((( চিংড়িচাষের কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ খুবই কমে গেছে, অনেক প্রজাতির মাছ একেবারেই উধাও হয়ে গেছে ফলে স্থানীয় জনগণের মাছের চাহিদা পূরণ হচেছ না; এবং চিংড়ি খামারে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়টিক এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। চিংড়ি চাষের লাভ গুনছেন খামার মালিক, ক্ষতি গুনছেন এলাকাবাসী। আর উৎপাদিত চিংড়ি চলে যাচেছ সাগর পাড়ি দিয়ে ভোজনবিলাসীর পাতে ।))))
চকোরিয়া সুন্দরবন
যে বনে
গাছ নেই ।
চকোরিয়া সুন্দরবন
এখন নামেই
বনভূমি । বাংলাদেশের
দক্ষিণ-পূর্ব
কোণায় কক্সবাজার
জেলায় সমুদ্রের
কোল ঘেঁষে
দু'দশক আগেও যে
সুন্দরবন বা ম্যানগ্রোভ
বনভূমিটি ছিল এখন
সেখানে নিস্তরঙ্গ
লোনা পানির
চিংড়ির ঘের ।
সেই ঘন অরণ্যের নিশানা বলতে কোনো বড় গাছ আর চকোরিয়ায় নেই। লবণপানির সুন্দরবন আর বনের পরিবেশ দুইই গেছে,
আছে শুধু নামটি: চকোরিয়া সুন্দরবন । কক্সবাজার নদীবন্দর থেকে মহেশখালি চ্যানেল ধরে মাইল কুড়ি উত্তরে মাতামুহরি নদী। যেখানে মহেশখালিতে পড়েছে,
ধরতে হবে সুন্দরবন এলাকার শুরু সেখান । থেকেই । মহেশখালি চ্যানেলের পশ্চিম পাড়ে টিলার ওপর জনবসতি । নদীর দু'পাশে চোখে পড়বে হালকা পাতলা সবুজ কিছু বনের ছোপ । গাছগুলো কয়েকবছর হলে লাগানো হয়েছে ম্যানগ্রোভ উদ্ধার করার চেষ্টায়।
কিন্তু মানুষের হাতে গড়া এই কয়েক সারি গাছ সংখ্যায়ও কম, বয়সেও কম । চকোরিয়া সুন্দরবন এলাকার মূল ভূমি বৃক্ষশূন্যই পড়ে আছে ।
চকোরিয়া সুন্দরবনের উত্তর-পশ্চিমাংশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উপকূলে যেসব সাহসী মানুষ বসবাস করেন উপকূলীয় ঝড়ঝাপটা থেকে তাদের জানমাল ও গবাদিপশু কিছুটা আগলে রাখত বনভূমি। এখন সেই রক্ষাচক্র আর নেই। সে থানার শাহারবিল ইউনিয়নের রামপুর মৌজা এবং দুলহাজারা ইউনিয়নের চরটেল ও রিংবং মৌজায় এক সময় ছিল ২১ হাজার একরের চকোরিয়া সুন্দরবন না প্রজাতির বন্য প্রাণী ও পাখির কলকাকলিতে মুখরিত এক সময়কার ঘন অরণ্য এখন ইতিহাস । চকোরিয়া সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এ বনে পাওয়া যেতো কুড়ি প্রজাতির বৃক্ষ যাদের গড় উচচতা ছিল ১০ থেকে ১৫ মিটার। এদের মধ্যে কেওড়া, গেওয়া,
বাইন এবং সুন্দরী ছিল প্রধান।
চকোরিয়া সুন্দরবনে এক সময় পাওয়া যেতো প্রচুর মাছ এবং প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা চিংড়ি । সামুদ্রিক মাছ ও চিংড়ি উন্মুক্ত সমুদ্রে ডিম পাড়ে । ডিম থেকে বেরিয়ে আসা লাভ কয়েক সপ্তাহ সুন্দরবনের নদী-নালার প্লাংটন খেয়ে একটু বড় হয়ে ফিরে যায় সমুদ্রে। মিঠাপানির চিংড়ি চলে উল্টোদিকে। তার ওপর দিকে উঠে এসে ঈষৎ লোনা পানিতে জীবন-চক্র সম্পন্ন করে। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে গাছের শেকড় বাকড় এমনভাবে বিন্যস্ত থাকে যে মাছ, চিংড়ি বা অন্যান্য সরিসৃ্প জাতীয় প্রাণী সহজেই সেখানে নিরাপদ আশ্রয় পায়। উপকূলীয় অঞ্চলের স্পর্শকাতর পরিবেশ রক্ষায় এই গাছগুলোর বড় ভূমিকা থাকে।
