শামুক ঝিনুকের চাষ

অমেরুদন্ডী প্রাণিদের শ্রেণিবিন্যাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে মলাস্কা গ্রুপের মধ্যে তিনটি শ্রেণি আছে যা গ্যাস্ট্রোপোড (শামুক), বাই-ভালভিয়া (স্ক্যালপ, ক্লাম, ঝিনুক, ওয়েস্টার) এবং সেফালোপোড (অক্টোপাস) গ্রুপ নামে পরিচিত ।  মিঠাপানিতে অল্প পরিমাণে হলেও অধিকাংশ মলাস্কা পাওয়া যায় সামুদ্রিক উৎস থেকে। এরা যেমন বৈচিত্র্যপূর্ণ তেমনি জীববৈচিত্র, খাদ্য বা কীট হিসেবে। অর্থনৈতিকভাবেও গুরুতুপর্ণ। মলাস্কে প্রচুর পরিমাণে গ্লাইকোজেন, লিপিড, প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি এবং ডি এর উপস্থিতি ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের অপরিহার্য। খনিজ পদার্থ রয়েছে। অপর দিকে মলাস্কের   খোলসে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম কার্বনেট যা সার বা চুন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি ঘরের শোভাবর্ধনে। ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন- জাপান, থাইল্যান্ড, মালেয়শিয়া, কম্বডিয়া, চীন, ভিয়েতনাম এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে শামুক, ঝিনুক ও ওয়েস্টার খাবার হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশে শুধুমাত্র আদিবাসী জনগোঁষ্ঠী ছাড়া এ সকল খাবারে কেউই তেমন অভ্যস্ত নয়। বাংলাদেশের  উপকূলীয় অঞ্চল শামুক, ঝিনুক ও ওয়েস্টার চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন- মাছের খাবার, চিংড়ির খাবার, হাঁস মুরগীর খাবার এবং  সার ও চুন তৈরিতে ঝিনুক ও শামুক ব্যবহার করা হয়। শামুক, ঝিনুক ও ওয়েস্টার এর মাংসল অংশ প্রোটিনের এক অনন্য উৎস। এছাড়া বাংলাদেশে  প্রাপ্ত বেশ কিছু প্রজাতির ঝিনুক ও ওয়েস্টারে। মুক্তা পাওয়া যায় এবং প্রণোদিত উপায়ে মুক্তা উৎপাদনও করা যায় । দেশীয় বাজারে বিভিন্ন কাজে  চাহিদা থাকলেও বিদেশে রপ্তানির কোন তথ্য এখনও পরিলক্ষিত হয়নি। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশে এই পর্যন্ত ৩৬২ প্রজাতির । মলাস্ক সনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৩৬টি প্রজাতি পাওয়া যায় সমুদ্রে এবং ২৬টি প্রজাতি পাওয়া যায় মিঠাপানিতে। বাংলাদেশে প্রাপ্য মলাস্কের মধ্যে শামুক, ঝিনুক ও ওয়েস্টার অন্যতম । কালের পরিক্রমায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও যত্রতত্র মানুষের। বিচরণ বেড়ে যাওয়ায় অনেক জলজ প্রাণিই আজ বিলুপ্তির পথে। শামুক, ঝিনুক ও ওয়েস্টার বিলুপ্ত না হলেও এদের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমে গিয়েছে। শামুক ও ঝিনুকের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। প্রাকৃতিক উৎস হতে আহরণ নিয়ন্ত্রণ এবং শামুক ও ঝিনুকের চাষ ব্যবস্থাপনা কৌশল উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে। বিদেশে রপ্তানি করার মাধ্যমে এ সম্পদ হতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব । বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে শামুক, ঝিনুক ও ওয়েস্টার  এর। চাষ ব্যবস্থাপনা ও পোনা উৎপাদনের উপর গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছে। বাংলাদেশে শামুক, ঝিনুক ও ওয়েস্টার এর ব্যবহার।


