সারা বিশ্বে যীশুর জন্মদিন পালন করে যীশুর অনুসারী খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীরা । প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর প্রভু যীশুর জন্মদিন পালন করে সারা পৃথীবি জুড়ে। বাংলাদেশের খ্রীস্টান অনুসারীরাও পিছিয়ে নেই যীশুর জন্মদিন পালনে । বাংলাদেশের ফুসফুস নামে পরিচিত মধুপুর গড় টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলা। এখানে খ্রীস্টান বলতে গারো আদিবাসীদেরকেই  বুঝিয়ে থাকে ।পাশাপাশি কোচ হাজং বর্মন দের কিছু অংশ আছে যা খুব নগণ্য । গারো আদিবাসীদের সংখায় ৯৮% শতকরা হিসেবে । প্রতি বছর আদিবাসী গারো খ্রীষ্টানগ্ণ বছরের সর্বাধিক প্রানের ধর্মীয় উৎসব বড়দিন পালন করে থাকেন অনেক আনন্দ ও উদ্দিপনার সাথে । প্রতি বছর বাংলাদেশে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করা হয়ে থাকে। মধুপুর গড়ে যীশুর জন্মদিন পালন করা হয় ২৪ ডিসেম্বর থেকেই । তার কারণ আবালবৃদ্ধাবনিতা যীশুর নামে কীর্তন করে সন্ধ্যা থেকেই। কীর্তনের জন্য আদিবাসী গারোরা সাধারণত মাটির তৈরি ঢোল, পিতলের ঘন্টা   এবং করতাল ব্যবহার করে । এদের কীর্তন হয় পাড়া ও মহল্লা ভিত্তিক । একটি পাড়া বা মহল্লায় যদি ৪০ বা ৩০ পরিবার থাকে তাহলে প্রতি পরিবারের বাড়ীর উঠানে কীর্তণ হবে । পূর্বের দিনে দেখা যেত  দিক নির্দেশক দাতা  একজন থাকতো বয়োজেষ্ঠ কিন্তু বর্তমানে যুবক যুবতীরা এখন এই কীর্তনের লিডার থাকে । যেহেতু শীতের সময় তাই পিঠা, পুলি ,পায়েস , কেক বিভিন্ন সুস্বাদেয় খাবার তৈরি করে অনেক পরিবারা। পারা প্রতিবেশী আত্নীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব একে অপরের বাসায় বেড়াতে যায় এবং অনেক আনন্দে যীশুর জন্মদিন পালন করে থাকে । খাদ্যের ব্যাপারে বলতে গেলে বাংলাদেশের সাধারন খাবার গ্রহন করে থাকে । তবে আদিবাসী গারো যারা তাদের ঐতিহ্য খাবার পুরা খারী বলে সেতা তারা খুব আনন্দের সাথে গ্রহন করে। বিশেষ করে বড়দিন বাড়ীতে যেখানে গ্রামবাসী বলতে গেলে মহল্লবাসী এই খাবার গ্রহন করে থাকে । এই পুরা খারীতে কোন ভোজ্য তেল লাগেনা শুধু মাত্র বেকিং সোডা সাথে পাসাম বিজাক গন্ধ ভাদুলী পাতা ব্যাবহার করে থাকে । অনেক বাংলাদেশীরা একে কালো তরকারী বলে জানে । যা গারো আদিবাসীদের ঐতিহ্য খাবার হিসেবে ব্যাপক পরিচিত । 