গভীর জঙ্গল চকোরিয়া সুন্দরবনে একসময় বাঘ, হরিণ,
বনবিড়াল, বন্যশুকর,
শেয়াল, বানর,
সরিসৃপ, ইত্যাদি বন্যপ্রাণী ছিল প্রচুর। তখন সেখানকার সংগ্রামী মানুষের জীবনেও ছিল স্বাচ্ছন্দ্য।
কিন্তু এখন চকোরিয়া সুন্দরবনে পশু পাখি প্রায় চোখেই পড়ে না। দিনের। বেলাতেই খা খা করে চকোরিয়া সন্দরবন এলাকা। চারিদিকে বিরাজ করে মরুর নিস্তব্ধতা।
১৯২৯ সালে বৃটিশ সরকার চকোরিয়া সুন্দরবনেরই একাংশ বদরখালিতে জনবসতি গড়ে তোলার জন্য সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি গঠন করে ২৬২ টি ভূমিহীন পরিবারকে ৩,৯১০ একর জমি ইজারা দেয়। চকোরিয়া সুন্দরবনে মানুষ কর্তৃক বন কাটা শুরু তখন থেকেই। কিন্তু সত্তর দশকের শেষদিকে এবং আশির দশকে বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের চিংড়ি চাষ প্রকল্প চালু হবার আগে। আগে বন কাটার যে হিড়িক পড়ে তা নজিরবিহীন। চিংড়ি চাষকে উৎসাহিত করার জন্য এ দুটি ব্যাংকের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে যদিও সম্প্রতি তারা মৎস্য খাতে ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলছে। ১৯৮৫ সালে সরকার চিংড়ি চাষের উপযোগী চকোরিয়া সুন্দরবনের সকল জমি ভূমি মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। আর এভাবেই সম্পন্ন হয় চকোরিয়া সুন্দরবন বিলীন হবার সকল আয়োজন। একসময় যা ছিল সংরক্ষিত ও রক্ষিত বন তা পরিণত হয় চিংড়ি খামারে। অবশ্য রিংবং মৌজায় কয়েকশ'
একর জমি এখন বনবিভাগের ব্যবস্থাপনায় আছে । কিন্তু সেখানেও চিংড়ি চাষ হচ্ছে।
কুতুবদিয়া, মাতারবাড়ী, বদরখালী এবং চকোরিয়ায় লবণ চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়। জনবসতির সাথে সাথে এ এলাকায় শুরু হয় লবণ চাষ। সূর্যের তাপেই যে লবণ উৎপাদন সম্ভব তা এক সময় কারো জানা ছিল না । ধারণা করা হয় লবণ উৎপাদন করতে গিয়ে জ্বালানির জন্য সুন্দরবনের গাছের প্রচুর ক্ষতি করেছে মানুষ। | চকোরিয়া সুন্দরবন ধ্বংসের পেছনে সর্বশেষ এবং সবচেয়ে বড় কারণ নিঃসন্দেহে চিংড়ি চাষ । চিংড়িচাষ থেকে তাৎক্ষনিক লাভ প্রচুর। প্রথমে বন বিভাগের ব্যবস্থাপনাতেই চিংড়িচাষ শুরু হয়েছিল । চিংড়ি চাষের জন্য বিপুল অর্থ সাহায্য এসেছিল বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে। উচচ পর্যায়ে দেন দরবার করে যারা চকোরিয়া সুন্দরবনের জমি লিজ নিয়ে চিংড়ি চাষ শুরু করেন তাদের মধ্যে শহুরে ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী ব্যক্তি,
রাজনীতিক, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা,