মানুষের খাদ্য  হিসেবে : বাংলাদেশে মূলত বিভিন্ন আদিবাসী জনগোঁষ্ঠী শামুক, ঝিনুক ও ওয়েস্টার খেয়ে থাকে। তবে ঢাকা ছাড়াও অন্যান্য উপকূলীয় শহরগুলো।  যেমন খুলনা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টেও বিদেশী ও দেশী পর্যটকদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। চিংড়ি হ্যাচারি, প্রোল্টি ও ফিশ  ফিড ইন্ডাস্ট্রীতে । শামুক ঝিনুক ও ওয়েস্টার এর । খোলস থেকে মাংস বের করে মা চিংড়িকে খেতে দেয়া হয়। এদের খোলস শুকিয়ে। গুড়া   করে ক্যালসিয়াম এর উৎস হিসেবেও ফিড এর সাথে মিশ্রিত করা হয়। এদের মাংসল অংশ প্রোটিনের এক অনন্য উৎস হওয়ায় ফিড তৈরিতে মাছের পরিবর্তে এই অংশ ব্যবহার করা যায়। চুন, অলংকার ও শো-পিস তৈরিতে : চুন তৈরিতে প্রচুর পরিমাণে শামুক, ঝিনুক ও । ওয়েস্টার এর খোলস ব্যবহার করা হয়। শামুক, ঝিনুক ও ওয়েস্টার দিয়ে বিভিন্ন । রকমের অলংকার তৈরি করা হয়। বিশেষ করে কক্সবাজার অঞ্চলে এর খুব চাহিদা। রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন শো-পিস যেমন খোলসে নাম, ফুল, ফল বা নকশা একে । অথবা খোদাই করে তৈরি করা হয়। চাষ ব্যবস্থাপনা ও পোনা  উৎপাদন। খাবার হিসেবে শামুক, ঝিনুক ও ওয়েস্টার বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তার কারণ হলো। এতে প্রোটিন, আয়রন, স্বল্প চর্বি এবং মানুষের জন্য  প্রয়োজনীয় সকল প্রকার অ্যামাইনো এসিড এর উপস্থিতি। প্রকৃতি থেকে আহরণ করায় দিন দিন এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাহিদা বৃদ্ধির দরুন বিভিন্ন দেশে চাষ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেছে। বাংলাদেশের মাটি ও পানির গুণাগুণ শামুক, ঝিনুক ও ওয়েস্টার চাষ উপযোগী হওয়ায় এগুলো চাষ করার মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি কতে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব।   

