কাঁকড়া আহরণ, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা

আশির দশকে সনাতন পদ্ধতিতে মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে উপকূলে কাকড়ার চাষ শুরু । সময়ের পরিক্রমায় চাষ পদ্ধতির উন্নয়ন ও প্রসার লাভ করে কাকড়া চাষ আজ শিল্পে পরিণত হয়েছে । বাংলাদেশে উৎপাদিত শীলা কাঁকড়া চিমটা পা বেঁধে। জীবন্ত অবস্থায় বিদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। এদেশের কাকড়া চীন, তাইওয়ান, হংকং, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য  এবং যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। অতি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতেও বাংলাদেশের শীলা কাঁকড়ার বাজার সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে চাষের পাশাপাশি প্রাকৃতিক উৎস হতে নির্বিচারে মা ও কিশোর কাঁকড়া আহরণের মাত্রা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে উৎপাদিত  কাঁকড়ার শতভাগই প্রাকৃতিক উৎস নির্ভর । 



ফলে কাকড়া সম্পদের প্রাকৃতিক মজুদ বর্তমানে হুমকির সম্মুখীন। তাছাড়া কাঁকড়া আহরণ ও চাষ (মোটাতাজাকরণ) উপকূলীয় প্রান্তিক জনগোঁষ্ঠির জলবায়ু পরিবর্তনজনিত   অভিযোজনের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত । তাই কাঁকড়া শিল্পের টেকসইভাবে। বিকশিতকরণ এবং প্রাকৃতিক মজুদ সংরক্ষণের  বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। কাঁকড়ার জীবন চক্র : প্রাকৃতিক পরিবেশে শীলা কাঁকড়া আধালবনাক্ত পানিতে বৃদ্ধি। লাভ করলেও এরা  প্রজনন অভিবাসি প্রজাতি। প্রজনন মৌসুমের শুরুতে প্রাপ্ত বয়স্ক শক্ত খোলস বিশিষ্ট পুরুষ এবং নরম খােলস বিশিষ্ট স্ত্রী কাঁকড়ার মিলন ঘটে। সুন্দরবন সংলগ্ন মােহনা অঞ্চলে । মিলনের পরে স্ত্রী কাঁকড়া প্রজনন উপযােগি। পরিবেশের খোজে সাগরের দিকে যাত্রা করে। গভীর সমুদ্রে এরা ডিম দেয়। (স্পনিং) এবং ডিমগুলোকে বক্ষদেশের ঢাকনার (এ্যাবডোমিনাল ফ্লাপ) নীচে। গচ্ছিত রাখে । এভাবে ১০-১২ দিনে ভ্রণের উন্নয়ন ঘটে এবং  পরিশেষে ডিম থেকে । লার্ভি বের হয় (হ্যাচিং) যাকে জইয়া-১ বলে। জইয়া-১ হতে জইয়া-৫ এবং । মেগালোপা ধাপ পর্যন্ত সাগরে অবস্থানের পরে ক্রাব-১ (ক্রাব ইনস্টার) ধাপে পরিবর্তিত হয়ে আবার সুন্দরবন বা তৎসংলগ্ন এলাকায় প্রবেশ করে ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত । হয়ে পূর্ণবয়ষ্ক কাঁকড়ায় পরিণত হয়।

