সী-ফুড বা সামুদ্রিক খাদ্য হিসেবে স্কুইডের সম্ভাবনা

সাগরের যে সকল সেফালোপড খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় স্কুইড তাদের মধ্যে অন্যতম । আমাদের দেশে এটি একটি অপ্রচলিত সামুদ্রিক মৎস্য খাদ্য।  সম্প্রতি আমরা সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে ১১৮,৮১৩ বর্গ কিমি. জলরাশির মালিকানা পেয়েছি। তাই সামুদ্রিক মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য গ্রহণের প্রবণতা বাড়ানোর প্রতি জোর দেয়ার সময় এসেছে। পৃথিবীর বহু দেশে খাদ্য হিসেবে  স্কুইড গ্রহণ করা হয় । উচ্চমান সম্পন্ন প্রোটিন এবং স্বল্প কোলেস্টেরলের জন্য  এর গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে। ওমেগা৩ এর উপস্থিতি থাকায় এটি স্বাস্থ্যকরও বটে । আমাদের দেশেও প্রেটিনের উৎস। হিসেবে এর ব্যবহার ও গ্রহণযোগ্যতা  আমাদের খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখতে। পারে। নতুন খাদ্য হিসেবে সরাসরি কিংবা মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে স্কুইডের। ব্যবহার বাড়ানো হলে দেশীয় ও  আন্তর্জাতিক বাজারে একটি নতুন মৎস্যজাত পণ্যের। আবির্ভাব হবে যা বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্নোচন করবে ।




স্কুইডের পরিচিতি

 স্কুইড টেউথিডা গোত্রীয় এক প্রকার সামুদ্রিক প্রাণি । স্কুইডের  আকার বৈচিত্রময় ।। স্কুইড সাধারণত ১ সেমি. থেকে ১৪ মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। টেউথিডা গোত্রে প্রায়। ৩০০ প্রজাতির স্কুইড রয়েছে। অন্যান্য সেফালোপডের   মত স্কুইডের স্বতন্ত্র মস্তক, বাহু ও ছদ্মবেশি আচরণ রয়েছে এমনকি মেরুদন্ডী প্রাণিদের মত দেখতে চোখ ও বুদ্ধিদীপ্ত মস্তিষ্ক রয়েছে। একটি নরম খোলসের  বাইরে থাকা হাতগুলোর মধ্যে আটটি ছোট ও দুটি বড় । লম্বা হাত বা টেনটাক্যাল দিয়ে তারা শিকার ধরে আর। ছোট হাত দিয়ে শিকার মুখে দেয়। কপার সমৃদ্ধ হেমোসায়ামনিনের উপস্থিতির। কারণে এদের রক্ত নীল হয় । স্ত্রী  স্কুইড পুরুষ স্কুইডদের চেয়ে বড় ও শক্তিশালী হয়। স্কুইড সাধারণত ছোট  আকারের স্কুইড, মাছ, চিংড়ি, আক্টোপাস প্রভৃতি প্রাণি। শিকার করে খায় । বিপদে পড়লে স্কুইড পানিতে এক ধরণের রঙ্গিন কালি ছডে দেয়, ফলে শিকারিরা তাদের দেখতে পারে না এবং তখন তারা দ্রুত স্থান পরিবর্তন। করে । মজার বিষয় হলো স্কুইড পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে অভিপ্রায়ণ।  করতে পারে । এদের উভয় পাশে সাতরানোর জন্য পাখা রয়েছে। তবে অন্যায় সামুদ্রিক প্রাণির মতো স্কুইডের বেশিরভাগ প্রজাতি সমুদ্রে চলাফেরা ও গতিশীলতার  জন্য এই পাখনার ওপর নির্ভরশীল নয় ।। 