শামুক চাষ। পুকুর প্রস্তুতকরণ : শামুক চাষের জন্য প্রাথমিক বিষয় হল জায়গা নির্বাচন। এমন একটি স্থান বা জায়গা চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছ আছে যা শামুকের খাদ্য ও আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করবে । মাছ চাষ ব্যবস্থাপনার মতই পুকুরের তলদেশ শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুরে যদি কোন পোকা বা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থেকে থাকে তবে পুকুর ভালোভাবে শুকিয়ে সার ও চুন প্রয়োগ করতে হবে। তবে শামুকের জন্য সহজে গুরিয়ে যায় এমন মাটি এবং মাটির। পিএইচ ৫.৮ থেকে ৭.৫ এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হলে ভালো হয়। অধিক কাঁদাযুক্ত মাটিতে এদের ডিম পাড়তে এবং চলাচল করতে অসুবিধা হয়। গাছ এবং মাটি আর্দ্র থাকলে এদের চলাচল করতে খুব সহজ হয় এবং পাতা খেয়ে এরা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে তাই পরিবেশ আর্দ্র হলে এদের জন্য ভালো হয়।মজুদকরণ : বিভিন্ন নদী, খাল-বিল, পুকুর বা ডোবা থেকে সংগ্রহ করে প্রস্তুতকৃত  পুকুরে প্রতি শতাংশে প্রায় ২৫০ গ্রাম শামুকের পোনা মজুদ করতে হবে । শামুকের বৃদ্ধির জন্য পুকুরে কম্পোস্ট, পাতা, ফুল এবং ফল খাবার হিসেবে দেয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই তা সমস্ত পুকুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে।। প্রজনন ও ডিম উৎপাদন : শামুক দুই ধরণের লিঙ্গ ধারণ করে  বিধায়  প্রজনন এর সময় প্রয়োজন মত লিঙ্গ পরিবর্তন করে প্রজননে অংশ গ্রহন করে। সাধারণত এরা। বসন্তের শেষে এবং গ্রীস্মের শুরুতে প্রজনন করে থাকে। প্রজননের পর ডিম পাড়ে। তবে যেখানে ডিম পাড়বে সেই জায়গাটি অবশ্যই কমপক্ষে ২ ইঞ্চি উচ্চতা সম্পন্ন। মাটি হতে হবে এবং সেই জায়গায় কোন প্রকার পিপড়া বা অন্য কোন পোকামাকড় থাকলে তা অবশ্যই সরিয়ে ফেলতে হবে নয়ত ডিম খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। মাটির তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং অন্যান্য গুণাগুণের উপর ডিম পাড়া নির্ভরশীল । ডিম  পাড়ার পর শামুকের শরীরের ওজন কমে যায় ফলে দূর্বল হয়ে মারা যেতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে খাবার দিতে হবে। শামুককে সংক্রামক রোগ মুক্ত রাখতে। হলে অবশ্যই প্রতিদিনের দেয়া খাবার পরিস্কার করতে হবে। নয়ত খুব সহজেই। শামুক রোগাক্রান্ত হয়ে পড়বে। চাষকৃত শামুক ৬-৭ মাস পর পুকুর থেকে সংগ্রহ । করা যায় ।

বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে শামুক সংগ্রহ করা যায় ।

 * লোহা বা প্লাষ্টিক পাইপের মাধ্যমে  *বাশের খুটির মাধ্যমে।  ও জাল টানার মাধ্যমে  তাল পাতা ব্যবহার করে ।

ঝিনুক চাষ ব্যবস্থাপনা শামুকের ন্যায় ঝিনুকও এদেশের সাধারণ মানুষের জন্য প্রচলিত খাবার নয়। তাই। ঝিনুক চাষ এর প্রচলন নেই। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ঝিনুকেরও বেশ চাহিদা। রয়েছে। এটিকে চাষ করার মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব ।। পুকুর প্রস্তুতি : মাছ চাষের জন্য পুকুর যেভাবে প্রস্তুত করা হয় ঠিক তেমন করেই ঝিনুক চাষের পুকুর প্রস্তুত করা বাঞ্ছনীয়। পুকুরের তলদেশের মাটি অবশ্যই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হতে হবে, তাহলে ঝিনুকের বৃদ্ধি দ্রুত পাবে। পুকুরে পানি থাকলে পুকুরের তলদেশ ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর পুকুরে চুন দিয়ে। তার ২-৩ দিন পর  পুকুরে পানি দিতে হবে । পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রতি শতকে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ১২৫ গ্রাম টিএসপি এবং ৫ কেজি হারে জৈব সার ১৫ দিন অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। মজুদকরণ : প্রকৃতি থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করে পুকুরে প্রতি শতকে ২৫০টি করে মজুদ করা হয়। এরা মূলত প্লাঙ্কটন খায় তাই পুকুরে যেন প্রাকৃতিক ভাবে প্রাঙ্কটন বেড়ে উঠে সেজন্য পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার প্রয়োগ করা হয়। ফুলকার মাধ্যমে। এরা পানিতে বিদ্যমান ফাইটোপ্লাঙ্কটন ও জুপ্লাঙ্কটন ঘেঁকে খায়। যেহেতু ঝিনুকের। জীবনচক্র সম্পূর্ণ করতে অবশ্যই পোষক হিসেবে মাছের প্রয়োজন সেহেতু প্রতি। শতাংশে ৫০ টি করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ যেমন: বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছ, পাবদা, গুলসা, শিং, টাকি ইত্যাদি পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।

