বাচ্চা হবার জটিলতা।

বাচ্চা হবার সময় যে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের। পরামর্শ নেয়া দরকার। অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে, যেগুলো একটা থেকে অন্যটা আরো খারাপ হতে পারে। নিচের সবচেয়ে যেগুলো বেশী সাধারণ সমস্যা সেগুলো দেয়া হল। 

১ ব্যথা কমে যাওয়া

ব্যথা শুরু হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তবে তা সাধারণতঃ জলের। থলে ভেঙ্গে গেলে বেড়ে যেতে পারে। এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে।

যেমনঃ

(ক) মা ভীষণ ভয় পেলে বা দুঃখ পেলে। এতে ব্যথা কমে গিয়েবাচ্চা হবার গতিবেগও কমে যেতে পারে। এ রকম হলে তার সাথে কথা বলতে হবে। এবং তাকে তার জীবনের নিশ্চয়তার কথা বলতে হবে। তাকে বলতে হবে বাচ্চা হতে দেরী হলেও কোন মারাত্মক অসুবিধা হবে না। মাকে তার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে তাকে আশ্বাস দিতে হবে। তাকে প্রায়ই কিছু না কিছু খাবার খেতে দিতে হবে।

(খ) বাচ্চা হয়ত যোনিতে অস্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে পারে, ব্যথার মাঝে, মায়ের পেটে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বাচ্চার মাথা পাশের দিকে দেয়া আছে কি না। যদি এভাবে থাকে তাহলে খুবই আস্তে আস্তে টেনে বাচ্চার মাথা স্বাভাবিক। অবস্থায় নিয়ে আসতে হবে। ব্যথার মাঝে বা বিরতির সময় আস্তে বাচ্চার মাথা ঘুরাতে হবে। যাতে মাথাটা প্রসব হবার মত অবস্থায় এসে পৌঁছতে পারে। কিন্তু কোনক্রমেই জোরাজুরি করবেন না। তাহলে জরায়ু ছিড়ে যেতে পারে। বাচ্চার মাথা যদি ঘুরিয়ে আনা সম্ভব না হয় তাহলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

(গ) বাচ্চা যদি জরায়ুর মধ্যে থাকাকালীন সময়ে মুখ নিচু করা

অবস্থায় না থেকে উপরের দিকে মুখ রেখে চিৎ অবস্থায় থাকে, তাহলে এটা মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় না। এতে ব্যথা বেশী। সময় থাকতে পারে। ফলে মায়ের মেরুদণ্ডে দারুণ ব্যথা হতে পারে। মাকে শশায়া অবস্থায় এদিক ওদিক করে শুইতে হবে। তাতে বাচ্চা হয়ত স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে পারে।

(ঘ) মাঝে মাঝে বাচ্চার মাথা মায়ের বস্তিদেশের চেয়ে বড় হতে

পারে। যে মহিলাদের বস্তিদেশ ছোট তাদের জন্য এ রকম কষ্ট হতে পারে। যাদের এর পূর্বে বাচ্চা হয়েছে তাদের জন্য এমন। হওয়া সম্ভব নয়। আপনি হয়তো পরীক্ষা করে দেখে অনুভব করতে পারবেন যে বাচ্চার মাথা নিচের দিকে আছে। এসব সমস্যা দেখা দিলে বা কোন সন্দেহ থাকলে মাকে হাসপাতালে। নিয়ে যাবেন। তার হয়তো একটা অপারেশন লাগতে পারে। যে। মায়েদের বস্তিদেশ ছোট তাহাদের প্রথম বাচ্চা হবার সময়। হাসপাতালে বসে বাচ্চা প্রসব করানো ভাল।    

(ঙ) মা যদি বমি করতেই থাকে এবং যথেষ্ট পরিমাণ জল না খায় তাহলে তার শরীর শুকিয়ে যাবে।

এতে বাচ্চা হবার বেগ কমে গিয়ে বাচ্চা হওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ব্যথার মাঝে বিরতির সময় একটু একটু চিনির জল খেতে দিতে হবে।চ ) ডেলিভারী