স্কুইড একটি নিশাচর প্রাণি  তুকে ক্রোমাটোফরের উপস্থিতির কারণে অন্ধকার। সাগরে এরা আলো তৈরি করতে পারে। বেশির ভাগ স্কুইড একটি দলে তাদের  প্রজননকার্য সম্পন্ন করে থাকে এবং ডিমের থলি সাগরের আগাছায়/তলায় রাখে । স্কুইডের জীবনকাল সাধারণত ১ বছর তবে কিছু কিছু প্রজাতি ৩-৫ বছর পর বেচে থাকে। এদের বেশিরভাগই একবার প্রজননের পর মারা যায় । মত্যর পর তাদের দেহ খাদ্য চক্রের সাথে পুনর্বহারযোগ্য হয় যেটি পরবর্তীতে তাদের বাচ্চাদের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় । 

স্কুইডের প্রাপ্যতা ও বিস্তৃতি

 বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যেমন: ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মরিশাস, আইসল্যান্ড, ফ্রান্স, বৃটেন, ডেনমার্ক, ইটালী, নরওয়ে প্রভৃতি দেশসহ আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর ও উত্তরপূর্ব এলাকা, ভূমধ্যসাগর এবং বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরে স্কুইডের প্রাপ্যতা রয়েছে। স্কুইডের। বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে কিছু কিছু প্রজাতি সমুদ্রের অনেক গভীরে আর কয়েকটি থাকে সমুদ্রপৃষ্ঠের ঠিক নিচে । আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর ও দক্ষিণে। Ommastrephidae পরিবারের বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি প্রজাতি ||lex argentinus, Todarodes pacificus, Nototodarus sloanii, Ilex illecebrosus, Dosidicus gigas seats forefsions atsi 7197016 0 1 বাংলাদেশে টেউথিডা বগীয় A. sparcki, D. singhalensis, L. edulis নামে। তিনটি প্রজাতি সনাক্ত করা হয়েছে যা আঞ্চলিকভাবে গুটি নুইল্যা, রোল নুইল্যা ও। নল নুইল্যা নামে পরিচিত।  এছাড়াও মহেশখালী ও সোনাদিয়া দ্বীপে Loliginidae পরিবারের প্রজাতি  Photololigo duvaucelii এর উপস্থিতি দেখা গেছে যেটি ৩০-১৭০ মিটার গভীরতায় বিচরণ করে থাকে। সম্প্রতি ভারতে এই প্রজাতিটি চাষ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ ভারত মহাসাগরে বাণিজ্যিকভাবে আহরণের জন্য এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি প্রজাতি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আধুনিক স্কুইড ফিশারি শুরু হয়। তখন থেকেই সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণের অন্যতম একটি অংশ । হিসেবে স্কুইড স্থান দখল করে আছে। পৃথিবীতে স্কুইড ধরার প্রধানত ১৫টি স্থান রয়েছে । জিগিং পদ্ধতিতে আকর্ষণীয় টোপ ব্যবহার করে স্কুইড ধরা হয় তবে বেড় জাল দিয়েও স্কুইড ধরা হয়ে থাকে। পৃথিবীতে যে পরিমাণ সেফালোপড় ধরা হয় । তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলে স্কুইড । জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) অনুসারে ২০০২ সালে  সর্বমোট সেফালোপড় ধরা হয়ে ছিল প্রায় ৩২ লক্ষ টন । এর মধ্যে ২১.৮ লক্ষ টন ছিল স্কুইড যা মোট আহরণের ৭৫.৮% । সবচেয়ে বেশি আহরণকৃত স্কুইডের  মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টাইন শর্টফিন স্কুইড (Illex argentinus)- ২৩.৩%, জাপানিজ ফ্লাইং স্কুইড (Todarodes pacificus)২৩%, জাম্বো স্কুইড  (DOSidicus gigas) - ১৮.৬%। এছাড়াও সাধারণ স্কুইড যেটি Loliginidae পরিবারের অন্তর্ভূক্ত, ধরা পড়েছিল ১০.৩%। স্কুইডের কিছু প্রজাতি বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য সারা বিশ্বব্যাপী পরিচিত । নিম্নে এমনি কিছু। জনপ্রিয় স্কুইডের বর্ণনা দেয়া হলো 

ইউরোপিয়ান স্কুইড / Loligo spp.