প্রজনন : ঝিনুকের ক্ষেত্রেও বাইরে থেকে পুরুষ বা স্ত্রী ঝিনুক চিহ্নিত করা সম্ভব। নয়। তবে প্রজনন মৌসুমে এরা প্রজনন করে একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে। পুরুষ ঝিনুকটি সাইফনিং পদ্ধতিতে স্পার্ম পানিতে ছেড়ে দেয় এবং স্ত্রী ঝিনুক একই প্রক্রিয়ায় । মাধ্যমে তার খোলসের ভিতর প্রবেশ করায় নিষেক প্রক্রিয়া স্ত্রী ঝিনুকের দেহে হয়ে থাকে। স্ত্রী ঝিনুকটি লার্ভা হওয়া পর্যন্ত তার দেহে লালন করে। লার্ভায়। রুপান্তরিত হলে স্ত্রী ঝিনুকের দেহ থেকে আবার সাইফনিং প্রক্রিয়ায় ছেড়ে দেয়। এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মাছের গায়ে অথবা কানকুয়াতে আটকে থাকে। যতদিন পর্যন্ত।

লার্ভাগুলো চলাচল করতে পারে ততদিন পর্যন্ত এরা মাছের সাথে প্যারাসাইট হিসেবে লেগে থাকে। এই জন্যে  ঝিনুকের জীবনের এই ধাপটিকে প্যারাসাইটিক ধাপ বলে । অন্য দিকে সামুদ্রিক ঝিনুকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ঝিনুকের যে কানকুয়া তা ছোট মাছের মত দেখতে হওয়ায় শিকারী মাছ গুলোকে আকৃষ্ট করে । যখনই মাছটি ঝিনুকের খুব কাছে চলে আসে তখন সে তার খোলসের সাহায্যে মাছটিকে চেপে ধরে রাখে এবং লার্ভাগুলােকে মাছের ভিতরে ঠেলে দেয়। এই লার্ভাগুলোকে বলা হয়  গ্লোচিডিয়া । এরা শীতের শুরুতে এবং গ্রীষ্মের শুরুতে প্রজনন করে থাকে । প্রজননের পর প্রায় ১ থেকে ১.৫ বছর পর ঝিনুক সংগ্রহ করা। যায় ।

ওয়েস্টার চাষ।ঃশামুক, ঝিনুকের পাশাপাশি ওয়েস্টারেরও রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য। ঝিনুকের চেয়ে শামুক বা ওয়েস্টার দ্রুত বৃদ্ধি পায় বলে এর চাষ পদ্ধতি অত্যন্ত লাভজনক । তবে শামুক বা ঝিনুক মিঠা ও নোনা উভয় পানিতে চাষ করা গেলেও ওয়েস্টার চাষ করতে লবণাক্ত পানির প্রয়োজন। বিভিন্ন পদ্ধতিতে ওয়েস্টার চাষ। করা যায় ।।

