গারো অঞ্চলে কাথলিক মন্ডলীর ইতিহাস 

রেভাঃ ফাদার পিটার রেমা


বৃহত্তর ময়মনসিংহের মান্দিরা খ্রীষ্ট ধর্ম সম্পর্কে জানতে পায় সর্বপ্রথম ব্যাপ্টিস্ট মন্ডলীর মিশনারীদের কাছ থেকে। তারপর এ্যাংলিকান মন্ডলীর মিশনারীদের কাছ থেকে। কাথলিক মন্ডলীর বিষয় এ অঞ্চলের লোকেরা কিছুই জানত না। কারণ তখনও কাথলিক মন্ডলী এ অঞ্চলে উপস্থিত হয়নি। কিন্তু এ অঞ্চলে কর্মরত ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলীর প্রচারকগণই কাথলিক মন্ডলীর বিরুদ্ধে প্রচার করতে গিয়ে কয়েকজন মান্দি শ্রোতাদের মধ্যে কাথলিক বিষয় জানবার আগ্রহ জাগিয়ে দিলেন।



পরে এ্যাংলিকান মণ্ডলীভুক্ত জয়নাথ চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় পাঁচজন মান্দিদের মধ্যে কাথলিক মন্ডলীর বিষয় জানবার আগ্রহ আরও বাড়ল। তিনি তাঁদেরকে বলেছিলেন “খ্রীষ্টান হতে চাইলে কাথলিক হও”। এই পাঁচজন মান্দি হ'লেন তাঁর বন্ধু : জিরিং হাজং, থদিং হাজং, উজির রুরাম, সিন্ধু রুগা ও থিমান দাংগ। তাঁরা জয়নাথ চৌধুরীর কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিয়ে – একদিন পূর্ববঙ্গের কাথলিক মন্ডলীর প্রধান, বিশাপ হার্থের সঙ্গে লক্ষ্মী বাজারস্থ বিশপ ভবনে দেখা করতে ১৯০৯ খ্রী: ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হ'লেন ।

More Read আদিবাসী গারোদের মধ্যে বংলাদেশের প্রথম বিশপ মধুপুর গড় থেকে First Bishop among Garo in Bangladesh from Madhupur Garh

পাঁচজন মান্দি নেতা বিশপের সঙ্গে দেখা করার সময় নিজেদেরকে ব্যাপ্টিষ্ট বলে পরিচয় দিলেন। তারপর তাঁরা তাঁর কাছে আগমনের উদ্দেশ্যের বিষয় জানালেন। তাঁরা বললেন : “কিছুদিন আগে আমরা শুনেছি যে, কাথলিক ধর্মই খ্রীষ্ট ধর্মের আদি ধর্ম । এই ধর্মেই খ্রীষ্টের প্রকৃত শিক্ষা রয়েছে এবং এর গুরু ঢাকায় আছেন। তাই এই ধর্মের বিষয়ে আমাদেরকে শেখাতে তার ব্যবস্থা করতে আপনাকে অনুরোধ করতে আমরা আপনার কাছে এসেছি।”


বিশপ হার্থ তাঁদের আগ্রহ এবং সুদীর্ঘ রাস্তা অতিক্রম করে আসার জন্য প্রশংসা করে - তাঁদের আবেদন আপাততঃ পূরণ করা তাঁর পক্ষে যে সম্ভব নয় সে কথা তিনি দুঃখের সঙ্গে তাঁদের জানালেন। তবে হতাশ না হওয়ার জন্যে তিনি তাঁদের উৎসাহ দিলেন এবং কাথলিক ধর্মের বিষয় প্রাথমিক শেখার জন্য তিনি তাঁদেরকে কয়েকটি ক্যাটেখিজম বই দিলেন।

Related Post ময়মনসিংহে ধর্মপ্রদেশ সৃষ্টি রেভাঃ ফাদার পিটার রেমা

তাঁরা সেগুলো নিয়ে নিজেদের উদ্যোগে পাঠ করে প্রার্থনাসহ কাথলিক মন্ডলীর বিশ্বাসের তত্ত্বগুলোও মুখস্থ করে ফেললেন। এক বছর পর তাঁরা আবার একই অনুরোধ জানাতে ঢাকায় গেলেন। এবার বিশপ হার্থের স্থলাভিষিক্ত হ'লেন বিশপ লিনেবর্ণ।