কাঁকড়ার বিস্তৃতি ও প্রাপ্যতা : শীলা কাঁকড়া এদেশে সারা বছরব্যাপি পাওয়া যায় । শীলা কাঁকড়ার ৪ টি প্রজাতি রয়েছে। এগুলো হলো (Scylla serrata, S. tranquebarica, S. paramamosain e S. olivacea) i 06, gericht প্রাপ্ত শীলা কাকড়ার ৯৯% Scylla olivacea, বাকি ৩টি প্রজাতির উপস্থিতি ১%, যা দৈবক্রমে পাওয়া যায় । দেশের উপকূলীয় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, কক্সবাজার, পটুয়াখালী, বরগুনা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলায় শীলা কাকড়ার বিস্তৃতি।  বঙ্গোপসাগরের ৫০ মিটার গভীরতা হতে উপকূলীয় অঞ্চলের সুন্দরবন এবং তৎসংলগ্ন জোয়ার-ভাটা বিধৌত মোহনা, নদী, খাড়ি, খাল এবং চিংড়ি ঘেরসমূহে শীলা কাঁকড়ার বিচরণ ।। কাঁকড়ার প্রাপ্যতা নিরূপনে প্রতি একক  প্রচেষ্টার আহরণ (CPUE) নির্ণয়ে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং কক্সবাজার এলাকায় কাঁকড়া আহরণে নিয়োজিত নৌকা হতে সরাসরি নমুনা সংগ্রহ করে দেখা যায় যে, প্রতি একক প্রচেষ্টায় প্রাপ্যতার দিক থেকে সাতক্ষীরা শীর্ষে (০.০৭৯ টি কাঁকড়া/চারু বা টোপ/ঘন্টা) । ক্রমান্বয়ে খুলনা (০.০৭৮ টি কাকড়া/চারু বা টোপ/ঘন্টা), বাগেরহাট (০.০৭৩ টি কাকড়া/চারু বা টোপ/ঘন্টা), কক্সবাজার (০.০৫৭ টি কাকড়া/চারু বা টোপ/ঘন্টা) এবং সবচেয়ে কম পটুয়াখালী (০.০২৬ টি কাকড়া/চারু বা টোপ/ঘন্টা)।

আহরিত কাকড়ার পরিমাণ

রেখাচিত্র ২ এ প্রতি একক প্রচেষ্টার আহরণে প্রাপ্ত বয়স্ক ও কিশোর কাঁকড়ার। প্রাপ্যতার হার দেখানো হয়েছে। বছরব্যাপি কিশোর  কাকড়া আহরণ করা হয়ে। থাকে যার পরিমাণ উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। সর্বনিম্ন ৫০% কিশোর কাকড়া। আহরিত হয় অক্টোবর মাসে এবং সর্বোচ্চ ৮৯% নভেম্বর মাসে। তথ্য সংগ্রহে দেখা যায়, আহরিত কিশোর কাকড়ার ৬০- ৬৫% পুনরায় চাষে/নরম খোলসের কাকড়া । উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, ১৫-২০% কাঁকড়া পরিবহনে মারা যায় এবং ১০-১৫% । কাঁকড়ার উপাঙ্গ পরিবহনের সময় ভেঙ্গে যায় যা পরবর্তিতে মারা যায় বা স্থানীয় বাজারে কম মূল্যে বিক্রয় হয়। মাত্রাতিরিক্ত কিশোর কাকড়া আহরণের ফলে । প্রাকৃতিক মজুদ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। যা কাকড়া শিল্পের টেকসই প্রসারে । | অন্যতম প্রতিবন্ধকতা।

কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম : গবেষণালব্ধ ফলাফলে দেখা যায়, শীলা কঁকড়া। শীতকাল ব্যতিত সারাবছর প্রজনন করে থাকে । তবে, শীর্ষ প্রজনন মৌসুম। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস থেকে শুরু হয়ে জুন মাস পর্যন্ত । জুলাই-আগস্টে কিছুটা কমে আবার সেপ্টেম্বর মাসে বৃদ্ধি পায়। 

প্রাপ্যতার হার ও প্রজনন মৌসুম।

প্রজননক্ষম (বেরিড) মা কাঁকড়ার উৎপাদন। কাকড়া সাগরে প্রজনন করে বিধায় নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ডিমধারণকারি (বেরিড) মা কাকড়া উৎপাদন করা একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের  লোনাপানি কেন্দ্রে গবেষণার মাধ্যমে সাগরের উপযুক্ত প্রজনন পরিবেশ সৃষ্টি করে। হ্যাচারি পর্যায়ে ডিমধারণকারি মা কাকড়া উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে ৩০ পিপিটি লবণ পানি ব্যবহার করে সর্বোচ্চ (৬৯%) বেরিড কাকড়া উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে যার ডিম নিষেকের হার পাওয়া গেছে ৮৯% । হ্যাচারি পর্যায়ে। ডিমধারণকারি কাকড়া উৎপাদন সাফল্য শীলা কাঁকড়ার প্রজনন ও টেকসই পোনা। উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করবে । ডিমধারণকারি মা কাঁকড়া উৎপাদনের সার্বিক তথ্য। নীচের সারণিতে প্রদান করা হলো : 