বড়দিন বাড়ী বলতে বোঝায় যে বাড়ী পূর্ব থেকেই নির্ধারীত করা থাকে গ্রাম বা মহল্লার মিটিং এর মাধ্যমে । যে বাড়ীতে গ্রামের সকলের একাত্নতা দেখা যায় । ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন যীশুর জন্মদিন । ঐ দিন মধুপুর গড়ে যত গুলি গ্রাম আছে তার প্রত্যেক গ্রামের মানুষ তাদের নিজ নিজ সমাজে উক্ত বড়দিন বাড়ীতে একসাথে খাবার  খেতে আসে। বড়দিন  এর দিন যীশুর জন্মদিনে দুপুর বেলা কোন বাড়ীতে দুপুরের আহার রান্না হয় না । রান্না হয় শুধু মাত্র বড়দিন বাড়ীতে । বড়দিন বাড়িতেই সবাই ব্যাস্ত  থাকে শুধু সকলে একসাথে ভোজ গ্রহন করবে বলে । ঐ দিন প্রত্যেক গ্রাম বা মহল্লার সবাই বড়দিন বাড়ীতে নাচ গান খেলাধোলা কৌতুক হাসি ঠাট্টার মাধ্যমে দিন অতিবাহিত করে থাকে । সবাই মিলে আনন্দের একটি মাধ্যম হাচ্ছে  কীর্তন । এই কীর্তনের মাধ্যমে বড়দিন বাড়ীতে খ্রীষ্টানরা তাদের আনন্দ উল্লাসের বহিপ্রকাশ করে থাকে । যার উদাহরন আপনারা এই ভিডিওটি দেখলে বুঝতে পারবেন । যদিও খুব পারদর্শীর মত ভিডিও ধারণ হনি তবুও আপনারা দেখে বুঝতে পারবেন । যীশুর জন্মদিন তাই যীশুকে কেন্দ্র করে গান গুলো রচিত আর বেশীর ভাগ গান কীর্তনের সুরে তাই কীর্তন আকারেই যীশুর গান গুলো গাওয়া হয় । যীশুর জন্মদিনে যীশুর অনেক গান রচিত হয়েছে এছাড়াও বড়দিন বলে সবাই যীশুর গান কীর্তনের মাধ্যমে একসাথে গেয়ে  আনন্দ প্রকাশ করে । 

বড়দিন বাড়ীতে সবাই সকাল থেকেই কাজ শুরু করে নিজের বাড়ীর মত । ঐ দিন সবাই পারা প্রতিবেশী যার যার সামর্থ অনুযায়ী কাজ করে থাকে । কেই রান্না বান্ননায় ব্যাস্ত থাকে কেউ বা মাংস কাটায় , মাংস ধোয়া, পেয়াজ মরিচ কাটা বাটা, মাংস পোড়ানো, চুলা তৈ্রি করা, রান্নার জন্য লাকড়ি প্রস্তুত করা , ভাত রান্নার জন্য চাউল ধোয়া কাজ করে থাকে । আবর অনেকে আছে খাবার পরিবেশনের জন্য থালা ধোয়া মোছা করায় ব্যাস্ত থাকে । বড়দিন বাড়ীতে আদিবাসী গারোদের সারা বাংলাদেশে পুরা খারী বেশি প্রচলিত থাকে । এই পুরা খাবার থাকবেই । আমি পূর্বেই বলেছি এই পুরা খারির বিষয়ে । এছাড়াও ভোজ্য তেলে রান্না বান্না হয়ে থাকে যাকে তেল তরকারি বলা হয় । আরা ডাল গরিবের মাংস এটা থাকবেই । বড়দিন বাড়ী বিশেষ করে  যীশুর জন্মদিন তাই যীশুকে ধন্যবাদ ও যে ঘরে বড়দিন তাদের সহ সকল গ্রামবাসীর মংগলের জন্য প্রার্থনা করে দুপুরের আহার শুরু হয় এক সাথে । খাবার পরিবেশনে থাকে কয়েকজন বিশেষ করে খাবার রান্না করে রাখা হয় নির্দিষ্ট একটি জায়গায় এবং সেখান থেকে কত জন খেতে বসেছে তার একটা আইডিয়া করে খাবার যারা পরিবেশন করবে তাদের কে গামলায় বা ভোলে পরিমান মত তরিতরকারী পরিবেশন করা হয় । পরিবেশনকারীরা দেখে দেখে পরিবেশন করে খাবার । আরো একটি বিষয় এখানে থাকে যেটা হল যে নিরামিষভোজী । যারা নিরামিষভোজী তাদের জন্য থাকে মুরগী আর ডাল সবজি । ছোট শিশুদের জন্য পৃথকভাবে খাবারের আয়োজন থাকেনা । ঐ আয়োজনের মধ্যে যা থাকে তাই থাকছে তাদের জন্য। বিষয়টা যদিও জরুরী কিন্তু সেই ভাবে শিশুদের জন্য খাবারের আয়োজন হয় না। 

পানাহার চলে তবে খুব কম সিমীত কারন যার যার বাড়ীতে থাকে অনেক আয়োজন তাই পানাহার থাকে খুব সিমীত ।  পানাহারে যা থাকে ভাতের তৈ্রি চুলায় মদ । যারা পছন্দ করে তারা সবাই পানাহারে আসে আবার যার পছন্দ করেনা তারা বিরত থাকে দূরে থাকে আসর থেকে । 





Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post