পাঁচ মান্দি নেতা তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন। বিশপ লিনেবর্ণ ইতিমধ্যেই তাঁর বিদায়ী বিশপ হার্থের কাছ থেকেই তাঁদের আবেদনের বিষয় অবগত ছিলেন। তাঁরা যখন তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন, তিনি তাঁদের ধৈর্য্য, উৎসাহ এবং প্রার্থনাসহ ক্যাটেখিজমের তত্ত্বগুলো মুখস্থ করে বলতে পারা দেখে তিনি একান্তই অভিভূত হ'লেন – আর তাই তাঁদের আবেদন মঞ্জুর করতে আর বিলম্ব করা সমীচিন মনে করলেন না।

Read More ভূমি জরিপ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

১৯০৯ খ্রীষ্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর বিশপ লিনেবর্ণ যখন ঢাকা ধর্ম প্রদেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন তখন তাঁর যাজক সংখ্যা ছিল মাত্র পনের জন এবং ধর্ম প্রদেশের দায়িত্বে ছিল ঢাকা, আরাকান, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বরিশাল এ অঞ্চল সমূহ। বিশাল পূর্ববঙ্গে খ্রীষ্ট ভক্তদের প্রৈরিতিক সেবাদানের চাহিদা মেটাতে যাজকদের সংখ্যা স্বল্প হলেও বিশপ লিনেবর্ণ ময়মনসিংহের মান্দি অঞ্চলে যাজক পাঠাতে সিদ্ধান্ত

নিলেন ।


প্রথমে তিনি এলাকার বিষয় তথ্য জানার জন্য ফাদার ফ্লৈরীকে ঢাকা ফেরত পাঁচ মান্দি নেতাদের অঞ্চলে সরজমিনে পরিদর্শন করতে পাঠালেন। ফাদার ফ্লৈরী সঙ্গে ব্রাদার ইউজিনকে নিলেন। ঢাকা ফেরত পাঁচ নেতার দু'ভাই জিরিং ও থদিং এর গ্রাম থাউশালপাড়ায় আসলেন। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ শহর পর্যন্ত ট্রেনে আসলেন।


নদীর পাড় পর্যন্ত তারপর ময়মনসিংহের ম্যাজিষ্ট্রেটের সহায়তায় ঘোড়াগাড়ীতে ব্ৰহ্মপুত্র পৌঁছলেন। এরপর নিজেদের ব্যবস্থায় গরুগাড়ী দিয়ে সুসং দুর্গাপুরে পৌছলেন । সুসং দুর্গাপুরে পৌছলে তাঁরা রাজার বাড়ীতে গেলেন, কিন্তু রাজার বাড়ীর লোকেরা তাঁদেরকে ব্যাপ্টিস্ট মিশনারী ভেবে প্রথমে রাজবাড়ীতে গ্রহণ করেনি।


কিন্তু পরে ভুল ভাঙ্গলে তাঁদেরকে রাজবাড়ীতে গ্রহণ করে সমাদর করা হ'ল। এরপর তাঁরা রাজবাড়ী থেকে জিরিং ও থদিং এর গ্রাম থাকশাল পাড়ায় গেলেন এবং ঐ দু'ভায়ের সঙ্গে দেখা করলেন। গ্রামের সাংসারেক মান্দিরা তাঁদের দেখে অত্যন্ত খুশী হ'ল।


ফাদার ফ্লৈরী তাদের সঙ্গে দশ দিন কাটালেন এবং খ্রীষ্ট ধর্ম শিক্ষা দিতে শুরু করলেন। তিনি ধর্ম শিক্ষাদানের সময় ক্রুশ মূর্তি দেখিয়ে মান্দি সাংসারেকদের কাছে বলতে লাগলেন, “যীশু সকল মানুষের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন এবং সকলকে কাথলিক ধর্মে আসতে আহ্বান করেছেন ।” দশদিন থাকার পর তিনিও তাঁর সঙ্গী ঢাকায় ফিরে গেলেন ।



তিনি ঢাকায় পৌঁছে বিশপকে মান্দি অঞ্চলে প্রৈরিতিক কাজের মহাসফলতার সম্ভাবনার কথা বলে এক উৎসাহব্যাঞ্জক রিপোর্ট পেশ করলেন। রিপোর্টে তিনি একটি মিশন কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য অনুরোধও জানালেন। তাঁর রিপোর্টে সন্তুষ্ট হয়ে বিশপ মান্দি অঞ্চলে মিশনারী পাঠাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন ।

