আদি কাল থেকেই এর উপর রয়েছে বিশাল মতভেদ । অনেক আছে বলে থাকে বিশেষ করে ধর্ম নিয়ে যারা সর্বদা থাকে তারা বলে ধর্মই কর্ম এবং ধর্ম হলো আগে । তাদের মতে জীবনে ধর্ম না থাকলে কর্মের কোন মূল্য নেই । ধর্ম  মানব জাতিকে ভালো এবং আলোর পথে নিয়ে যায় । যেমন ধরুন ধর্মের প্রতি যদি কোন টান না থাকে তাহলে কী করে ভালো কর্ম সম্পাদন করবে একজন লোক ।ধর্ম  মানুষকে শিক্ষা দেয় কী করে নিজেকে আত্নসংযমী ও নীতিবান হতে হয় ।



 ন্যায্যতা, ন্যায়পরায়নাতা, প্রতি নিয়ত নিজেকে পরের জন্য নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে  সকলের ধর্ম । ধর্ম সকল মানব জাতিকে করে তোলে প্রজ্ঞাবান, মিতব্যায়ী, দানশীল, সহনশীল, পরোপকারী, কামহীন, অনেক গুণের অধিকারী । ধর্মের প্রতি আনুগত্যই হল প্রকৃত জীবন । তাই ধর্মই কর্ম ধর্ম না থাকলে মানুষ পশুতে পরিণত হত।


 

অপর দিকে যারা ধর্মের প্রতি আনুগত্য রয়েছে ঠিক কিন্তু কাজের প্রতি যাদের রয়েছে অগাধ টান তাদের মতে কর্মই ধর্ম। কর্মই আগে তার পর ধর্ম। তাদের মতে কাজ যদি সৎভাবে করা না যায় সঠিকভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করা না হয় তথা কর্ম যদি সঠিক নিয়মে করা না হয় তাহলে কী করে একজন মানব মানুষ পরিচয় দিবে । দেখা গেল সে ধর্ম করছে  ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জা, মন্দির, মসজিদে যাচ্ছে কিন্তু দুর্নীতি, অন্যকে ঠকানো, অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানো ইত্যাদি কাজ করছে তাহলে কী আর হল বলুন । এক্ষেত্রে সে ধর্মপ্রাণ ব্যাক্তি টি  তাদের কাজের জন্য সবার কাছে পরিচিত হবে একজন অমানুষ হিসেবে । সমাজে পরিচিত হবে ধর্মের নামে সে একজন কলংক। সে যত লোকদেখানো ধর্মই করুক না কেন তার অকর্মের জন্য ভুল কাজের জ্ন্য সে হবে একজন অপছন্দের অসৎ লোক । সমাজের কাছে সে হবে একজন ঘৃ্নার পাত্র । 

আরো পড়ুনঃব্যান্ডেল চার্চ, ৪০০ বছরের পুরাতন, পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম গির্জা The Basilica of the Holy Rosary (commonly known as Bandel Church) 

কাজের মধ্য দিয়ে অনেকের সাথে পরিচয় হয় গড়ে  উঠে সখ্যতা । কথায় আছে জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো । জন্ম তোমার যাই হোক না কেন কিন্তু কর্ম যদি হয় ভালো তাহলে সবাই উচ্চ স্থানে বসাবে শুধু মাত্র কর্মের যোগ্যতার জন্য । ধর্মের মধ্য দিয়ে কিন্তু একজন লোক নিজেকে মহান করতে পারনা অপর দিকে কর্মের মধ্য দিয়ে যে কোন মানুষ তার অবাস্থান মহান করতে পারে ।



 যদি একজন লোক খারাপ কাজ করে তবে সবাই তাকে খারপ হিসেবে চিনবে কিন্তু যদি তার কাজ ভালো হয় তাহলে সবাই জানবে সে একজন সৎ ও ধার্মিক লোক । ধর্ম যাই হোক না কেন কিন্তু কর্ম যদি হয় ভালো,তাহলে সে সবার অন্তরে স্থান পায় সবার আগে। 

আরো পড়ুনঃ যীশুর দেহ তাঁর মায়ের কোলে কেন মারা যাবার পর ?