সারণি ১. ডিমধারণকারি/বেরিড কাঁকড়া উৎপাদন।

বিবরণ

পানির লবণাক্ততা

 

 

২৫ পিপিটি

 ৩০ পিপিটি

 ৩৫ পিপিটি

 গড় ওজন (গ্রাম)

 

২৩৪ + ৪.৩০

২৬৭+৩.৮৯

২৭০+৩.৮৭

খোলসের প্রস্তা  

 ১১.০+ ০.৩৫

 ১০.৮ +০.৪৯

 ১১.২+০.৫১

পালনকৃত মোট মা কাঁকড়া

১৬

১৬

১৬

 ডিম দেওয়ার সাফল্য (%)

 

১১

ডিম প্রস্ফুটনে সময় (দিন)

১২

১২

 

 ডিম নিষেকের হার (%)

৮৬

৮৬

 

 কাঁকড়ার লার্জি প্রতিপালন ও পোনা উৎপাদন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা  ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ২০১৫ সালে প্রথম এর। সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র, কক্সবাজার এবং পরবর্তিতে লোনাপানি কেন্দ্র, পাইকগাছা, খুলনায়  শীলা কাঁকড়ার প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করে। প্রাথমিক  পর্যায়ে ক্রাব ইনস্টার (সি-১) পর্যায়ে বেঁচে থাকার হার মাত্র। ০.০১% ছিল । পর্যায়ক্রমিক গবেষণার মাধ্যমে সবুজ পানি (গ্রীণ ওয়াটার) ব্যবহার করে এবং তিন ধাপে (জইয়া-১ থেকে জইয়া-২; জইয়া-৩ থেকে মেগালােপা এবং মেগালােপা থেকে ক্রাব ইনস্টার বা সি-১) লার্ভি প্রতিপালনের মাধ্যমে পোনার বেঁচে থাকার হার ১.০৫% এ উন্নীত হয়েছে। তবে পােনার বেঁচে থাকার হার ৫৮% এ উন্নীত করা না গেলে বাণিজ্যিকভাবে পোনা উৎপাদন লাভজনক হবে না । তাই পোনার মৃত্যুহার কমিয়ে টেকসই পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যে নিবিড় গবেষণা। পরিচালনা করা প্রয়োজন।

 সারণি ২. খাদ্য প্রয়োগ হার ও পদ্ধতি এবং পোনার বেঁচে থাকার হার

লার্ভি দশা

জইয়া-১ 

জইয়া-২

 

জইয়া-৩

জইয়া-৪

  জইয়া-৫

মেগালোপা

মেগালোপা-ক্রাব ইনষ্টার

খাদ্যের প্রকার

 রটিফার

 রটিফার

রটিফার+আর্টেমিয়া নপলি।

 

আর্টেমিয়া নপলি।

 

২-৩ দিন বয়সী আর্টেমিয়া

৩-৫ দিন বয়সী আর্টেমিয়া

৩-৫ দিন বয়সী আর্টেমিয়া

খাদ্যের ঘনত্ব (প্রতি মিলি)

২০-২৫

৩০-৪০

 ৩০-৪০+.০২৫

০.৫-১.০

 ১.৫-২.০

  ১.৫-২.০

১.৫-২.০+ মাছের পেস্ট

বাচার হার

৮৫

 ৭২

   ৫৭

 ৪০

 ১৭

 ৭.৭৫

 ১.০৫

 কাঁকড়ার চাষ পদ্ধতি। কাঁকড়ার চাষ পদ্ধতিকে মো ট তিন ভাগে ভাগ করা যায় যথা, মোটাতাজাকরণ। (ফ্যাটেনিং), ছোট/কিশোর কাঁকড়া প্রতিপালন করে প্রাপ্ত বয়স্ক কাকড়ায় রূপান্তর এবং নরম খোলসের কাঁকড়া উৎপাদন  

