কুচিয়া মাছের প্রজনন ও  চাষ ব্যবস্থাপনা

চিংড়ি ও কাঁকড়ার পরই রপ্তানি বাণিজ্যে কুচিয়া মাছের অবস্থান । আশির দশক হতে । বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির মাধ্যমে কুচিয়ার বৈদেশিক মুদ্রা। অর্জনের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশের জলজ পরিবেশ কুচিয়া চাষের জন্য অত্যন্ত। অনুকূল। এদেশের খাল-বিল, পুকুর, হাওর-বাঁওড়, বন্যা পাবিত অঞ্চল ও ধান। ক্ষেতে কুচিয়া পাওয়া যায় । কুচিয়া বাতাস থেকে অক্সিজেন নিতে পারে বিধায় অল্প। অক্সিজেনে বাঁচতে পারে এমনকি পানি ছাড়া ২/৩ দিন পর্যন্ত বাচতে পারে । এ কারণে অল্প পানিতে এবং অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়। বাংলাদেশে থেকে Monopterus cuchia সহ আর তিনটি প্রজাতি যেমন: বামস বা বানেহারা। (Anguilla bengalensi), 571912 (Pisodonophis cancrivorus) 97 খারু (Pisodonophis bor) কুচিয়া নামে বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। প্রতি বছর। প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে প্রচুর পরিমাণে কুচিয়া আহরণ করে চীন, জাপান, দক্ষিণ । কোরিয়া, মালয়েশিয়া, হংকং, থাইল্যান্ড, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা। হচ্ছে। বাংলাদেশ ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে কুচিয়া মাছ রপ্তানী করে ১৪,৯৭,৮০০০ ডলার আয় করে। সাপের মত দেখতে হলেও পুষ্টিমানে ভরপুর ও ঔষধি গুণাগুণ। সম্পন্ন কুচিয়া মাছের বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রাকৃতিক উৎস থেকে এর আহরণের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কুচিয়া মাছের বৈশিষ্ট্য : সাপের মত দেখতে হলেও কুচিয়া একটি মাছ । কন মাছের শরীর লম্বা বেলনাকৃতির। এদের শরীর থেকে স্নাইম নিঃসরিত হয় । শরীর পিচ্ছিল হয়ে থাকে । বিপদের সময়ে সামনে এবং পিছনে চলাচল পারে। যদিও কচিয়া মাছকে আঁইশবিহীন মনে হয় প্রকৃতপক্ষে এই মাছের কাল ক্ষুদ্রাকতির আঁইশ বিদ্যমান যার বেশীরভাগ অংশই চামড়ার নীচে সজ্জিত থাকে ।

কচিয়া আদিবাসী সমাজ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোঁষ্ঠির জনপ্রিয় সুস্বাদু খাদ্য। কুচিয়া মাকে আমিষের পরিমাণ বেশি । ভক্ষণযোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম কুচিয়া মাছে প্রায় ১৮ ৭ গড়া। প্রোটিন, ০.৮ গ্রাম চর্বি, ২.৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৪০০ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন। ১৮৫ গ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায় প্রতি ১০০ গ্রাম কুচিয়ায়। শক্তির পরিমাণ ৩০৩ কিলোক্যালরি যেখানে কার্প জাতীয় মাছে পাওয়া যায় মাত্র। ১১০ কিলোক্যালরি। উপজাতীয় সম্প্রদায়  বিশ্বাস করে যে এই মাছ খেলে শারীরিক। দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা, এজমা, রক্তক্ষরণ এবং ডায়েবেটিস ইত্যাদি রোগসমূহ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। বিভিন্ন গবেষণার প্রকাশিত প্রতিবেদনও অনেক ক্ষেত্রে। তাঁদের এই বিশ্বাসের সাথে একমত পোষণ করে। তাছাড়া আদিবাসী জনগোঁষ্ঠী। কুচিয়া ব্যাথানাশক, রক্ত উৎপাদক ও হজমশক্তি বর্ধনকারী হিসেবে খেয়ে থাকে ।