ফাদার এডলফ ফ্রান্সিস ও ফাদার তিমথি ক্রাউলি ১৯১১ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম কাথলিক মিশনারী মান্দি অঞ্চলে কাথলিক প্রৈরিতিক কাজ করতে রাণীখংয়ের থাউশালপাড়ায় আসলেন। তাঁরা প্রথমে কয়েক সপ্তাহ ছিলেন তারপর একটি মিটিং-এর জন্য ঢাকায় ফিরে গেলেন।


তাঁদের আসার আগেই কিন্তু কিছু সংখ্যক সাংসারিক মান্দিদেরকে কাথলিক বিশ্বাসের বিষয় শিক্ষা দিয়ে প্রস্তুত করে রেখেছিলেন, ঢাকা ফেরত সেই পাঁচ নেতার চার নেতা। ঢাকায় মিটিং-এর পর ফাদার এডলফ ফ্রান্সিস একাই থাউশাল পাড়ায় ফিরে আসলেন।

Read More কেন কিভাবে কি কারনে ধ্বংস হলো ঐতিহ্যবাহী শালবন

১৯১১ খ্রীষ্টাব্দ ১৯ মার্চ তিনি ২১ জন পুরুষ ও মহিলা মান্দিদের দীক্ষা দিলেন। জিরিং হাজং-এর জমিতে শন ও বাঁশ দিয়ে একটি প্রথম কাথলিক গীর্জাঘর নির্মাণ করা হল । এই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য একটি

বড় ক্রুশ নির্মাণ করার কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু একটি দুর্ভাগ্যজনক আপত্তিকর ঘটনা ঘটার কারণে তা আর বাস্তবায়িত হলনা ।


১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দে ফাদার ফ্রান্সিস এখানে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করলেন। তিনি একাই ছিলেন। মাঝে মাঝে অন্য জায়গা থেকে তাঁর সম্প্রদায়ের একেকজন যাজক তাঁকে সাহায্য করতে আসতেন। মান্দি অঞ্চলে ধর্ম প্রচার করা খুবই কঠিন ছিল।


প্রথমে অন্যসব জায়গার লোকদের মতই মান্দিদের অনেকেই জাগতিক কোন সুযোগ-সুবিধা পাবার আশায় কাথলিক ধর্ম গ্রহণ করছিল। দ্বিতীয়- কাথলিক মিশনারীদের কিছুই ছিলনা, একেবারে গরীব ছিল; অপরদিকে ব্যাপ্টিষ্ট মন্ডলীর সুন্দর সুন্দর আকর্ষণীয় ঘর ছিল, আর্থিক উন্নয়নের জন্য ব্যাংক ও প্রতিটি গ্রামে শিক্ষকপ্রচারক দলও ছিল।


তৃতীয়তঃ কাথলিক মিশনারীদের সঙ্গে ব্যাপ্টিষ্ট মন্ডলীর প্রচারকগণের প্রতিযোগিতা চলত । চতুর্থতঃ সাংসারিক মান্দিরা প্রায় সময়েই মাতাল অবস্থায় থাকত। এই মাতাল অবস্থায় ফাদারদের অভ্যর্থনা জানাত । খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতি তাদের তেমন আকর্ষণ ছিলনা। তবে ফাদার ফ্রান্সিস গ্রামে মফস্বলে গেলে লোকদের আকর্ষণ করার জন্য সঙ্গে গ্রামাফোন ও রাত্রে প্রদর্শনের জন্য লণ্ঠন ম্যাজিক নিয়ে যেতেন। তারপর তাদেরকে নিয়ে তিনি ক্রমে সমবায় স্থাপন করলেন। এভাবে সাংসারিকদের মন জয় করলেন।


যারা দীক্ষিত হয়েছে তারা একাগ্রতার সঙ্গে ফাদারদের উপদেশ শুনত এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করার চেষ্টা করত। তাদের মধ্যে একনিষ্ঠ ভক্তি পরায়ণতা ছিল । মান্দি অঞ্চলে এসে কাথলিক মিশনারীগণ লক্ষ্য করলেন যে, মান্দিদের মধ্যে যদিও আদিম যুগের অর্ধ বর্বরতা রয়েছে তথাপি তাদের মধ্যে কতকগুলো উল্লেখযোগ্য পরিত্রাণদায়ী সৎগুণ রয়েছে। সেগুলো হল সরলতা, সততা এবং পুরুষোচিত বীরত্ব।



