দোখলা ফরেস্ট রেঞ্জ অফিস থেকে যাচ্ছি ইট বিছানো বেশ প্রশস্ত রাস্তা  আমাদের গন্তব্য গারো গ্রাম সাধুপাড়া পেরিয়ে আরো পূর্ব-দক্ষিণে যেখানে  হাজার হাজার একর শালবনের জায়গায় এখন কলা এবং পেঁপে বাগান অথবা তৈরি করা। বিদেশী প্রজাতির বন বাগান যার মধ্যে সত্যিকারের বনের কোনো  চেহারাই আর নেই  কিন্তু পথে আটকে যাই একটি ঝাকড়া শেওলা (স্থানীয় নাম) গাছ দেখে গাছটিতে ছোট ছোট ফুল ফুটেছে শত শত কীট- পতঙ্গ-প্রজাপতি গাছটির ফুলে ফুলে এবং পাতায় পাতায় চারদিকে ছোট ছোট আরো শত রকমের গাছ-গাছড়া যাদের অনেকগুলো ঔষধি আমার সঙ্গী গারো যুবক ডিবারসন চিরান আমাকে  দেখাচ্ছে বহেরা, সাদা জিগা, পিতরাজ, আনাই গোটা, জংলী হলুদ, কাইকা, সিন্দুর, গান্ধীগজারী, কাঞ্চন  পাতা, বাবড়ী, বুতুম, বুননা বেত, আমলকী এবং আরো অনেক নাম না জানা ঔষধি গাছ। এসবের সাথে প্রচুর শাল কপিস । দুঃখের কথা, বেশি পুরানো  শাল গাছ চোখেই পড়ে না।


মধুপুর শালবনের অধিকাংশ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করা হয়েছে। কলা, আনারস ও বিদেশী বা আগ্রাসী প্রজাতির দৌরাত্ম পুরো এলাকাজুড়ে । তারপরেও যেটুকু জায়গায় এখনো এসবের আগ্রাসন হয়নি সেখানে শালবনের শত শত প্রজাতি কীভাবে বাঁচার চেষ্টা করছে এ জায়গাটি তারই উদাহরণ
আমরা আরো একটু এগুতে থাকি ইটের রাস্তা ধরে এবার আমাদের  ডানদিকে যতদূর দৃষ্টি যায় ইটের প্রাচীর কেবল তোলা হয়েছে  বাঁ দিকেও প্রাচীর তোলার জন্য গর্ত করা হয়েছে আদিবাসীদের প্রচণ্ড বাধার মুখে  দেয়াল তৈরির কাজ আপাতত বন্ধ এ জায়গাটিতে উদ্ভিদ বৈচিত্র্য, পোকা-মাকড় আর পাখির কলকাকলিতে মুগ্ধ হয়ে যাই আপাতত কলা-পেঁপের  বাগানে না গিয়ে এগুলোই দেখতে থাকি। দেয়াল ধরে আমরা হাঁটি দক্ষিণে উদ্দেশ্য দেয়াল যতদূর গিয়েছে ততোদূর পর্যন্ত দেখবো
মধুপুরে শালবন কেটে সামাজিক বনায়ন এক বছর আগেও এখানে ছিল শালসহ শত প্রজাতির প্রাকৃতিক বন দেয়াল করতে গিয়ে প্রচুর গাছ নিধন করা হয়েছে। অনেকদূর পর্যন্ত দেয়ালের দু ধারে বেশ ভালো শাল কপিস তার মধ্যে শত রকমের অন্যান্য দেশীয় প্রজাতির গাছ, যার অনেকগুলো ঔষধি দেয়াল ধরে হাঁটতেই বেশ বড় একটি গান্ধী গজারী শালগাছ থেকে মূল্যবান এ গাছটির সংখ্যা এমনিতেই খুব কম। এখন গাছটি আর দেখা যায় না বললেই চলে। বর্ষা মৌসুমের আগে আগে শাল ও গান্ধী গজারীর ফুল ফোটে, তারপর সেগুলো বীজে পরিণত হয়ে মাটিতে ঝড়ে পড়ে ।। এগুলোকে ভেজা মাটিতে পুঁতে  দিলেই হয়ে যাবে চারা । ব্রিটিশ আমলে এভাবে শালবনে শাল-গজারির সংখ্যা বাড়াতো বন বিভাগ এবং জুমিয়া আদিবাসীরা, অন্যান্য শত প্রজাতির গাছ এমনিতেই এলাকা ছেয়ে ফেলতো   
