ভূমি জরিপ
ভূমি জরিপের
ধারণা। জরিপ
বা সার্ভে
শব্দটির সাধারণ
অর্থ সমীক্ষা
পর্যবেক্ষণ বা
অবলোকন, বিশেষ উদ্দেশ্যে
কোন বিষয়ে
তথ্য সংগ্রহ
করাকেও জরিপ
বা সার্ভে
বলা হয়ে
থাকে । সেটেলমেন্ট
অপারেশনের ক্ষেত্রে
কোন এলাকার
সকল বা
নির্দিষ্ট ভূমি
খন্ড পরিমাপ
করে উহার
অবস্থান, আয়তন,
পরিসীমা নিরুপণ
করার কার্যক্রমকেই
জরিপ বা ।
সার্ভে বলা
হয়ে থাকে ।
অর্থাৎ জরিপ
এমন একটি
কার্যক্রম যার
মাধ্যমে নির্দিষ্ট
নিয়মনীতি অনুসরণ
করে কোন
এলাকার ভূমিখন্ড
সরেজমিনে পরিমাপ
করে এর
আয়তন, ভৌগলিক
অবস্থান নির্ণয়
করা হয়
এবং এর
দ্বারা একটি
জরিপ এলাকার
মৌজা, নক্সা
প্রস্তুত ও
নক্সার প্রতি
খন্ড ভূমির
মালিক দখলদারের
পরিচিতি, ঠিকানা,
ভূমির শ্রেণী
বিভাগ, ভূমির
পরিমাণ ইত্যাদি
উল্লেখ করে
মালিকের জন্য
খতিয়ান প্রস্তুত
করা হয়।
এই ভূমি
জরিপ আবার
সেটেলমেন্ট অপারেশন
নামেও পরিচিত।
ভুমি জরিপের
প্রকারভেদ বা
ধরণ । আমাদের
দেশে বর্তমানে
চলমান জরিপকে
দুই ভাগে
ভাগ করা
হয়ে থাকে ।
এগুলো হচ্ছে ১. সার্বিক জরিপ (মেজর সেটেলমেন্ট অপারেশন) । ২.
দিয়ারা জরিপ বা আংশিক জরিপ (মাইনর সেটেলমেন্ট অপারেশন)। সার্বিক জরিপ (মেজর । কোন
ভূমি রাজস্ব ইউনিটের সমগ্র এলাকার নক্সা ও। সেটেলমেন্ট অপারেশন)। রেকর্ড প্রস্তুত
করার জন্য যে জরিপ পরিচালনা করা ।
হয় তাকে সার্বিক জরিপ (মেজর সেটেলমেন্ট) বলা হয়। সার্বিক জরিপকে
ক্যাডাষ্ট্রাল জরিপ বলা হয় । বাংলাদেশে জেলাওয়ারী প্রথম যে সার্বিক জরিপ করা হয়
তা ক্যাডাষ্ট্ৰাল জরিপ বা (সি.এস.) জরিপ নামে
জনগণের নিকট পরিচিত। । দিয়ারা জরিপ বা আংশিক । সিকস্তি জমি
পয়ােস্তি অথবা নদী/সমুদ্র গর্ভে নতুন জরিপ (মাইনর সেটেলমেন্ট। জেগে উঠা চর জরিপ
করার জন্য যে জরিপ। অপারেশন) ।
পরিচালনা করা হয় তাকে দিয়ারা জরিপ বলা হয়। ‘দরিয়া' (নদী/সাগর)
হতে দিয়ারা শব্দের উদ্ভব । হয়েছে, দিয়ারা জরিপে সমগ্র জেলার ভূমি জরিপ করা হয়
না । শুধুমাত্র বিচ্ছিন্ন ভাবে চর এলাকা বা অন্যত্র কিছু মৌজার জরিপ করা হয়। তাই
এ জরিপকে আংশিক বা মাইনর জরিপ বলা হয় ।
ভূমি জরিপের সময় একজন ভূমি মালিকের কি কি
কাজ করা প্রয়োজন ।
১) কাগজপত্র সংরক্ষণ করা দরকার ।
২) দখল (জমির মালিকানার বৈধ কাগজ সহ জমির পরিমাণ এবং চতুর সীমানা
আইল বা সীমানা পিলার থাকা)।
৩) সর্বশেষ জরিপের মালিকানা প্রমান পত্র (সিএস, আরএস এসএ) রেকর্ড
এর
খতিয়ান ।
৪) জমির দলিল অথবা মালিকানার প্রমাণ পত্র (খতিয়ান/পর্চা/খাজনা
রশিদ/চেক
দাখিলা)।
৫) ক্রয়কৃত জমি হলে ।
৬) দলিল (দাগ নম্বর থাকতে হবে) এবং ভায়া দলিল।
৭) দাখিলা ।
৮) মিউটেশনের কপি । সম্প্রতি ক্রয়কৃত জমি হলে দলিল না থাকলে
দলিলের নকল কপি।।
১০) মিউটেশনের কপি (যে কোন বৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পত্তির ক্ষেত্রে)।
১১) উত্তরাধিকার সম্পত্তি হলে- বাটোয়ারা দলিল থাকলে ভাল হয়।
১২) অংশীদারিত্বের সনদপত্র/ওয়ারিশান সদনপত্র (স্থানীয় ইউনিয়ন
