বেশীর ভাগ মেয়েদের জীবনে দু’একবার গর্ভপাত ঘটে থাকে। অনেক সময় বুঝে উঠতে পারে না তাদের গর্ভপাত ঘটে গেছে। তাদের মাসিক সময়। মত না হয়ে হঠাৎ যদি অসময় রক্তখণ্ডসহ মাসিক শুরু হয় তখন হয়তো ভাবতে পারে এটা মাসিকের রক্তক্ষরণ। কিন্তু বুঝতে পারে না যে, এটা স্বাভাবিক গর্ভপাত হয়েছে। স্বাভাবিক গর্ভপাতের বিষয় প্রতিটি মহিলার ভালভাবে জানা উচিত।  যদি কোন মহিলার মাসিক দু'এক মাস বন্ধ হয়ে থাকার পরে হঠাৎ করে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়, তাহা হলে সম্ভবতঃ ধরে নিতে হবে তার গর্ভপাত হয়েছে। গর্ভপাত বাচ্চা প্রসবও ধরা যায়। কারণ অজাত শিশু এবং গর্ভফুল। উভয়েই গর্ভপাতের সময় বেরিয়ে আসে। অপূর্ণ বাচ্চা এবং গর্ভফুল বেরিয়ে আসা পর্যন্ত রক্তক্ষরণ হতেই থাকে।। 

চিকিৎসা।

বেশী রক্তক্ষরণ না হলে সাধারণতঃ বেশী সমস্যা দেখা দেয় না। এ অবস্থায় মাকে বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। এবং বাচ্চা হলে যেমনভাবে। তার যত্ন নেয়া হত ঠিক তেমনি তার যত্ন নেয়া দরকার হয়। যদি প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হতে থাকে, এবং তা বেশ কিছু দিন। চলতে থাকে তাহা হলে নিচের নিয়মগুলি মানতে চেষ্টা করবেন

১। ডাক্তারী চিকিৎসা করাবেন। জরায়ু পরিষ্কার করতে হয়তো একটা ছোট অপারেশন লাগতে পারে। এই অপারেশনকে ডি এণ্ড

সি বলে।

২। যে পর্যন্ত না প্রচুর রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় ততক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। হয়তো বা এমন বিশ্রাম দু’তিন দিনও লাগতে পারে।

৩। জ্বরের চিহ্নগুলো আছে কি না দেখনু-এবং জ্বর থাকলে জ্বরের চিকিৎসা নেয়া এবং সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।।

পরিবার পরিকল্পনা

পরিবার পরিকল্পনার মানে হল, সুপরিকল্পিত উপায়ে ছােট পরিবার। গঠন। পরিবার পরিকল্পনার পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি যখন সন্তান। চাইবেন, সে ক’টি পেতে পারবেন। বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। এর সবটাই নিরাপদ নয়। এটা জানা সব মেয়ের জন্য জরুরী, যে জন্মনিয়ন্ত্রণ গর্ভধারণের চেয়ে অনেক নিরাপদ। বিশেষ করে যে মহিলাদের। অনেক বাচ্চা আছে তাদের জন্য এ কথা বিশেষভাবে প্রযোজ্য।  গর্ভধারণের কারণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়া বা মরে যাওয়ার চেয়ে। নিচের পদ্ধতি অনুসারে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করা অনেক সহজ এবং ভাল। যখন পরিবারে অনেক ছেলেমেয়ে হয়, তখন তাদের ভাল খাবার দেয়া, কাপড়-চোপড় দেয়া এবং সুশিক্ষা দেয়া খুবই কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

যে সব পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়।

জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি (মায়া)

জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্যে এ বড়ি খাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ এবং খুবই কার্যকরী। কিছু কিছু মহিলাদের এ বড়ি খাওয়া উচিত নয়। যাদের খাওয়া উচিত নয় তারা হলেন ।

(ক) যাদের নিতম্বে/পাছায় বা একপায়ে সব সময় ব্যথা থাকে। (খ) যাদের জণ্ডিস বা লিভারের অসুখ আছে।। (গ) যাদের এরই মধ্যে ক্যান্সার হয়েছে। (ঘ) যারা হার্টের রোগে ভোগে, রক্তের উচ্চ চাপ (H/B) আছে, তাদের।।