এক সময় এদেশের সর্বত্র প্রচুর পরিমাণে কুচিয়ার প্রাপ্যতা থাকলেও বর্তমানে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে এর প্রাপ্যতা আশংকাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হাতছানিতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লোভের বশবর্তী হয়ে। অতিরিক্ত  আহরণে ফলে বাংলাদেশের জলাশয় থেকে কুচিয়া মাছ আজ বিলুপ্তির  পথে । শুধুমাত্র প্রাকৃতিক উৎসের উপর নির্ভর না করে সম্পূরক খাদ্য এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োগের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে উৎপাদন করা সম্ভব হলে । বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ধারা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাসহ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে । কুচিয়া মাছের নিয়ন্ত্রিত প্রজনন কৌশল । প্রজনন মৌসুমে সাধারণত স্ত্রী কুচিয়া মাছের গায়ের রং গাঢ় হলুদ বর্ণের এবং পুরুষ কুচিয়া মাছ কালো বর্ণের হয়ে থাকে ।   

কচিয়া মাছ স্ত্রী কুচিয়া মাছের তুলনায় আকারে ছোট হয়ে থাকে । কুচিয়া মাছ বছরে একবার মাত্র প্রজনন করে থাকে। প্রকৃতিতে ২০০-৪০০ গ্রাম  ওজনের কুচিয়া মাছ। পরিপক্ক হয়ে থাকে এবং গড়ে ২৫০-৬৫০টি ডিম ধারণ করে। কুচিয়া ডিম পাড়ার জন্য পুকুরে জিগ-জাগ গর্ত করে থাকে । এপ্রিল মাসে শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাসের ১ম সপ্তাহ পর্যন্ত কুচিয়া মাছ প্রজনন কার্য সম্পাদন করে থাকে । কুঁচিয়া নিজেদের তৈরি গর্তে ডিম দেয় এবং সেখানেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এই সময় মা কুচিয়া খুব কাছে থেকে ডিম পাহাড়া দেয় এবং বাবা কুঁচিয়া আশপাশেই অবস্থান করে । ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়া থেকে শুরু করে ডিম্বথলি নি:শোষিত না হওয়া। পর্যন্ত বাচ্চাগুলোকে মা কুচিয়া শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে ।

পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতকরণ  পুকুরের আয়তন ৩-১০ শতাংশ হলে ভাল। যেহেতু কুচিয়া মাটির অনেক নীচ। পর্যন্ত গর্ত করে এক পুকুর থেকে অন্য পুকুরে চলে যায় সেহেতু নির্ধারিত পুকুরে। কুচিয়াকে রাখার জন্য পুকুরের তলদেশ এবং পাড় পাকা করা সম্ভব হলে ভাল । নাহলে গ্লাস নাইলনের নেট, রঙ্গিন বা মোটা পলিথিন দিয়ে পুকুরের তলদেশ এবং পাড় ঢেকে দিতে হবে। গ্লাস নাইলনের নেট, রঙ্গিন বা  মোটা পলিথিনের উপর। কমপক্ষে ২-৩ ফুট মাটি দিতে হবে । পুকুরের একপাশে কম্পোস্টের স্তুপ অথবা সারা পুকুরে ১ ইঞ্চি পরিমাণ  কম্পোস্ট দিতে হবে। পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে কচুরিপানা থাকতে হবে, বিশেষ করে প্রজনন মৌসুমে কচুরীপানা পুকুরের ৩/৪ ভাগের বেশী পরিমাণে থাকতে হবে। যেহেতু কুচিয়া কম গভীরতা সম্পন্ন পুকুর বা বিলে পাওয়া যায় তাই তাদের উপযোগী পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে প্রজননকালে। পানির গভীরতা সর্বোচ্চ ১ ফুট পর্যন্ত রাখা উত্তম।  ব্রুড় কুচিয়া মাছ সংগ্রহ ও পরিচর্যা। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ২৫০-৩৫০ গ্রাম ওজনের ব্রুড কুচিয়া মাছ। সংগ্রহ করতে হবে । সংগৃহিত ব্রুড কুচিয়াকে নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো জন্য হ্যাচারিতে বা পুকুরে স্থাপিত হাপায় রেখে ৫-৭ দিন পরিচর্যা করতে হবে । আহরণ পদ্ধতির জটিলতার কারণে সংগৃহিত অধিকাংশ কুচিয়ার প্রয়োগ করতে হবে । স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে প্রয়ােজনে একই হারে ২য় বার এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা যেতে পারে। সুস্থ সবল ব্রুড কুঁচিয়ার পুরুষ এবং স্ত্রী সনাক্ত করার পর ১৫০-২৫০ গ্রাম ওজনের পুরুষ কুঁচিয়া এবং ২৫০-৩৫০ গ্রাম। ওজনের স্ত্রী কুঁচিয়া মাছকে প্রস্তুতকৃত পুকুরে ১:২ অনুপাতে শতাংশে ৩০টি করে মজুদ করতে হবে ।  