ডিরভারসন  চোকা নামক একটি গাছ দেখালো এলাকাবাসী এ গাছটিকে বলেন চোকা পাতার গাছ, গারো ভাষায় সিলকিং। এর পাতা সুস্বাদু এবং  এলাকাবাসীর পুষ্টির একটি উৎস আরেক রকম চোকাপাতার গাছ দেখলাম যাকে এলাকাবাসী বলেন আদুরাক পাতা। এরপর আমরা দেখতে থাকি আরো নানা প্রজাতি যেমন শো, গাদীলা, বুননা ডুমুর, মন কাটা, জংলী খেজুর গাছ, দামন, তিথিজাম, কাশি গোটা,  তীতফল (শুশুতুম), দুধকুরুজ, শতমূল, জারুল, পলাশ, দুকা নাসিন (বুনো ফুল এবং ঔষধি গাছ), তিক্রং, এবং বুনো কড়ই
জঙ্গলি আলুর গাছ খুঁজে বেড়াচ্ছেন এমন কয়েকজনের দেখাও পেলাম ।। বর্ষামৌসুমের শুরুতে এক সময় শালবনের সর্বত্র পাওয়া যেত এ আলু যা অভাবী এলাকাবাসী বিশেষ করে আদিবাসীদের কাছে প্রিয়। নরম ও চিকন একটি লতা ধরে মাটি খুঁড়লে এ মৌসুমী আলুটি পাওয়া যায়। একজন অভাবী নারী প্রায় পাঁচ কেজির মতো আলু তুলেছেন এক বেলায়, যা তিনি বিক্রি  করে দিবেন, ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে নিলেই এ আলু সুস্বাদু খাবার। আমরা এক বিকেলে সাদা চোখে যেসব প্রজাতি দেখলাম তা শালবনের শত। শত প্রজাতির মাত্র কয়েকটি।এখনো যেখানে শাল কপিস আছে, কেবল  সেখানেই উদ্ভিদ ও প্রাণবৈচিত্র্য আছে যেসব জায়গায় কলা, আনারস ও আগ্রাসী প্রজাতির বন বাগান হয়েছে সেখানে প্রাণবৈচিত্র্য একেবারে নেই,” বলেন পাভেল পার্থ পার্থ কয়েক বছর ধরে মধুপুর এলাকায় যাতায়াত করছেন এবং প্রাণবৈচিত্র্য নিয়ে তার একটি গবেষণা প্রতিবেদন শীঘ্র প্রকাশিত হচ্ছে।
দেয়াল ঘেঁষে এক জায়গায় দেখলাম বিশাল আনারস এবং কলাবাগান অবৈধভাবে শাল কপিস কেটে তৈরি করা হয়েছে এ অর্থকরী ফসল যা বন বিভাগের অফিস থেকে দূরে নয় শত শত প্রতাপশালী কলা ও আনারসচাষি হাজার হাজার একর সরকারি বনভূমির শালগাছ কেটে বা পান্টেশনের জায়গায় তৈ্রি করছে  কলা এবং আনারস ক্ষেত। মধুপুরে যেসব জায়গাতে কলা, আনারস এবং কি আগ্রাসী প্রজাতি দিয়ে কৃত্রিম বনায়ন হয়েছে সেসব জায়গাতে (মধুপুর শালবনে যত্রতত্র) দেশীয় প্রজাতির সম্পূর্ণ বিনাশ ঘটেছে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে এটি একটি বড় ধরনের অপরাধ এ অপরাধ যারা করছেন তারা যে কেবল প্রভাবশালী বলে এ কাজটি করতে পারছেন তা নয়, এর পেছনে সরকারি নীতি এবং কতকগুলো প্রভাব  কাজ করছে যার ট্রিগার চাপা হচ্ছে বাইরে থেকে প্রথমত সরকারি বনভূমিতে আমাদের দেশীয় প্রজাতি রক্ষার ব্যাপারে সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, কিছু দাতা সংস্থাগুলো এবং বিদেশী ঋণ প্রদানকারী  বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংকসমূহ (বিশ্বব্যাংক ও এডিবি) যে মনযোগী নয় সে ব্যাপারে আমরা নানা তথ্য, উপাত্ত ও প্রমাণ পাই।  