 

ইউরোপিয়ান স্কুইডটি মৎস্যজীবিদের প্রধান শিকার। এটি সাগরের উপরিভাগে থাকে এবং প্রচুর পরিমাণে ধরা পারার পরও অতি উর্বর প্রজাতি হওয়ায় বিলুপ্ত  হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এটি দৈর্ঘ্যে সর্বোচ্চ। ৬৪০টি মিমি. এবং ওজন ১.৩২-২.৩ কেজি হয়ে থাকে।

 

জায়ান্ট স্কুইড / Architeuthis dux

 

স্কুইডের মধ্যে কলোসাল স্কুইডের পরে সবচেয়ে বড় জায়ান্ট স্কুইড যা। গভীর সমুদ্রের শুড়ওয়ালা শামুক নামে পরিচিত। এটি লম্বায় ৩৩-৪৩ ফুট পর্যন্ত হয় যারা মানুষকেও হত্যা করতে সক্ষম। এটি ৩০০-১০০০ মিটার গভীরতায় বসবাস করে। তিমি এদের প্রধান শিকার। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মা স্কুইড ৫ কেজি ডিম দিয়ে থাকে। জাম্বো স্কুইড / Hamboldt squid / Dosidicus gigas

জাম্বো স্কুইড/Hamboldt squid/Dosidicus gigas

স্কুইডের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত ও সাহসী হল জাম্বো স্কুইড । দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে এরা হাঙ্গরকেও আক্রমণ করে। এটি  ঘন্টায় ২৪ কিমি. বেগে চলাচল করতে পারে ।

 

কলোসাল স্কুইড / Anterctic squid / Mesony choteuthis hamiltoni

 

পৃথিবীর অন্য যে কোন প্রাণির চোখের চেয়ে কলোসাল স্কুইডের চোখ সবচেয়ে বড় (প্রায় ২৮ সেমি.), যা একই সঙ্গে টেলিস্কোপ ও মানুষের চোখ দুটোর মতই কাজ করে। এটি ৩৯-৪৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় এবং ওজনে  ১৬০০ পাউন্ডের বেশি হয়। গায়ের রঙ লাল হওয়ায় স্থানীয়রা একে সমুদ্রের লাল শয়তান বলে । এটি অমেরুদন্ডী প্রাণিদের মধ্যে সবচেয়ে বড়।

 

গ্লাস স্কুইড / Cranchia spp.

 

এরা কাচের মত সচ্চ এবং আকার বেলুনের মত । এদের তিন জোড়া পা এবং লম্বায় ১০ সেমি থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে । এয়ার জিবনের প্রথম অবস্থায় সাগরের উপ্রিভাগে থেকে এবং পরবত্তীতে গভীর সমুদ্রে চলে যায় ।

ভ্যাম্পায়ার স্কুইড / Vampyroteuthis internalis

 

এদের লম্বা কালো বাহুটি ভ্যাম্পায়ারদের পরিধানকৃত কালো টুপির মত দেখায় ।  একারণে এদের ভ্যাম্পায়ার স্কুইড বলা হয়। স্কুইডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দীর্ঘায় ভ্যাম্পায়ার স্কুইডের । এরা সমুদ্রের ৬০০-৯০০ মিটার গভীরে অত্যন্ত কম অক্সিজেন মাত্রায় (৩%) বসবাস করে ।।

 