এভাবে বাচ্চা হবার সময় বাচ্চার পা এবং পেছন দিক বা পাছা আগে। আসে। এভাবে উল্টা-পাল্টা অবস্থায় বাচ্চা পেটে থাকলে ধাই বুঝতে পারবেন। কারণ তিনি মায়ের পেটে হাত দিয়ে বুঝতে পারবেন মায়ের নাভির কাছে বাচ্চার মাথা থাকবে এবং বাচ্চার হৃদপিণ্ডের শব্দ মায়ের নাভির উপরে শোনা যাবে। যদি বাচ্চার হাত না এসে পা আগে আসে। তাহলে নীচের পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।।

(ক) আপনার হাত ভাল করে ধুয়ে নিন।

(খ) আপনার হাতের আঙ্গুল মায়ের যোনিতে আস্তে আস্তে ঢুকিয়ে।

এবং বাচ্চার কাঁধে চাপ দিয়ে মায়ের পেটের মধ্যে ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করুন। অথবা বাচ্চার হাত তার শরীরের সাথে। মিশিয়ে দিয়ে চাপ দিন।।

যদি বাচ্চার মাথা আটকে যায়, তাহলে নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করবেন ।

(১) মাকে চিৎ করে শুইয়ে রাখুন।

(২) বাচ্চার মুখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিন এবং চোয়ালে চাপ

দিয়ে বাচ্চার বুকের দিকে নিতে চেষ্টা করুন। ঐ একই সময় অন্য কারো দ্বারা মায়ের তলপেটে আস্তে আস্তে চাপ দিতে থাকুন। এ ব্যাপারে অপর পাতার ছটিটি অনুসরণ করুন।

মায়ের পেটে খুব আস্তে আস্তে চাপ দেবেন।

মাকে জোরে বেগ দিতে বলুন। কিন্তু কোনক্রমেই বাচ্চাকে ধরে টান দেবেন।

৩৷ হাত বা পা  প্রথম এলে।

যদি বাচ্চার হাত আগে আসে, তাহলে মাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এ অবস্থায় বাচ্চা প্রসবের জন্য মায়ের অপারেশন। দরকার হতে পারে।

৪। মাঝে মাঝে বাচ্চার গলায় নাড়ী আটকে যায় এবং বাচ্চা প্রসব হতে

দেরী হতে পারে। বাচ্চার গলায় জড়ানো নাড়ী খুলে ফেলতে চেষ্টা করুন। যদি খুলতে না পারেন তাহলে নাড়ীটা কেটে দু’মাথা ভাল সুতা দিয়ে বেঁধে নিন। নাড়ী কাটতে কেবল পরিষ্কার ব্লেড এবং কাঁচিই ব্যবহার করবেন।

৫। যদি বাচ্চার মুখ বা নাকে পায়খানা লেগে যায় তাহলে যা যা করণীয় তা হল :জলের থলে ভেঙ্গে গিয়ে বাচ্চা যখন আসতে থাকে তখন বাচ্চার প্রথম কাল পায়খানাও জলের মধ্যে দেখা গেলে তা বাচ্চার জন্য বিপদের কারণ। হতে পারে।

বাচ্চা যদি তখন শ্বাস নেয় তাহলে বাচ্চা মারাও যেতে পারে। বাচ্চার। মাথা দেখা গেলেই, মাকে জোরে বেগ দিতে বারন করবেন। তবে জোরে জোরে তাড়াতাড়ি শ্বাস করতে বলবেন। বাচ্চা যে মুহূর্তে শ্বাস করবে তার আগেই বাচ্চার নাক ও মুখ ভাল করে পরিষ্কার করে ফেলবেন। শ্বাস করতে শুরু করে দিলেও পরিষ্কার করা চালিয়ে যেতে থাকবেন।

