আম্বিলিকাল কর্ডের রক্তে সারল এইডস! বিশ্বে প্রথম এইচআইভি চিকিৎসায় নজির

Clue : Online Doctor Tv news portal 

স্টেম সেল থেরাপিতে এইচআইভি মুক্তির দিশা দেখাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এই নিয়ে বিশ্বে তৃতীয়বার এইডস সারিয়ে উঠলেন এক ক্যানসার রোগী। আম্বিলিকাল কর্ডের (নাভিরজ্জু) রক্ত প্রতিস্থাপনে এইডস সেরেছে বলে দাবি চিকিৎসকদের। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, এই ট্রিটমেন্টকে বলে কর্ড ব্লাড ট্রান্সপ্লান্ট (Cord Blood Transplant)। এতদিন কর্ড ব্লাড বা আম্বিলিকাল কর্ডের রক্তে চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক ছিল। এইডসের চিকিৎসায় সাফল্য মেলার পরে সাড়া পড়ে গেছে বিশ্বে।




অস্থিমজ্জা বা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে এইডস সারিয়েছিলেন দু’জন—‘বার্লিন পেশেন্ট’ নামে পরিচিত টিমোথি রে ব্রাউন ও  ‘লন্ডন পেশেন্ট’  অ্যাডাম ক্যাস্টিল্লেজো।

কিন্তু কর্ড ব্লাড প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এইডসের চিকিৎসা এই প্রথম।

আমেরিকার এক মহিলা লিউকেমিয়ায় ভুগছিলেন। ২০১৩ সালে তাঁর এইচআইভি ধরা পড়ে। অ্যান্টিরেট্রোভিয়াল ওষুধের থেরাপিতে ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের মার্চে অ্যাকিউট মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়া ধরা পড়ে। পরীক্ষা করে এইডসের লক্ষণও দেখা যায়। অ্যান্টিরেট্রোভিয়াল থেরাপি চলার সময়েই কর্ড ব্লাড প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তাররা।



চিকিৎসকরা বলছেন, আম্বিলিকাল কর্ডের রক্তে যে স্টেম কোষ থাকে তা এইচাইভি ভাইরাসের মিউটেশন থামিয়ে দিতে পারে। এতদিন বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জার স্টেম কোষ নিয়ে এইডসের থেরাপি করেছেন ডাক্তাররা। প্রথমবার আম্বিলিকাল কর্ড বা নাভিরজ্জুর রক্ত প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এইচআইভি চিকিৎসায় বড় সাফল্য এল। অস্ত্রোপচারের ১৪ দিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় ওই মহিলাকে।

অভিনব স্টেম-সেল থেরাপিতে মারণ রোগ সারাচ্ছেন চিকিৎসকরা

কোষে ভাইরাস বা ব্যাকটিরিয়া ঢুকতে গেলে তাদের কোনও বাহক বা রিসেপটরের দরকার হয় (Virus Receptor)। মানুষের শরীরের কোষ বা Host Cell এই এই বাহক খুঁজে নিয়ে কোষে জমিয়ে বসে ভাইরাসরা। প্রতিটি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার জন্য আলাদা আলাদা রিসেপটর থাকে। একে অবলম্বন করেই একটু একটু করে কোষে আড়েবহড়ে বাড়তে থাকে জীবাণুরা।তাদের বংশ কয়েকগুণ বেড়ে ছড়িয়ে পড়ে গোটা শরীরে। আক্রান্ত হতে থাকে একের পর এক কোষ। এভাবেই ধীরে ধীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়, যার অন্তিম পরিণতি মৃত্যু। এইচআইভি-১ (HIV 1) ভাইরাস স্ট্রেনের জন্য সাধারণত যে রিসেপটর বা বাহক কাজ করে তার নাম হল সিসিআর-৫ (CCR5) ।



হোস্ট সেলের এই সিসিআর-৫ বাহকের জিনগত গঠনের বদল বা মিউটেশন হয় অনেক সময়। এইডস রোগীর শরীরে এই বাহক জিনের মিউটেশন হলে সে এইচআইভি-১ ভাইরাসের জন্য অপ্রিতিরোধ্য হয়ে ওঠে। অর্থাৎ ভাইরাসকে আর চিনে উঠতে পারে না। কাজেই তার সঙ্গে জোটও বাঁধতে পারে না। আর ভাইরাস যদি বাহকের সঙ্গে জুটি না বাঁধে তাহলে তার আর কোষে ঢোকা সম্ভব হয় না। গবেষকরা বলছেন, তাই এমন ডোনার (দাতা) খুঁজতে হয় যার শরীরে এই বিশেষ জিন রয়েছে। বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে অস্থিমজ্জায় সেই বিশেষ স্টেম কোষ তৈরি করে তা শরীরে ঢুকিয়ে এইচআইভি ভাইরাসের প্রতিরোধী ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। এবার আম্বিলিকাল কর্ডের রক্ত থেকে স্টেম কোষ নিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে।

স্নায়ুজনিত যে কোনও রোগে স্টেম সেল ট্রিটমেন্টে ভাল ফল মিলছে বলে মত চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের একাংশের। ব্লাড ক্যানসারের চিকিৎসাতেও কর্ড ব্লাড নতুন রক্ত সঞ্চালন করে রোগীর দেহে। সেরিব্রাল পলসি, থ্যালাসেমিয়া, অটিজ়মের ক্ষেত্রে স্টেম সেল থেরাপি কাজে আসার অনেক উদাহরণ ভারতেই রয়েছে। তাই কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে অনেক জায়গাতেই। গবেষকরা বলছেন, আম্বিলিকাল কর্ডের রক্তে পাওয়া স্টেম কোষ দিয়ে অনেক দুরারোগ্য ব্যধির চিকিৎসা হতে পারে।

Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post