দিনে গুণে গুণে ১০ হাজার পা, কী কী নিয়ম মেনে হাঁটবেন

 জিমে যাওয়ার সময় নেই। ট্রেড মিলে ছুটতেই আলস্য লাগে, কার্ডিওর নাম সুনলেই ঘুম পায়। কড়া ডায়েট আর এক্সারসাইজে সময়ের অভাব, তার ওপর পদ্ধতিগত জটিলতা এইসবের কারণেই শরীরচর্চায় ইতি টেনে দিয়েছেন অনেকেই। সকলেই ভাবেন, তার চেয়ে হাঁটা (Walk) ভাল। সবচেয়ে সহজ শরীরচর্চা যদি কিছু হয় তাহলে সেটা হাঁটাহাঁটি। কমবয়সী হোক বা বয়স্ক, ডিম-ফিটনেস সেন্টারে যাঁরা ফিট করছেন না, তাঁদের জন্য অবশ্যই ‘ওয়াকিং ইজ এ গুড এক্সারসাইজ’।



এখন অনেকেই বলেন, রোজই তো হাঁটি, মেদ ঝরছে কোথায়? কেউ মর্নিং ওয়াকে হাঁটছেন, কেউ ছাদে, কেউ লনে, কেউ আবার অফিস থেকে ফিরে সন্ধে বেলায়। আসলে বিষয়টা হল হাঁটলেই হবে না, সঠিক নিয়ম মেনে হাঁটছেন কিনা সেটাই বড় ব্যাপার। মর্নিং ওয়াকে গিয়েও অনেকে গল্পগাছায় সময় নষ্ট করেন, একটানা হাঁটার বদলে এ মাথা ও মাথা চক্কর কেটেই বিশ্রাম নেন, তেমনটা করলে হবে না। হাঁটারও কিছু নিয়ম, পদ্ধতি আছে। যাঁরা হাঁটা শুরু করবেন মনে করছেন তাঁদের জন্য এক নিয়ম, আবার যাঁরা রোজ হাঁটেন তাঁদের নিয়ম একটু আলাদা।

হাঁটুন সে তো ভাল কথা, কিন্তু কীভাবে হাঁটবেন? মানে, কী নিয়ম মেনে হাঁটলে শরীরচর্চার সমান উপকার পাবে, কতক্ষণ হাঁটলে ক্যালোরি ঝরবে,  এগুলোও জানা উচিত।


ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে… 

হাঁটবেন বলে ভাবছেন যাঁরা তাঁদের জন্য সহজ টিপস। শুরুতেই গড়গড় করে একগাদা হেঁটে ফেলে শরীরকে ক্লান্ত করবেন না। বরং ছোট চোট স্টেপ ফেলুন। চেষ্টা করুন প্রতি সেকেন্ডে একটা করে স্টেপ ফেলার। শুরুতে ১০ মিনিট টানা হাঁটার চেষ্টা করুন। তারপর সময় বাড়ান ধীরে ধীরে, শরীর বুঝে। ১০ মিনিট থেকে ১৫ মিনিট, তারপর ২০ মিনিট, শরীর ঝরঝরে লাগতে শুরু করলে ৩০ মিনিট।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এক মাইল হাঁটায় ১২০ ক্যালোরি ঝরে যায়। শরীরে আরও বেশি অক্সিজেন ঢোকে, পেশিশক্তি বাড়ে, স্নায়ু সক্রিয় হয়, হাড়ের জোর বাড়ে। শরীরে নানা অস্বস্তি, ক্লান্তি, স্ট্রেস, মানসিক চাপ, ব্যথা-বেদনা সবই চলে যাবে প্রতিদিন অন্তত আধ ঘণ্টা হাঁটলে। নিয়ম মানলে স্টেপ বাই স্টেপ চললে দিনে ১০ হাজার পা হাঁটা কোনও ব্যাপারই না।