 প্রভাবশালীদের দষ্টিভঙ্গির একটি উদাহরণ দিই। এবার (২০০৪) আর্থ ডেতে ঢাকাস্থ আমেরিকান সেন্টারে গোলটেবিল আলোচনা চলছে  আলোচনার বিষয় বন, প্রাণবৈচিত্র্য এবং দেশীয় মাছ। সম্প্রতি বাংলাদেশে  আমেরিকান সরকারের সাহায্যপুষ্টনিসর্গ' 'আরণ্যক' বলে যে দুটো প্রকল্প চালু হয়েছে। এবং দেশীয় মাছ রক্ষার জন্যমাচ' বলে যে একটি প্রকল্প চলছে তার কর্মকর্তারা বক্তব্য দিচ্ছেন। এ তিনটি উদ্যোগেরই উদ্দেশ্য মহৎ এবং তা হলো দেশীয় মাছ এবং প্রাণসম্পদের সুরক্ষা কিন্তু দেশীয় মাছ  রক্ষার ব্যাপারে যে উৎসাহ লক্ষ করা গেল সরকারি বনভূমিতে দেশীয় প্রজাতি রক্ষার ব্যাপারে সে উৎসাহ অনুপস্থিত।। যদিওনিসর্গ' এবংআরণ্যক'-এর কথিত উদ্দেশ্য বনের প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করা
বরং বাংলাদেশে সরকারি বনভূমিতে বিদেশী বা আগ্রাসী প্রজাতির প্রবেশ একটি বড় উদ্বেগজনক ঘটনা এ প্রসঙ্গ ওঠায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসচি (ইউএনডিপি) 'র এক (বাংলাদেশী] কর্মকর্তা বললেন, বনভূমিতে আগ্রাসী বা বিদেশী প্রজাতি কোনো উদ্বেগের বিষয় নয়। জাতিসংঘের ঐ কর্মকর্তা  বাংলাদেশে জাতিসংঘ বাস্তবায়িত পৃথিবীর সবচাইতে বড় পরিবেশ প্রকল্পেরও একজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি। তার বিবেচনায় বাংলাদেশের সরকারি বনভূমিতে বিদেশী। প্রজাতির কোনো আগ্রাসন ঘটেনি। বরং বনভূমিতে যেসব গাছ   লাগানো হয়েছে। তাতে এলাকার অর্থনীতির উপকার হয়েছে। বাংলাদেশে সরকারি বনভূমিতে সামাজিক বনায়ন খুব সফল হয়েছে সেকথাও বললেন কেউ কেউ। কথা ঠিক, সরকারি বনভূমিতে সামাজিক বনায়ন থেকে কোনো কোনো  জায়গায় কোনো কোনো অংশগ্রহণকারী ভালো অঙ্কের টাকা পেয়েছেন যেমন গাজীপুর জেলার কালামপুর বিটে সামাজিক বনায়নে অংশ নিয়ে সুফল পেয়েছেন। এমন কয়েকজন অংশগ্রহণকারীর সাথে কথা বলেছি ২০০৩ সালে অংশগ্রহণকারী মাসুদুল করিম (কাঠ ব্যবসায়ী এবং ১৯৯১ সালের উডলট জ্বালানি কাঠের বন বাগানের অংশগ্রহণকারী) আবর্ত কাল শেষে পেয়েছেন ১,১২,৬০০ টাকা। খুব খুশি তিনি। তার সাথে তার প্লটে দাঁড়িয়েই কথা বলছিলাম। এখানে এক সময়। শালবন ছিল। তখন ছিল শত শত দেশীয় প্রজাতি। প্রথম ও দ্বিতীয় আবতের সামাজিক বনায়ন প্লটে বিদেশী প্রজাতি আকাশিয়াসহ গুটি কয়েক প্রজাতি। বাগানে কী গাছ লাগানো হলো, সেগুলো দেশী বা বিদেশী, কৃত্রিম বনায়নের ফলে ভবিষ্যতে কী ক্ষতি হতে পারে, সে সব নিয়ে কালামপুর বিটের ৩০ জন অংশগ্রহণকারী চিন্তিত নন। তারা বর্তমানে যা পেয়েছেন তাতেই ভীষণ খুশি ।। (বাঁকা অংশটুকু 'সংবাদ'-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে বাদ দেয়া হয়েছিলো
এর ভিন্ন চিত্রও আছে। যেমন, সামাজিক বনায়নে মধুপুরের ১৬৪ জন অংশগ্রহণকারী ২০০০ সালে পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ  দায়ের করে বলেছেন সামাজিক বনায়নে অংশ নিয়ে তারা কিছুই পাননি বরং নানা। হয়রানি ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন। মধুপুরে অনেক জায়গাতেই দেখা গিয়েছে মাত্র পনেরো বছর আগে শালবন ছিল এমন অনেক জায়গা  সম্পূর্ণভাবে বিরান হয়ে গিয়েছে। সেখানে এখন না আছে শাল কপিস, না আছে লাগানো গাছ ইউক্যালিপটাস ও আকাশিয়ার বাগান করতে