পরিষদ।
চেয়ারম্যান কর্তৃক)।
১৩) মামলায় ডিক্রী প্রাপ্ত হলে মামলার ডিক্রী নামা থাকতে হবে।
কোর্টে ডিক্রী।
প্রাপ্ত জমির ক্ষেত্রে মিউটেশন এবং হাল সনের দাখিলা থাকতে হবে।
১৪) বায়নামা দলিল (নিলাম
ক্রয়ের পর যে দলিল দেওয়া হয়) এবং মিউটেশন
কপিসহ।। ১৫) কবুলিয়ত দলিল।। ১৬) অর্পিত সম্পত্তি হলে ডিসি’র নিকট
থেকে রিলিজ অর্ডারের কপি থাকতে হবে।।
১৭) আগে থেকেই সীমানা
নির্ধারণ খুটি গারতে হবে/আইন ঠিক রাখতে হবে।
ভূমি জরিপের সময় একজন ভূমি মালিকের করণীয় ।
যেহেতু দখলের ভিত্তিতে নক্সা তৈরী করা হয়ে থাকে সেই জন্য আগে
থেকেই সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। আইল দেখিয়ে সঠিক নকশা প্রস্তুতে সহায়তা করা ।
খানাপুরী কাম বুঝারতের সময় ভূমির মালিকানা সম্পর্কিত কাগজপত্র অর্থাৎ রেকর্ডের
পর্চা, নামজারীর কাগজপত্র এবং ক্রয় সূত্রে মালিক হলে রেজিস্ট্রিকৃত। দলিল অথবা
দলিলের সার্টিফাইড কপি সম্পর্কে কোর্টের ডিক্রী থাকলে তার কপি। নিয়ে মালিক বা তার
প্রতিনিধিরা মাঠে হাজির থেকে কাগজপত্র আমিনকে দেখিয়ে সঠিকভাবে নাম রেকর্ডভূক্ত
করে নেয়া । যদি কোন জমির মালিকানা সম্পর্কে অন্য কারো সংগে বিবাদ থাকে তাহলে মাঠ। জরিপের সময় নির্ধারিত ফরম পুরণ
করে ডিসপুট (Disput) দিতে হয়।
পূর্বের রেকর্ডকৃত মালিকের মৃত্যু হয়ে থাকলে তার উত্তরাধিকারীদের
সঠিক নাম ও ঠিকানা বর্ণনা করে নতুন মালিকদের নাম রেকর্ডভূক্ত করানো । তসদিকের
সময়-সংশ্লিষ্ট জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র অর্থাৎ পূর্ববর্তী রেকর্ডের
পর্চা অথবা ক্রয়সূত্রে মালিকানা দলিল পত্র অথবা সিভিল কোর্টের রায় ও খাজনা
প্রদানের দাখিলা ইত্যাদি তসদিক অফিসারকে প্রদর্শন করে তসদিক সম্পন্ন। করে নিতে হবে
। মাঠে প্রস্তুতি রেকর্ডে কোন ভুল থাকলে, যেমন কোন বৈধ মালিকের নাম বাদ পড়ে থাকলে
বা অবৈধভাবে কারো নাম কোন খতিয়ানে লেখা হয়ে থাকলে অথবা অন্য কোন প্রকার ভুল হয়ে থাকলে তা তসদিক অফিসারকে অবহিত
করে সঠিক কাগজপত্র প্রদর্শন করে রেকর্ড ঠিক করে নিতে হবে । খসড়া প্রকাশনা বা
ডিপি-এর সময় রেকর্ড পরিদর্শন করে যদি রেকর্ডে কোন ভুলত্রুটি থাকে তবে ৩০ ধারায়
আপত্তি কেইস দাখিল করতে হবে । তসদিক বা ডিপি-র সময় ভূমি মালিককে নিজে বা নিজস্ব
বিশ্বস্ত প্রতিনিধিকে দিয়ে এ কাজ করানো উচিৎ । আপত্তি কেইসের রায় যার বিপক্ষে
যাবে তিনি ইচ্ছা করলে বিধি মোতাবেক আপিল দায়ের করতে পারেন । আপিল কেইসের সংগে আপত্তি কেইসের রায়ের সার্টিফাইড কপি দিতে
হবে । আপত্তি অথবা আপিল শুনানীর সময় দাবীর স্বপক্ষে বাদীকে । স্বাক্ষী প্রমাণ
হাজির করে দাবী প্রমাণ করতে হবে । মুদ্রিত রেকর্ড চূড়ান্ত প্রকাশনার সময় মালিক
বা তার প্রতিনিধি পুনরায় রেকর্ড দেখার সুযোগ পান । এই সময় ভূমি মালিক মুদ্রিত
খতিয়ানের কপি এবং নকশা। নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করতে পারেন। যদি মুদ্রিত রেকর্ডে
