Shane Warne: ৫২ বছরেই কেন হার্ট অ্যাটাক? বেশি মেদ ঝরাতে গিয়েই কি বিপদ ডাকলেন অজি স্পিনার



কিংবদন্তী অজি লেগস্পিনার শেন ওয়ার্নের (Shane Warne) আকস্মিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ ক্রিকেটমহল। তাঁর মৃত্যুর কারণ বলা হচ্ছে ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ (Heart Attacks)। মাত্র ৫২ বছরেই কেন হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন ওয়ার্ন তার নানা কারণ উঠে আসছে (Shane Warne death)। নিজের ভিলায় অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় শেন ওয়ার্নকে। তড়িঘড়ি চিকিৎসা করিয়েও লাভ হয়নি। ক্রিকেটারকে বাঁচাতে পারেননি অভিজ্ঞ ডাক্তারেরাও। কিন্তু কেন ৪০ থেকে ৫০ বছরেই হার্ট অ্যাটাক (Heart Attacks) হানা দিচ্ছে? সম্প্রতি বলিউডেরও বেশ কয়েকজন অভিনেতা মাত্র চল্লিশেই চলে গেছেন হৃদরোগে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন এর কারণ অনেক।

প্রথমত শেন ওয়ার্নের (Shane Warne) মৃত্যুর কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে তাঁর সেডেন্টারি লাইফস্টাইলকে। অসংযমী জীবন, মদ্যপান-ধূমপান, মেদবাহুল্য এবং হঠাৎ করেই অতিরিক্ত এক্সারসাইজ করে মেদ কমানোর প্রচেষ্টা। দ্রুত ওজন ঝরাতে গিয়েই কি বিপদ ডেকে আনলেন অজি স্পিনার? সেই সম্ভাবনাই প্রবল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

READ MORE: হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় হাঁটাচলা

কিছুদিন আগেই টুইটারে একটি পোস্ট করে ওয়ার্ন লিখেছিলেন তিনি আবার পুরনো অবস্থায় ফিরে যেতে চান। নিজের পেশিবহুল শরীরের ছবিও দিয়েছিলেন। জানা গিয়েছিল, এক ধাক্কায় ১৫ কেজি ওজন ঝরিয়েছেন ওয়ার্ন। সেই থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে বলেই মত চিকিৎসকদের একাংশের। অতিরিক্ত এক্সারসাইজ, কার্ডিও মারাত্মক চাপ ফেলেছে হৃদযন্ত্রের ওপরে। তারই ফল ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। তাছাড়া আরও কারণ থাকতে পারে।

হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack) কী?

হার্টের আর্টারি বা ধমনীতে প্লাঙ্ক বা চর্বি জমে সরু হয়ে গেলে সেখানে রক্ত সঞ্চালন আর স্বাভাবিক থাকে না, রক্ত জমাট বাঁধে বা রক্তের ক্লট তৈরি হয়। এর ফলে আর্টারিতে রক্ত সঞ্চালন পুরোপুরি বা বেশিরভাগটাই বন্ধ হয়ে যায়। আর তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়।

আরও পড়ুন: Shane Warne: যতদিন ক্রিকেট থাকবে, ততদিন বেঁচে থাকবে গ্যাটিংকে করা শতাব্দীর সেরা বোলিং

৫২-তেই মৃত্যু শেন ওয়ার্নের (Shane Warne), হার্ট অ্যাটাকের বয়স কমছে

পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বজুড়ে হৃদরোগের সংখ্যা যত বাড়ছে, তেমনি তার বয়সও কমছে। চল্লিশের আগে, এমনকি ৩০ বছর বয়সেও কোনও রোগ-অসুখ ছাড়া হার্ট অ্যাটাক এখন আর মোটেও বিরল নয়। শুধু তাই নয়, এই বিপদটা ক্রমবর্ধমান। আজকের ছোটরা আগামী প্রজন্মে পৌঁছে অনেক বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত হতে পারে হৃদরোগে। আগে  সারা বিশ্বে যেখানে হৃদরোগ শুরু হওয়ার গড় বয়স ছিল ৬৫, এখন এই বয়সটা নেমে এসেছে চল্লিশে।



বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে মনে করা হত বয়স্করাই বুঝি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিটা অন্য। হার্টের যে কোনও অসুখ হানা দিতে পারে যে কোনও বয়সে। মোদ্দা কথা, হৃদরোগ বয়স বাছবিছার করে আসে না। কোনও মানুষ যখন জন্মায়, ঠিক সেই মুহূর্ত থেকে তার হার্ট কাজ করতে শুরু করে। বলা ভাল, তারও আগে থেকে কাজ করতে শুরু করে। সেই যে শুরু, শরীরের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই অঙ্গের বিশ্রাম নেই। শরীরের অন্য সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই কোনও না কোনও সময় থামে, রেস্ট পায়, সে ঘুমের সময় হোক বা বিশ্রামের সময়। কিন্তু হার্টের ছুটি নেই। তাই এই নিরন্তর ছুটে চলা অঙ্গটিও ততটাই গুরুত্ব দাবি করে।