গিয়ে এমনভাবে বনভূমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে যে সেখানে আর বিচিত্র রকমের দেশী প্রজাতি নেই। কোথাও কোথাও দ্বিতীয় আবর্তের বনায়ন হচ্ছে বা হবে প্রথম ও দ্বিতীয় আবর্তের মাঝে কয়েক বছর যেসব জায়গা বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়েছিল তার অনেক জায়গা চলে গেছে কলা ও আনারস চাষিদের দখলে। কলাচাষের মাটি নষ্ট করার ক্ষমতা এমনই যে শাল কপিস কেটে মাত্র দুই তিন বছর আগে যেখানে কলা বাগান হয়েছে সেখানে দেশীয় কোনো প্রজাতির নাম নিশানা পর্যন্ত নেই।
বিদেশী প্রজাতি দিয়ে বনায়নের ব্যাপারে এলাকার কৃষকেরা ক্ষুব্ধ। কালামপুরের। যে জায়গায় খুব উৎসাহ নিয়ে সামাজিক বনায়ন’-এ ৩০ জন মানুষ অংশ নিচ্ছেন, সেখানে তাদের চেয়ে সংখ্যায় আরো বেশি কৃষক ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাদের কথা কিছুকাল আগেও এখানে শালবন ছিল। তখন তাদের চাষের জমিতে পানির অভাব। ছিল না। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি ছিল এবং এলাকাটি অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা ছিল কিন্তু বর্তমানে সে পরিবেশ নেই  তাদের চাষের জমিতে পানির পরিমাণ কমে। গেছে। নতুন কীটপতঙ্গের আবির্ভাব ঘটেছে। এসব কারণে এখন ফসল কম হচ্ছে। মধুপুরের কৃষক হাতেম আলীর অভিযোগ, “আকাশিয়ার বাগানে যে প্রচুর। গান্ধী পোকার জন্ম হচ্ছে তার আক্রমণে আমাদের কৃষি ফসল (আমন ধান)  ও লেবু বাগানের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে আকাশিয়ার বাগানে গোখাদ্য একেবারে নেই  পশু পাখিও নেই।
সীমিত প্রজাতির যে কোনো কৃত্রিম বাগান এবং এখনো টিকে আছে এমন
প্রাকৃতিক বনের পার্থক্য আকাশ পাতাল মধুপুরে রাবার বাগান কে একটি প্রজাতি দিয়ে। প্রায় আট হাজার একরের রাবার বাগানে এখন আর অন্য কোনও প্রজাতি নেই।শাল কপিস কেটে, মোথা তুলে এখানে রাবার বাগান  করা। হয়েছে, অভিযোগ এলাকাবাসীর শত শত দেশীয় প্রজাতির শালবনে রাবার। গাছ নিঃসন্দেহে একটি আগ্রাসী প্রজাতি। আর পরিতাপের বিষয় সরকারি এ রাবার বাগান ব্যক্তি মালিকানায় দেয়া হবে এমন কথা শোনা যাচ্ছে ২০০৪ সালে এসে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় রাবার  চাষ লাভজনক নয় এ অজুহাতে রাবার বাগান ব্যক্তি মালিকানায় দিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। যারা রাবার বাগান লিজ পাবেন তারা যে বাইরের বা এলাকার প্রভাবশালী হবেন সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।
