লবস্টার : সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণে নতুন সম্ভাবনা


সীফুড বা সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদে সুপরিচিত নাম লবস্টার । জনবিলাসীদের কাছে। লবস্টার প্রিয় ও সুস্বাদু খাবার । এরা সমুদ্রের পাথুরে- প্রবালপ্রাচীর অঞ্চলে বসবাস ও বংশ বিস্তার করে। সামুদ্রিক এই মাছটির সাথে চিংড়ির যথেষ্ট মিল রয়েছে । বাংলাদেশে লবস্টার এর পরিচিতি খুব একটা নেই। তবে সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে। চিংড়ি ধরার ট্রলারে প্রায়ই লবস্টার পাওয়া যায় এবং তা বিদেশে রপ্তানি হয় । অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ, সুস্বাদু ও অর্থনেতিক গুরুত্বপূর্ণ এই মাছটির আহরণ ও চাষ। ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে গবেষণা  পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে ।

লবস্টার পরিচিতি 

লবস্টার শক্ত খোলসযুক্ত আথ্রোপোডা পর্বের সামুদ্রিক প্রাণি। এর দেহ দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম  এবং আত্মরক্ষার জন্য ছোট ছোট শক্ত কাটা দ্বারা সজ্জ্বিত থাকে ।   লবস্টার লেজের পিছন প্রান্ত ছড়িয়ে পুচ্ছ পাখনার সৃষ্টি করে । চোখ বৃন্তযুক্ত এবং পাঁচ জোড়া চলন উপাঙ্গ রয়েছে। বেশীর ভাগ লবস্টার গাঢ় সবুজ কিংবা গাঢ় নিলাভ বর্ণের অথবা বাদামী হয়ে থাকে এবং হেমোসায়ানিন উপস্থিতির কারণে এদের রক্তের  নীল । বিশ্বে নানান প্রজাতির লবস্টার থাকলেও বেশীর ভাগ লবস্টার সর্বভূক শ্রেণীর ও নিশাচর। সাধারণত মাছ, মলাস্ক, ক্রাস্টাসিয়ান এমনকি ময়লা আবর্জনাও এরা খায়, তবে আবদ্ধ স্থানে এরা স্বজাতীভূক । এদের বয়স নির্ধারণ করা কঠিন, তবে ১০০ বছর বয়সী লবস্টারও পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যানুযায়ী বিশ্বে। সবচেয়ে বড় লবস্টারের ওজন ২৩.৩৬ কেজি। বিশ্বে খাদ্য হিসেবে লবস্টারের লেজ বেশ জনপ্রিয় যা লবস্টার টেইল' নামে পরিচিত।


লবস্টারের প্রাপ্যতা ও বিচরণ ক্ষেত্র

 পৃথিবীব্যাপি লবস্টার এর বৈচিত্র্যতা বিদ্যমান এবং এদের বিচরণ এলাকা বিস্তৃত । সাধারণত ৫ থেকে ৪০ মিটার গভীরতায় এবং ২৫ পিপিটির বেশী লবণাক্ততায়। লবস্টার পাওয়া যায়। এরা সাধারণত ভারত, আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরে বিচরণ করে থাকে। এছাড়াও দক্ষিণ লোহিত সাগর, আফ্রিকার পূর্ব উপকুল, আরব  সাগর, ভারতের অন্ধ উপকূল ও উরিষ্যার উপকূলীয় জলাশয়, জাপান সমুদ্র, দক্ষিণ চীন সাগর, গালফ অফ থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, সলোমন দীপাঞ্চল, নিউকেলিডোনিয়া, গালফ অফ পাপুয়া, ফিজি ও   অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে এরা বিচরণ করে থাকে। বাংলাদেশে সাধারণত Palinuridae পরিবারভূক্ত Spiny lobster বেশী পাওয়া যায়। আমাদের দেশে কক্সবাজারস্থ সেন্টমার্টিন ও । টেকনাফের তীরবর্তী অঞ্চলে লবস্টার পাওয়া যায় । বঙ্গোপসাগরে লবস্টারের সঠিক বিচরণ ক্ষেত্র ও প্রজাতি নির্ণয় করা জরুরী। পৃথিবীতে সাধারণত তিন ধরণের লবস্টার পাওয়া যায় ।।

Spiny lobster

 

এরা সাধারণত Palinuridae পরিবারভুক্ত যা রক লবস্টার নামেও পরিচিত। এদের অনেক প্রজাতি অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে । বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক প্রযুক্তি কেন্দ্রে সামুদ্রিক মৎস্য জরীপ এ পাওয়া তত্ত্বানুযায়ী বঙ্গোপসাগরে শনাক্ত করা ৬ ধরণের লবস্টারের ৪টি প্রজাতি Spiny lobster ভুক্ত। 986 369- Panulirus polyphagus, P. versicolor, P. homarus and  P. ornatus.

