ওমিক্রন পৌঁছেছে ২০ দেশে, ইউরোপে ছিল শনাক্ত হওয়ার আগেই

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন এই ধরনটি পাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর অনেক দেশ নতুন করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও কড়াকড়ি আরোপ করছে। তারপরও অন্তত ২০টি দেশে ওমিক্রন পৌঁছে গেছে বলে খবর দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ওমিক্রন’ এর বিস্তারের ফলে মহামারীর আরেকটি ঢেউ আসন্ন কি না- সেই শঙ্কা জাগতে শুরু করেছে।

নেদারল্যান্ডসের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট’ বলছে, তাদের দেশে গত ১৯ এবং ২৩ নভেম্বর সংগ্রহ করা নমুনাতেও ‘ওমিক্রন’ পাওয়া গেছে।

দেশটির চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুইজনের দেহে নতুন এই ধরনটি শনাক্ত হওয়ার পর সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি দেখা করেছেন এমন ব্যক্তিদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘ওমিক্রন’ এর সংক্রমণ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দ্রতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি তিনশর ঘরে থাকা দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে তিন হাজারের ঘরে উঠেছে।

গত শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নেদারল্যান্ডসে আসা দুটি ফ্লাইটে ৬১ যাত্রীর নমুনা পরীক্ষার ফল ‘পজিটিভ’ পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে অন্তত ১৪ জনের সংক্রমণের কারণ ছিল ‘ওমিক্রন’।

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমস্টার্ডামে পৌঁছানো দুটি ফ্লাইটে ১৪ জনের দেহে ‘ওমিক্রন’ ধরনটি শনাক্ত হওয়ার পর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিমানবন্দরে সব যাত্রীদের নমুনা পরীক্ষা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পরীক্ষায় প্রতি ১০ জনে একজন ব্যক্তির করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তাদের দেহে করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ধরন পাওয়া গেছে বলে ডাচ জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট জানায়।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ওই যাত্রীরা সম্ভবত ‘একে অন্যের মাধ্যমে’ সংক্রমিত হয়েছে এবং সেটা বিভিন্ন স্থান এবং বিভিন্ন উৎস থেকে হতে পারে।

মঙ্গলবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ‘ওমিক্রন’ সংক্রমিত কেউ চিহ্নিত না হলেও কানাডায় শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ব্রাজিলেও নতুন এই ধরনটির সংক্রমণের খবর এসেছে দেশটির গণমাধ্যমে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, এন্টার্কটিকা ছাড়া সব মহাদেশেই দ্রুত ‘ওমিক্রন’ পৌঁছে যেতে পারে বলে গবেষকদের ধারণা।

গত ১১ নভেম্বর বতসোয়ানায় প্রথম করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটি শনাক্ত হয় এবং কয়েক দিনের মধ্যে পাওয়া যায় পাশের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায়।

দেশটির বিজ্ঞানীরা এর জিনোম সিকোয়েন্সিং করে দুই সপ্তাহ পর ‘ওমিক্রন’ এর উপস্থিতির কথা ঘোষণা করেন। সম্ভবত গত ৯ নভেম্ববরের কিছু নমুনায় প্রথম ওই ধরনটি পাওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরনো নমুনাগুলো পরীক্ষা করলে আরও আগে থেকেই হয়তো এর বিস্তারের প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। 

ইউরোপের দেশগুলোতে ‘ওমিক্রন’ শনাক্তের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত একশর নিচে থাকলেও চিকিৎসা কর্মকর্তারা নতুন করে আরও সংক্রমণের তথ্য পাচ্ছেন।

‘ওমিক্রন’ এর ঝুঁকি ‘অনেক বেশি’ জানানোর একদিন পর গত মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকা নেননি এমন ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি এবং অসুস্থ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন এমন ব্যক্তিদের ‘ভ্রমণ স্থগিত করার পরামর্শ’ দিয়েছে।

এটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এমনটা হতে পারে, ইউরোপের অন্যান্য দেশেও এমন দেখা যাচ্ছে। আমরা শনাক্ত করতে তৎপরতা চালাচ্ছি, এটা বাড়তে পারে।”     

ইউরোপের দেশগুলোতে প্রতি সপ্তাহে নতুন করে ২০ লাখ লোকের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে, যা একই সময়ে সারা বিশ্বে মোট শনাক্ত সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি।

গত সপ্তাহে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, হাঙ্গেরি, চেক রিপাবলিক, স্লোভাকিয়া, ডেনমার্ক এবং নরওয়েতে সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। নভেম্বরের শুরুতে আরও কিছু দেশেও নতুন করে সংক্রমণ বেড়েছে।



Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post