কিভাবে ট্যাবলেট বাবড়ি খেতে হবে (২৮টা বড়ির প্যাকেট)

মাসিকের পঞ্চম দিনে প্রথম একটা বড়ি খেতে হবে। তারপর রোজ একটা ট্যাবলেট খেতে হবে।

রোজ একই সময় ট্যাবলেট খেতে হবে। ঐ প্যাকেটের আটাশটা ট্যাবলেটের মধ্যে হয়তঃ সাতটা অন্য রঙের হতে পারে। ঐ ভিন্ন  রঙের । সাতটা ট্যাবলেট শেষের দিকে খেতে হবে। খাওয়ার নিয়ম হল, আগের মত রােজ একটা করে। যখন ঐ আটাশটার প্যাকেট শেষ হবে, তখন পরের দিন অন্য নতুন এক প্যাকেট ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত বাচ্চা না চাইবে, তত দিনই প্যাকেটের পর প্যাকেট ট্যাবলেট খেয়ে যেতেই হবে। ট্যাবলেট খাওয়ার সময় বিশেষ কোন খাবার খেতে হবে না। সর্দি, কাশি, জ্বর বা অন্য কোন অসুখ হলেও এ ট্যাবলেট খেতে হবে। ট্যাবলেট খাওয়া একদিনের জন্যেও বন্ধ করলে, মা গর্ভবতী হতে পারে। যখন আপনার শেষের ট্যাবলেট ক’টা (৭টা) খেতে শুরু করবেন, তখন। মাসিক হবে। তবুও ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যাবেন।

কিছু কিছু মহিলা যখন প্রথম এই ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করে তখন, তাদের সকাল বেলা বমি হয়, স্তন একটু ফুলে ওঠে এবং গর্ভবতী হওয়ার চিহ্নগুলো দেখা দেয়। তবুও তাকে ট্যাবলেট খেয়ে যেতে হবে। এর পর ট্যাবলেট খাওয়ার দু’তিন মাস পরে এই চিহ্নগুলো দূর হয়ে যায়।।  

অনেকে বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি খেলে ক্যান্সার হতে পারে। আসলে এটা ঠিক নয়। যদি বা আগে ক্যান্সার হয়েই থাকে তাহলে এই ট্যাবলেট খেলে টিউমার বা ক্যান্সার বেড়ে যাবে। এই বড়ি খাওয়া বন্ধ করলেই মায়েরা বাচ্চা পেতে পারেন (যদি তারা চান)।

বেশীর ভাগ মায়েদের জন্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের এই ট্যাবলেট নিরাপদ। গর্ভবতী হওয়ার চেয়ে এ ট্যাবলেট খাওয়া নিশ্চয়ই নিরাপদ।

মনে রাখবেন গর্ভবতী হওয়ার চেয়ে এ ট্যাবলেট খাওয়া নিশ্চয়ই। নিরাপদ জনক।

কনডমের ব্যবহার (রাজা)

এটা পুরুষাঙ্গে ব্যবহার করতে হয়। আসলে এটা ব্যবহার করা গর্ভধারণ থেকে রেহাই পাওয়ার ভাল পথ। এটা ব্যবহারে যৌনরোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে। অর্থাৎ এর ব্যবহারের ফলে যৌন রোগ সহজে ছড়াতে পারে।   

ফোমের ব্যবহার (জয়) ।

এটা টিউব বা টিনের কৌটার মধ্যে থাকে। মহিলারা বিশেষ এক ধরনের অ্যাপ্লিকেটরের সাহায্যে ফোম যোনিতে প্রবেশ করায়।  সহবাসের এক ঘন্টার বেশী সময় আগে এটা ব্যবহার করতে নেই। এবং সহবাসের পর। ফোম স্ত্রীঅঙ্গে ছয় ঘন্টা রাখতে হবে। সহবাসের পূর্বে এভাবেই ব্যবহার করে যেতে হবে। এমন কি কোন কোন সময় একাধিকবার সহবাস করলেও ঐরূপ পদ্ধতি মানতে হবে। পুরুষের কনডম ব্যবহারের চেয়ে মহিলাদের । ফোম ব্যবহার করা আরো  নিরাপদের।।