তারা একবার খ্রীষ্টে দীক্ষিত হলে ভাল খ্রীষ্টানই থেকে যায়। ফাদার ফ্রান্সিস নানা বাঁধা থাকা সত্ত্বেও দু'বছরে চারশত মান্দিকে খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করতে সক্ষম হন। এছাড়াও দীক্ষা প্রার্থীর সংখ্যাও বাড়তে থাকত ।

নানা অসুবিধার কারণে থাউশালপাড়া থেকে অন্যত্র মিশন স্থানান্তর করার চিন্তা ভাবনা করা হল। প্রথমে মাদারপুট গ্রামে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত হল। কিন্তু সুসং রাজার পরামর্শে অবশেষে বর্তমান রাণীখং টিলায় ১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দে মিশন স্থানান্তর করা হল।


রাণীখং টিলায় মিশন স্থানান্তর করার পিছনে রাজার যুক্তিটি ছিল এই: “যেহেতু ভবিষ্যতে সমতল এলাকা থেকে সব মান্দিকে পাহাড়ে পুনর্বাসিত করা হবে- তাই রাণীখং টিলায় মিশন স্থাপন করাটা যুক্তিসংগত হবে” । রাণীখংয়ে মিশন স্থাপিত হওয়ার পর এখানে গড়ে উঠল একটি গির্জাঘর, একটি প্রাইমারী স্কুল এবং ছেলে ও মেয়েদের জন্য হোস্টেল ।


রাণীখং থেকেই কাথলিক মিশনারীদের প্রচার কাজ শুরু হলঃ পূর্বে বালুচড়া, সুদূর পশ্চিমে মরিয়মনগর পর্যন্ত প্রায় ৯০ মাইল বিস্তৃত মান্দি এলাকায়। রাণীখংয়ে মিশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখানে কালক্রমে একটি ইংলিশ মিডিয়াম মিডল স্কুল এবং ধর্মশিক্ষকদের ট্রেনিং স্কুল প্রতিষ্ঠিত হল। আর এ অঞ্চলের প্রৈরিতিক কাজের খবরাখবর সরবরাহের জন্য “রাণীখংয়ের চিঠি” নামে একটি সংবাদ পত্রিকারও এখানে

READ MORE চীনের মহা প্রাচীর The Great Wall of China পৃথীবির সপ্তার্শ্চয্

জন্ম নিল । ফাদার ফ্রান্সিস গুডল যখন ১৯২৮ সালে রাণীখং-এর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তখন তাঁরই উদ্যোগে মান্দি ভাষায় প্রার্থনা ও ধর্ম শিক্ষাদানের ‘স্খাং ক্যাটেগিজম' নামে মান্দি ভাষায় বই প্রকাশ করা হ'ল। সেই বই ব্যবহার করে সেই সময়ে মান্দিদেরকে মান্দি ভাষায় কাথলিক প্রার্থনা ও ধর্ম শিক্ষা দেয়া হত।


কালক্রমে নানা কারণে মান্দি ভাষায় প্রার্থনা করা ও ধর্ম শিক্ষা দান, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, রাণীখং এর চিঠির ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত রোমে প্রকাশনা সবই বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ভাতিকান মহাসভায় মন্ডলীর উপাসনার স্থানীয়করণের সুপারিশক্রমে ঢাকা মহাধর্ম প্রদেশের প্রয়াত আর্চবিশপ গাঙ্গুলী ও তাঁর উত্তরসূরী আর্চবিশপ মাইকেল রোজারিওর সমর্থনে ফাদার পিটার গুডল রেমার উদ্যোগে মান্দি ভাষায় উপসনা আবার শুরু হয় ১৯৭৬ খ্রীষ্টাব্দ থেকে বিশপ লিনেবর্ণ পরলোকগমন করেন ১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দে ২১ জুলাই। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন বিশপ যোসেফ আর্মন্ড লা গ্রান্ড ।