কর্মত্যাগী মানুষ সর্বদাই অন্ধের মতো শুধু সত্যকে হাতরে বেড়ায় কিন্তু নাগাল পায়না, আলেয়াকে আলো মনে করে আর কুহেলিকাকে সত্য বলে মেনে নেয়। ব্যাক্তিগত ধর্ম ব্যাক্তির পক্ষে মঙ্গলময় হতে পারে কিন্তু জগতের জন্য নয়। 

জগতের জন্য জাগতিক কর্ম সম্পাদন করতে হয় আর সে জন্য কখনো কখনো ব্যাক্তিগত ধর্মের বাহিরেও বিচরণ করতে হয়। কর্মকে ধর্মজ্ঞান করার আগে জগতের ওপর তার প্রভাবকে বিবেচনায় আনাও কর্তব্য বলে ধরে নেওয়া উচিত।

 মহাভারতের কুরু বংশের ধ্বংসের জন্য না দায়ী দুর্যোধন নাতো তার মামা শকুনি। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের জন্য দায়ী ভীষ্ম, দ্রোণাচার্য আর কর্ণের ধর্মান্ধতা ও তাদের ব্যাক্তিগত ধর্মের পালন। মোহাবিষ্ট এসব কর্মত্যাগী ব্যাক্তিদের জন্যই মহাধ্বংসের আয়োজন হয়েছিল।


সুতরাং, ধর্মের প্রতি মানুষের যে দুর্বলতা রয়েছে তাকে অন্ধতায় পরিণত না করে মুক্তি লাভের উপায় খুঁজে ধর্মকে যথাযথভাবে ধারণ করাকে কর্তব্যজ্ঞান করাই শ্রেয়। তাই ব্যাক্তিগত কর্মের পরিবর্তে জাগতিক কর্মকে ধর্মজ্ঞান করলে হয়তো ধরার বুকেই আমরা স্বর্গসুখ অনুভব করতে পারব।

তবে হ্যা সবার ঈশ্বরের কাছে নত হবার প্রয়াস থাকতে হবে নিজেকে উজার করে দেবার ক্ষমতা ও সক্ষমতা থাকতে হবে । ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম নত হলাম কিন্ত  কুকর্ম করলাম ,মনের মধ্যে অন্ধকার পোষে আলোর থেকে দূরে থাকলাম তাতে করে কর্ম ভালো হলো না তাহলে কি হলো সেই লাউ সেই কদূ । তাই কর্মের সাথে সাথে নিজেকে রাখতে হবে সচ্ছ পানির মত । 

ছেলেবেলায় ভূবন নামে এক জুতা সেলাইকারী ছিল যাকে আমরা সবাই ভূবন দা বলে ডাকতাম। যতবারই তার সাথে আমার কথা বা যোগাযোগ হয়েছে ততবারই মনে হয়েছে যে এই লোকই ঈশপের গল্পের সেই সুখী মুচি; মুখে সারাক্ষন হাসি নয়তো বেসুরো গলায় গান আর সাথে তার নিজের যৌবনের গল্প - বছরের পর বছর ধরে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানোর গল্প।

 আমরা আড়ালে সেগুলোকে নিয়ে হাসাহাসি করতাম। কিন্তু একটা কথা সত্য, তাকে দেখলে মনে হতো জুতা সেলাই করাই বোধ হয় জীবনে সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার।

তারপর অনেক বছর পর আমেরিকায় এসে একটা রেস্টুরেন্ট এর নাম দেখলাম TGI Friday - যেটার পুরো অর্থ হলো 'Thanks God its Friday', মানে আগামী দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি; কাজে যেতে হবে না।

 একটু অবাক হয়েছিলাম কারণ আসার আগে একটা ধারণা ছিলো এদেশে নাকি কাজের মর্যাদা দেয়া হয়, সবাই কাজ করতে ভালোবাসে ইত্যাদি ইত্যাদি। পরে যতই দিন যেতে থাকলো ধারণাও পাল্টে যেতে থাকলো - সবাই আসলে আনন্দ নিয়ে কাজ করে না।

মানুষ জীবদ্দশায় আনুমানিক ৮০০০০ ঘন্টা কাজ করে। সপ্তাহে গড়ে ৪০ ঘন্টা ধরলে প্রায় ৩৮ বছর! এই সংখ্যাটা বেশি ছাড়া কম হবে না বলেই আমার বিশ্বাস। কিন্তু বেশ কিছু জরিপে দেখা গেছে আমেরিকার মাত্র ১৫% মানুষ সত্যিকার ভাবে তাদের কাজকে ভালোবাসে। 

এটা খুব বিস্ময়কর যে, যে জিনিসটা আমাদের জীবনের ৩০ ভাগের ও বেশি সময় নিয়ে নিচ্ছে, যে কাজকে কেন্দ্র করেই মূলত জীবন আবর্তিত হয় তার প্রতি মানুষের মমতা বা ভালোবাসা এতো কম কেন ?