মজুদকৃত কুঁচিয়া মাছকে খাদ্য হিসেবে জীবিত মাছ ও শামুক সরবরাহের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। ১০০ গ্রাম সম্পূরক খাদ্যে মাছের মন্ড (৫০%), চেওয়া মাছ থেকে তৈরি শুটকী থেকে প্রস্তুতকৃত ফিসমিল (৪০%), কুঁড়া (৫%) এবং আটা (৫%) দিতে হবে। কুঁচিয়া নিশাচর প্রাণি বিধায় প্রতিদিন সন্ধার পর নির্ধারিত ট্রেতে খাদ্য প্রয়োগ করা উত্তম।

বেবি কুঁচিয়া সংগ্রহ প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হলে মে-জুন মাসের মধ্যে ব্রুড প্রতিপালন। পুকুর থেকে পোনা সংগ্রহ করা সম্ভব । মূলত:ডিম্বথলি নি:শোষিত হওয়ার পর পোনাগুলো বাবা-মায়ের আশ্রয় ছেড়ে কচুরীপানার শিকড়ে উঠে আসে ও সেখানে। 

খাদ্যের সন্ধান করে । মে মাসের ১ম সপ্তাহে কিছু পরিমাণে কচুরীপানা উঠিয়ে পরীক্ষা। করে দেখতে হবে । পোনাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হলে  প্রাথমিকভাবে গ্লাস নাইলনের তৈরি। হাপার মাধ্যমে কচুরীপানা সংগ্রহ করে পুকুর পাড়ে বা সমতল স্থানে উঠিয়ে আনতে হবে । ১৫-২০ মিনিটের জন্য হাপার মুখ হালকাভাবে বেঁধে রাখতে হবে । অতপর হাপার বাঁধন খুলে আলতোভাবে উপর থেকে কচুরীপানা ঝেড়ে সরিয়ে ফেলতে হবে । ইতোমধ্যে জমা হওয়া পোনাগুলোকে সংগ্রহ করে প্রাথমিকভাবে হ্যাচারিতে বা পুকুরে পূর্ব থেকে স্থাপিত ফিল্টার  নেটের হাপায় মজুদ করতে হবে। যেহেতু সকল মাছ। একই সময়ে পরিপক্ক হয় না তাই মে মাসে কচুরীপানা থেকে পোনা সংগ্রহের পর পর্যাপ্ত  পরিমাণে কচুরীপানা পুনরায় দিতে হবে । ১৫ দিন অন্তর কচুরীপানা পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং একই পদ্ধতিতে পোনা সংগ্রহ করতে হবে । 