বিশপ লা-গ্রান্ড মান্দি আদিবাসী অঞ্চল ছাড়াও আরো দুটি পাহাড়ী আদিবাসীদের মধ্যে কাজ করার জন্য মিশনারীদের পাঠালেন। একটি হল আরাকানের আদিবাসী অঞ্চল আর একটি হল লুসাই পাহাড়ী আদিবাসী অঞ্চল । ১৯২৬ খ্রীষ্টাব্দে লুসাই আদিবাসীদের সাতজন প্রতিনিধি ঠিক পাঁচ মান্দি নেতার মত শত মাইল হেঁটে তাঁদের অঞ্চলে কাথলিক মিশনারীদের পাঠাতে অনুরোধ জানাতে চট্টগ্রামে ফাদার বোলের কাছে উপস্থিত হন ।


জনবল ও অর্থবলের অভাবে ফাদার বোলে তাঁদের আবেদন গ্রহণ করতে অপারগতা জানালেন । কয়েক মাসের পর এইদল আবার ফিরে আসেন এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে যে, তাদের সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা সবাই কাথলিক হবে। ফাদার বোলে তাঁদেরকে বিশপ লা গ্রান্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ঢাকায় নিয়ে আসলেন ।


বিশপ অবশেষে বর্ষা শেষ হলে ফাদার বোলেকেই লুসাই পাহাড়ীদের মধ্যে কাজ করার জন্য নিয়োগ করলেন । আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে লাইনের কর্মচারীদের মধ্যে চীনা কাঠমিস্ত্রিরাও ছিল, তারাও খ্রীষ্টান হওয়ার জন্য ফাদার বোলের কাছে তাদের ভাষায় খ্রীষ্টধর্ম শিক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন জানাল। এভাবে নানা জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ নানা দিক থেকে কাথলিক মিশনারীদের কাছে আবেদনের পর আবেদন করতে লাগল। কিন্তু ফসলের তুলনায় মজুরের সংখ্যা ছিল একান্তই অল্প। তাই সবগুলোর আবেদন পূরণ করা কাথলিক মন্ডলীর পক্ষে তখন সম্ভব ছিল না।




১৯২৭ খ্রীষ্টাব্দে ঢাকা ধর্মপ্রদেশকে দু'ভাগ করা হল । ঢাকা থেকে আলাদা করে চট্টগ্রাম ধর্মপ্রদেশ করা হল এবং কানাডার হলিক্রশ সম্প্রদায়ের যাজকদের কাছে এর দায়িত্ব অর্পণ করা হল । ১৯২৭ খ্রীষ্টাব্দে ২৭ মে রোম চট্টগ্রামকে ধর্মপ্রদেশে উন্নীত করল ।

'পাপ একাদশ পিয়ুস বিশ্বাস বিস্তার সংস্থার মধ্য দিয়ে ঢাকা ধর্মপ্রদেশের জন্য সহকারী বিশপ নিয়োগ করার পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করলেন। ফাদার তিমথি ক্রাউলিকেই


ঢাকার সহকারী বিশপ নিয়োগ করা হল। ১৯২৭ খ্রীষ্টাব্দে ১ মে তাঁর বিশপীয় অভিষেক হল ঢাকায়। ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে জুলাই মাসে বিশপ লাগ্রান্ড রোমের কাছে অব্যাহতির জন্য আবেদন করলেন। রোম তাঁর আবেদন মঞ্জুর করল। ১৯৩০ সালে তিনি ফ্রান্সে ফিরে যান। ১৯৩৭ সালে ১০ এপ্রিলে তিনি পরলোক গমন করলেন। তাঁর অব্যাহতি লাভের পর পরই তাঁর উত্তরাধিকারী বিশপ ক্রাউলি ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দ ২২ নভেম্বর ঢাকা ধর্মপ্রদেশের পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করলেন।

ঢাকা ধর্মপ্রদেশের অধীনে থাকাকালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের মান্দি অঞ্চলে ১৯১১ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৯৪২ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত ৭টি মিশন স্থাপিত হল। হলিক্রশ সম্প্রদায়ের ফাদারগণই এসব মিশন স্থাপন করেছেন। বিশপ লিনেবর্ণ এর সময় ১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দে শুধু রাণীখংয়ে মাত্র একটি মিশন কেন্দ্র স্থাপিত হ'য়।