জাপানিজ ফাইং স্কুইড/Todarodes pacificus

জাপানিজ ফাইং স্কুইড/ এরা ৩০ মিটার পর্যন্ত দূরত্বে উড়তে পারে। এদের মাথার চার পাশে রিং Todarodes এর ন্যায় শুড় থাকে যা দিয়ে এদের বয়স গণনা করা হয়। জাপানে pacificus জনপ্রিয় খাদ্য সুসি তৈরীতে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয় ।

 




 

খাদ্য হিসেবে স্কুইড ও স্কুইডের পুষ্টিমান । স্কুইডের পুষ্টিমান বিশ্লেষণে দেখা যায় প্রতি ১০০ গ্রাম স্কুইডে শক্তির পরিমাণ ১৭৪ কিলো ক্যালরি, চর্বি কম (২%), প্রোটিন বেশী (১৯%) এবং খেতেও সুস্বাদু । তাই পৃথিবীব্যাপি এটি একটি জনপ্রিয় খাদ্য। যদিও খাদ্য হিসেবে স্কুইড আমাদের দেশে খুব বেশি প্রচলিত নয়, তবে মাছের বহুবিধ ব্যবহারের কথা চিন্তা করে আমাদের খাদ্য গ্রহণের  অভ্যাস পরিবর্তন করা প্রয়োজন । বর্তমানে সামুদ্রিক মাছের। পাশাপাশি স্কুইড বিভিন্ন রেস্তোরাতে মুখরোচক খাবার হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ  যেমন: গ্রীক, চীনা, জাপানি, ইতালীয়, শ্রীলংকান, থাই, ভিয়েতনামী, কোরীয়, স্পেনীয়, পর্তুগীজ ও ফিলিপিনো রান্নায় স্কুইড খুবই জনপ্রিয় । ইংরেজিভাষী  দেশগুলোতে খাদ্য হিসেবে স্কুইড ইতালীয় শব্দ ক্যালামারি নামে। পরিচিত।  তবে বিভিন্ন দেশ স্কুইড ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব রেসিপি তৈরি করে। থাকে। স্কুইডের শরীরের অভ্যন্তরে মশলার পুর দিয়ে, অত:পর লম্বা বা গোলাকৃতি  টকুরা করে ভেজে অনেক সুস্বাদু রেসিপি তৈরি করা হয় । স্যুপ তৈরিতেও স্কুইড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। স্কুইডের শুধুমাত্র ঠোট ও গ্লাডিয়াস বাদ দিয়ে পুরো অংশই খাবার উপযোগী । জাপানীজরা বছরে প্রায় ৭ লক্ষ টন স্কুইড খাদ্য  হিসেবে গ্রহণ করে থাকে । মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে স্কুইডের বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব যা পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি খাবারে নতুন মাত্রা  আনবে । ইতোমধ্যে দেশের কিছু রেস্তোরাতে স্কুইডের তৈরি বিভিন্ন খাবার পাওয়া যাচ্ছে । স্কুইডে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ ৪৯.২%। এছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে । ভিটামিন ও মিনারেলস তাই বাচ্চাদের জন্য এটি একটি উচ্চমান সম্পন্ন খাবারের উৎস হতে পারে ।



চিত্র ২. স্কুইডের তৈরি মজাদার খাবার (ফ্রাইড স্কুইড ও স্কুইড নুডুলস)

ক্যালামারি ফাই (Calamati frv) :

 বাজারে প্রাপ্ত স্কুইড থেকে খাবার উপযোগি । অংশ ড্রেসিং করে নিতে হবে। পরিস্কার অংশগুলোকে ছোট ছোট রিং করে কেটে নিয়ে লবণ ও লেবুর রস দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে। ২৫ মিনিট পরে আবার ধুয়ে পানি ঝড়াতে হবে। স্কুইডগুলিকে চালের গুড়া, ময়দা, গোল মরিচের গুড়া, বিট লবণ ও কর্নফ্লাওয়ার দিয়ে মাখিয়ে ১০ মিনিট মেরিনেট করতে হবে। পরে গরম তেলে ভেজে গরম গরম সস বা মেয়োনেজ দিয়ে পরিবেশন করতে হবে ।।