মনোবিজ্ঞানী Mihaly Csikszentmihalyi Experience sampling method এর মাধ্যমে মানুষের Happiness নিয়ে গবেষণা করতেন। তাঁর লেখায় ইতালিয়ান আল্পস গ্রামের ৭৬ বছর বয়সী গৃহিনী সেরাফিনা ভিনান অথবা শিকাগোর মেকানিক জো ক্রেমারের মত সাধারণ মানুষদের কাজের আনন্দের কথা উঠে এসেছে; যাদের আপাতদৃষ্ট একঘেয়ে বিরক্তিকর কাজ নিজেদের অনন্য গুণে রূপান্তরিত হয়েছে আনন্দে।

 পৃথিবীতে সার্বজনীন এমন কোনো কাজ নেই যেটা সবাইকে সুখী করবে। কাজে আনন্দ বা নিরানন্দ সব আমাদের নিজ গুনেই সৃষ্ট। সেই বিশেষ কিছু গুণ বা নিয়ামকের ওপর একটু আলোকপাত করছি -

Ownership - ১৯৪০ এর দশকে যখন প্রথম ইনস্ট্যান্ট Cake Mix বাজারে এলো তখন সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে এর বিক্রী মুখ থুবড়ে পড়ল। কোম্পানির অনুরোধে সাইকোলোজিস্ট Ernest Dichter মহিলা ক্রেতাদের সাথে কথা বলে বিস্মিত - মহিলারা কেউই সেই Mix দিয়ে বানানো কেক কে নিজের কেক মনে করতে পারছেন না কারণ এটা এত সহজ যে, যে কেউ করতে পারে এবং এতে নিজের কোনো কৃতিত্ব নেই।



 পরে তাঁর অনুরোধে যখন ডিম যোগ করার কথা বলা হলো, ইনস্ট্যান্ট Cake mix হট কেক এর মতো বিক্রী হতে লাগলো। সংক্ষেপে এটাই হল Ownership - যা একান্ত নিজের। বেশিরভাগ মানুষই কাজকে নিজের একান্ত আপন প্রিয় জিনিস ভাবতে পারেনা বলেই কাজে অসন্তোষ।

 ধরুন কেউ কি কখনো ভাড়া করা গাড়ী ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে ফেরত দেয় ? শুনতে খারাপ লাগতে পারে কিন্তু Ownership না নিয়ে কাজ করা আর ক্রীতদাসের মতো কাজ করার মধ্যে পার্থক্য কোথায় ?

Challenge - একটা পরিমিত চ্যালেঞ্জ কর্মক্ষেত্রে সুখী হবার অন্যতম পূর্বশর্ত। সার্জেনরা সার্জারি করার সময় সর্বদা যে একটা চ্যালেঞ্জ অনুভব করে সেরকম, সাথে সাথে ফিডব্যাক পাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। 

পেশাগত দক্ষতা আর সাথে নতুন নতুন কিছু প্রতিবন্ধক ছাড়া দিনের পর দিন একই কাজ খুব স্বাভাবিক ভাবেই একঘেঁয়েমি নিয়ে আসে। চ্যালেঞ্জ আছে বলেই রজার ফেদেরার টেনিসে আমার চেয়ে নাদালকে হারিয়ে বেশি আনন্দ পাবে।

Attitude - জীবন অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে l একই কথা কাজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। প্রথম চাঁদে অভিযানের প্রস্তুতি দেখার জন্য প্রেসিডেন্ট John F Kenndy NASA পরিদর্শনের এক পর্যায়ে এক পরিচারক কে পথে জিজ্ঞেস করেছিলেন তুমি এখানে কি কাজ করো ? তার উত্তর ছিল 'আমি চাঁদে প্রথম মানুষ পাঠানোর চেষ্টা করছি'- সে হয়তো খুব সামান্য একজন কর্মী কিন্তু তার Attitude বা মনোভাব ? 

বলা হয় ছোট কাজ বলে কিছু নেই কিন্তু ছোট মানসিকতা নিশ্চয় আছে। শোনা যায় টমাস এডিসন তাঁর বাল্বে tungsten filament পরীক্ষা করার আগে আরো প্রায় ২০০০ অন্যান্য ফিলামেন্ট পরীক্ষা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

 তাঁর সহকারী অধৈর্য হয়ে বলেছিলেন 'পুরো কাজটাই মাটি হচ্ছে' কিন্তু টমাস এডিসন উত্তরে বললেন 'মোটেই না। আসলে আমরা জানলাম যে এই ২০০০ ফিলামেন্ট কাজ করবে না' - এটাই হচ্ছে কাজের Attitude.