বিশপ লাগ্রান্ড এর সময়ে ১৯২৪ খ্রীষ্টাব্দে ভালুকাপাড়ায় একটি মিশন স্থাপন করা হল। বিশপ ক্রাউলির সময়ে ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে রাণীখং এর পূর্বে বালুচড়ায় একটি মিশন স্থাপন করা হল। তারপর ১৯৩৭ খ্রীষ্টাব্দে মরিয়মনগরের বাঐবাদায় একটি মিশন এবং ১৯৪২ খ্রীষ্টাব্দে বারমারীতে আরেকটি মিশন স্থাপন করা হল। এভাবে উত্তর ময়মনসিংহের সীমান্তে মোট ছয়টি কাথলিক মিশন স্থাপিত হল ।


ময়মনসিংহ শহরের দক্ষিণাংশে এবং ব্রহ্মপুত্র নদের কাছাকাছি উত্তরাংশে অবস্থিত মান্দি অঞ্চল গুলোতে প্রৈরিতিক কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য এবং ঢাকার সঙ্গে বৃহত্তর ময়মনসিংহের মিশনগুলোর নিয়মিত যোগাযোগ রাখার জন্য একান্ত প্রয়োজন বোধে ময়মনসিংহ শহরে একটি মিশন স্থাপন করা হল ১৯২৭ খ্রীষ্টাব্দে।


১৯৪৫ খ্রীষ্টাব্দে অক্টোবর ২ বিশপ ক্রাউলি জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। তাঁর মৃত্যুর ১৬ মাসের পর ১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে ফেব্রুয়ারী মাসে রোম ফাদার লরেন্স গ্রেনার সিএসসি-কে ঢাকার নতুন বিশপ মনোনীত করল। তিনি ঢাকার ষষ্ঠ বিশপ হলেন। ১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দ ২৩ এপ্রিল, তাঁর বিশপ অভিষেক হয় আমেরিকার নটরডেমে।


১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দ ১৯ অক্টোবর তিনি ঢাকায় পৌঁছলেন। ঢাকায় পৌছার তিনদিন পর তাঁকে ধর্ম প্রদেশের দায়িত্বে অভিষিক্ত করা হল । তাঁর সময়ে ১৯৬০ খ্রীষ্টাব্দে জলছত্রে একটি মিশন স্থাপিত হল। এসব মিশন প্রতিষ্ঠার ফলে বৃহত্তর ময়মনসিংহের অধিকাংশ মান্দিগণ কাথলিক ধর্মে দীক্ষিত হল।

