Swimming Crab বা সাঁতারু কাকড়ার আহরণ ও সম্ভাবনা

সামুদ্রিক সম্পদ ও জীব বৈচিত্র্যের তুলনামূলক বিচারে একক উপ-সাগর হিসাবে বঙ্গোপসাগর বিশ্বের বৃহত্তম । প্রাচুর্যপূর্ণ জীববৈচিত্র্যের মধ্যে কাঁকড়া একটি উল্লেখযোগ্য সামুদ্রিক সম্পদ। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রায় ১০ প্রজাতির সামুদ্রিক কাকড়া সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এসব কাঁকড়ার মধ্যে শীলা  কাকড়া/Mud Crab এবং সাঁতারু কাকড়া/Swimming Crab অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একক আহরণ হিসাবে শীলা কাঁকড়ার উৎপাদন অধিক হলেও সাঁতারু কাকড়াও আমাদের সমুদ্রসীমায় যথেষ্ট পরিমাণে ধরা পড়ে। উপকূলীয় এলাকা ও খুলনা-সাতক্ষীরা সংলগ্ন সুন্দরবন অঞ্চল যেমন শীলা কাকড়া সমৃদ্ধ অঞ্চল তেমনি কক্সবাজারস্থ নদী। মোহনা ও সমুদ্র উপকূলীয়  এলাকা সাঁতারু কাঁকড়া আহরণে উল্লেযোগ্য ভূমিকা রাখছে । যদিও বাংলাদেশে  এককভাবে কাঁকড়া আহরণ করা হয় না কিন্তু সমুদ্রে। মাছ শিকারের সময় আনুষঙ্গিক মৎস্য পণ্য হিসাবে প্রচুর সাঁতারু কাঁকড়া জালে ধরা | পড়ে। আমাদের দেশে কাঁকড়ার জনপ্রিয়তা কম হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রথম কাকড়া রপ্তানি  শুরু হয় এবং ১৯৮৩ সালের দিকে এসে হিমায়িত মৎস্য পণ্য রপ্তানিতে কাকড়া তৃতীয় স্থানে উঠে আসে। বাংলাদেশ থেকে চীন, জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান এবং বিশ্বের । বিভিন্ন দেশে কাঁকড়া রপ্তানি হয়ে থাকে । কাঁকড়া রপ্তানি করে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে। বাংলাদেশ ২৩.৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে ।

বাংলাদেশে সাধারনত তিন প্রজাতির সাতারু কাকড়া পাওয়া যায়। সাগরে। বসবাসকারী এই সাতারু কাঁকড়াগুলো হল Coral Crab বা শীল কাকড়া।  (Charybdis feriatus), Blue Swimming Crab বা নীল সাতারু কাকড়া (Portunus pelagicus) 978 Three spot Swimming Crab 71 Tom GPIGT সাতারু কাকড়া (Portunus sanguinolentus)। স্বাদ আর খাদ্যমান বিচারে এদের মধ্যে Blue Swimming Crab এর চাহিদা ও আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য। বেশি। স্থানীয় জনসাধারন সাতারু কাকডাকে বলে ঝাজি কাকড়া আর Three spot Swimming Crab কে বলে তিন পইল্লা । সাধারণত মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সাতারু কাকড়া বেশি ধরা পড়ে তবে মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত আহরণ। মাত্রা সর্বোচ্চ। সাধারণত সামুদ্রিক পােয়া মাছ ধরার জাল, বেহুন্দী জাল বা ট্রলারে মাছ ধরার সময় এ সকল সাঁতারু কাঁকড়া মাছের সাথে ধরা পড়ে। আহরিত কাকড়ার মধ্যে Blue Swimming Crab-B বেশি আর তা বছরব্যাপিই কমবেশি পাওয়া যায় । C. feriatus প্রজাতিটি মূলত প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের পাথুরে তট সংলগ্ন এলাকায় পাওয়া যায় । P. pelagicus এবং P. sanguinolentus প্রজাতি দুইটি কক্সবাজার উপকূলে সহজলভ্য। সাগরে এলিফ্যান্ট পয়েন্ট এলাকায় মাছ। ধরার সময় জালে প্রচুর পরিমাণে সাতারু কাঁকড়া ধরা পড়ে। শাহপরীর দ্বীপ, টেকনাফ, শাপলাপুর, সােনাদিয়া দ্বীপ, মহেশখালী দ্বীপ সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলে। মাছ ধরার জালে প্রচুর সাতারু কাঁকড়া মাছের সাথে আহরিত হয়। কক্সবাজারস্থ বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও নাজিরারটেক শুটকী পল্লী মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আহরিত সাঁতারু কাঁকড়া অবতরণ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বিদেশে রপ্তানীর পাশাপাশি পোল্টি বা মৎস্য খাদ্য তৈরিতে সাতারু কাকড়া ব্যবহৃত হচ্ছে।

সারণি ১. পরিপক্ক সাঁতারু কাঁকড়ার পুষ্টিমান ।              

Crab Species

Protein%

Carbohydrate%

Fat %

 

Moisture%

 

Ash %

 

 Charybdis feriatus (প্রবাল/শীল কাঁকড়া)।

২২

০.৬

৭২

২.৪

নীল সাঁতারু কাকড়া)। Portunus sanguinolentus

 

১৮.২

৫.৩

০.৮

৭৩.৭

(তিন ফোঁটা সাতারু কাঁকড়া)।

 

১৯.৫

৩.৯

০.৫

৭২.৩

৩.৮

  সাঁতারু কাঁকড়া কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে আগত পর্যটকদের কাছে খুবই

সুপরিচিত। সেন্টমার্টিন দ্বীপে জেটি সংলগ্ন এলাকা ও কক্সবাজারস্থ সুগন্ধা বীচ | সংলগ্ন এলাকায় ভোজন প্রিয় পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু সী-ফুড ভিত্তিক রেস্তোরা গড়ে উঠেছে, যেখানে এসমস্ত কাঁকড়া সুস্বাদু খাদ্য হিসাবে বেশ জনপ্রিয় । মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সাঁতারু কাকড়া ধরার উপযুক্ত সময়। এ সময় প্রায় ৫০০৬০০ ছোট নৌকা কাঁকড়া ধরার কাজে কক্সবাজারস্থ সাগর  উপকুলে নিয়োজিত। থাকে। দিনে ৪-৫ ঘন্টা করে মাসে ২৫-২৬ দিন এসমস্ত নৌকা কাঁকড়া ধরার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাঁকড়া ধরার কাজে বাঁশের তৈরি বিশেষ ধরণের খাচা ফাঁদ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। স্থানীয় ভাষায় একে চাই বলে। সাগর, মোহনা বা উপকূলীয় জলাশয়ের তলদেশে ১৫-২০  কিমি. এলাকায় রশি দ্বারা মাটির সাথে আঁড়াআড়ি ভাবে . 

Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post