত্র ও ইনার লাইন পারমিট। সব ঠিক ঠাক থাকলে, পর্যটকদের গাড়ি এগিয়ে চলবে আবার।

ছয় কিলোমিটার যাওয়ার পরে এগিয়ে আসবে দ্বিতীয় ‘হানু’ জনপদ ‘হনু ইয়ঙমা’। এখানে আছে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি স্কুল। এই স্কুলে পড়তে আসে আশেপাশের গ্রামগুলির ব্রকপা ছেলে মেয়েরা।



 বয়স পাঁচ হাজার

‘হনু ইয়ঙমা’ পেরিয়ে গাড়ি এগোবে আরও ছয় কিলোমিটার। থামবে গিয়ে সিন্ধু নদের তীরে থাকা এক জনপদে। পিছনেই খাড়া পাহাড়। এই জনপদটির বয়স নাকি পাঁচ হাজার বছর। 

ট্রাভেলার থেকে নামার পর, চমকে ওঠেন পর্যটকেরা। আশপাশে থাকা পাথরের বাড়িগুলির জানলা দরজা দেখা দিয়েছে বেশ কিছু কৌতুহলী মুখ। নীল চোখ, টিকোলো নাক, সোনালি চুলের ফর্সা মানুষগুলিকে দেখতে কাশ্মীরী বা লাদাখিদের মত নয়। সঙ্গে আসা লাদাখি গাইডকে পর্যটকেরা জিজ্ঞেস করেন, “এঁরাই কি তাহলে আর্য জাতির বিশুদ্ধ ও শেষ বংশধর!” 




পর্যটকদের হাতে ভারী টিফিনের প্যাকেট ও জলের বোতল তুলে দেন ড্রাইভার ও হেলপার। সময়টিকে কাজে লাগান গাইড। গলাটা সামান্য উঁচু করে বলতে থাকেন, 

“আপনারা এখন আছেন প্রাচীনতম ব্রকপা গ্রাম হনু গোঙমাতে। এই গ্রামেই বাস করেন পৃথিবীর শেষ ও বিশুদ্ধ আর্যরা। যাঁরা আর্য জাতির বিশুদ্ধ জিন ও সংস্কৃতি রক্ষা করে চলেছেন প্রায় ৫০০০ বছর ধরে। 

শুনলে অবাক হবেন। এই গ্রামের হানু বেশিরভাগ মানুষ আজও পা রাখেন না উপত্যকার বাইরে। কারণ এঁদের জীবন আবর্তিত হয় গ্রাম ও উপত্যকাটিকে ঘিরে। জাতির বিশুদ্ধতা ধরে রাখার জন্য, নিজেদের এঁরা স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন হাজার হাজার বছর ধরে। 


গ্রামের বাইরের পুরুষ ও নারীকে বিয়ে করা এই সমাজে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বেশিরভাগ বিয়ে হয় পরিবারের মধ্যেই। তবে অপেক্ষা করতে হবে দুই দিকের তৃতীয় প্রজন্ম পর্যন্ত। সাধারণত কোনও পরিবারের ঠাকুর্দার নাতির সঙ্গে ঠাকুর্দার ভাই বা বোনের নাতনীর বিয়ে দেওয়া হয়। “

মনে জমে অজানা তথ্য (Ladakh) 

পর্যটকেরা গাইডের সঙ্গে ঘুরে দেখেন ‘হনু গোঙমা’। ব্রকপাদের জীবনযাত্রার অন্যতম উপকরণ হল ফুল। প্রত্যেকটি বাড়িকে ঘিরে আছে ফুলের বাগান। বাড়ির জানলাতেও বসানো ফুলের টব। অন্দরমহলের সাজসজ্জাতেও ফুলের উপস্থিতি নজর কাড়ে। 

ব্রকপারা কথা বলে, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের, ইন্দো-ইরানীয় শাখার, দার্দিক উপভাষার অন্তর্গত ‘শিনা’ ভাষায়।তবে এলাকায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতির কারণে একটু আধটু হিন্দি বলতে পারে অনেকেই। 