রেভাঃ ফাদার পিটার রেমা




Translation To English


History of the Catholic Church in the Garo Region
Rev: Father Peter Rema


The temples of Greater Mymensingh first learned about Christianity from the missionaries of the Baptist Church. Then from the missionaries of the Anglican Church. The people of this region knew nothing about the Catholic Church. Because the Catholic Church had not yet arrived in the region. But it was the Baptist preachers working in the region who preached against the Catholic Church and aroused interest in Catholicism among some Mandi listeners. Later, with the inspiration of Jaynath Chowdhury, who belongs to the Anglican congregation, the interest to know about the Catholic Church increased among the five Mandis. He told them "If you want to be a Christian, become a Catholic". These five Mandis were his friends: Jiring Hajong, Thading Hajong, Wazir Ruram, Sindhu Ruga and Thiman Dang. After getting detailed information from Jaynath Chowdhury, one day they left for Dhaka in 1909 AD to meet Bishop Harth, head of East Bengal Catholic Church, at Bishop Bhawan in Lakshmi Bazar. Five Mandi leaders identified themselves as baptized when they met the bishop. Then they told him about the purpose of coming. They said: "A few days ago we heard that Catholicism is the original religion of Christianity. This religion contains the true teachings of Christ and its guru is in Dhaka. So we have come to you to request you to arrange for him to teach us about this religion.” Bishop Harth commended them for their interest and the long way they had come - he regretfully informed them that it was not possible for him to fulfill their request for the time being. But he encouraged them not to despair and gave them a few catechism books to learn the basics of Catholicism. They read them on their own initiative and memorized the doctrines of the Catholic Church with prayer. A year later they again went to Dhaka to make the same request. This time Bishop Harth was replaced by Bishop Linevarna. Five Mandi leaders met him. Bishop Linnavarne was already aware of their request from his outgoing Bishop Harth. When they met him, he was deeply impressed by their patience, enthusiasm and prayerful recitation of the doctrines of the catechism – and therefore saw no further delay in granting their request. On December 24, 1909, Bishop Linevarna when Dhaka religion When he took charge of the province, his number of priests was only fifteen people and the areas of Dhaka, Arakan, Noakhali, Chittagong, Barisal were in charge of the religion province. Although the number of priests is small to meet the needs of Christian devotees in the vast East Bengal, Bishop Linevarna has decided to send priests to the Mandi region of Mymensingh. took First, he sent Father Flairy back to Dhaka to visit the territory of the five Mandi leaders on the ground to get information about the area. Father Fleury took Brother Eugene with him. Two brothers of the five leaders returned to Dhaka and came to Thaushalpara, the village of Jiring and Thading. Came by train from Dhaka to Mymensingh city. Then Brahmaputra reached the bank of the river with the help of the magistrate of Mymensingh in a chariot. Then Susong reached Durgapur by his own arrangement. When Susong reached Durgapur, they went to the king's house, but the people of the king's house did not receive them at first, mistaking them for Baptist missionaries. But later, when the mistake was broken, they were received and honored in the palace. Then they went from Rajbari to Thaksal Para, the village of Jiring and Thading and met the two brothers. The Sangsarek Mandirs of the village were very happy to see them. Father Flairy spent ten days with them and began to teach the Christian religion. He showed the crucifix while teaching the religion and told the Mandi family, "Jesus died for all people and called all to come to Catholicism." After staying for ten days, he and his partner returned to Dhaka. He reached Dhaka and presented an encouraging report to the bishop about the prospect of great success in the spiritual work in the Mandi region. In the report he also requested to set up a mission center. Satisfied with his report, the bishop decided to send missionaries to the Mandi region. Father Adolph Francis and Father Timothy Crowley were the first Catholic missionaries in 1911 AD to do Catholic missionary work in the Mandi region at Thaushalpara, Ranikhong. They initially stayed for a few weeks and then returned to Dhaka for a meeting. Before their arrival, however, a number of family members had been prepared by teaching them about the Catholic faith, four of the five leaders returned to Dhaka. After the meeting in Dhaka, Father Adolph Francis returned alone to Thoushal Para. On March 19, 1911, he initiated 21 male and female Mandis. A first Catholic church was built on the land of Jiring Hajong with cane and bamboo. One to preserve the memory of this historic event
The authorities had planned to build a large cross, but due to an unfortunate incident, it was not implemented.


