কীডনি কি কেন গুরুত্বপূর্ণ মানবদেহের জন্য ?

বৃক্ক বা কীডনি মানুষের দেহে খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি অঙ্গ , এর বিপর্যয় হলে জীবনে বেঁচে থাকা যেন অরেক জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয় । একটি শিশু মায়ের গর্ভে আসার ছয় সপ্তাহ এর মধ্যে প্রত্যেক মানুষের কিডনী সম্পুর্নভাবে কাজ করা শুরু করে । আমাদের প্রবাহমান রক্ত পরিশোধোণ করে অর্থাৎ দূষিত রক্ত পরিশুদ্ধ করে একমাত্র এই কিডনী সাথে সাথে দেহের প্রয়োজনীয় রক্ত তৈরি করে এই কীডনী । দেহের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি যোগান দেয় এই কিডনী । দেহের পানীর পরিমান বাইরে বের করে দেয় এই কীডনি । সুতরাং কিডনী যদি সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে জীবন আর জীবন থাকেনা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয় । বিশ্বসাস্থ্য সংস্থা WHO এর পর্যবেক্ষণ মতে বাংলাদেশের দুই কোটি মানুষ এবং সারা বিশ্বে প্রায় পচাশী কোটির মত মানুষ কোন না কোন ভাবে কীডনী রোগে আক্রন্ত । 


কেন কি কারণে মানব দেহে কিডনী রোগ হয় ??

কীডনীর প্রধান কারন হচ্চ নেফ্রাইটীস বা প্রাসাবের প্রদাহ, ডায়বেটিস এবং উচ্চরক্তচাপ । প্রধান কারাণ ছাড়াও যে কোন কারণে কিডনীর যে ছাকনি আছে তার কার্যকারীতা বিঘ্নিত হলে ধীরগতিতে মানুষের কিডনী বিকল বা অকেজো হয়ে পড়ে । 

READ MORE 

সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শুরু হয়েছে ট্রান্সপ্ল্যান্ট

অরিরিক্ত এন্টিবায়োটিক সেবনে এছাড়া  মাত্রারিক্ত ব্যাথার   ঔষধ সেবনে কিডনী বিকল হতে পারে । দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না থাকলে হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে বা হঠাৎ রক্তচাপ কমে গেলে কিডনীর কার্যকারিতা কমে যায় কিডনী বিকল হতে পারে । সন্তান প্রসবের সময় মহিলাদের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ  অন্য দিকে যদি ইনফেকশন হয় তাহলে কিডনী বিকল হতে পারে । তাছাড়া যখন কিডনী রক্ত পরিশোধন করতে পারেনা বিশেষ করে ডায়রিয়া, অতিরিক্ত বমি, অরিরিক্ত রক্তক্ষরণ  ইত্যাদির কারণে যে কারো কিডনী বিকল হতে পারে ।  

কিডনী রোগের লক্ষণ কী কী ? কী করে জানবো কীডনী রোগ আছে ??

ইউরিন আর ই , সিরাম ক্রিটেনিন , ইউরিয়া, এক্সরে, আল্টাসনোগ্রাম ইত্যা দি পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে কীডনী রোগা আছে কি নাই । বিশেষ ভাবে প্রসাবে যদি প্রোটিন যায় যাকে এলবুমিন বলে এবং রক্তে ক্রিটেনিন এর মাত্রা প্রয়োজনীয় স্টেজ থেকে বেশী থাকে তাহলে কিডনী বিকল হচ্ছে জানা যাবে । 

কীডনী রোগ কি বংশগত ? বংশগত সূত্রে কাদের এ রোগ হতে পারে ??