সাংবাদিক যেমন আছেন, তেমনি আছে গ্রামীণ ব্যাংকের মত একটি প্রতিষ্ঠান।
| ১৯৭৭ সালে প্রথম স্থানীয় প্রভাবশালী গিয়াসউদ্দীনকে চকোরিয়া সুন্দরবনের ৫৬৩ একর জমি লিজ দেয়া হয় চিংড়ি খামার, হাঁসের খামার এবং এগ্রো ফিসারিজের
জন্য।
চিংড়িচাষের ফলে লাভবান হয়েছে বাইরের এলাকার মুষ্টিমেয় ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা
কোম্পানি। কিন্তু এলাকার পরিবেশ এবং স্থানীয় জনগণের অপরিসীম ক্ষতি হয়েছে চিংড়ি চাষের কারণে। ক্ষতির তালিকা দীর্ঘ । চকোরিয়া সুন্দরবন সম্পূর্ণ বিলীন হবার ফলে বদরখালির জনবসতির ওপর ঝড়ঝাপটার প্রকোপ বেড়েছে;
মানুষের আয় রোজগারের পথ কমে গেছে;
গো-মহিষাদি কমে যাওয়ায় দুধ-দধি আর সহজে
মেলে না; চিংড়িচাষের কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ খুবই কমে গেছে,
অনেক প্রজাতির মাছ একেবারেই উধাও হয়ে গেছে ফলে স্থানীয় জনগণের মাছের চাহিদা পূরণ হচেছ না;
এবং চিংড়ি খামারে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়টিক এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। চিংড়ি চাষের লাভ গুনছেন খামার মালিক,
ক্ষতি গুনছেন এলাকাবাসী। আর উৎপাদিত চিংড়ি চলে যাচেছ সাগর পাড়ি দিয়ে ভোজনবিলাসীর পাতে ।
চিংড়িচাষের ফলে এলাকার গরিব মানুষদের পেশায় এসেছে বিরাট পরিবর্তন। জানুয়ারি মাসে চিংড়ির মৌসুম শুরু হতেই হাজার হাজার নারী পুরুষ শিশু সমুদ্র সৈকতে নদীনালায় নেমে পড়ে চিংড়ির পোনা ধরার জন্য। সমুদ্র সৈকতে গড়ে ওঠা চিংড়ি হ্যাচারিগুলো থেকেও আসে পোনা । চিংড়ির পোনা ধরার কাজ পরিশ্রমের; সে তুলনায় উপার্জন সামান্যই। তাছাড়া স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও অনেক। তবে চকোরিয়া সুন্দরবন এলাকায় দরিদ্র মানুষের বিকল্প কাজ এখন খুব একটা নেই।।
এক সময় জোয়ারভাটায় স্নাত যে সুন্দরবন ছিল প্রাণবৈচিত্র্যের অনন্য আধার। সেখানে এখন আটকে রাখা লোনা পানিতে রপ্তানির জন্য চাষ করা
হয় বাগদা চিংড়ি । বিশাল বাঁধের মধ্যে শত শত ঘেরে আটকে রাখা লবণ পানিতে চিংড়ির সাথে বাড়ছে রাসায়নিক বজ্য এবং রোগ বালাই যা মাটি, মানুষ ও
প্রাণের অপূরণীয় ক্ষতি করে চলেছে ।
এদিকে চিংড়িরও স্বর্ণযুগ ফুরাচ্ছে। চিংড়ি চাষ শুরু হয়েছিল পূর্ণোদ্যমে,
মহা শান শওকতের সাথে। কিন্তু ১৯৯৪ সালে চিংড়ির মহোৎসবে নেমে এলো মহামড়ক। ব্যাপক হারে শুরু হলো চিংড়ির হোয়াইট স্পট রোগ। এ
রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেন না । রোগটির একবার আক্রমণ ঘটলে পর্যায়ক্রমে তা চলতে থাকে কয়েক বছর ধরে। যে চিংড়ি কয়েক বছর কাচা টাকা এনে দিয়েছে লিজ হোল্ডারদের পকেটে,
সেই চিংড়ি এখন বিরাট ক্ষতির ঝুকি। প্রকৃতির বহু যত্নে লালিত চকোরিয়া সুন্দরবনের মাটি নষ্ট করে। অবশেষে কী লাভ হল?