পোনা লালন-পালন ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা। কুঁচিয়ার পোনা স্টীলের ট্রে বা সিমেন্টের চৌবাচ্চায় বা পুকুরে ফিল্টার নেটের। হাপায়  লালন-পালন করা যায় । ট্রে বা চৌবাচ্চা বা হাপা আয়তাকার বা বর্গাকার। হতে পারে। সাধারণত মাছের ক্ষেত্রে ৩টি অর্থাৎ রেণু পোনা, ধানী পোনা এবং অঙ্গুলি পোনা পর্যায়ে পৃথক পৃথক ভাবে পরিচর্যা করা হয়ে থাকে । কুঁচিয়ার পোনা। ৩টি ধাপে   প্রতিপালন করতে হয়। ট্রে বা চৌবাচ্চায় বা হাপায় কুঁচিয়ার পোনা লালন-পালনের ক্ষেত্রে ওজনের ওপর ভিত্তি করে ধাপে ধাপে খাদ্য পরিবর্তন করতে হবে। কুঁচিয়া অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ পছন্দ করে বিধায় প্রতিটি ধাপে পোনা মজুদের পরপরই ঝোপালো  শিকড়যুক্ত কচুরীপানা কিছু পরিমাণে সরবরাহ করতে হবে ।  যেহেতু ১ম ও ২য় ধাপের পোনার আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে, সেহেতু কচুরীপানা। সংগ্রহ করে সহজেই পোনা নমুনায়ন করা সম্ভব । কুঁচিয়া মাছ স্বপ্রজাতিভোগি। (Cannibalistic)    প্রাণি বিধায় প্রতিটি ধাপে স্বাস্থ্য পরীক্ষাকালীন সময়ে । অপেক্ষাকৃত ছোট ও দুর্বল পোনাগুলোকে আলাদা করতে হবে ।। ১ম  ধাপ অর্থাৎ বেবি কুচিয়া/গ্লাস ঈল প্রতিপালন : ডিম্বথলি নি:শোষিত হওয়া। পোনাকে বেবি কুচিয়া বা গ্লাস ঈল বলা হয় । বেবি  কুচিয়ার গায়ের রং গাঢ় বাদামী  বা কালো বর্ণের হয়। এই পর্যায়ের পোনা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে  ৪০০- ৫০০টি কুঁচিয়ার পোনা মজুদ করা যায়। বেবি কুঁচিয়া মজুদের পর পর্যাপ্ত । পরিমাণে জুপ্লাংটন সরবরাহ করতে হবে এবং বেবি কুঁচিয়া মজুদের ২-৩ দিন পর । সম্ভব হলে রাজপুঁটি অথবা যে কোন মাছের সদ্য প্রস্ফুটিত রেণু সরবরাহ করলে ভাল  ফলাফল  পাওয়া যায় । তবে জুপ্লাংটন সরবরাহ অব্যহত রাখতে হবে । ৩-৪ দিন অন্তর পোনার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করে অপেক্ষাকৃত ছোট   পোনা গুলোকে আর করতে হবে। ২য় পর্যায়ে কুঁচিয়ার পোনা প্রতিপালন : সাধারণত: ১০-১৫টি পোনার ওজন ১ গ্রাম। হলে এই পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ১৫০-২০০টি কঁচিয়া পোনা মজুদ করা যায় এবং পোনাকে জীবিত টিউবিফেক্স সরবরাহ করতে এজন্য ট্রে বা চৌবাচ্চায় টিউবিফেক্সের বেড তৈরি করতে হবে । তবে হাপায় গেল। লালন-পালনের ক্ষেত্রে টিউবিফেক্স কুচি কুচি করে কেটে সরবরাহ করতে হবে। পাঁচ হতে সাত দিন পর পর পোনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে অপেক্ষাকৃত ছোট। পোনা গুলোকে আলাদা করতে হবে ।।    