কাঁকড়ার মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি : সাধারণত যে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক স্ত্রী  কাকড়ার। দেহাভ্যন্তরে ডিম্বাশয় (স্থানীয় ভাষায় ঘিলু) অনুপস্থিত এবং প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ কাকড়ায় মাংশের পরিমাণ কম থাকে সেগুলো বিদেশে রপ্তানি  হয় না। এই কাকড়াগুলোকে স্থানীয় ভাষায় খোশা কাঁকড়া বলে। এগুলোকে  ১০-২০ দিন খাদ্য। প্রয়োগ করে প্রতিপালন করলে স্ত্রী কাকড়ার দেহাভ্যন্তর ডিম্বাশয়ে পরিপূর্ণ হয় এবং পুরুষ কাঁকড়ার মাংসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে রপ্তানিযোগ্য হয়। এই পদ্ধতিই। মোটাতাজাকরণ বা ফ্যাটেনিং নামে পরিচিত। দেশের প্রান্তিক কাঁকড়া চাষীদের। সিংহভাগ এ কাজের সাথে জড়িত। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বাঁশের ঝুড়িতে পালনের মাধ্যমে শীলা কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ।  শুরু । তৎপরবর্তী সময়ে, জোয়ার-ভাটা সংশ্লিষ্ট ঘের বা পুকুরের চারিপাশে বাঁশের বানা/পাটা বা নাইলন নেট দিয়ে ঘেরাও দিয়ে কাঁকড়া মোটাতাজাকরন বিস্তার লাভ করে। ইনস্টিটিউট নব্বই এর দশক হতে  কাঁকড়া মোটাতাজাকরণের ওপর। গবেষণা করে এ সংক্রান্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবন  করেছে । মোটাতাজাকরণ পদ্ধতিতে বছরে। ১২টি ব্যাচ মোটাতাজাকরণ   করা হয়ে থাকে এবং প্রতি হেক্টরে গড় ২-৩ টন। উৎপাদন পাওয়া সম্ভব। এর পাশাপাশি একই পুকুরের তলদেশের মাটিতে এবং । 

ভাসমান বাঁশের বা প্লাস্টিকের খাঁচায় যুগপৎ কাঁকড়া ফ্যাটেনিং করে প্রতি একক এলাকায় উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব । ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পুকুরের ৪০% এলাকায় ভাসমান খাঁচা স্থাপন করে প্রতি বর্গমিটার খাচায়। ২.৮২ কেজি হারে বছরে প্রতি হেক্টরে ১০,০০০ কেজি অতিরিক্ত কাঁকড়া উৎপাদন। সম্ভব । তবে, প্রখর রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে এবং অতি বৃষ্টির সময়ে কাঁকড়ার অধিক মৃত্যুহার পরিলক্ষিত হয়েছে। যুগপৎ কাঁকড়া  মোটাতাজাকরণ সাথে শস্য। বহুমুখিকরণে (crop diversification) প্রতি হেক্টরে ২-৩ টি গিফট জাতের। তেলাপিয়া মজুদ করে কাঁকড়ার পাশাপাশি প্রতি হেক্টরে মাছের উৎপাদন ২,০০০। কেজি পাওয়া সম্ভবপর হয়েছে।