কী কী নিয়ম আছে

এখন অনেকেই বলবেন, সারাদিন অফিস, হাঁটব কখন? অথবা বাড়ি বসে কাজ হচ্ছে, হাঁটব কোথায় ? এই কখন এবং কোথায়ের সমাধান আপনার হাতেই আছে। বাড়ি বসে কাজ করছেন যাঁরা, তাঁরা লাঞ্চ ব্রেকে হাঁটুন। বাড়ির ছাদে, লনে, বা সামনের রাস্তায় অন্তত ৫-১০ মিনিট হেঁটে নিন। বদ্ধ জায়গায় হাঁটার থেকে খোলা জায়গায় একটানা হাঁটা ভাল। প্রথমে ১০ মিনিট, পরে সেই সময়টাই বাড়িয়ে ১৫ মিনিট করুন।



অফিস যাওয়া, কেনাকাটা, বাজার-দোকান করার সময় অন্তত কিছুটা রাস্তা হাঁটার অভ্যাস করুন। বাজার যদি বাড়ির কাছাকাছি হয় তাহলে অটো বা রিক্সায় না উটে হেঁটে যান ও হেঁটে ফিরুন। অফিস যাওয়ার সময় অন্তত দুটো স্টপেজ আগে নেমে হাঁটুন। শুরুতে মনে হবে ক্লান্তি লাগছে, পরে এটাই অভ্যাস হয়ে যাবে। লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন।

খুচরো হাঁটায় শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গরা সচল থাকবে। তবে এতে খুব একটা মেদ ঝরে না। মেদ ঝরাতে গেলে আবার অন্য নিয়ম আছে। সপ্তাহে হাঁটতে হবে অন্তত ১৫০-২৫০ মিনিট। গড় হিসেবে কম করে ৩৫ মিনিটের একটু বেশি। এটুকু হাঁটা শরীরের শুধু মেদ ঝরাবে তা-ই নয়, এই দীর্ঘ ক্ষণ হাঁটা হার্টের অসুখ ভাল করে। কোলেস্টেরল কমায়।

দিনে ১০ হাজার পা হাঁটার টার্গেট নিতে হবে। ১০ হাজার শুনে আঁতকে ওঠার কিছু নেই, ১০-১৫ মিনিট একটানা হাঁটলেই অনেটকা টার্গেট পূরণ হয়ে যাবে। প্রথমে এক সেকেন্ডে একটা স্টেপ, পরে এক সেকেন্ডেই দুটো করে স্টেপ ফেলার চেষ্টা করুন। হাঁটুন একটানা, বারে বারে দিক বদলাবেন না । শুরুটা বাড়ি ছাদ বা লন দিয়ে হোক, তারপর হাঁটার অভ্যাস তৈরি হলে রাস্তা ধরে হাঁটার চেষ্টা করুন।

দল বেঁধে হাটতে বেরোবেন না, এতে গল্পে সময় নষ্ট হয়। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে হাঁটার অভ্যাস ছাড়ুন, এতে কোনও ফল হবে না। এতে হাঁটার গতি শ্লথ হয় ও হাঁপিয়ে গিয়ে বেশি দূর হাঁটা যায় না।

হাঁটার সময় মন ফুরফুরে রাখতে হবে, একরাশ উদ্বেগ বা চিন্তা নিয়ে হাঁট চলবে না। এরজন্য ইয়ার ফোনে গান শুনতে পারেন, তবে কানে হেডফোন লাগিয়ে রাস্তায় চললে সতর্ক থাকতে হবে। বেশি গাড়ি যাতায়াত করে যেখানে সেইসব রাস্তা হাঁটতে হলে ইয়ারফোন এড়িয়ে চলুন।

একেবারে ভরা পেটে হাঁটবেন না। হাল্কা খাবার খেয়ে হাঁটতে পারেন। ভোরে বা বিকেলে হাঁটা সবচেয়ে ভাল। তবে সময়ের অভাবে যে কোনও সময়েই হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন। পায়ে বা হাঁটুতে চোট থাকলে বা কোমরের সমস্যায় ভুগলে অবশ্যই হাঁটার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post