কয়েলের ব্যবহার।

এটা একটা প্লাষ্টিকের তৈরী জিনিস, যা স্বাস্থ্য কর্মীরা মায়েদের জরায়ুতে ঠিকভাবে বসিয়ে দেবে। জরায়ুতে এটা থাকলে মা গর্ভধারণ করবে না । অবশ্য মাঝে মাঝে জরায়ু থেকে এটা বেড়িয়ে আসতে পারে। কিছু কিছু মহিলার এতে বেশ ব্যথা হতে পারে এবং মাসিকের সময় বেশী রক্তস্রাব হতে পারে। তবে কিছু মহিলার এটা ব্যবহারে কোনই অসুবিধা হয় না। এসব মহিলাদের জন্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের এটাই সহজ এবং সস্তা পদ্ধতি।

মিউকাস পদ্ধতির ব্যবহার।

অবশ্য এই পদ্ধতি তেমন বিশ্বাসযােগ্য নয়। তবুও কিছু কিছু লোকের জন্যে এটা প্রযোজ্য। মাসিকের সময় ছাড়া প্রতিদিনই মহিলাদের এটা তাদের  যোনি থেকে মিউকাস নিয়ে পরীক্ষা করতে হয়।।  তাকে যোনি থেকে কিছু মিউকাস নিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং তর্জনীর মাথা দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যদি আঙ্গুলে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে মিউকাস তৈলাক্ত বা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির মত না হয়ে পেষ্টের মত হয়েছে, তাহলে বুঝতে হবে সহবাস করলেও বাচ্চা হবে না। যদি মিউকাস কাঁচা ডিমের সাদা অংশের মত হয়ে যায়, অথবা দু’আঙ্গুলে পরীক্ষা করলে যদি পাতলা আঠার মত হয়, তাহলে মায়ের। গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ সময় তার সহবাস না করাই ভাল। সাধারণতঃ মাসিকের মাঝে বিরতির সময় মিউকাস পাতলা আঠালো। তৈলাক্ত হয়ে থাকে। তাই এ পদ্ধতি এককভাবে ব্যবহারের চেয়ে কনডম বা ফোম ব্যবহার করা ভাল।।

ইনজেকশান।

গর্ভধারণ রোধ করতে এক ধরনের বিশেষ ইনজেকশান আছে। প্রতি তিনমাস পর পর একটা ইনজেকশান দিতে হয়। যারা ট্যাবলেট খেতে ভুলে যেতে পারে বা যায়, তাদের পক্ষে ইনজেকশান নেয়াই ভাল।

স্টেরিলাইজেসন (বন্ধ্যাকরণ)।

যারা আর কোন দিনই সন্তান চায় না তাদের জন্যে (স্ত্রী বা পুরুষ) অপারেশান করাই ভাল। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে একবার অপারেশন হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার আর কখনও সন্তান ধারণ করতে পারবে না। পুরুষদের অপারেশনকে ব্যাসেকটমী বলে। পুরুষদের অণ্ডকোষের দু’পাশের। দু’টো শুক্ৰবাহী নল কেটে বেঁধে দেয়া হয়। এভাবে অপারেশনে মানুষের কর্মদক্ষতার বা সহবাসের আনন্দের কোন প্রকার ঘাটতি পড়ে না। এ রকম অপারেশন হলে সহবাসের সময় এক প্রকার তরল পদার্থ ঠিকমতই আসবে, কার্যকরি  শুক্রকীট থাকবেনা।।

মহিলাদের অপারেশনের নাম হল টিউব্যাকটমী। এতে তলপেটে ছোট্ট একটা অপারেশন করতে হয়। ওভারী বা ডিম্বাশয় থেকে যে টিউব আসে তা কেটে বেঁধে দিতে হয়। এ অপারেশনে মাসিকের বা সহবাসে কোন প্রকার । অসুবিধা হয় না। এতে তার গর্ভবতী হওয়ার আর কোন আশংকা থাকবে না।

Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post