প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার উদযাপন করা হয় বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে। সব সন্তানের জীবনে তাদের বাবাদের অসামান্য অবদান এবং ত্যাগ-স্বীকারকে মহিমান্বিত করার জন্যই একটি বিশেষ দিবস নির্ধারন করা হয়েছে। বাবাকেও ভালবাসা জানাতে পালন করা হয় বিশ্ব বাবা দিবস।


মধ্যযুগ থেকেই বাবা দিবস পালিত হয়ে আসছে ইউরোপ জুড়ে। শুরুতে ক্যাথলিক ইউরোপে ১৯শে মার্চ বাবা দিবস উদযাপিত হত। চতুর্দশ শতাব্দি থেকে এই উদযাপন চলে আসছে। তবে বিংশ শতকের আগ পর্যন্ত অন্যান্য দেশে ক্যাথলিক গোষ্ঠীর বাইরে অন্য কেউ বাবা দিবস উদযাপন করত না। বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে সন্তানের জীবনে পিতার ভূমিকার গুরুত্বকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য বাবা দিবসের প্রচলন করা হয়।

 মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাবা দিবস প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাওয়ার আগে থেকেই মা দিবস উদযাপিত হত।

আরো পড়ুনঃ বিশ্ব মা দিবস! যেভাবে এলো

বাবা দিবস উদযাপন করার প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয় ১৯০৮ সালের ৫ই জুলাই, দক্ষিণ ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে। ১৯০৭ সালে ঘটে যাওয়া মননগাহ খনিধ্বসে মারা যাওয়া বিভিন্ন পরিবারের বাবাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গ্রেস ক্লেয়টন চেষ্টা করেন সেন্ট্রাল ইউনাইটেড মেথডিস্ট চার্চে একটি বাৎসরিক আয়োজন শুরু করার। বাবাকে সম্মান জানাতে সন্তানরা মিলে এই প্রার্থনা সভার আয়োজন করে। এটি ছিল বাবাকে সম্মান জানাতে ইতিহাসের প্রথম আয়োজন। এমনটাই জানা গেছে ইতিহাস ঘেঁটে। তবে বাবা দিবসের সাথে এর তেমন কোন সম্পর্ক নেই।



তবে পরবর্তী বছরগুলোতে বাবা দিবস উদযাপনের তেমন কোন চেষ্টা করা হয় নি দক্ষিণ ভার্জিনিয়ায়।


 ২০১০ সালের ১৯ শে জুন ওয়াশিংটনের ক্যাথলিক এসোসিয়েশনে বাবা দিবস উদযাপন করা হয়, সোনোরা স্মার্ট ডডের একক উদ্যোগে। 

তখন থেকেই জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে বাবা দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়, যদিও তার কোন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ছিল না। শুরুটা ওয়াশিংটনে হলেও ধীরে ধীরে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে বাবা দিবসের কথা। আস্তে আস্তে মা দিবসের পাশাপাশি বাবা দিবসের প্রতিও সচেতন হতে থাকেন সন্তানরা। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাবা দিবসের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেন। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে তখনকার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন একটি আইনে স্বাক্ষর করে বাবা দিবসকে জাতীয় মর্যাদা দেন।


এর পর থেকেই মূলত বাবা দিবসের খ্যাতি বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে, এবং অনেক দেশেই বাবা দিবস পালন হতে থাকে। বর্তমানে বাবা দিবসের গন্ডি শুধুমাত্র রক্তের সম্পর্কের পিতৃত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরঞ্চ এই দিনটিকে পিতৃতূল্য সকল ব্যক্তিত্বকেই ধন্যবাদ জানানোর জন্য বেছে নেয়া হয়।

আরো পড়ুনঃ হিমালয়ে লুকিয়ে বিশুদ্ধ আর্যদের গ্রাম! ইউরোপ থেকে আসেন রহস্যময়ী নারীরা!

এখন একেক দেশে একেক দিন পালিত হয় দিবসটি । বাংলাদেশ,  যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাবা দিবস হচ্ছে জুন মাসের তৃতীয় রোববার। দক্ষিণ আমেরিকাতে ১৯ এ মার্চ। অস্ট্রেলিয়া ও ফিজিতে আবার সেপ্টেম্বরের প্রথম রোববার পালিত হয় বিশ্ব বাবা দিবস।

হিস্টোরি ডট কম অনুযায়ী ১৯২০ ও ১৯৩০ এর মাঝে বেশ কয়েক বার জাতীয় আন্দোলন হয়েছে মা দিবস এবং বাবা দিবস দুটিই বাদ দিয়ে প্যারেন্টস ডে নামে একটি দিন ধার্য করার জন্য।

Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post