In 1913 Father Francis started living here permanently. He was alone. Occasionally, individual priests from his community from other places would come to help him. It was very difficult to spread religion in Mandi region. At first many of the Mandis, like people elsewhere, converted to Catholicism in the hope of gaining some worldly privilege. Second - the Catholic missionaries had nothing, were absolutely poor; On the other hand, the Baptist Church had beautiful and attractive houses, banks for financial development and teacher missionary teams in every village. Thirdly, there was a competition between the preachers of the Baptist church with the Catholic missionaries. Fourthly, Sansar Mandis were almost always drunk. Fathers were greeted in this drunken state. They had little interest in Christianity. However, when Father Francis went to the villages to visit the village, he would bring along a gramophone and lantern magic to perform at night to attract people. Then he gradually established cooperatives with them. In this way, he won the hearts of his family members. Those who were initiated used to listen attentively to the advice of the Fathers and try to apply it in real life. Among them was devotional devotion. On arriving in the Mandi region, the Catholic missionaries noticed that the Mandis, though semi-savage in primitive times, had some remarkable redeeming virtues. They are simplicity, honesty and manly valor. Once they are converted to Christ, they remain good Christians. Father Francis was able to convert four hundred people to Christianity in two years despite many obstacles. Also, the number of initiation candidates was increasing. Due to various difficulties, the idea of ​​shifting the mission from Thoushalpara to another place was considered. First it was decided to shift to Motherput village. But on the advice of King Susong, the mission was finally shifted to the present Ranikhong Tila in 1915 AD. The Raja's reasoning behind shifting the Mission to Ranikhong Hill was this: “Since all the Mandis will be resettled from the plains to the hills in the future - it would be logical to establish the Mission in Ranikhong Hill”. After the mission was established at Ranikhong, a church, a primary school and a hostel for boys and girls were built here. From Ranikhong the preaching work of the Catholic missionaries began: Baluchra in the east, in the Mandi area extending about 90 miles to Maryamnagar in the far west. After the establishment of the mission at Ranikhong, an English medium middle school and a seminary training school were established here. And there is also a news paper called “Ranikhanger Chiti” to provide news about the spiritual activities of the region. was born When Father Francis Goodall took charge of Rani Khong in 1928, it was his initiative to publish a Mandi language book called 'Skhang Catechism' for prayer and religion in Mandi. Using that book, the Mandis were taught Catholic prayers and religion in the Mandi language at that time. Due to various reasons, praying in Mandi language and teaching religion, English medium school, publication of Ranikhong's letters in Rome from 1962 to 1965 all disappeared. However, following the recommendation of localization of church worship at the Second Vatican Council, with the support of the late Archbishop Ganguly of Dhaka Mahadharma Province and his successor, Archbishop Michael Rosario, Father Peter Goodall Rema initiated worship in the Mandi language from 1976. Bishop Linevarna passed away on July 21, 1915. He was succeeded by Bishop Joseph Armand La Grande. In addition to the La-Grande Mandi tribal area, Bishop sent missionaries to work among two other hill tribes. One is the Arakan Tribal Area and the other is the Lusai Hill Tribal Area. In 1926, seven representatives of the Lusai tribals walked hundreds of miles just like the five Mandi leaders and appeared before Father Bol in Chittagong to request the sending of Catholic missionaries to their region. Due to lack of manpower and money, Father Bole said that he was unable to accept their request. After a few months the group returned with the promise that all the natives of their community would become Catholics. Father Bole brought them to Dhaka to meet Bishop La Grande. The bishop finally appointed Father Bolek to work among the Lusai hillmen when the monsoons ended. Among the employees of the Assam Bengal Railway line were Chinese carpenters, who also became Christians and appealed to Father Boll to teach Christianity in their language. In this way, people of various ethnic groups began to apply after application to the Catholic missionaries from various directions. But the number of laborers was very small compared to the crops. So it was not possible for the Catholic Church to meet all the requests. In 1927, Dhaka Province was divided into two. Chittagong Province was separated from Dhaka and entrusted to the pastors of the Canadian Holicross community. On May 27, 1927, Rome elevated Chittagong to Dharma Pradesh. 'Pope Pius XI announced plans to appoint assistant bishops for the Dhaka diocese through the Biswas Bishral Sansthan. Father Timothy Crowley Assistant Bishop of Dhaka was appointed. His episcopal consecration took place in Dhaka on May 1, 1927. In July 1929, Bishop LaGrand appealed to Rome for absolution. Rome granted his request. He returned to France in 1930. He passed away on April 10, 1937. Soon after his release, his successor Bishop Crowley took full charge of the Dhaka diocese on November 22, 1929. Seven missions were established from 1911 AD to 1942 AD in the Mandi area of ​​Greater Mymensingh during the time under Dhaka Dharma Pradesh. These missions were established by the Fathers of the Holy Cross community. Only one mission center was established in Ranikhong in 1915 AD during the time of Bishop Linnavarna. A mission was established at Valukapara in 1924 AD during the time of Bishop Lagrand. During Bishop Crowley's time a mission was established at Baluchra, east of Ranikhong in 1929 AD. Then in 1937 A.D. a mission was established at Baiabada in Maryamnagar and in 1942 A.D. another mission was established at Barmari. Thus, a total of six Catholic missions were established on the border of North Mymensingh. A mission was established in Mymensingh city in 1927 A.D. out of necessity to carry on missionary work in the Mandi areas south of Mymensingh city and near the Brahmaputra river in the north and to keep the missions of greater Mymensingh in regular contact with Dhaka. On October 2, 1945, Bishop Crowley died of jaundice. In February 1947, 16 months after his death, Rome nominated Father Lawrence Greiner CSC as the new Bishop of Dhaka. He became the sixth bishop of Dhaka. On April 23, 1947, he was consecrated bishop at Notre Dame in America. He reached Dhaka on October 19, 1947. Three days after reaching Dhaka, he was anointed in charge of Dharma Pradesh. During his time a mission was established at Jalchhatra in 1960 AD. As a result of the establishment of these missions, most of the Mandis of Greater Mymensingh were converted to Catholicism.


Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post