ব্রকপাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান দু’টি মাধ্যম হল কৃষি ও পশুপালন। সিন্ধুর জলে পুষ্ট উপত্যকায় ব্রকপারা চাষ করে বার্লি, বাজরা, আলু, পেঁয়াজ, মুলো, টমাটো, শালগম, ফুলকপি, অ্যাপ্রিকট ও আঙুর। পাহাড়ি উপত্যকায় চরায় ভেড়া, ছাগল ও ইয়াক।

দিনে তিনবার খায় ব্রকপারা। ছোয়ালু (ব্রেকফাস্ট), বিয়েলি (লাঞ্চ) ও রাতা উনিস (ডিনার) সারে নিরামিষ আহার করে। কারণ ধর্মীয় আদেশে মাংস ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া নিষেধ। যদিও অন্য ধর্মকে আপন করে নেওয়া ব্রকপারা ইদানীং শুরু করেছেন আমিষ খাওয়া।

তবে সিংহভাগ ব্রকপার খাদ্যতালিকায় থাকে সেদ্ধ সবজি, বাজরার রুটি, বার্লি দিয়ে তৈরি সাম্পা, তাজা ও শুকনো ফল। থাকে মাখন ও লবণ দিয়ে তৈরি ‘গুর-গুর’ চা ও অ্যাপ্রিকট থেকে তৈরি করা সুস্বাদু হোয়াইট ওয়াইন ‘ আররাক’।

লম্বা, সুঠাম চেহারার ব্রকপারা সাজতে খুব ভালোবাসে। ধাতব অলঙ্কার ও পবিত্র ‘মনথু-থো’ ফুল এঁদের সাজগোজের অন্যতম উপকরণ। নারীরা পরেন চকচকে পয়সা গাঁথা ফিরহান। পুরুষেরা পরেন কোমরবন্ধ দেওয়া মেরুন রঙের আলখাল্লা। নারী পুরুষ উভয়েই মাথায় পরেন ফুলের মুকুট। 

শীতকালে যখন জমে যায় সিন্ধু নদ, বরফে ঢেকে যায় ‘হনু গোঙমা’, গ্রামবাসীরা গায়ে দেন ভেড়ার ও ইয়াকের চামড়া দিয়ে বানানো পোশাক। 

বরফ ঢাকা পাহাড় চড়ার সহজাত প্রতিভা আছে গ্রামবাসীদের। কার্গিল যুদ্ধের( ১৯৯৯) সময় এই প্রতিভা কাজে লাগিয়েছিল ভারত। যুদ্ধের কঠিন সময়গুলিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পাহাড়ে ওঠার সহজ পথ চিনিয়ে দিয়েছিল ব্রকপারা। দিয়েছিল খাবার ও আশ্রয়।

গর্ভবতী হতে আসেন বিদেশিনিরা!

‘হনু গোঙমা’ থেকেই পর্যটকেরা পায়ে পায়ে ঘুরে নেন ‘দা’ গ্রাম। দুপুর পৌঁছে যায় বিকেলে। ‘ডা’ গ্রামে আছে কয়েকটি হোম-স্টে। তারই একটিতে হয়ত লাঞ্চের ব্যবস্থা করেন গাইড। গরম গরম ভেড়ার মাংস, তন্দুরি রুটি ও স্যালাড দিয়ে লাঞ্চ সারেন পর্যটকেরা।

হয়ত পর্যটকদের পাশ দিয়েই হোম-স্টের কোনও ঘরে দ্রুত ঢুকে যান এক নীলনয়না ইউরোপীয় সুন্দরী। সশব্দে বন্ধ হয়ে যায় ঘরটির দরজা। খাওয়া ভুলে পর্যটকেরা একে অপরের মুখের দিকে তাকান। তাঁদের মনে পড়ে যায় ‘লে’ শহরের হোটেলের ম্যানেজারের মুখে শোনা ‘প্রেগন্যান্সি ট্যুরিজম’-এর কথা।

লাঞ্চের পর কোনও অতি উৎসাহী পর্যটক গাইডকে জিজ্ঞেস করে ফেলেন “এই এলাকায় নাকি স্বেচ্ছায় গর্ভবতী হতে আসেন বিদেশিনিরা। খাঁটি আর্য সন্তান পাবার আশায়?”

