একটি পুকুরে বা টাঙ্কে যখন খাদ্য সরবরাহ করা হয় তখন উক্ত খাদ্যের বেশিরভাগ মাছ বা চিংড়ি দ্বারা খাওয়া হয় এবং একটি অংশ ব্যাবহার হয় না  যা কিনা অবশিষ্টাংশ হিসেবে রয়ে যায় ।  এই অবস্থায় খাদ্য মাছ মল মূত্র মৃত ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রানী কনা ইত্যাদি পচে বা অ্যাম্নিফিকেশান এর মাধ্যমে পানিতে উৎপন্ন করে un-ionized ammonia এবং ionized ammonia-M; এই অ্যামোনিয়া যথেষ্ঠ পরিমাণে কার্বনের ঊপস্থিতিতে হেট্রোটোফিক ব্যাক্তেরিয়া দ্বারা ভাঙ্গন বা নাইট্রিফিকেশনের মাধ্যমে পানি এমোনিয়াযুক্ত করে । অন্য দিকে দরকারী হেট্রটোফিক ব্যাক্টেরিয়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে । এমোনিয়া ১ পিপিএম হলে এমোনিয়া -নাইট্রোজেন হয় ১.২ পি পি এম । আর এমোনিয়া ১ পিপিএম হলে কার্বন যোগ করতে হবে ১০ পিপিএম; তাই কার্বন এর উৎস বৃদ্ধি করার জন্য চিটাগুড় প্রয়োগ করতে হয় । সাধারণত চিটাগুড়ে ২৪-২৫% কার্বন থাকে । যদি পানিতে ০.১ পিপিএম আমোনিয়া থাকে তাহলে ৪ মিলিগ্রাম হারে চিটাগুড় প্রয়োগ করতে হবে । অন্য দিকে হেটেরোট্রোফিক ব্যক্টেরিয়ে বেড়ে গেলে ক্ষতিকরে এমোনিয়া আপসারণ করতে হবে । এবং বিভিন্ন প্রকারের জৈব পুষ্টিকর ব্যাক্টেরিয়া যুক্ত ফ্লক তৈরি করতে হবে । যা মাছ  চিংড়ি খাবার হিসেবে গ্রহন করে থাকে । যার ফলে ১৫-২০% খাদ্য খরচ কমে । 


বায়োফ্লকে মাছ চাষ শুরু করার আগে গুরুত্ব পূর্ণ কিছু বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন 

১ পানির উৎস বিবেচনা করে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন । 

২। ২৪ ঘন্টায় নিরবিচ্ছিন অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে তাই বিদ্যুত বা জেনারেটর অত্যন্ত প্রয়োজন । 

৩. বায়োফ্লক প্রজেক্ট করা আগে উত্তম জায়গা নির্বাচন করতে হবে । মাছ চাষের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে । 

৪। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সম্পর্কে ভালো জ্ঞাণ থাকতে হবে । ভালো মানের ও গুনগত মানের পোনার উৎস সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে ।

৫। মাছ বিক্রির কলাকৌশল ও বাজার সম্পর্কে জানতে হবে । কাজের প্রতি শ্রদ্ধা ও যন্তশীল থাকতে হবে । 

৬। দীর্ঘদিন অভিজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞদের নিকট হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত এবং পরবর্তী সকল বিষয় উক্ত বিষজ্ঞদের পরামর্শে প্রজেক্ট চালানো উচিত । 

৭। প্রজেক্ট চালানোর সম্য দক্ষ কর্মী থাকা প্রয়োজন , পানির গুণাগুন মাপার প্যারামিটার থাকতে হবে । 

৮। ছোট ও পিড়নের কারনে আঘাত প্রাপ্ত পোনা মজুত করা যাবে না । 

তরল মোলাসেস ঃ বাংলাদেশে চিটাগুড় মুলত আখের রস , গুড় , ইত্যাদির সাথে আরো কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় । ভাল গুনমান সম্পন্ন চিটাগুড় ক্রোড প্রোটিন, ক্রেডি ফাইবার, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, আয়রন ফসফরাস ইত্যাদি থাকে যা প্রাণীর দৈহিক বৃ্দ্ধি, খাবারের রুচি বৃ্দ্ধি, হাজম শক্তির জন্য খুব ভাল কাজ করে । বাংলাদেশের যে কোন গো খাদ্য বিক্রির দোকানে চিটাগুড় পাবেন এলাকা ভেদে এর নাম এবং দাম ভিন্ন হয় , চিটাগুড়, রাভ, লালি, ঝোল, গুড় ইত্যাদি সব একই জিনিসের নাম । সধারণত ৩৫-৭০ টাকা কেজি দরে দেখতে কোকাকোলার কালারের ঘন তরল চিটাগুড় বাজারে কিনতে পাওয়া যায় । 

২। ড্রাইড মোলাসেস 

ড্রাইড মোলাসেস সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানেন আবার কিছু মানুষ জানলেও এর মূল্য এবং কোয়ালিটি ব্যাপারে না জানার কারণে ব্যবহারে আগ্রহ কম । যদি উন্নত দেশের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো বড় বড় ফার্মে সধারণত ড্রাইড মোলাসেস ব্যাবহার করে । অন্য দিকে তরল মোলাসেস কালো করার জন্য অসাধু ব্যাবসায়ীরা নষ্ট আটা ময়দা পর্যন্ত ব্যবহার করে । আমাদের দেশে তরল এই সব তরল মোলাসেস ভালো মানের হয় না । 

চিটাগুড় ব্যাবহারের উপকারিতা ঃ

খাদ্যের স্বাদ গন্দ ও পুষ্টিমান বৃদ্ধি করে খাদ্য  গ্রহনের রুচি ও হজম ক্ষমতা বৃ্দ্ধি করে 

পরিপাক তন্ত্রে উন্নতি ঘটায় , প্রানীর দ্রুত ওজন বৃ্দ্ধি করে ।

 কর্মঠ প্রানীর কাজ করার শক্তি যোগায় ।

 দুর্বল প্রাণীর শরীরে দ্রুত শক্তি বৃ্দ্ধি করে ।

 পুকুরের পানিতে ব্যবহারে পানির মান ও প্রাকৃ্তিক খাদ্যের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে যায় 

 খামারে খাদ্য খরচ কম হয় । 

আধুনিক মাছ চাষে পানির গুনাগুণ ঠিক রাখতে চিটাগুড় ব্যবহার হচ্ছে মৎস্য চাষে উল্লখযোগ্য ব্যবহার রয়েছে । চিটাগুড় পানির কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিমান কমিয়ে এর পিএইচ  নিয়ন্ত্রন করে । পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বায়োফ্লকেও তেমনি চিটাগুড় মাছের খাদ্য ও ফ্লকের গুণাগুণ ঠিক রাখতে চিটাগুড় ব্যবহার করা হয় । 

চিটাগুড় সংরক্ষাণ ঃ 

চিটাগুড় মাটির সিল্ভার স্টীলের প্লাস্টীকের বা যেকোন পরিষ্কার পাত্রে বায়ুরোধী অবস্থায় সংরক্ষন করা যায় । এটি দুই বা ততোধিক বছর সংরক্ষন করা যায় । চিটাগুড় সবসময় ঠান্ডা ও শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করতে হয় । 



Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post