৬৷ যমজ সন্তান: যমজ বাচ্চা হওয়ার মাঝে মাঝে বাচ্চা এবং মা উভয়ের জন্যই মারাত্মক হতে পারে। যমজ বাচ্চা হবার সময় অবশ্যই বাচ্চা প্রসব। ডাক্তারখানাতে করাতে হবে। যমজ বাচ্চা সাধারণতঃ ন’ মাসের আগেই হয়ে থাকে। তবে সাত মাসের সময়ই মাকে হাসপাতালের কাছাকাছি থাকতে হবে।

যমজ বাচ্চার চিহ্ন ১। স্বাভাবিকের চেয়ে মায়ের পেট তাড়াতাড়ি বেড়ে যাবে। বিশেষ করে শেষের মাসে  ২। মায়ের শরীরের ওজন স্বাভাবিক গতির চেয়ে তাড়াতাড়ি বাড়বে। ৩। মাঝে মাঝে মায়ের পেটে তিনটা বা তার বেশীও শক্ত জিনিস অনুভব করতে পারেন। যা যা অনুভব করতে পারেন তা হল বাচ্চার মাথা এবং পাছা বা নিতম্ব।। ৪। আবার মাঝে মাঝে দু'রকমের হার্টবিট শোনা যায়। এ শব্দ মায়ের বুকের শব্দ ছাড়াও বাচ্চার বুকের শব্দ। অনেক সময় বাচ্চার হৃদপিণ্ডের শব্দ শোনা কঠিন।

বাচ্চার জন্মের শেষের মাসে মা যদি বেশী বিশ্রাম নেয়, বেশী পরিশ্রম না করে তাহলে বাচ্চা হতে দেরী হতে পারে। সাধারণতঃ যমজ সন্তানেরা ছোটই হয়। তাই তাদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া দরকার যাই হোক না কেন, প্রবাদ থাকলেও যমজ বাচ্চারা যাদু জানে বলে অনেকের ধারণা। আসলে একথা একেবারে সত্য নয়।  

বাচ্চাহবার পরের ব্যায়াম।

বাচ্চা হবার পরে তিন মাস পর্যন্ত নীচের ব্যায়ামগুলো করতে শেখাবেন। প্রতিটি ব্যায়াম রোজ ছয় বার করে করবে। তারপর আস্তে আস্তে  কুড়ি বার পর্যন্ত করবে। এসব ব্যয়াম আস্তে আস্তে খুবই সাবধানে করতে হবে।

১। মাকে বিছানায় চিৎ করে শুইয়ে দেবেন। তারপর হাঁটু উঁচু করে পায়ের পাতা একস্থানে এনে রাখবেন।

শ্বাস নেয়া। (ক) বলবেন, যখন শ্বাস করবে তখন আস্তে আস্তে পেট নীচু হবে এবং যখন শ্বাস ছাড়বে তখন পেট বড় হবে।। (খ) এবারে শ্বাস করার সময় পাঁজরের ব্যায়াম হবে। অর্থাৎ পাঁজর বেড়ে যাবে। তাকে যতটা জোরে সম্ভব শ্বাস ছাড়তে বলবেন।। ২। মাকে হাঁটু বাঁকা করে শুতে বলুন। এবং পায়ের পাতা বিছানার উপরে  এক জায়গায় রাখতে বলুন। শুইয়ে কোমরের মাংসপেশী শক্ত রেখে জোরে শ্বাস নেবে। তার পেছন দিকটা বিছানার সাথে ভাল করে মিশে। - যাবে। এভাবে কয়েক সেকেণ্ড রাখতে হবে। এবং দাঁড়িয়ে দু'ভাবেই  অভ্যাস করবেন। (বিশেষ করে দাঁড়িয়ে)। ৩। মাকে চিৎ হয়ে শুয়ে আড়াআড়িভাবে পায়ের উপর পা রাখতে বলবেন।

তারপর কোমরের মাংসপেশী শক্ত করে দুই উরু পাশাপাশি রেখে চাপ। দিতে বলুন।

তারপর প্রস্রাব করা বন্ধ করতে মাংসপেশী যেমন ওঠানামা করতে হয়। তেমন করবে। এছাড়াও পেট উপরে তুলবে। কিছুক্ষণের জন্য এভাবে শক্ত করে ধরে রাখবে (খিচে রাখবে। তারপর আস্তে আস্তে ছেড়ে দিয়ে। স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে।।