কিডনী রোগ বংশগত নয় । কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম আছে যেখানে বলা যায় বিশেষভাবে দুর্ভাগ্যবশত ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এই কিডনী রোগ দেখা দিতে পারে । সেখেত্রে ইউরিনারী ব্লাডার, ইউরেটার ও ইউরেথ্রা অবস্ট্রাকশন বা বাধার সম্মুখীন হলে তখন আমরা বলে থাকি এর জন্মগত কিডনী রোগ আছে ।কিন্তু এটা বংশের জন্য নয় এটা ব্যতিক্রম যা অনেকের হয়ে থাকে । অপর দিকে ৪০ বছর পর আরো একটি সমস্যা উদ্ভূত হয় তা হলো পলিসিস্টিক কিডনী রোগ তবে আক্রন্ত রোগীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করলে ও বেশী পরিমানে পানি খেলে কিডনী রোগ ভালো থাকে । 

পর্যায় বা ধাপ ক্রনিক কিডনী রোগের কী কী ??

ক্রনিক কিডনী রোগের পর্যায় হলো পাঁচটি । সাধারনত ৩য় পর্যায় পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করলে ভালো থাকা যায় । কিন্তু শেষ ধাপে যখন চলে আসে সেই সাথে ৮০ -৯০ ভাগ কিডনী অকেজো হয়ে গেলে আর রক্ষা নেই কিডনী একদম নষ্ট হয়ে যায় এবং আর কোন সাধারণ চিকিৎসায় সুস্থ থাকা যায় না । ঐ সময় একমাত্র উপায় কিডনী ট্রান্সপ্লাণ্ট/প্রতিস্থাপন বা হেমোডায়ালাইসিস ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই । 

কিডনী রোগের ডায়বেটিসের সাথে কী কোন সম্পর্ক আছে ???

যাদের ডায়বেটিস আছে তাদের সাথে কিডনী রোগের একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে । গবেষনায় দেখা গেছে রোগীর শতকরা ২০ ভাগ উচ্চ রক্তচাপ, শতকরা ৪০ ভাগ ডায়বেটিস, এবং শতকরা ৩০-৪০ ভাগ প্রসাবে প্রোটিন নির্গত হয় । এটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ রোগী আছে যে তারা জানেই না যে ডায়বেটিস বা উচ্চরক্তচাপ বা প্রাসাবের মধ্য দিয়ে প্রোটিন নির্গত হয় । ফলে তারা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কোন প্রয়োজন মনে করেনা ফলে দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল কিডনী রোগে ভোগে এবং ভুল ক্রমে দুটি কিডনীই অকেজো হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে । 

কিডনী রোগ ও খাবার দাবার সম্পর্ক ????

যদি দেখা যায় কিডনীতে সমস্যা  তাহলে খাবার দাবার ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে । বিশেষ করে ডায়বেটিস রোগীর ডায়েট করতে হবে বেশী করে । প্রোটিন জাতীয় খাবারে অনেক বেশী নিষেধাজ্ঞা থাকে । বিশেষ করে প্রোটীন সমৃদ্ধ খাবার  দুধ, ডিম, মাছ, মাংস হিসেব করে খেতে হয় । যা কিনা অনেক কঠিন । গরুর মাংস, খাসির মাংস,  মগজ,  কলিজা ইত্যাদি বর্জন করার পরামর্শ দেওয়া হয় । ফসফেট ও ইউরিক এসিড কম এমন খাবার গ্রহন করতে পরামর্শ দেওয়া হয় ।  

কিডনী রোগের সাথে অন্য শারিরীক জটিলতা কেমন হতে পারে??

যদি কেউ কিডনী রোগে আক্রান্ত হন তাহলে তার অনান্য শারিরীক জটিলতায় খেয়াল রখতে হবে , কারণ অননান্য জটিলতাও তৈরি হয় । শতকরা ৯০ ভাগ কিডনী রোগী কিডনী জটিলতায় মারা যায় না মারা যায় হার্টের জটিলতায়  । সর্বদায় কিডনী রোগীদের খেয়াল রাখতে হবে যে হার্টের সাথে অন্য কোন সমস্যা বা জটিলতা হচ্ছে কিনা । ডায়বেটিস জনিত কিডনী রোগ হলে চোখের সমস্যা দেখা যায় হার্টের জটিলতা বৃ্দ্ধি পায় , উচ্চরক্তচাপ বেড়ে যায় । 

কিডনী অকেজো কী করতে পারেন ???