চিংড়ি চাষীরা বা
চিংড়ি চাষের উদ্যোক্তারা কী উত্তর দেবেন। আমরা জানি না কিন্তু
লোভের দাম দিতে গিয়ে চিরদিনের জন্য বিলুপ্ত হয়ে গেল চকোরিয়া সুন্দরবন।
১৯৮২ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক চিংড়িচাষকে ত্বরান্বিত ও সহজ করার লক্ষ্যে। বিনিয়ােগ শুরু করে এবং ১১ একরের শতাধিক প্লট তৈরি করে দেয়।চিংড়িচাষকে সহজ করে দেবার জন্য ১৯৮৬ সালে বিশ্বব্যাংক এবং ইউএনডিপির ২৬.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এক প্রকল্প অনুমোদিত হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থে তৈরি হয় ১০ একরের ৪৬৮ টি পুট । বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য বিভাগ চিংড়ি চাষের জন্য এক সময়কার
বনভূমির ৭,০০০ একর জমি পেয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় কাছ থেকে মৎস্য বিভাগের
ব্যবস্থাপনাধীন জমিতেই বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় | ব্যাংকের প্রকল্প কার্যকর হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য বিভাগের ব্যবস্থাপনাধীন চিংড়িচাষের সব জমিই লিজ দেয়া হয়েছে প্রধানত ব্যক্তি
মালিকানায়। এক গ্রামীন ব্যাংককেই ১০ একরের ৩০টি প্লট দেয়া হয়েছে ।
| এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে
চিংড়িচাষ প্রকল্প শেষ হয় ১৯৮৮ সালে এর বিশ্বব্যাংকের ১৯৯৩ সালে । চিংড়ির খামার
করার জন্যই ঢালাওভাবে সুন্দরবন কেটে সাফ
করা হয়। চিংড়িচাষের লাভ-ক্ষতি এবং পরিবেশের ওপর এর
প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পরস্পরবিরোধী মূল্যায়ন লক্ষ্যণীয়।
বিশ্বব্যাংকের ‘ শ্রিম্প কালচার প্রজেক্ট'-এর সমাপনী রিপোর্টে সাফ সাফ বল হয়েছে, এ প্রকল্পের ফলে পরিবেশের কোনোই ক্ষতি
হয় নি । বরং প্রকলে তৎপরতার ফলে
জলাবদ্ধতা ও অনিয়ন্ত্রিত বাঁধ কাটার মতো সমস্যাগুলো কমে গেছে বা সম্পূর্ণ দূরীভূত
হয়েছে। প্রকল্পের কারণে কোনো ম্যানগ্রোভ বন নষ্ট হয় নি ।
কিন্তু এডিবি'র আকুয়াকালচার প্রজেক্ট -এর
১৯৮৯ সালের সমাপনী রিপোর্টে স্বীকার করা
হয়েছে যে “ঈষৎ লবণ পানিতে চিংড়িচাষ করার প্রয়োজনে ৮০০ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বন কাটা হয়েছে। বাংলাদেশে যে এক লাখ
হেক্টর জমিতে চিংডিটায়। হচেছ তার একটি বিরাট অংশ ছিল ম্যানগ্রোভ । প্রকল্পের
আওতায় চকোরিয়া সুন্দরবনে ২০০ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বন কেটে ফেলায় এই এলাকায়
চিংড়ি ও মাছের পোনার প্রজনন ও লালন ক্ষেত্র নিঃসন্দেহে সংকুচিত হয়েছে।”
বিশ্বব্যাংক প্রকল্প যাঁরা বাস্তবায়ন করেছেন
তারা এবং অনেক চিংড়িচাষি বন বিনাশে তাদের
কোনো ভূমিকা ছিল একথা মানতে নারাজ। কিন্তু বনবিনাশে চিংড়িচাষই যে বড় কারণ তার কিছু প্রমাণ
মেলে ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে উপগ্রহ
থেকে নেয়া বিভিন্ন ছবিতে । উপগ্রহ থেকে নেয়া ছবি অনুসারে ১৯৭২ সালে ও চকোরিয়া সুন্দরবনের
১১.৩৯০ একর জমি বনে আচ্ছাদিত । ১৯৭৪ এবং ১৯৭৬ সালেও বন প্রায় অক্ষত । এরপর ১৯৭১
সালে বনের উত্তর পশ্চিমাংশে খানিকটা উধাও। ১৯৮১ সালে এসে বনের পরিমাণ মাত্র ৮,৬৫০