মেদবাহুল্য, নেশার প্রবণতা, অংসযমী জীবন হার্ট অ্যাটাককে নিমন্ত্রণ করে আনে

এই ব্যস্ততার সময় লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্টকে বাতিলের খাতাতেই রেখেছি আমরা। সঠিক সময়ে খাওয়া দাওয়ার বালাই নেই, শরীরচর্চা মানেই একরাশ আলস্য। মানসিক চাপ কমাতে সিগারেটে টান। অ্যালকোহলে আসক্তি। সব মিলিয়ে ওজন বাড়ছে হুড়হুড়িয়ে। রক্তে লাগামছাড়া ট্রাইগ্লিসারাইড। ব্লাড সুগার সপ্তমে, ইউরিক অ্যাসিডও বাড়ছে। সেই সঙ্গে উদ্বেগ, উচ্চ রক্তচাপ তো আছেই। এক কথায় শরীরজুড়েই নানা রোগ, নিত্যদিন অসুস্থতা। রোজকার জীবনযাপনের এই রোগগুলোই যখন জোট বেঁধে বড় আকার নেয়, তখন তাকে বলে মেটাবলিক সিনড্রোম। যার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে হার্টে।

READ MORE: অ্যান্টি-এজিং ক্রিম নয়, তারুণ্যের চাবি কোলাজেন লুকিয়ে খাওয়ার টেবিলেই

অতিরিক্ত মেদ বা ওবেসিটি শরীরে বড় ধরনের রোগ ডেকে আনে। মেদ কমানোর নানা উপায আছে যা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনেই করতে হয়। হঠাৎ করেই দিনরাত শরীরচর্চা শুরু করলে এবং কমদিনে মেদ ঝরানোর চেষ্টা করলে তা বিপত্তি ডেকে আনে। হৃদপেশীর ওপর ভয়ঙ্কর চাপ পড়ে। শরীরের কোষগুলিতে যে পরিমাণ অক্সিজেন দরকার তার ভারসাম্য বিগড়ে যায়। ফলে কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া হতে পারে যার পরিণতি হৃদস্পন্দন থেমে গিয়ে মৃত্যু।  শেন ওয়ার্নের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছিল বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

অতিরিক্ত নেশার প্রবণতাও হৃদরোগের কারণ হতে পারে। লাগাতার ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান বিপদ ডেকে আনে।

লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট জরুরি

নিয়মিত শরীরচর্চা ও সঠিক ডায়েট সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত চিনি ও লুকনো ট্রান্স ফ্যাট মেদ জমায়। আজকাল প্যাকেটজাত প্রসেসড মিট খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। প্রসেসড মিট বেশি খেলে পাকস্থলিতে কিছু ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া দ্রুত গতিতে বাড়তে শুরু করে৷ যা মাংসের কারনিটিন নামের উপাদান ভেঙে গিয়ে ট্রাইমিথাইল্যামিন যৌগে পরিণত হয়। রক্তে শোষিত হয়ে, লিভারের বিপাক ক্রিয়ায় ভেঙে ট্রাইমিথাইল্যামিন-এন-অক্সাইডে পরিণত হয় যা হার্টের সূক্ষ্ম রক্তনালিতে চর্বি জমিয়ে ইসকিমিক হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

READ MORE: Zydus Cadila Anemia: কিডনির অসুখে ভোগা রোগীদের রক্তাল্পতা সারাতে ওরাল থেরাপি আনছে জাইদাস ক্যাডিলা

কমবয়সীরা সব সময়েই জাঙ্ক ফুড বা তেলমশলাদার খাবার পছন্দ করেন। ফলে বিপদ আসে চুপিসাড়েই। সব রকম খাবারই রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। তাতে যেমন প্রোটিন থাকবে, তেমনই ফ্যাট ও শর্করাও। সবই রাখতে হবে পরিমাণ মতো। সে ক্ষেত্রে ফ্যাট নিতে হবে প্রয়োজনীয় মাছ-মাংস বা রান্নায় যেটুকু তেল লাগছে তা থেকেই। বাড়তি ফ্যাটযুক্ত খাবার তালিকায় না রাখাই ভাল। আর অ্যালকোহলের নেশা ত্যাগ করাই শ্রেয়।

Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post