>  স্কুইড - ১/২ কেজি  

লবণ - ১ চা চামচ • লেবুর রস - ২ চা চামচ ০ চালের গুড়া - ২ চা চামচ। • ময়দা

- ৪ চা চামচ, গোল মরিচ গুড়া - ১/২ চা চাম, • বিট লবণ - ১/২ চা চামচ

 তেল - ভাজার জন্য • কর্নফ্লাওয়ার - ১/২ চা চামচ 

স্কুইডের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

 বর্তমানে বাংলাদেশে মিঠাপানির মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ও। মৎস্যজাত পণ্যের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়েছে যেটি আশাব্যাঞ্চক।। মৎস্য খাতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সমুদ্রকে যথাযথভাবে ব্যবহারের কোন। বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সহজ প্রাপ্য সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের জরিপ ও আহরণের প্রতি বিশেষভাবে জোর দিতে হবে । সামুদ্রিক স্কুইড তেমনি একটি মৎস্যসম্পদ। পৃথিবীতে ৩০০ প্রজাতির স্কুইডের মধ্যে ৩০-৪০ প্রজাতির স্কুইড অর্থনৈতিকভাবে। গুরুতপূর্ণ। আমেরিকা, ইউরােপিয়ান ইউনিয়নের আন্তর্জাতিক বাজারগুলোতে স্কুইডের চাহিদা দিন  দিন বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি স্কুইড ৬৫০৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয় । গত এক দশক ধরে স্কুইডের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে । মৎস্য আহরণ কেন্দ্রগুলোতে স্কুইডের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফিনফিসের চেয়ে । বর্তমানে  স্কুইড ও অন্যান্য সেফালোপড়ের দিকে মৎস্য চাষী ও ব্যবসায়ীদের আগ্রহ।  বেশী । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুধুমাত্র স্কুইড ধরার জন্য বাণিজ্যিক জাহাজ ব্যবহার। 

করা হয়। গত চার দশকে সেফালোপড় বিশেষ করে স্কুইড ধরার পরিমাণ  চারগুণ। বৃদ্ধি পেয়েছে। পৃথিবীজুড়ে সেফালোপড় আহরণের পরিমাণ ১৯৭০  সালের । আনুমানিক ১ লক্ষ টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৭ সালে ৪৩ লক্ষ টন হয়। ২০০৯ সালে তা হাস পেয়ে ৩৫ লক্ষ টন হয় যা পরবর্তীতে ২০১২ সালে ৪০ লক্ষ টনে। উন্নিত হয়। আহরণকৃত স্কুইডের মধ্যে ৪৮% ওমাস্ট্রেফিড, ৩০% ললিগনিড ২% । গনাটিড এবং ২০% অন্যান্য পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। 

আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত মৎসসম্পদই অপ্রচলিত মৎস্য। সম্পদ। নব্বই এর দশক থেকে নতুনভাবে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণ শুরু হয়েছে এবং আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ছয় দশক ধরে যেখানে অন্যান্য। মৎস্য আহরণ কমছে সেখানে সেফালোপড় আহরণ বিশেষভাবে  স্কুইড আহরণের। পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে মৎস্যজাত পণ্য উৎপাদনের অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশের সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে স্কুইডের কোন কোন প্রজাতির প্রাপ্যতা। বেশি এর উপর জরিপকার্য পরিচালনা করা প্রয়োজন। অদূর ভবিষ্যতে চিংডি। কাকড়ার পাশাপাশি সী-ইউড, শামুক ঝিনুক এবং স্কুইডও আমাদের খাদ্যাভাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে পারে । রপ্তানি যোগ্য পণ্য হিসেবেও সংযোজিত হয়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে ।

সূত্রঃ  বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সিটিউট ময়মনসিংহ ২২০১

 

Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post