কোন জালিয়াতি, কারণিক। ভুল, গাণিতিক ভুল বা মুদ্রণ ভুল থাকে তবে এসএস
ম্যানুয়েলের ৫৩৩/৫৩৪ ধারায় তা সংশোধনের জন্য চূড়ান্ত প্রকাশনার সময় সেটেলমেন্ট
অফিসারের নিকট দরখাস্ত দেয়া যায় ।
সেটেলমেন্ট অফিসার তদন্তক্রমে উল্লেখিত কোন ভুলের প্রমাণ পেলে তিনি গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারীর পূর্বে বিধি মোতাবেক
সংশোধন করতে পারেন । রেকর্ড সংক্রান্ত কোন
ব্যাপারে কোন সমস্যা বা অসুবিধা দেখা দিলে বিষয়টি দ্রুত সহকারী সেটেলমেন্ট
অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), চার্জ অফিসার অথবা সেটেলমেন্ট অফিসারের দৃষ্টিগোচর করা উচিৎ ।
আবশ্যক হলে অভিজ্ঞ আইনবিদের পরামর্শ নেয়া
যেতে পারে । এসব ব্যাপারে পেশাদার দালাল, টাউট, বাটপার ও অসাধু লোকের প্রতারণা থেকে সাবধান হতে হবে । সময়মত মাঠে
উপস্থিত থাকা এবং মাঠের কাজ মাঠে শেষ করে নেওয়া । জরিপ চলাকালীন সময় সাধারণ জনগণ
যে ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন।
১) জমি জরিপের সময় পরিমাণ কম বা বেশী হতে পারে।
২) অন্যের নামে রেকর্ড হতে পারে । ৩) অংশীদার বাদ পড়তে পারে। ৪)
ক্রয়কৃত সম্পত্তি হলে পূর্বের মালিকের নামে রেকর্ড হয়ে যেতে পারে। ৫) এই
ক্ষেত্রে তেমন জটিল সমস্যা হবে না তসদিক পর্যায়ে দলিল দাখিল করে নিজের নামে
রেকর্ড করে নিয়া যাবে।।
জরিপ চলাকালে যে যে কারণে একজন ভূমি মালিক
সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন ।
১) মূল কাগজ/দলিল পত্র না থাকা । ২) দখলে আছে কাগজ নাই। ৩) কাগজ
আছে দখলে নাই। ৪) ব্যাংকে দলিল জমা দিয়ে ঋণ নেওয়া আছে।।
৫) মাঠ পর্চা না দিয়ে সমস্যা করতে পারে।। ৬) কোর্টে মামলা চলছে
এমন জমিতে কি রেজাল্ট হবে ? ৭) দেবত্তর, ওয়াকফ, ভিপি, খাস সম্পত্তি রেকর্ড করে
নিলে টিকবে কিনা (প্রলোভনের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে রেকর্ড করে দিতে পারে কিন্তু
সেটা।
টিকবে না)।
৮) বাবা বেঁচে থাকাকালে
ছেলে-মেয়েদের মাঝে রেকর্ড করে দিতে পারে কিনা (বাটোয়ারা দলিল ছাড়া প্রলোভনের
মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে রেকর্ড করে দিতে পারে কিন্তু সেটা টিকবে না)।।
৯) বাবা মারা যাওয়ার পরে
সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা হয়নি (সেই সম্পত্তি রেকর্ড হতে পারে।
১০) দালালরা ৩০ ধারায়/অন্য যে কোন সময় ভুয়া সীল স্বাক্ষর দিতে
পারে ।
১১) মাঠে পর্চা দিলেও মুল
ডকুমেন্টে নাও থাকতে পারে ।
১২) এক খতিয়ানে ১ দাগের জমি কিছু অংশ বিক্রি করলেও পুরোটা একই ।
নামে রেকর্ড হয়ে যেতে পারে ।
১৩) মাঠে উপস্থিত না থাকার কারনে একই প্লটে এক খতিয়ানের ২ জনের
নামের রেকর্ড হতে পারে ।
“জমির জরীপের সময় নিজে উপস্থিত থাকবো । নক্সা তৈরী ও সীমানা
নির্ধারণে সহায়তা করবো ।
Post a Comment
Please do not link comment any spam or drive spams content