৩য় পর্যায়ে কুঁচিয়ার পোনা প্রতিপালন : সাধারনত: ৪-৫ গ্রাম ওজনের পোনা এই। পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ৭৫-১০০টি কুঁচিয়ার পোনা মজুদ করা যায়। খাদ্য হিসেবে জলজ পোনা (হাঁস পোকা) জীবিত বা মৃত অবস্থায়।  সরবরাহ করা যেতে পারে। পাশাপশি সম্পূরক খাদ্য হিসেবে পোনার দেহ ওজনের। ১০-১৫% পর্যন্ত মাছের ভর্তা সন্ধ্যার পর সরবরাহ করলে ভাল ফলাফল পাওয়া। যায়। তবে এই সময় ট্রে বা চৌবাচ্চায় এটেল বা দোঁ-আশ মাটি দিয়ে পুকুরের ন্যায় পাড় তৈরি করে প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করলে কুঁচিয়া স্বাচ্ছন্দ পোনা করে । বাজার উপযোগী কুঁচিয়া উৎপাদনের জন্য পোনার ওজন ১৫-২০ গ্রাম হলে ব্রুড প্রতিপালনের ন্যায় একই পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত পুকুরে মজুদ করতে হবে । তবে ৪০৫০ গ্রাম   ওজনের হলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায় ।। মজুদপূর্ব কুঁচিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ উপযোগী পোনা প্রাপ্তি সম্ভব না হলে প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সনাতন পদ্ধতিতে কুঁচিয়া সংগ্রহ করা হলে আঘাতজনিত কারণে মাছের শরীরে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। সময়মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা না গ্রহণ । করলে এ ক্ষত মাছের মৃত্যুর কারণও হতে পারে ।  কুঁচিয়া সংগ্রহের পরই পাঁচ পিপিএম পটাসিয়াম পারমাঙ্গানেট দিয়ে ১ ঘন্টা গোসল করিয়ে মাছগুলোকে পর্যবেক্ষণ  হাপা/সিস্টার্ন  কমপক্ষে ৪৮ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। পরে সুস্থ, সবল । মাছগুলোকেই কেবলমাত্র মজুদ করতে হবে।। পোনা মজুদ : মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ অর্থাৎ ফারুন মাসে উৎপাদিত পোনা । / প্রকৃতি থেকে ৪০-৫০ গ্রাম ওজনের কুঁচিয়া মাছের পোনা সংগ্রহ করে ।   

মজুদপূর্ব যথাযথ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা করার পর প্রতি বর্গফুটে ১০টি হারে সুস্থ সবল পোনা সিস্টার্ন/নেট পরিবেষ্টিত পুকুরে মজুদ করতে হবে । তবে মজুদের পূর্বে সিস্টার্ন/নেট বেষ্টিত পুকুরে হেলেঞ্চা দিতে হবে ।।

খাদ্য ব্যবস্থাপনা : রাক্ষুসে স্বভাবের হলেও কুঁচিয়া সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করে । চাষকালীন পুরো সময়জুড়ে কুচিয়া মাছকে প্রতিদিন দেহ ওজনের ৩-৫% হারে। খাবার প্রয়োগ করতে হবে। মাছের আকার এবং জলবায়ুর ওপর, বিশেষত তাপমাত্রার তারতম্যের ওপর ভিত্তি করে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করা উচিত । গবেষণায় দেখা যায়, কুঁচিয়া ২০ থেকে ৩৫° সে. পর্যন্ত তাপমাত্রায় খাবার গ্রহণ। করে । তবে ২৫ থেকে ৩০° সে. তাপমাত্রায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কুঁচিয়ার সম্পূরক খাদ্য হিসেবে মাছের ভর্তা, অটো রাইসমিলের কুঁড়া, ফিশমিল ও আটা মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। খাবার অপচয় রোধে ফিডিং ট্রেতে খাবার সরবরাহ করা উত্তম। সম্পূরক খাদ্য ছাড়াও মাছের জীবিত পোনা সরবরাহ করলে ভালো উৎপাদন আশা করা যায় । নিম ছকে কুঁচিয়ার ১০০০ গ্রাম, সম্পূরক খাদ্য। তৈরির জন্য বিভিন্ন উপকরণের তালিকা দেয়া হলো :    

সারণি ১. কুঁচিয়ার ১০০০ গ্রাম সম্পূরক খাদ্যে বিভিন্ন উপকরণের পরিমাণ।

 

খাদ্যের উপকরণ

পরিমাণ (গ্রাম)

আনুমানিক মূল্য (টাকা)