কিশোর কাঁকড়া প্রতিপালন : দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১৪০,০০০ হেক্টর । জমিতে চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। অতি সম্প্রতি অধিকাংশ সনাতন চিংড়ি ঘেরে । চিংড়ির পাশাপাশি কম ঘনত্বে (৩,০০০-৫,০০০/হেক্টর) কিশাের কাকড়া (স্থানীয় । ভাষায় কয়েন সাইজ/বোতাম সাইজ) মজুদ  করে প্রাপ্ত বয়স্ক কাঁকড়া উৎপাদনের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এতে করে চিংড়ির সাথে সাথী ফসল হিসেবে। কাঁকড়া উৎপাদন করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব । তবে, নির্বিচারে কিশোর। কাঁকড়া আহরণের ফলে প্রাকৃতিক মজুদ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। নরম খোলসের কাঁকড়া উৎপাদন : শীলা কাকড়া খোলস পরিবর্তনের মাধ্যমে বড়। হয় এবং প্রতিবার  খোলস পরিবর্তনে দৈহিক ওজন দেড় হতে দুইগুণ বৃদ্ধি পায় । খোলস  পরিবর্তনের পর ৪-৬ ঘন্টা দেহাবরণ নরম থাকে। এই নরম অবস্থায়। কাকড়া সংগ্রহ করে হিমায়িত করে রপ্তানি করা হয়ে থাকে । আর এটিই হলো নরম  খােলসের কাঁকড়া। কাঁকড়া স্বজাতিভোজী বিধায় নরম খোলসের কাঁকড়া উৎপাদনে সাধারনতঃ প্রতিটি প্লাস্টিকের ভাসমান বাক্সে ১টি কাঁকড়া মজুদ করা হয়ে থাকে। নরম খোলশের কাঁকড়ার উৎপাদন বছরে প্রতি হেক্টরে গড়ে ২০ মে. টন। শক্ত। খোলসের কাকড়ার চেয়ে সহজ পরিবেশনযোগ্য  বলে আন্তর্জাতিক বাজারে এর। ব্যাপক চাহিদা যা উতরোত্তর বেড়েই  চলেছে। আর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার উদ্দেশ্যে দেশে প্রায় ৫০ টি নরম খোলশের কাঁকড়া খামার গড়ে উঠেছে। এ খামারগুলোর   বাক্সের সংখ্যা ৩৫ লক্ষেরও অধিক। এটি দৈনন্দিন চলমান প্রক্রিয়া, শীতকাল ব্যতিত অন্যান্য সময় (কমপক্ষে ৫ মাস) এটি চলে । গড়ে ৫% হারে খোলস পরিবর্তন হিসেবে প্রতিদিন ছোট কাকড়ার প্রয়োজন। ১৭৫,০০০ টি, যা বছরে দাঁড়ায় (২৬২.৫+৩৫) লক্ষ = ২৯৭.৫ লক্ষ টি। যার পুরোটাই  প্রকৃতি নির্ভর  । মূল্যবৃদ্ধি ও ছোট কাকড়ার অভাবে অধিকাংশ খামার সব।  বাক্স একযোগে ব্যবহার করতে পারে না এবং অনেক খামার বন্ধের পথে । কাঁকড়া আহরণ ও চাষ উপকূলীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠির জীবিকায়নের অন্যতম অবলম্বন এবং কাঁকড়া রপ্তানি করে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। কিন্তু অদ্যাবধি এ   কর্মকান্ডে ব্যবহৃত সকল কাকড়া প্রাকৃতিক উৎস। নির্ভর। একদিকে মোটাতাজাকরণ নির্বিচারে প্রজননক্ষম মা কাঁকড়া আহরণ। চলছে। অপরদিকে, কিশোর কাকড়া চাষে এবং নরম খোলসের কাকড়া উৎপাদনে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছোট কাঁকড়া আহরণ হচ্ছে যত্রতত্রভাবে । যার ফলে প্রাকৃতিক মজুদ। 

 নিয়মিত নবায়নের জন্য প্রজননের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ছে। এই অবস্থা হতে উত্তরণ এবং কাকড়া শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রজননক্ষম এবং কিশোর কাঁকড়া আহরণ না করা সংক্রান্ত যুগোপযোগী  আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন। করা প্রয়োজন পাশাপাশি হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদনের লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন না হওয়া অবধি নরম খোলসের কাঁকড়া উৎপাদন খামার সীমিত রাখা একান্ত জরুরি। হ্যাচারি পরিচালনার জন্য দক্ষতা সম্পন্ন জনবল বৃদ্ধি সময়ের চাহিদা। প্রয়োজনে হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনা অবমুক্ত করে প্রাকৃতিক মজুদ উন্নয়ন আবশ্যক । উপরন্তু, কাঁকড়া  চাষের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন অণুজীব ঘটিত রোগবালাইয়ের  অশঙ্কা রয়েছে। তাই শীলা কাঁকড়ার অণুজীবঘটিত রোগ সনাক্তকরণ ও  নিরাময়ের আগাম প্রস্তুতির ওপর জোর দিতে হবে । আর এগুলোর যথাযথ  বাস্তবায়ন দেশের কাকড়া সম্পদের টেকসই উন্নয়ন ও বিস্তৃতির দ্বার উনন্মোচন করবে বলে আশা করা যায় ।

তথ্য সূত্র -বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ ২২০১ । 

**********************************************


Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post