চাষ পদ্ধতি : ওয়েস্টার প্রাকৃতিকভাবে মোহনা এবং নোনা পানিতে বেড়ে ওঠে । তবে চাষের ক্ষেত্রে অবশ্যই পানির তাপমাত্রা,  লবণাক্ততা এবং গুণগত মান নিরীক্ষা। করতে হয় যেন প্রজনন যথাসময়ে সংঘটিত হতে পারে। ওয়েস্টার চাষের প্রথম। ধাপ হল ব্রুড কন্ডিশনিং। এই ব্রুড থেকেই পরবর্তীতে গ্যামেট এবং গ্যামেট থেকে লার্ভা উৎপন্ন হয়। প্রকৃতিতে খুব অল্প সময়ের জন্য একই সাথে পরিপক্ক হয় এবং একই সময়ে প্রজনন করে যেন সর্বোচ্চ এবং উর্বর লার্ভা উৎপন্ন হয়। তবে সারা মৌসুম জুড়ে যেন প্রজনন করতে পারে সে উদ্দেশ্যে পরিপক্ক ওয়েস্টার নির্বাচন এবং সংগ্রহ করা হয় । তবে সংগৃহীত স্থানে অবশ্যই তাপমাত্রা, লবণাক্ততা এবং রিসার্কুলেটিং পানির নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে । ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে। চাষীরা গরম ও শীতকাল এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে যেন ওয়েস্টার মনে করে যে তার প্রজননের সময় হয়েছে । ফলে চাষীরা যে কোন সময় পোনা উৎপাদন। করতে পারে।  যখনই কোন চাষী ওয়েস্টার এর লার্ভা উৎপাদন করতে চাইবে তখনই তারা ওয়েস্টার এর একটি গ্রুপ বা দল তৈরি করবে ও দলটি একটি ট্রের মধ্যে পানি সহ রাখবে । পরে সেই ট্রেটিকে দ্রুত উত্তপ্ত এবং দ্রুত ঠান্ডা করার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রজননের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রজনন শুরু হওয়ার সাথে সাথে ট্রে থেকে উঠিয়ে অন্য আরেকটি ট্রেতে রাখতে হবে ততক্ষণ যতক্ষণ সম্পূর্ণ রূপে। গ্যামেট বের করে দেয়। নিষেক ঘটানোর জন্য ডিম ও স্পার্ম মিশ্রিত করা হয়। লার্ভার জন্য ব্যবহৃত ট্যাঙ্ক অবশ্যই জীবাণুমুক্ত হতে হবে । পানির তাপমাত্রা। নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রাখতে হবে কেননা কিছু লার্ভা উষ্ণ পানিতেও দ্রুত বাড়ে। লার্ভা। ডিম থেকে বের হয়ে আসার পর থেকেই এদের প্রাংকটন অথবা চাষ করা এলজি খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন পানি পরিবর্তন করতে হবে। দুই সপ্তাহ পর লার্ভার পা তৈরি হয় যা মাইক্রোস্কোপে দেখা সম্ভব । এরপর এদেরকে কোন ওয়েস্টার এর খোলস দেয়া হয় অথবা ছেড়ে রাখা হয়। তবে এরা অপর ওয়েস্টার এর গায়েই প্রাকৃতিকভাবে লেগে থাকে বলে কৃত্রিম ভাবেও খোলস দেয়া হয় যেন বৃদ্ধি ভালোভাবে হয় । লার্ভা যখন ঠিকভাবে স্যাটল হয় তখন একে স্প্যাট বলে ।

তিনটি পদ্ধতিতে  মূলত ওয়েস্টার লালন করা যায়  

প্রথম পদ্ধতি : এই ক্ষেত্রে স্প্যাটগুলোকে উপকূলীয় এলাকায় ওয়েস্টার বেড এর উপর ছড়িয়ে দিতে হয় যেন এরা প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে ওঠে । পরবর্তীতে বেড়ে ওঠার পর এদের ড্রেজিং করে সংগ্রহ করতে হবে ।

 দ্বিতীয় পদ্ধতি : এই ক্ষেত্রে স্প্যাটগুলোকে রেক। ব্যাগ / খাঁচায় রেখে লম্বা দড়ির সাহায্যে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। লালন করার সময় এদের বৃদ্ধি পরীক্ষা করতে হয় । বড় হলে অর্থাৎ বাজারে নেয়ার মত হলে লিফটিং প্রক্রিয়ায় দড়ি টেনে সংগ্রহ করা হয় ।

তৃতীয় পদ্ধতি : এই পদ্ধতিতে বিশেষ এক ধরণের ট্যাংক ব্যবহার করতে হবে । ট্যাংকে পানির গুণগতমান নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণ, খাবার প্রদান, নোনা পানি দেয়া। এবং পরিবর্তন করার ব্যবস্থা করতে হবে। লবণাক্ততা যেন পরিমিত পরিমাণে থাকে। সেদিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। সমুদ্রের পানিতে যে ক্যালসাইট এবং এরাগোঁনাইট থাকে তা ওয়েস্টারকে দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অবশ্যই খেয়াল। রাখতে হবে ব্যবহৃত সকল কিছু যেন জীবাণুমুক্ত থাকে ।