৪। মা চিৎ হয়ে শুয়ে এক পা সোজা করে রাখবে এবং অন্য পায়ের হাঁটু বাঁকা করে পায়ের পাতা বিছানার উপরে রাখবেন। (ক) সোজা পা’টি তুলে কোমরের কাছ থেকে তুলে ছোট করবে। তারপর আবার সোজা করবে। এরপর একইভাবে অন্য পাও এমন ভাবে করবে।

(খ) সোজা পায়ের উপর এবারে অন্য পা, টি তুলে জোরে বিছানার সাথে চাপ দিতে থাকুন। কাঁধ বিছানার উপরে সমানভাবে বিছিয়ে। দেবে। অন্য পায়ের উপরও এমনভাবে কাজ করবে।

৫। মা বিছানার উপর চিৎ হয়ে শুয়ে দু’হাঁটু ভাজ করবে। সে তার ডান হাঁটু।বাঁকা করে নাকের কাছে আনবে এবং তার মাথা বাঁকা করে হাঁটুর কাছে নেবে। তারপর সে তার বাঁ হাঁটু ভাজ করে নাকের কাছে নেবে। শেষে তার দু’হাঁটুই বাঁকা করে ঘাড় নোয়বে। ৬। মাকে বিছানার  শেষভাগে বসে হাত পেছনে বাড়িয়ে পা দ’টো দ’দিকে ছড়িয়ে দেবে। তারপর তার উরু দুটো একত্র করে পেটে জোরে টান দিয়ে বসা অবস্থায়ই বার বার চেষ্টা করবে। কিন্তু দাঁড়াবে না। তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার এ রকম করবে।

যখন বাচ্চার বয়স ২ সপ্তাহ হবে তখন নিচের দু'ধরনের ব্যায়াম করতে।

১। পা ফাঁক করে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। তারপর ডান হাতে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙ্গুল এবং বাঁ হাতে ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুল ছুঁতে হবে। ২। ডান পা শূন্যে তুলে ডান হাত দিয়ে ছোঁবে। এবং বাঁ পা শূন্যে তুলে ।

ডান হাত দিয়ে ছুঁতে হবে।।

একটপিক প্রাগনেন্সি (Ectopic Pregnancy)।

গর্ভাবস্থায় শিশুর অস্থানে অবস্থানে। মাঝে মাঝে মায়ের গর্ভের বাচ্চা ঠিক মত জায়গায় না থেকে ডিম্বকোষের টিউবের মধ্যে বাড়তে থাকে। এ সময় মায়ের হয়ত বা গর্ভাবস্থার সব চিহ্নগুলিই ধরা পড়বে। কিন্তু এ সময় অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ। হতে থাকবে। মাঝে মাঝে তলপেটে ব্যথা থাকবে এবং জরায়ুর এক পাশের। মাংসপিণ্ডে ব্যথা থাকবে।

যে বাচ্চা ঠিকমত জায়গায় অর্থাৎ জরায়ুর মধ্যে না হয়ে অন্য জায়গায়। বাড়তে থাকে, ঐ স্থানে বেশী দিন বেঁচে থাকতে পারে না।।

একটপিক প্রাগনেন্সির বেলায় হাসপাতালে গিয়ে অপারেশন করান। ভাল। এ ধরনের অসুবিধার কোন প্রকারে সন্দেহ থাকলে তক্ষুনি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এ অবস্থায় যে কোন মুহুর্তে মারাত্মক ধরনের রক্তক্ষরণ। শুরু হতে পারে।

স্বাভাবিক গর্ভপাত

গর্ভপাত মানেই অজাত সন্তানের মৃত্যু এবং তা সাত মাসের পূর্বে পর্যন্ত। হতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসেই গর্ভপাত বেশী হয়ে থাকে। এ অবস্থায় বাচ্চা স্বাভাবিকভাবে গঠিত হয় না। তাই স্বাভাবিক কারণেই বাচ্চা মারা যায় এবং গর্ভপাত হয়।

Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post