বর্তমানে মধুপুরে সামাজিক বনায়নের নামে যে কৃত্রিম বন তৈরি করা হয়েছে। সেখানকার চিত্রও প্রজাতি বৈচিত্র্যের বিবেচনায় প্রায় একই রকম বা আরো  খারাপ। প্রথম আবর্তে যে বনায়ন সম্পন্ন হয়েছে তাতে প্রচুর ইউক্যালিপটাস ও আকাশিয়া মেনজিয়াম এবং আকাশিয়া অরিকুলায়ফরমিস লাগানো  হয়েছিলো আকাশিয়ার এ দুটি প্রজাতির মিশ্রণে আরেকটি ক্রস প্রজাতির  জন্ম হয়। হাজার। হাজার বছরের ঐতিহ্য শালবন দিনকে দিন উজাড় করে এসব বিদেশী প্রজাতি লাগানো হয়েছে। আশির দশকেও যেসব জায়গায় ছিল  শত প্রজাতির প্রাকৃতিক বন তার অধিকাংশ জায়গায় এখন গুটিকয়েক প্রজাতির কৃত্রিম বন বা কলাআনারস বাগান। কৃত্রিম বনের একটি বড় বৈশিষ্ট্য, লাগানোর বছর দশেকের মাথায় কেটে আবার একই ধরনের বনায়ন।  বাংলাদেশে সরকারি বনভূমিতে এই যে বনচর্চা ও তার প্রভাব তা বিদেশী প্রজাতির আগ্রাসনের ফল বিদেশী গুটি কয়েক প্রজাতির আগ্রাসনে আমাদের শত শত দেশীয় প্রজাতি আর বাঁচতে পারছে ,প্রকতি বিনাশী এ বনায়নের পক্ষ নিয়ে যারা বলছেন বাংলাদেশে বিদেশী প্রজাতির বৃক্ষের আক্রমণ হচ্ছে না, তাদেরই অনেকে আবার দেশীয় প্রজাতির মাছ। রক্ষার ব্যাপারে জোরালো বক্তব্য দিলেন আমেরিকান সেন্টারে গোল টেবিল। আলোচনায় তারা চমৎকার তথ্য ও যুক্তি দিয়ে  বোঝালেন  কীভাবে বিদেশী। আগ্রাসী প্রজাতির মাছ দেশীয় প্রজাতির মাছ ধ্বংস করেছে এবং কীভাবে দেশীয়। প্রজাতির মাছ আবার ফিরিয়ে আনছেন তারা। দেশীয় মাছ যেমন রক্ষা করা দরকার তেমনি দরকার শত শত প্রজাতির দেশীয় উদ্ভিদের বন রক্ষা করা
যা আমাদের দেশে এসেছে মূলত বিদেশী ঋণ ও সাহায্য নির্ভর প্রকল্পের মাধ্যমে এসব সাহায্য ও প্রকল্পের অধিকাংশ এসেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বিশ্ব ব্যাংক থেকে। আর বহুজাতিক এ ব্যাংক দুটি উৎপাদনমুখী বনায়নের সমর্থনে যা যা করার দরকার তার সবই করছে। উৎপাদনমুখী বনায়ন করতে গিয়েই বলা হয়েছে। দেশীয় প্রজাতির গাছ বাড়ে ধীরে ধীরে এবং এসবের উৎপাদন ক্ষমতা কম  বিদেশী অর্থ দাতাদের নিয়োগ করা পরামর্শকদের দেয়া উপদেশ এবং দাতাদের। নানা চাপে মাথা নুইয়ে আমাদের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং বন বিভাগ বিদেশী প্রজাতির গাছ লাগিয়েছে প্রচুর। সুন্দরবনের বাইরে দেশের সর্বত্র সরকারি বনভূমিতে বিদেশী প্রজাতি। সামাজিক’, ‘বাণিজ্যিক কৃষি বনবাগান’, ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্লান্টেশন’, ‘পাল্পউড পান্টেশন' ইত্যাদির নামে চলছে বিদেশী প্রজাতির মনোকালচার প্লান্টেশন।  গত দেড় দশকে সরকারি বনভূমিতে বিদেশী প্রজাতির আগ্রাসন ঘটেছে সব থেকে বেশি।
সরকারি বনভূমিতে বিদেশী বা আগ্রাসী প্রজাতির দাপট এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে বন নির্ভর জিনসম্পদ রক্ষার জন্য সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনের কিছু কিছু এলাকাকে জাতীয় উদ্যান', দ্বিতীয় বার সংরক্ষিত', ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংকচুয়ারী',‘গেম রিজার্ভ', ‘ইকো পার্ক' ইত্যাদি ঘোষণা করেছে সরকার।  