চাঁদ, মঙ্গল পেরিয়ে এবার সূর্যকে ছুঁল নাসা।
পৃথিবী থেকে প্রথম কোনও মহাকাশযান সূর্যের পরিমণ্ডলে প্রবেশ করল। নাসা ঘোষণা করেছে, তাদের পার্কার সোলার প্রোব সূর্যকে ছুঁয়েছে, সূর্যের করোনার ওপর কড়া নজর রাখছে। কোথ পথে আসে সৌরবায়ু, কোথায় তৈরি হয় সৌরঝড় তার খুঁটিনাটি খবর পৃথিবীতে পৌঁছে দেবে নাসার পার্কার।
নাসার সায়েন্স মিশন ডিরেক্টরেটের প্রধান থমাস জারবুচেন বলেছেন, সৌরমণ্ডলের কর্তাকে কাছ থেকে দেখার অনুভূতি অসাধারণ। সূর্যের পরিমণ্ডলে ঢোকাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই বাধা টপকে গেছে পার্কার সোলার প্রোব। চাঁদ-মঙ্গলের মতো এবার সূর্যের রহস্যও উন্মোচিত হবে। সূর্যের করোনায় কী রহস্য লুকিয়ে আছে তার খবরাখবর এনে দেবে নাসার যান পার্কার। সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্র সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে।
সূর্যের করোনা ভয়ঙ্কর, কাছ থেকে দেখবে নাসার পার্কার
সূর্যের বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে বাইরের স্তর করোনা, সেখান থেকেই প্রচণ্ড গতিতে সৌরকণারা ছিটকে বাইরে বেরিয়ে আসে। একে বলে ‘করোনাল মাস ইজেকশন’। ১০০ কোটি বা তারও অনেক বেশি পরমাণু বোমা এক সঙ্গে ফাটলে যে পরিমাণ শক্তির জন্ম হয়, এরা ততটাই শক্তিশালী। এরা প্রলয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটাতে পারে। নাসা দেখিয়েছে, প্রতি ঘণ্টায় ১০ লক্ষ মাইল গতিতে এই সৌরকণারা ছড়িয়ে পড়ছে মহাকাশে।
আমাদের পৃথিবীর যেমন অ্যাটমস্ফিয়ার আছে, সূর্যের তেমন অ্যাটমস্ফিয়ার আছে। সূর্যের পিঠ (সারফেস) ও তার উপরের স্তর করোনার মধ্যে তাপমাত্রার ফারাক অনেক। সারফেসের গড় তাপমাত্রা ৫৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। কোথাও ৫৮০০ ডিগ্রি আবার কোথাও ৫২০০ ডিগ্রি সেলসিয়ারের কাছাকাছি। করোনার তাপমাত্রা সেখানে প্রায় ২ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। কখনও তারও বেশি। এই করোনা উচ্চতাপমাত্রার প্লাজমা আবরণে ঢাকা। এখান থেকেই বেরিয়ে আসে তড়িদাহত কণার স্রোত। শুধু মহাকাশই নয়, সেই কণার স্রোত প্রভাবিত করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকেও।
এই করোনা স্তর থেকে সৌরঝড়ের জন্ম হয়। সূর্য থেকে বেরিয়ে আসা শক্তিশালী কণা ওর চৌম্বক ক্ষেত্রগুলিকে নিয়ে সৌরবায়ু বেরিয়ে আসে সূর্যের থেকে। আর তা ছড়িয়ে পড়ে আমাদের সৌরমণ্ডলের একেবারে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। ধেয়ে আসে পৃথিবীর দিকেও। সাধারণত, সৌরবায়ুর গতিবেগ হতে পারে সেকেন্ডে ৫০০ কিলোমিটার। তবে নাসা জানাচ্ছে, তার গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৮ লক্ষ মাইলও। তাপমাত্রা প্রায় ১০ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সূর্যের সংসারের নানা খবর পাঠাবে পার্কার সোলার প্রোব। কাছ থেকে গিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে কেন এত অশান্তির ঝড় ওঠে সূর্যের সংসারে। কেন দুরন্ত বেগে ছিটকে আসে সৌরবায়ু। সূর্যের উত্তপ্ত সোলার করোনার জন্যই এই সৌরবায়ুর জন্ম হয়। এর মধ্যেকার শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র ও আয়নগুলো পৃথিবীর টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ও জিপিএস নেটওয়ার্ককে তছনছ করে দিতে পারে। সৌরঝড় (সোলার স্টর্ম) যার দ্বারা স্যাটেলাইটগুলো আক্রান্ত হয় ও টেলি যোগাযোগে বড় ব্যাঘাত ঘটায়। পাশাপাশি, বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্যও দায়ী এই সৌরবায়ু, সৌরঝড় এবং সৌর বিকিরণ। এই সৌরঝড় কোন পথে পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে তারও খোঁজখবর নেবে নাসার সৌরযান।
কিছুদিন আগেই ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA) জানিয়েছিল, সূর্যের পরিমণ্ডলে একটি ছিদ্র লক্ষ্য করা গেছে। সেই ফাটল পথেই প্রবল বেগে সৌরবায়ু ছিটকে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসবে। এর প্রভাব পড়তে পারে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে। সৌরপদার্থবিজ্ঞানীরা বলেন, অসম্ভব শক্তিশালী সৌরকণারা যদি কোনওভাবে পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি চলে আসে তাহলে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি শুরু হবে। সৌরকণাদের সম্মিলিত শক্তি যদি বেশি হয়, তাহলে পৃথিবীর রেডিও বা টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিতে পারে। পৃথিবীর কাছাকাছিই রয়েছে চাঁদ। তাই এর প্রভাব পড়তে পারে চাঁদেও। আর চাঁদে যেহেতু চৌম্বকক্ষেত্রের বর্ম নেই তাই সরাসরি সৌরঝড় ধাক্কা দিতে পারে।
Post a Comment
Please do not link comment any spam or drive spams content