এছাড়াও অপর একটি পদ্ধতি হল, প্রকৃতি থেকে ওয়েস্টার এর স্প্যাট সংগ্রহ করে রাখে অনেক চাষী। সংগৃহীত স্প্যাট যখন বৃদ্ধি পেয়ে কয়েক মিলিমিটার হয় তখন যেখানে লেগে থাকে সেখান থেকে সরিয়ে লালন পালন করার জন্য আলাদা করা। হয়। ওয়েস্টার হ্যাচারি অবশ্যই উপকূলীয় অঞ্চলে স্থাপন করতে হবে । বসন্তের সময় যখন তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হয় তখন ওয়েস্টার ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে লার্ভা বের হলে তাদের এক ধরণের গােলাকার সিস্টান এ রেখে এলজি খাওয়ানো হয় । উপকূলীয় পরিবেশের ওপর নির্ভর করে মূলত ওয়েস্টার চাষ করা হয় । প্লাষ্টিক নেট ব্যাগে করে ওয়েস্টার ঝুলিয়ে দেয়া হয় । কম গভীর অঞ্চল থেকে বেশী গভীর অঞ্চল। উভয় পরিবেশই ওয়েস্টার চাষ এর জন্য উপযোগী। এর পর ৬-৭ মাস পর ওয়েস্টার সংগ্রহ করা হয়।   

বাংলাদেশে অপ্রচলিত জলজ সম্পদের মধ্যে শামুক, ঝিনুক ও ওয়েস্টার অন্যতম। যদিও খাবার হিসেবে দেশে প্রচলন নেই তবুও পুষ্টিগুণের বিচারে ও আন্তর্জাতিক চাহিদার নিরিখে এদের গুরুত্ব অপরিসীম। এদেশে সাধারণত উপকূলীয় ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ শামুক, ঝিনুক ও ওয়েস্টার সংগ্রহ করে তা খুচড়া বিক্রেতার মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্পে বিক্রি করে। বহুকাল ধরে চলে আসা এ প্রক্রিয়ায় প্রকৃতি থেকে এদের প্রাপ্যতা দিন দিন কমে আসছে। এভাবে একটা সময় প্রকৃতি থেকে এরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে। এদের ছাকন। প্রক্রিয়ায় খাবার গ্রহণের ফলে প্রকৃতিতে বিশেষ করে জলজ ইকোসিস্টেম দূষণ মুক্ত থাকে । বিশেষ করে মাছ চাষের সময় পুকুরের তলদেশে যে সকল বর্জ্য তৈরি হয় সেগুলো দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ঝিনুক ও শামুক। এক কথায় বলা যায় যে, দূষণমুক্ত পরিবেশের পরিমাপক হল শামুক, ঝিনুক ও ওরেটর । আমাদের উপকূলীয় এলাকা, মিঠাপানির বিভিন্ন জলাশয় এবং মাছ চাষের জন্য যে সকল পুকুর রয়েছে তা শামুক, ঝিনুক ও ওয়েস্টার চাষের জন্য খুবই উপযোগী। উল্লেখ্য যে, ঝিনুকের জীবন চক্র সম্পন্ন করতে অবশ্যই পোষক হিসেবে মাছের  প্রয়োজন আবার মাছ চাষেও এরা কোন বিঘ্ন ঘটায় না। মাছের পাপ এই পুকুরে ঝিনুক ও শামুক চাষ করা সম্ভব, ফলে আলাদা করে চাদের জন্য নতুন পুকুরের প্রয়োজন হয় না । চাষ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত হলে এবং বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে দেশের রপ্তানী পণ্য যেমন বৃদ্ধি পাৰে তেমনি দেশীয় বিভিন্ন চহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানীর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে । ফলে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে ।   

Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post