Service - কখনো ভেবেছেন জীবিকার জন্য আমরা যাই করি না কেন সবই কিন্তু অন্যের জন্য করা ? অন্যকে সেবা দেয়াই কিন্তু কাজের উদ্দেশ্য। বাংলা ভাষায় হয়তো একারণেই 'চাকুরী-সেবা' এই দ্বিরুক্ত শব্দটার উৎপত্তি।

 কিন্তু সমস্যা হলো অনেক পেশাতে লোকে জানতেই পারছেনা কে বা কারা তাদের কাজের ফল ভোগ করছে। ডাক্তার হিসেবে আমার কাজের একটা মস্ত সুবিধা হল আমি যার জন্য কাজ করছি সে আমার সামনেই বসে আছে। এর চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা কি হতে পারে ?

Autotelic personality - ২০১০ এ চাকরীর ইন্টারভিউতে আমাদের সবচে সিনিয়র ডাক্তার ডা: মিশ্র আমাকে বলেছিলেন ৭০ এর দশক থেকে প্রায় ১৫ বছর তিনি ছিলেন হাসপাতালের একমাত্র নেফ্রোলজিস্ট; একদিনের জন্যও ওই সময়টায় ছুটি নেননি। 

আমি তো যথারীতি অবাক, তারপর রসিকতা করে বললেন ‘May be I was young and stupid !' কাজ যদি একমাত্র আনন্দ, ধ্যান-জ্ঞান না হয় তাহলে এটা কি করে সম্ভব? এটাই সাইকোলজির ভাষায় Autotelic যেখানে পেশা আর নেশার মধ্যে কোন বিরোধ নেই এবং যেখানে জাগতিক আনন্দ, কামনা-বাসনার চেয়ে চিত্তের প্রশান্তিই মূল প্রেরণা ওঠে। 

বিরল এই মানুষগুলো জীবনের সব কিছুর মধ্যেই অনাবিল আনন্দ আস্বাদন করে।

ছোটবেলায় স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মূল মন্ত্র ছিল 'জয় নয় অংশগ্রহণ করাটাই বড় কথা ' অর্থাৎ পরিশ্রম, সততা আর একাগ্রতা দিয়ে কাজ করাটাই মুখ্য, ফলাফল নয়।

 ঠিক যেন অর্জুনের প্রতি শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ 'অর্জুন তোমার কর্মে অধিকার, কর্মফলে নয়' - অথচ আজ পৃথিবীতে শুধু ফলের আশায় প্রতিযোগিতা, মাঝখানে কাজটা হয়ে যাচ্ছে নিমিত্ত মাত্র! সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে আমরা সমাজের চাহিদার কাছে এমনভাবে দায়বদ্ধ যে কত মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে !

 মানুষ এক একটা ক্লান্তিকর দিন পার করে ভ্রান্ত আশা নিয়ে যে আগামীকাল সে সুখী হবে - Thanks God its Friday কি তারই প্রতিফলন নয় ? কাজই হতে পারে এই সমাজের এবং সেই সাথে নিজের অন্তরের বন্ধন থেকে মুক্তির উপায় যদি প্রতিটা মুহূর্ত পারিপার্শ্বিক উদ্দীপনা মুক্ত হয় ও জীবনকে জীবনের মতো করে অনুভব করা যায়।

তপন সিংহের বিখ্যাত ছবি ' গল্প হলেও সত্যি' তে বাড়ির গৃহিণীদের রান্নাঘরে কাজ করা নিয়ে অনুযোগের উত্তরে রবি ঘোষ বলেছিলেন "মা, যার যেখানে কাজ সেখানেই মুক্তি ! 

আপনাকে যদি কলকাতার কমিশনার করে দেয়া হয় তাহলে কাজ চালাতে পারবেন ?" সত্যি, মুক্তির আনন্দ যদি কর্মের মধ্যে উপলব্ধি করা যায় তাহলে জুতা সেলাই ই হোক বা কমিশনারের কাজই হোক Thanks God its Friday অথবা Oh God its Monday এ রকম চিন্তাই মাথায় আসে না।

সবার সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনায় শেষ করছি। ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 🙏🏻

"The best moments in our lives are not the passive, receptive, relaxing times… The best moments usually occur if a person’s body or mind is stretched to its limits in a voluntary effort to accomplish something difficult and worthwhile." ~ Mihaly Csikszentmihalyi (1990, p. 3)


Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post