মাছের ভর্তা

৫০০.০০

 

৩০.০০

 

ফিশমিল

 

৪০০.০০

 

৩২.০০

 কুঁড়া

 

৫০.০০

 

১.০০

 

 আটা

 

 

৫০.০০

 

১.৫০

 

মোট

 

 ১০০০.০০

 

৬৪.৫০

 

 

আহরণ ও উপাদান :

 মাছের ওজন ও বাজারে চাহিদার ওপর নির্ভর করে কুঁচিয়া । আহরণ করতে হবে। সঠিক ব্যবস্থাপনায় ৬-৭ মাস চাষ করলে কুঁচিয়া গড়ে ২০০২৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, সিস্টার্ন/নেট পরিবেষ্টিত পুকুরে মাছের বেঁচে থাকার হার ৯০ থেকে ৯৭% । চাষ ব্যবস্থাপনা সঠিক থাকলে শতাংশে। ৭০-৭৫ কেজি কুঁচিয়া উৎপাদিত হয়।

সারণি ২. প্রতি শতাংশ পুকুরে কুচিয়া চাষের আয়-ব্যয়ের হিসাব

। আয়-ব্যয়ের খাত

 

পরিমাণ (টাকা)

নেট তৈরি বাবদ ব্যয়

 

১,০০০.০০

পোনার মূল্য (৪০০টি, প্রতিটি ৫/-) ।

 

২,০০০.০০

খাদ্য খরচ (১৪৪ কেজি, প্রতি কেজি ৬৪.৫০ টাকা)

৯২৮৮.০০

 বিবিধ খরচ

 

 ১০০০.০০

 মোট ব্যয় = 

১৩,২৮৮.০০

কুচিয়ার বিক্রয় মূল্য (৭২.০ কেজি, ২৫০/-প্রতি কেজি)

 ১৮,০০০.০০

 প্রকৃত আয় =

৪৭১২.০০

আয়-ব্যয়ের অনুপাত =

১:০.৮৩

খাদ্য পরিবর্তন হার (FCR) =

 

২.০।

 

 কুচিয়া পোনা প্রতিপালনে সর্তকতা • ট্রে বা চৌবাচ্চায় বা হাপায় পোনা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে কচুরীপানা অল্প পরিমাণে দিতে হবে। • কচুরীপানার পরিমাণ বেশি হলে নাইট্রোজেনের আধিক্যের কারণে পোনার মৃত্যুহার বেড়ে যেতে পারে। • কচুরীপানা তুলে সহজেই পোনার নমুনায়ন করা যায়। • পুকুরে জেঁকের আক্রমণ যাতে না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ১ জোঁকের আক্রমণ হলে প্রার্দুভাবের উপর ভিত্তি করে পুকুরে পানি কমিয়ে শতাংশে ২৫০-৩৫০ গ্রাম লবণ প্রয়োগ করে ৭-৮ ঘন্টা পর পানি সরবরাহ করতে হবে ।

o টিউবিফেক্সের বেড তৈরি করে পোনা প্রতিপালন করলে সম আকারের পোনা পাওয়া যায় এবং এতে পোনার বেঁচে থাকার হারও অনেক বেশি। তবে। কোনভাবেই টিউবিফেক্সের বেডে জীবিত হাঁস পোকা সরবরাহ করা যাবে না ।

কুচিয়া চাষে সতর্কতা

হেলেঞ্চা প্রয়োগের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন হেলেঞ্চার সঙ্গে কোনো প্রকার। ক্ষতিকর পরজীবী চলে না আসে হেলেঞ্চার পরিমাণ বেশি হলে মাঝে তা কমিয়ে দিতে হবে । নতুবা নাইট্রোজেনে আধিক্যের কারণে মাছের গায়ে ফোসকা পড়ে যা পরবর্তীতে ঘায়ে পরিণত হতে  পারে। পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে, রাক্ষুসে স্বভাবের কারণে এক মাছ অন্য মাছকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

তথ্য সূত্র – বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সিটিউট ময়মনসিংহ ২২০১



Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post