বন
বিভাগ শত শত নয় হাজার হাজার মামলা দিয়ে বনের আদিবাসিন্দাদের জীবন দুর্বিষহ করে দিয়েছে । আমি বলতে চাই সবকিছুই হয়েছে উন্ননয়ের নামে যা শুনলে যে কেউ অবাক হবেন । এ সকল উন্নয়নের নামে অনেক অচেনা মানুষ প্রবেশ করেছে গারো আদিবাসী দের নিজ ভূমিতে । আদিবাসীরা পরিণত হয়েছে সংখ্যালঘু নিজ ভূমিতে । মধুপুর গড়ে সেই পূর্ব পাকিস্থান থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যত গুলো প্রকল্প হয়েছে তার মধ্যে ১০০% হয়েছে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য । যার প্রতিক্রিয়া স্থানীয় মানুষের কোন উন্নয়ন হয় নি দুঃখ কষ্ট বঞ্চনা ছাড়া । অন্য দিকে আমারা সবাই দেখতে পাই শত শত মানুষ ঢুকে পড়েছে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ও বনে ।
মধুপুর জাতীয় পার্ক করা হয়েছিল বন্য প্রাণী রক্ষার সার্থে; আদিবাসীদের জীবন মান উন্নয়নে । কিন্তু বন্য প্রাণী তো দূরে থাক মধুপুর গড়ের আদি মা গাছ গাজারী- শাল আজ ইতিহাস । আদিবাসীরা যেমন সুবিধা বঞ্চিত তেমনী মধুপুরের আদি মা গাছ আজ বিলীন বিরল প্রায় । অপর দিকে আমরা দেখতে পাই মধুপুর জাতীয় পার্ক এখন বাইরের আমোদ প্রিয় লোকদের বনভোজন ও আনন্দ ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত জায়গা, তাহলে আপনার বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও বন রক্ষনাবেক্ষন জন্য অযোগ্য । আদিবাসীদের তো নাই উল্লেখ করলাম । পরিপ্রেক্ষিত কি দাঁড়ালো, যত উন্নয়নের নামে মূলস্রোতের মানুষ ও সরকার আদিবাসীদের নিপীড়ন, নির্যাতন ও ভূমি হারানোর প্রক্রিয়া মধ্যে থেলে দেয় । মধুপুর গড়ের বিশেষ করে যে বন ছিল বিলিন হয়ে গেছে কারণ; যত বন কর্মকর্তা এসেছে এবং তার সাথে যত গুলি সরকারে পরিবর্তন হয়েছে সাথে সাথে বাইরের বনখেকো মানুষ প্রবেশ করেছে অর্থ লোভীদের জন্য । মধুপুর বন নামে মাত্র বন সত্যিকার অর্থে পিকনিক স্পটে পরিণত হয়েছে । প্রতি নিয়ত বনে এখন ট্রাক-জীপে-বাসে-সিএঞ্জি-অটো করে মানুষ পিকনিক করেতে আসে । মাইক যেখানে একদম নিষিদ্ধ সেই মাইক বাজে জোরালো উত্তেজনায় । বনের পরিবেশ বিপন্ন, সাথে মানুষেরাও বিপন্ন তাই নয় কি ?
বিখ্যাত মহেশ্বেতা দেবী তার টেরোড্যাকটিল পূরণ সহায় ও পিরথা উপন্যাসে আদিবাসীদের কথা এভাবে লিখেছেন , “ যাদের জীবনে শুধুই শোষণ, শুধু বঞ্চনা, সেই আদিবাসীদের কোন ভাষাতেই কি আছে শোষণ শব্দের সমার্থক শব্দ ?”
তিনি আরো বলেছিলেন
“...... এক সময় বন ছিল পাহাড় ছিল, নদী ছিল, আমরা ছিলাম । আমাদের গ্রাম ছিল, ঘর ছিল, জমি ছিল, আমরা ছিলাম । আমাদের ক্ষেত আবাদ হতো, ধান, কোদো, কূটকি, সোমা, আমরাও ছিলাম । মানুষ বেড়ে যেত, সংসার বেড়ে যেত আবার কিছু মানুষ চলে যেত বহু দূরে । পৃথিবীর কাছে বলে নিতাম, ঘর বাঁধতে খুঁটি পুঁতছি, চাষ করবো জমি কাতিয়ে নিচ্ছি । গাছ আমাদের গ্রাম দেবতা, গাছকে পূজা দিতাম । তখন আমরা ছিলাম শুধু আমরা ছিলাম । --- হাই আর এখন? হায় হায় !
বানের আগে যেমন পিঁপড়ে ওঠে বর্ষার আগে যেমন উইপোকা ওড়ে লাখে লাখে, ঝাকে ঝাকে, তেমনি করে আমাদের খবর চলে গেল ভিন মানুষের কাছে । আমাদের কি পুজা পরবে কোনো ভুল হয়েছিল?
...কেন এল ভিন দেশী মানুষ ? আমরা রাজা ছিলাম, প্রজা হলাম, প্রজা ছিলাম দাস হলাম । অঋণী ছিলাম দেনাদার করে দিল । দাস করে বেঁধে রেখে দিল হায়! দেশ চলে গেল ঝড়ের মুখে, ধুলোর মত চলে গেল জমি, ঘর সব । যারা এল তারা ত মানুষ নয় । হায় হায় !
পাহাড়ে গিয়ে ঘর বাঁধি, রাস্তা আমদের তাড়া করে আসে । অরণ্য চলে যায় চারিদিক ওরা অশুচি করে দেয় । পূর্বপুরুষের সমাধি ছিল, হায় হায় !
তা গুড়িয়ে মাড়িয়ে সেখানে হলো পথ, বাড়ি স্কুল, হাসপাতাল । এর কোনটা আমার চাইনি, আমাদের জন্যও করেনি । দুঃখে আমারা পাথর, আমরা বোবা । আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি, মুছে যাচ্ছি মাটি থেকে ।”
আদিবাসী মহেশ্বেতা দেবী উপরোক্ত কথা গুলির মধ্যে তখনকার সময় আদিবাসীদের যন্ত্রণা- বেদনা- দুঃখ- কষ্ট- উনন্নয়ন- স্বপ্ন সকল কিছু জড়িয়ে আছে । সত্যই যেখানে আদিবাসী সেখানেই আমারা দেখতে পাই সরকারের উনন্নয়নের নামে চলে জমি দখল, বন উজাড় করা, রাবার বাগান, রসুলপুর ফায়ারিং রেঞ্জ করা, পিকনিক স্পট করা এমন কি মা গাছ গাজারী-শাল রক্ষা না করে বনায়নের নাম করে বিশ্ব ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশী গাছ আকাশমনি, ইউক্লিপ্টাস, নানা প্রজাতির পরিবশে অবান্ধব গাছ শুধু মধুপুর নয় সারা বাংলায় এখন বিস্তৃত ।
Post a Comment
Please do not link comment any spam or drive spams content