 মিটিমিটি হাসেন গাইড। তাঁকে ঘিরে ফেলেন পর্যটকেরা। গাইড পর্যটকদের নিয়ে যান সিন্ধু নদের তীরে। দেখান ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করা একটি ভিডিও। পর্যটকেরা অবাক হয়ে যান ভিডিওটি দেখে। 

পরিচালক সঞ্জীব শিভান, ২০০৬ সালে ব্রকপাদের সমাজ নিয়ে তৈরি করেছিলেন The Aryan Saga নামের এক তথ্যচিত্র। সেই তথ্যচিত্রে দেখা গেছিল, আধো অন্ধকারে থাকা এক বিদেশিনিকে। 



তথ্যচিত্র থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট

অজ্ঞাতপরিচয় বিদেশিনি তথ্যচিত্রে খোলাখুলিভাবে জানিয়েছিলেন, তিনি ‘ব্রকপা’ (Brokpa) গ্রামে এসেছিলেন সুদূর মিউনিখ থেকে। স্বেচ্ছায় মিলিত হয়েছিলেন এক ব্রকপা যুবকের সঙ্গে। খাঁটি আর্য শুক্রাণু পাওয়ার আশায়। আর্য সন্তান প্রসব করার আশায়। তবে তিনি একা নন। সেই বিদেশিনির মতে, তাঁর আগেও অনেক জার্মান নারী ব্রকপাদের গ্রামে এসেছেন। একই উদ্দেশ্য নিয়ে।

এই তথ্যচিত্রেই দেখা গিয়েছিল মাথায় ফুলের মুকুট পরা অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্রকপা যুবককেও। যিনি জানিয়েছিলেন, খাঁটি আর্য বীজ (Sperm) পাওয়ার জন্য বিদেশিনিরা খরচ করেন প্রচুর টাকা। গর্ভবতী হওয়ার পর তাঁরা ফিরে যান নিজেদের দেশে। 

যুবকটির কথায় খুঁজে পাওয়া যায়নি বিন্দুমাত্র লজ্জা বা অপরাধবোধ। বরং খাঁটি আর্য হওয়ার জন্য তিনি গর্বিত। ভবিষ্যতেও তিনি এই কাজ চালিয়ে যেতে চান। 

গর্ব করে যুবকটি ক্যামেরার সামনে বলেছিলেন, তাঁর সন্তানেরা এখন জার্মানিতে। হয়ত তাঁর সন্তানেরা তাঁকে দেখতে গ্রামে আসবে কোনও দিন। নিয়ে যাবে জার্মানিতে। 



তথ্যচিত্র থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট

আরও তথ্য জোগাড় করার আশায়, কোনও পর্যটক একই প্রশ্ন করে বসেন কোনও প্রবীন ব্রকপাকে। ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে প্রবীন মানুষটি বলেন, “আমিও শুনেছি। চোখে দেখিনি। গুজবে একদম বিশ্বাস করবেন না। এসব গাইডদের ব্যবসা বাড়ানোর ফন্দি।”

সহজ সরল মানুষটি মুখের ওপরই হয়ত বলে দেবেন, “এই জন্যেই আমি বহিরাগতদের পছন্দ করেন না। কিন্তু সরকার ২০১০ সালে গ্রামে ঢোকার ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে। দলে দলে গ্রামে ঢুকতে শুরু করেছে ট্রেকার, গবেষক ও সাধারণ পর্যটকেরা। আপনাদের উপদ্রবের কারণে, আর হয়ত আর্য রক্ত ও সংস্কৃতির বিশুদ্ধতা ধরে রাখা যাবেনা।” লজ্জায় মাথা নিচু করে গাড়ির দিকে এগিয়ে যান পর্যটকেরা। এক রহস্যময় বেগুনি কুয়াশা ঘিরে ফেলতে থাকে এরিয়ান ভ্যালিকে। 

আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নীচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন ।   কোন সাজেশন থাকলে নির্ধিদায় আমাদের কে জানান, কমেন্টস করুন । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ 

Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post