ইসহাক আলী খান পান্নার মৃত্যু নিয়ে ভারতের মেঘালয় পুলিশের নতুন তথ্য
৩০ অগাস্ট ২০২৪ BBC BANGLA NEWS clue
বাংলাদেশ ছাত্র লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নার মৃতদেহ ভারতের মেঘালয়ে খুঁজে পাওয়ার পরে ওই রাজ্যের পুলিশ এখন অনেকটাই নিশ্চিত যে তাকে খুন করা হয়েছিল।
তবে তাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হত্যা করে দেহ ভারতে ফেলে যাওয়া হয়েছিল, নাকি ভারতেই তিনি খুন হন, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
ইসহাক আলী খান পান্না ১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। ২০১২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক হয়েছিলেন। তিনি পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।
বিএসএফ সূত্রগুলি বলছে মি. খানের মৃতদেহ ভারত সীমান্তের প্রায় দেড় কিলোমিটার ভেতরে পাওয়া গেলেও তাকে ভারতে খুন করা হয়নি বলেই তাদের মনে হচ্ছে।
তারা এটাও জোর দিয়ে বলছে যে সাম্প্রতিক সময়ে মেঘালয় সীমান্ত অঞ্চলে কোনও বাংলাদেশি নাগরিক অনুপ্রবেশ করেছেন, এমন তথ্য তাদের কাছে নেই।
মেঘালয়ের ইস্ট জয়ন্তিয়া হিলস জেলার একটি সুপুরি বাগানে মি. খানের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। ইস্ট জয়ন্তিয়া হিলস জেলার পুলিশ জানাচ্ছে যে তারা প্রাথমিক তদন্ত গুটিয়ে আনার পথে। দেহের ময়না তদন্ত শেষ হয়েছে জেলাটির সদর শহর খ্লিরিয়াৎ-এর সিভিল হাসপাতালে। সেখানকার মর্গেই তার মরদেহ রাখা রয়েছে এখন।
ময়না তদন্ত শেষ হলেও সেই রিপোর্ট এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন ইস্ট জয়ন্তিয়া হিলসের পুলিশ সুপার গিরি প্রসাদ এম।
শুক্রবার রাতের মধ্যে তারা পুরো ঘটনা নিয়ে একটি বিবৃতি জারি করতে পারেন বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
তবে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের স্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্র পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে লিখেছে যে ময়না তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ইসহাক আলী খান পান্নাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছিল।
যেভাবে পাওয়া গেল পান্নার দেহ
মেঘালয় পুলিশ বলছে ২৬শে অগাস্ট বিকেলে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা ইস্ট জয়ন্তিয়া হিলস জেলার ডোনা ভই এলাকার একটি সুপুরি বাগানে একটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
স্থানীয় গ্রামবাসীরাই পচন ধরে যাওয়া দেহটি খুঁজে পান। পুলিশ সুপার বলছেন দেহের সঙ্গে তারা বাংলাদেশী পাসপোর্ট পেয়েছেন। সেখান থেকেই তার নাম জানা যায়।
তার সঙ্গে প্রায় তিন কোটি ভারতীয় টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার পাওয়া গিয়েছিল বলে শোনা গেলেও পুলিশ বলছে এই তথ্য সঠিক নয়।
মি. গিরি প্রসাদ জানাচ্ছেন, “দেহের সঙ্গে পাসপোর্ট ছাড়াও একটি স্মার্টওয়াচ এবং তার পোষাক পাওয়া গিয়েছিল। গ্রামবাসীরাই দেহটি দেখতে পান"।
তিনি এটাও জানাচ্ছেন যে বাংলাদেশ থেকে মি. খানের পরিবার যদি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মাধ্যমে মরদেহ পাওয়ার জন্য আবেদন করে তাহলে নিয়ম অনুযায়ী মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
বিএসএফ যা বলছে
সংবাদমাধ্যমের একাংশ জানিয়েছিল যে মি. খান সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে একটি পাহাড়ে চড়তে গিয়ে পড়ে যান। তখনই হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়।
সংবাদ মাধ্যমের একাংশে এরকমও বলা হচ্ছিল যে সীমান্ত পার হওয়ার সময় বিএসএফের তাড়া খেয়ে তিনি মারা গিয়ে থাকতে পারেন।
বিএসএফের মেঘালয় সীমান্ত অঞ্চলের এক কর্মকর্তা অবশ্য বিবিসিকে স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন যে মি. খানের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় বিএসএফ জড়িত থাকতে পারে বলে যে খবর প্রচার করা হচ্ছে, তা সর্বৈব মিথ্যা।
ওই অঞ্চল দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে কোনও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ করেছেন, এমন তথ্যও তাদের কাছে নেই বলেই জানিয়েছেন বিএসএফের ওই কর্মকর্তা।
তাদের প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মি. খানকে হত্যা করে দেহটি ভারতে ফেলে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।
রহস্য কী জানা যাবে?
এখানে প্রশ্ন হচ্ছে , একটি মৃতদেহ নিয়ে সীমান্ত রক্ষীদের নজর এড়িয়ে কীভাবে কেউ বা কারা ভারতে প্রবেশ করতে সক্ষম হলো? তার কোনও স্পষ্ট উত্তর এখনও পাওয়া যায় নি।
তবে এর আগে বিএনপির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন আহেমদকে চোখ বাঁধা অবস্থায় কেউ বা কারা বাংলাদেশ থেকে সড়ক পথে নিয়ে এসে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের রাস্তায় ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল।
যদিও তখন অভিযোগ উঠেছিল যে ভারতীয় সীমান্ত-রক্ষী বাহিনীর সহায়তায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা কোন গোয়েন্দা সংস্থা কাজটি করেছিল।
মেঘালয়ের রাজধানী শিলং শহরে গল্ফ কোর্সের কাছে ২০১৫ সালের ১১ মে খুব সকালের ঘটনা সেটা।
ওখানে কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মী বিবিসি বাংলাকে সেই সময়ে বলেছিলেন যে ওই ব্যক্তি অচেনা জায়গায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করছিলেন যে এটা কোন জায়গা।
তারপরে তিনি নিজের পরিচয় দেন যে বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য। নিজের নামও বলেন তিনি।
তারপরে তাকে পুলিশ নিয়ে যায়। বেশ কিছুদিন তার চিকিৎসা চলে, অন্যদিকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে সালাউদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
তার ঠিক দুমাস আগে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময়েও এই রহস্যের কিনারা হয় নি যে কারা মি. আহমেদকে শিলংয়ে ফেলে রেখে গিয়েছিল।
তাই ইসহাক আলী খান পান্না কীভাবে ভারতে এসে খুন হলেন, নাকি তাকে বাংলাদেশে কেউ খুন করে ভারতে ফেলে রেখে গেল, এসব প্রশ্ন এখনো অমিমাংসিত রয়ে গেছে।
Post a Comment
Please do not link comment any spam or drive spams content