আরণ্যক' এবংনিসর্গ' প্রকল্পের বাস্তবায়ন এসবের কয়েকটির মধ্যে সীমিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সাহায্যে (যা আসছে ইউএস এইডের মাধ্যমে; নিসর্গ বাস্তবায়ন করছে ওয়াশিংটন ভিত্তিক কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল রিসোর্সেস গ্রুপ] পরিচালিত এ দুটো উদ্যোগের মালিক বাংলাদেশ সরকার (যদিও  প্রকল্পের নিয়ন্ত্রক যুক্তরাষ্ট্রের নিয়োগ করা পরামর্শক এবং কোম্পানী) এবং এর কথিত উদ্দেশ্য বনের সর্বশেষ জিন সম্পদের সুরক্ষা। উভয় উদ্যোগের পরামর্শক এবং কর্মকর্তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করছেন যে তাদের কর্ম এলাকায় বিদেশী প্রজাতির কোনো স্থান নেই। | এখন প্রশ্ন মূল বনভূমিতে যখন বনায়নের নামে চলছে বিদেশী প্রজাতির আগ্রাসন তখনআরণ্যকনিসর্গ' কেবল দ্বিতীয়বার রক্ষিত ঘঘাষিত এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে প্রাণসম্পদের সুরক্ষা হবে তো? কারণ প্রাণসংহারী বনায়নে যারা অর্থ ও চাপ দিচ্ছে তাদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শক্তিশালী। অংশীদার।
পরিবেশ কর্মীদের কথা হচ্ছে বাংলাদেশে বিদেশী বা আগ্রাসী প্রজাতির মারাত্মক আক্রমণ ঘটেছে যা বন্ধ হওয়া দরকার সর্বাগ্রে আকাশিয়া, ইউক্যালিপটাস এবং রাবার আগ্রাসী প্রজাতি। সরকারি সংরক্ষিত বনভূমিতে এসব গাছ লাগাবার কোনো দরকার নেই, ” প্রাণবৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষয় নিয়ে  চিন্তিত পাভেল পার্থর এ মতের প্রতি অনেকেই সমর্থন দিচ্ছেন।যারা আগ্রাসী প্রজাতির সমর্থক তারা আমাদের বনভূমির নিসর্গ এবং ঐতিহ্যগত জ্ঞানের ব্যাপারে সে আগ্রহী বা সহানুভূতিশীল নন ” প্রাকৃতিক বনকে একটু সুযোগ দিলেই সে কীভাবে বেড়ে ওঠে এবং  সম্প্রসারিত হতে পারে মধুপুরসহ আরো অনেক জায়গাতে তার উদাহরণ  আছে। আরণ্যক, ও নিসর্গউদ্যোগের মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির অরণ্যে  প্রাণসম্পদ রক্ষার যে চেষ্টা  তার ভবিষ্যৎ কী তা দেখবার বিষয়। কিন্তু প্রাণসম্পদ রক্ষার এ চিন্তা কেমন দ্বিতীয়বার রক্ষিত কিছু এলাকাতে সীমাবদ্ধ না রেখে সরকারি বনভূমির সব প্রয়োগ করা দরকার বলে অনেকে মনে করেন তবে সরকারি কর্তৃপক্ষের মনে  যে এসব ভাবনা এখনো নেই সে কথা বললেন 'নিসর্গ'-এর এক কর্মকর্তা। এর অর্থ উৎপাদনমুখী বনায়নে  অর্থাৎ বিদেশী প্রজাতি দিয়ে বনায়নে (সরকারি বনভমিনে ইউক্যালিপটাস লাগানো সরকারিভাবে বন্ধ হলেও সারা দেশব্যাপী এ গাছটি ব্যক্তিগত নার্সারি ও উদ্যোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সরকারি নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি মৌলিক কোনো পরিবর্তন ঘটেনি বনখাতে এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের। বিনিয়োগ কৌশলের, বিশেষ করে সরকারি বনভূমিতে আগ্রাসী প্রজাতি নিয়ে যে  আশংকা তার আপাতত কোনো সমাধান দেখি না আমরা


Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post