একর। ১৯৮৫ সালে বনের পরিমাণ ৪,০৭২ একর এবং ১৯৯১ সালে ১,৯৪৫ একর। অবশেষে ১৯৯৫ সালে
এসে চকোরিয়া সুন্দরবন বলা চলে একেবারেই বৃক্ষশূন্য।
চিংড়িচাষের ফলে চকোরিয়া সুন্দরবনের মাটির
বিশেষ ক্ষতি হয়েছে এমন কথা অনেকেই বলছেন। এখানকার মাটিতে এসিড সালফেটের পরিমাণ
এমনিতেই বেশি ম্যানগ্রোভ বনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মাটিতে এসিড সালফেটের পরিমাণ
বেড়ে যাওয়া রোধ করে । চকোরিয়া সুন্দরবন এলাকায় কোনো গাছ না থাকায় এসিড
সালফেটের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে দীর্ঘদিন চিংড়ি চাষের ফলে মাটিতে এসিড সালফেট এমনভাবে বেড়ে যাবে
যে সেখানে চাইলেও আর বন গড়ে তোলা যাবে না। তখন সেখানে কেবল চিংড়ি বা লবণ চাষ করতে হবে সুন্দরবন রক্ষা এবং চিংড়িচাষের জমি নিজেরা লিজ নেবার জন্য স্থানীয় জনগণ কিছু প্রতিবাদ-আবেদন করার চেষ্টা করেছিল এক সময় । কোদাল বাহিনীর আন্দোলনের কথা বলেন বদরখালির মানুষ।
চকোরিয়া সুন্দরবনের মতো উপকূলীয় এলাকার আরো অনেক জায়গার গরান বনও ধ্বংস হয়েছে। লাগানো গরান বনও ধ্বংসের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে (২০০২-২০০৪) কক্সবাজার জেলার
সোনাদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের লাগানো গরানবন কেটে সেখানে
চিংড়িচাষের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এ
কাজটি করেছেন এলাকার প্রভাবশালী। ব্যক্তিরা পেশীশক্তির জোরে। অনেকেই আশংকা করেন চিংড়িচাষের আক্রমণে গরানবন যেভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে তাতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবনও চিংড়ি চাষিদের লোভের শিকার হতে পারে । সুন্দরবনের মধ্যে যেভাবে চিংড়ির পোনা শিকার চলছে তাও আশংকাজনক। হাজার হাজার পোনা শিকারি নৌকা সুন্দরবনের একেবারে অভ্যন্তরে চলে যাচ্ছে। তারা পোনা ধরার । পাশাপাশি সুন্দরবনে প্রচুর গাছও কেটে ফেলে এসবই চলছে বন বিভাগের সামনে। তাছাড়া সুন্দরবন এখন মারাত্মকভাবে রুগ্ন এবং বিজ্ঞানীদের আন্দাজ। গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা আবহাওয়ার পরিবর্তন এর একটি কারণ।
এক হিসাব মতে সুন্দরবনের চল্লিশ শতাংশ গাছ ‘আগামরা রোগে' আক্রান্ত। এ রোগের ফলে গাছের মাথায় পচন ধরে নিচের দিকে নামতে থাকে এবং ধীরে ধীরে গাছটি মরে যায় (আইপিএস ১৯৯৭)। প্রাকৃতিক এসব
দুর্যোগের বাইরে অবৈধভাবে বৃক্ষ নিধন, চিংড়িচাষের চাপ এবং বন্যপ্রাণী শিকার এসব কারণে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও অনন্য পরিবেশের সুন্দরবন। আজ মারাত্মক হুমকির মুখে। সুন্দরবনকে যদি টিকিয়ে রাখা না যায় তবে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক। বনের আর
তেমন কিছুই অবশিষ্ট থাকে না
।। সুন্দরবনকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করেছে এ বনকে বাঁচানোর জন্য নানা প্রকল্প - পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বনের উপর চাপ। কমছে না বলেই বিভিন্ন রিপোর্টে আভাস পাওয়া যায় ।
Post a Comment
Please do not link comment any spam or drive spams content