মান্দি অঞ্চলে সিস্টারদের আগমন
রেভাঃ ফাদার পিটার রেমা
বৃহত্তর ময়মনসিংহে মান্দি অঞ্চলের সর্বত্র মিশন প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন হয়ে গেলে সেসব মিশনের কতকগুলোতে যাজকদের সঙ্গে পাশাপাশি তাঁদের প্রৈরিতিক কাজ করতে সিস্টারগণ আসতে লাগলেন।
এ অঞ্চলে আগত মিশনারী সিস্টারদের মধ্যে সর্বপ্রথম হল ফ্রান্সের সালেসিয়ান সম্প্রদায়ের সিস্টারগণ, দ্বিতীয় আমেরিকার হলিক্রশ সম্প্রদায়ের সিস্টারগণ, তৃতীয় দেশীয় এস,এম,আর,এ সম্প্রদায়ের সিস্টারগণ ।
READ MORE গারো অঞ্চলে কাথলিক মন্ডলীর ইতিহাস রেভাঃ ফাদার পিটার রেমা
সালেসিয়ান সম্প্রদায়ের সিস্টারগণ সর্বপ্রথম ১৯২৮ খ্রীষ্টাব্দে ময়মনসিংহে আসেন এবং
এখানে কেন্দ্র স্থাপন করেন। পরবর্তী সময়গুলোতে এখানে তাঁরা মেয়েদের জন্য হোস্টেল, একটি প্রাইমারী ও হাই স্কুল স্থাপন করলেন। পরে এখান থেকে তাঁদের কিছু সংখ্যক সদস্য ময়মনসিংহের উত্তর সীমান্তের মিশনগুলোতে প্রৈরিতিক সেবা কাজ করার জন্য চলে যান । যথা ঃ
১৯৩১ খ্রীষ্টাব্দে ৭ জানুয়ারী বিড়ইডাকুনীতে এবং ঐ একই বছরে ২৩ ডিসেম্বরে ভালুকাপাড়ায়, ১৯৩৬ খ্রীষ্টাব্দে ২১ জানুয়ারীতে রাণীখংয়ে, ১৯৪৬ খ্রীষ্টাব্দে ১৬ নভেম্বরে বারোমারীতে এবং ১৯৫২ খ্রীষ্টাব্দে মরিয়মনগরে।
Read More বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী, তবু কোনও ব্রিজ নেই আমাজনের উপর! কেন জানেন
রাণীখং থেকে সালেসিয়ান সম্প্রদায়ের সিস্টারগণ সরে গেলে হলিক্রশ সিস্টারগণ আসলেন। পরে তাঁরা সেখান থেকে বিদায় হয়ে চলে যান। তাঁদের জায়গায় এস.এম.আর.এ সিস্টারগণ আসলেন। কিন্তু ১৯৫৪ খ্রীষ্টাব্দে তাঁরাও মিশন থেকে চলে যান। তাঁদের শূন্য স্থানে সালেসিয়ান সিস্টারগণ আবার ফিরে আসলেন।
কিন্তু আবার এখান থেকে চলে গেলেন। তাঁদের স্থলে এস.এম.আর.এ সিস্টারগণ আবার ফিরে আসলেন এবং একরকম এখন স্থায়ীভাবেই তাঁরা রয়ে গেলেন ।
হলিক্রশ সিস্টারগণ মান্দি অঞ্চলে আপাতত: জলছত্র ও পীরগাছাতে মাত্র রয়েছেন । পালকীয় সিস্টারগণ ছাড়াও মেডিক্যাল সিস্টারগণ এই বৃহত্তর ময়মনসিংহে কাজ করতে এসেছিলেন ।
তবে তাঁরা কালক্রমে এ অঞ্চল থেকে বিদায় হয়ে যান। আর্চবিশপ ১৯৪৮ গ্রেনারের উদ্যোগে ময়মনসিংহ শহরে ধর্মপ্রদেশীয় হাসপাতল খোলার জন্য খ্রীষ্টাব্দে ১৩ সেপ্টেম্বর মেডিক্যাল সিস্টারগণ ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ শহরে আসেন এবং সেন্ট মাইকেল নামে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।
Read More ময়মনসিংহে ধর্মপ্রদেশ সৃষ্টি রেভাঃ ফাদার পিটার রেমা
১৯৪৯ খ্রীষ্টাব্দ ১৯ মার্চ সেন্ট মাইকেল হাসপাতালের শুভ উদ্বোধন হয়। ১৯৬৯ খ্রীষ্টাব্দে এ হাসপাতাল বন্ধ হয়। জলছত্র কুষ্ঠাশ্রম প্রতিষ্ঠা এবং কুষ্ঠ রোগীদের সেবা করতে ১৯৫১ খ্রীষ্টাব্দে মেরনাইট সিস্টারগণ আসেন। কিন্তু ১৯৮০ খ্রীষ্টাব্দে তাঁরা মান্দি অঞ্চল থেকে বিদায়
হন ।
শিক্ষা কার্যক্রম
মান্দি অঞ্চলে মিশনগুলোর প্রতিষ্ঠার পর প্রত্যেক মিশন কেন্দ্রে ও তার অধীনস্থ প্রায় সকল গ্রামেই একটি করে প্রাইমারী স্কুল স্থাপন করা হল । এভাবে মান্দি অঞ্চলের সর্বত্র এখন প্রাইমারী স্কুল রয়েছে। এগুলোর মধ্য দিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এখন পড়াশুনার সুযোগ লাভ করেছে।
১৯৪১ খ্রীষ্টাব্দে হলিক্রশ ব্রাদারদরগণ বিড়ইডাকুনীতে একটি হাই স্কুল স্থাপন করলেন। ১৯৬০ দশকের সমাপ্তি পর্যন্ত এটাই ছিল সারা মান্দি অঞ্চলে একমাত্র কাথলিক হাই স্কুল । আর মেয়েদের জন্য ময়মনসিংহ শহরে সালেসিয়ান সিস্টারগণ হলি ফ্যামিলি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ।
মিশনারীগণ শিক্ষা বিস্তারের জন্য মান্দি অঞ্চলে শুধু প্রাইমারী বা হাই স্কুলই প্রতিষ্ঠা করেননি, কর্মদক্ষতা ও কর্মসংস্থান গড়ে তোলার জন্য কারিগরি স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন: যথা বিড়ইডাকুনীতে একটি কারিগরি বিদ্যালয় এবং ১৯৩০ ও ১৯৩২
খ্রীষ্টাব্দে ভালুকাপাড়াতেও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য উন্নতমানের কৃষি খামার স্থাপন করা হল। কিন্তু নানা প্রতিকুল অবস্থার কারণে এসব কারিগরি বিদ্যালয় ও কৃষি খামার অবশেষে বিলুপ্ত হয় ।
স্বাস্থ্য চিকিৎসা সেবা
সালেসিয়ান ও এস.এম.আর.এ সম্প্রদায়ের সিস্টারগণ বালুচড়া মিশনে ছাড়া তাঁদের প্রত্যেক মিশন কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে আর্ত পীড়িতদের সেবা করে যাচ্ছেন।
![]() |
Post a Comment
Please do not link comment any spam or drive spams content