 

P. versicolor

 

জনপ্রিয় Clawed lobster, Homaridae পরিবারভুক্ত যা True lobster, আমেরিকান লবস্টার ও কানাডিয়ান লবস্টার নামেও পরিচিত। Clawed lobster এর ৩০টি প্রজাতির মধ্যে ২টি প্রজাতি অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে । যথা- American lobster (Homarus americanus) ও H. gammaruS। এই দুই প্রজাতি সাধারণত আটলান্টিক মহাসাগরে পাওয়া যায় এবং পৃথিবীর মোট উৎপাদনের প্রায় ৪০% অবদান রাখে ।

 

Clawed lobster

 

Scyllaridae পরিবারভুক্ত প্রাণি যার প্রায় ৯০টি প্রজাতি পৃথিবীতে। রয়েছে। এদের Claw না থাকায় True lobster বলা হয় না, তবে Spiny lobster লবস্টারের সাথে এদের যথেষ্ট মিল রয়েছে। আমাদের দেশে বঙ্গোপসাগরে এর ২টি প্রজাতি পাওয়া যায় এগুলো হলোThenus orientalis যা Sand lobster নামে পরিচিত এবং অন্যটি   হল   - Scyllarus  depressus.

S. depressus

 

 

লবস্টার চাষ ও ব্যবস্থাপনা। চিংড়ি চাষের চেয়ে লবস্টার চাষ জটিল প্রকতির কারণ এর জীবন চক্রের প্রতিটি ধাপ দীর্ঘ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হ্যাচারিতে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে লবস্টার চাষ হচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ যেমন : ভারত, চীন, ভিয়েতনাম ও জাপানে লবস্টার চাষের প্রসার ঘটেছে। এসব দেশে Spiny lobster এর তিনটি প্রজাতি TIGT Panulirus polyphagus, P. homarus 478 P. ornatus 517 Pos হয়। খামারীরা সাধারণত ৭-১৫ মিমি, এর ‘ওয়াইল্ড সীড সংগ্রহ করে উপকূলীয় এলাকায় কাঠের তৈরি খাঁচায় নার্সিং করে । অতঃপর লোহার তৈরি খাঁচায়  ১-২ বছর। চাষ করে । নার্সিং সময়কালীন ফরমুলেটেড ফিড ও কপিপড খাওয়ানো  হয় এবং গ্রো-আউট পর্যায়ে ট্রাশফিশ, শামুক-ঝিনুক ও সী-উইড খাবার হিসেবে দেওয়া হয় । চাষের সময় তাপমাত্রা (২৫-৩০ ডিগ্রী সে.), লবণাক্ততা (৩০-৪০ পিপিটি) এবং পানি প্রবাহ (২-৪ সেমি.) সতর্কতার সাথে দেখা হয় । P. ornatus লবস্টার ২০ -২৪ মাসে প্রায় ৬০০-১০০০ গ্রাম এবং অপর দুই প্রজাতি ১০-১২ মাসে ২০০-৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে ।

আমাদের দেশে চিংড়ি চাষীরা এখনও সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে থাকে, সেখানে লবস্টারের মতো জটিল চাষ ব্যবস্থাপনা তাদের জন্য অনেকটাই অনুপযোগী। তাই বঙ্গোপসাগরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত না করে লবস্টার ধরতে আহরণের সঠিক সময়,  ফাঁদ/জাল ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। তবে আবদ্ধ স্থানে লবস্টার চাষ কৌশলের সহজ প্রযুক্তি উদ্ভাবন সম্ভব। হলে নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। লবস্টারের বর্তমান উৎপাদন বিগত দশকের চেয়ে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে । বিশ্বের মোট  উৎপাদনের অর্ধেক আসে শুধুমাত্র আমেরিকা ও কানাডা থেকে ।১৯৮০ সালে  লবস্টারের মোট উৎপাদন ছিল ১১০,৮৯৪ টন যা কয়েক দশকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩ সালে হয়েছে ২৩১,৯৬৮ টন ।


রেখাচিত্র ১. ২০১০-২০১৩ সাল পর্যন্ত লবস্টারের বৈশ্বিক উৎপাদন (মে.টন) 

সামুদ্রিক অর্থনীতিতে লবস্টার।

 আন্তর্জাতিক বাজারে লবস্টার গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য পণ্য। বর্তমানে গড়ে প্রতি কেজি। লবস্টার বিক্রি হয় ১,৬০০টাকা যা চিংড়ি বা অন্যান্য মাছের চেয়ে তুলনামুলকভাবে। বেশী। পৃথিবীর অনেক লোক এখন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে  লবস্টার চাষ, আহরণ। ও ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে সম্পৃক্ত। লবস্টার রপ্তানি করে অনেক দেশ বিশেষ করে  যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, জাপান ও ভিয়েতনাম তাদের দেশীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। বাণিজ্যিকভাবে প্রধানত চার ধরণের লবস্টার গুরুত্বপূর্ণ যথা: আমেরিকান লবস্টার, ইউরোপিয়ান লবস্টার, রক লবস্টার এবং ট্রপিক্যাল। লবস্টার । বাংলাদেশ এখনও লবস্টার চাষ হয় না বা চাষের প্রচেষ্টাও এখনো হয়নি ।। তবে ট্রপিক্যাল  লবস্টারের কয়েকটি প্রজাতি বঙ্গোপসাগরে পাওয়া যায় যা। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের আশেপাশের এলাকাগুলোতে বিভিন্ন  ট্রলার ও চিংড়ি ধরার জালে পাওয়া লবস্টার পর্যটকের চাহিদা পূরণ করে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে সরবরাহ করা হয়।  হোটেলেরেস্তোরাঁয় প্রতিটি লবস্টার বিক্রি হয় ১,০০০-৪,০০০ টাকায়।  দেশে লবস্টার। প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তা পার্শ্ববর্তি  দেশে পাচার হচ্ছে ।