কিডনী অকেজো বা নষ্ট হয়ে গেলে কি করবেন কী করে বেঁচে থাকবেন বা কী কোন উপায় আছে । কী করে জীবন বাঁচিয়ে রাখা যায় । বর্তমানে তিনটি পদ্ধতিতে কিডনী রোগীদের বাঁচিয়ে রাখা যায় । হেমোডায়ালাইসিস, পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস এবং কিডনী প্রতিস্থাপন বা ট্রান্সপ্লান্ট । বাংলাদেশে অনেক বছর যাবত কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট করে চলছে তবে নিকট আত্নীয়দের মধ্যে ট্রান্সপ্লান্ট হলে ভালো ।  তবে কিডনী রোগ হলে আয়ু অনেক ক্ষেত্রে কমে আসে ।

পানি কম খেলে কিডনী নষ্ট হয় বেশী খেলে কিডনী ভালো থাকে ???

এর তেমন সত্যতা দেখা যায় না তব পরিমাণ মত পানি পান করা কিডনীর জন্য ভালো তেমনি বেশী পানি পান করাও কিডনীর জনা খারাপ । মোট কথা হল দিনে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা বা পানি জাতীয় খাবার খাওয়া যথেষ্ঠ কিডনী ভালো রাখার জন্য । মানব দেহের জন্য পানি পান অনেক জরুরী কিন্তু অতিরিক্ত পানি পান মোটেই ঠিক না । তবে যাদের কিডনীতে পাথর; ইউরিন ইনফেকশন আছে ঐ সব রোগীদের ক্ষেত্রে একটু বেশী পানী পান করতে বলা হয় । কিন্তু কিডনীতে জটিলতা তৈ্রি হলে ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী । পানি পান চিকিৎসকের পরামর্শে করা উচিত । 

উচ্চ ঝুকিতে থাকা কিডনী রোগীদের কিডনী রোগ প্রতিরোধ প্রায় অসম্ভব ।

কী কী পদক্ষেপ নিলে কিডনী রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় প্রতিরোধের উপায় ঃঃঃ

শিশু অবস্থায় কিডনী রোগ প্রতিরোধে হতে হবে সজাগ । ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় বর্জন করতে হবে । শিশুকে প্রতিদিন মাঠে খেলাধূলার জন্য সুযোগ করে দিতে হবে ।  পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপ কমিয়ে দিতে হবে । স্বাভাবিক খাবার যেমন ঃ মাছ, ডিম , মুরগীর মাংস ইত্যাদি খেতে দিতে হবে। শিশুটি যেন মুটিয়ে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে । 

তাছাড়া সবার সচেতন হওয়া উচিত বিশেষ করে মাত্রাতারিক্ত প্রোটিন জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত লবণ ও চিনি, ফাস্ট ফুড , কোমল পানীয় ধুমপান বর্জন করা উচিত । দুশ্চিন্তা ও টেনশন না করে প্রতিদিন কায়িক পরিশ্রম করা । 

অত্যন্ত লক্ষনীয় যে যাদের বয়স ৪০ বেশী এবং সাথে যাদের দেহ মোটা অর্থাৎ স্থুল দেহের অধিকারী  তাদের ক্ষেত্রে উপসর্গ থাকুক আর না থাকুক, তার রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করা, প্রসাবের সাথে শ্বেত বা লোহিত কনিকা এবং এলবুমিন নির্গত হচ্ছে কিনা তা নিরুপন করা উচিত বৈকি । তাছাড়াও নিয়মিত রক্তচাপ ও ডায়বেটিস পরিক্ষা করা উচিত । ডায়বেটিস শনাক্ত হলে ও প্রসাবে এলবুমিন ও মিক্রোএলবুমিন নির্গত হলে সাবধান হতে হবে । ক্রিয়েটিনিনের পরিমাপ করে দেখতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে । 

বলছিলেন কিডনী ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা ; ডাঃ হারুন অর রশিদ পিএইচডি, এফসিপিএস, এফাআরসিপি, 


Post a Comment

Please do not link comment any spam or drive spams content

Previous Post Next Post