 লবস্টারের পুষ্টিমান  সামুদ্রিক অনেক মাছের চেয়ে পুষ্টিমানের বিচারে লবস্টারে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা আমাদের শরীরের জন্য বেশি প্রয়োজন । এছাড়াও এর প্রোটিন মান চিংড়ির প্রায়  কাছাকাছি এবং খনিজমান কাকড়া ও চিংড়ির তুলনায় অনেক বেশী। সুস্বাদু ও আমিষযুক্ত হওয়ায় বিশ্বের নামী-দামী অনেক রেস্টুরেন্টে লবস্টারের। ব্যপক চাহিদা রয়েছে।

রেখাচিত্র ২. লবস্টারের পুষ্টিগুণ 

বাংলাদেশে লবস্টার চাষের সম্ভবনাঃ

 বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ও সাগরকণ্যা পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়। রয়েছে লবস্টার চাষের অপার সম্ভাবনা। এই দুই উপকূলীয় অঞ্চলের আবহাওয়া, পানি, তাপমাত্রা  ও খাবারের প্রাপ্যতা লবস্টার চাষে বিশেষ উপযোগী। লবস্টার চাষে আদর্শ তাপমাত্রা ২৫-৩০ ডিগ্রী সে. এবং লবণাক্ততা ৩০-৪০ পিপিটি যা আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়াও লবস্টার চাষে ব্যবহৃত খাবার যেমন ট্রাশ-ফিশ, শামুক-ঝিনুক ও সী-উইড এর প্রাপ্যতা রয়েছে। বাংলাদেশে প্রাপ্ত Spiny Jobster এর চারটি প্রজাতি যথাক্রমে P. Ornatus, P. homarus, P. polyphagus 478 P. versicolor Trafas916 6779958 চাষ উপযোগী। বাংলাদেশের উপকূলীয়  অঞ্চলে রয়েছে পর্যাপ্ত চিংড়ি হ্যাচারী, প্রাথমিকভাবে এসব হ্যাচারীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান ও কারিগরি সহায়তার মাধ্যমে লবস্টার চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়াও স্থানীয় উদ্যোক্তা। ও বেসরকারী সংস্থাগুলো লবস্টার চাষে এগিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশের সামুদ্রিক অঞ্চলে লবস্টারের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এর বিচরণক্ষেত্র।  চিহ্নিতকরণ ও আহরণের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য গবেষণা জরুরী। এক্ষেত্রে লবস্টার উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং দেশীয় অর্থনীতিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্রতা দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। সমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে লবস্টার চাষে বেশ কিছু সমস্যা বিদ্যমান, যেমন : • লবস্টারের লার্ভির  অপর্যাপ্ততা এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ (লবনাক্ততা, খাদ্য ও অপর্যাপ্ত তাপমাত্রা) জটিল প্রকৃতির। সমুদ্র তীরবর্তী ও উপকূলীয় অঞ্চলে খাঁচায় লবস্টার চাষ ব্যবস্থাপনা ব্যয়সাপেক্ষ ও ঝুকিপূর্ণ । দক্ষ হ্যাচারি টেকনিশিয়ান ও প্রশিক্ষকের অভাব পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে লবস্টার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই এর পুষ্টিমান ও বাজার মূল্য বিবেচনায় গবেষণা অতীব জরুরী । নিম্নেলিখিত গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করলে দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি লবস্টার বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে। বাংলাদেশের সামুদ্রিক অঞ্চলে লবস্টারের প্রজাতি চিহ্নিতকরণ, মজুদ ও আহরণ মাত্রা নির্ণয়। ও লবস্টারের জীবন চক্র নির্ণয় ।বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন লবস্টারের প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা  নির্ণয় । খাঁচায় লবস্টারের চাষ সম্ভাবনা নিরূপন ।

 বাংলাদেশ সমুদ্র বিজয়ের ফলে বর্তমানে ১১৮,৮১৩ বর্গ কিমি. সমুদ্র অঞ্চল পেয়েছে । বিশাল এই সামুদ্রিক জলরাশির উপকূলীয় অঞ্চলে লবস্টার চাষে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতার অভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বিশাল অংশে লবস্টার চাষের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে এসব অঞ্চল খুব সহজেই লবস্টারের চাষের আওতায় আসবে। এতে মৎস্য সম্পদের উৎপাদন বাড়ার সাথে। সাথে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। 


Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post